ফেইরিটেল পর্ব-১৪

0
1630

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–14

নিঝুম, নিশ্চুপ, নিরিবিলি, দুপুর। আকাশে অলসভঙ্গিতে একটা শালিক উড়ে গেল। গাছের ডালে একটা কাক বসে ঝিমুচ্ছে। পুরান ঢাকার গিঞ্জি রাস্তায় মানুষের যাতায়াত চলছে। প্রত্যকেই ব্যস্ত। সবার মধ্যে দ্রুত বেগে যাওয়ার তাড়া আছে।কে কার আগে যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। অবশ্য ইমান পকেটে হাত গুজে হাঁটছে,তার মধ্যে কোন তাড়া ভাব নেই। সারাটা সকাল সে পরে পরে ঘুমাচ্ছিল। বেলা এগারোটায় উঠে নাস্তা খেয়ে চায়ের জন্য উসখুস করছিল। কাকে বলবে চা বানিয়ে দেওয়ার কথা? মিরা তো নেই। তার অনুপস্থিত বারবার তাকে বিষন্ন করে তুলছিল। অগত্যা চা খাওয়ার জন্যই সে বেরিয়ে পরে বাসা থেকে। এম্নিতে বাসায় তার কোন কাজ নেই। অন্যান্য দিন সোনালী আপুর সঙ্গে গল্প করে দিব্যি কাটত। আজ বড় একা লাগছিল নিজেকে৷ সে দম ফেলে সামনের দোকানে চায়ের অর্ডার দিল। ছোট দোকানটা তাদের বাসা থেকে একদম নিকটে। বারান্দা দিয়ে দোকানটা দেখা যায়। রাত বারোটা-একটা অব্দি এই দোকান চালু থাকে। মাঝে মাঝে বারান্দা থেকে সে দোকানের ভিতরে ঘটা কাজ-কর্ম পর্যবেক্ষণ করে৷

চা পরিবেশন করা হলো একটা ওয়ান টাইম কাপে। সে চায়ে চুমুক দিল। এবং আশপাশে চোখ বুলাতে থাকে। আচমকা চোখে পড়ল, খুব ছোট একতলা একটা বাসা৷ বাসার সামনে কিছু জায়গা ফাঁকা। সেখানে একটা গাছ রয়েছে। গাছে ছোট ছোট ফুল ফুটে আছে। সে বুঝতে পারল, এই ফুলের গন্ধই রুম অব্দি যায়৷ কিন্তু কী ফুল এটা?

সে চায়ের কাপ সরিয়ে রেখে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করে, ভাই সামনের বাসায় যেই গাছটা আছে সেটা কি গাছ?

দোকানদার গরম পানিতে কন্ডেক্সমিল্ক গুলাতে গুলাতে জবাব দেয়, জামান ভাইয়ের বাসার কথা কইতেছেন?

সে আন্দাজেই হু বলে। জামান সাহেবকে সে চেনে না৷ তার বাড়িও চেনার কথা না৷

দোকানদার বলল, ওইটা বকুল গাছ। জামান সাহেব লাগাইছিল সেই পচিশ বছর আগে৷

ইমান ঘার ঘুরিয়ে দেখল। বাসাটায় অদ্ভুত আকর্ষনীয় কিছু আছে। সে নেমপ্লেট দেখল বাড়ির নাম “কাজলাদিদি”। নামটা দেখেই তার চোখ উজ্জ্বল হলো। কবিতার নামেও যে বাসা হতে পারে তা আজ প্রথম দেখল৷

দোকানদার বলে উঠে, বাড়িটা জামান ভাই মারা যাওয়ার পর পইড়া ছিল৷ এখন বিল্ডার্সরা নিসে। ভাইঙ্গা দশতলা বিল্ডিং হইব৷

আচমকা ইমানের মনের গহীনে পুনরায় বিষন্নতা হুমড়ি খেল। এতো সুন্দর বাসাটা ভাঙ্গা হবে!

আচ্ছা, মানুষ কী তবে গড়েই ভেঙে ফেলবার জন্য?

একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে দাম মিটিয়ে মামার বাসায় ফিরে আসে৷ তিনতলা অব্দি উঠেও আর ভেতরে ঢুকতে ইচ্ছা করল না। বেলও বাজায় না সে। ভেতরে যাওয়ার জন্য কোন দায়বদ্ধতা বা মায়া কাজ করছে না৷ সে সিড়ি দিয়ে নেমে আসে এবং তখনই সিদ্ধান্ত নেয়, গেন্ডারিয়া যাবে। আপুর শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে ঘুরে আসবে৷ দু’হাত ভর্তি মিষ্টি নিয়ে সে রওনা হয় বোনের শ্বশুড়বাড়ির উদ্দেশ্য। গেন্ডারিয়া পৌঁছে সে সোনালী আপুকে কল দেয়। প্রান্ত ভাই নিযে এসে তাকে রিসিভ করে নিয়ে যায়। আপুর বাসায় গিয়ে অতিথি আপ্যায়নে কোন কমতি খুজে পেল না সে। তবুও যেন কিসের একটা কমতি অনুভব করছিল সে। বারবার চোখ দিয়ে সেই কমতিটুকু খোজার চেষ্টা চালায় সে।

আপু হাসতে হাসতে বলে, তুই যাকে খুজছিস সে এখানে নেই৷

ইমান চমকে উঠে বলে, কাকে খুজছি আমি?

— তোর মিষ্টি বউটাকে৷

আচমকা ইমানের ভারী লজ্জা লাগলো। একটা ছেলে হয়েও এই সামান্য কথায় সে কেন লজ্জা পেল এই কারনটা সে নিজেও জানে না৷

সোনালী আপু বলে, ওরা বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে গেল। তুই আসবি জানলে বোধহয় যেতে দিতাম না৷

ইমান খুকখুক করে কাশে এরপর মিনমিন করে বলে, বিয়ে তো এখনো হয়নি৷ তার আগেই বউ-মিসেস বানায় দিচ্ছো!

সে বলে উঠে, বিয়ে করেননি তাও সার্ভিস তো ঠিকই নেওয়া হয়। হু? রাত একটা বাজে ওর কাছে গরম ভাত চাওয়া হয়? কেন রে? আমার বোনটা তোর বউ লাগে?

ইমান দ্রুত নড়েচড়ে বসে। আপুর কথাগুলো তাকে বড্ড বিব্রত করাচ্ছে৷ সে শার্টের টপ বোতাম খুলে ফেলে। কেন যেন এখানে আসাটাই বৃথা মনে হচ্ছে। সে বিড়বিড় করে বলে, খুব দ্রুত বিয়ে করে নিয়ে যাব৷

তারপর আওয়াজ তুলে বলে, কার সঙ্গে নদী ভ্রমণে বেরিয়েছে?

— রাকিব নিয়ে গেল। রাকিবকে চিনিস? আমার দেবর৷ অবশ্য ওর চাচাত ভাই হয়৷

সে বিরক্তিতে চ উচ্চারণ করে বলে, বুড়িগঙ্গায় ঘুরতে যাওয়ার কী আছে? ময়লা-আবর্জনায় ভরা৷

সোনালী মিটমিট হেসে বলে, তোর কেন জ্বলে রে? এখন ঘুরতে গেলেও তোকে সঙ্গে নিয়ে যাবে ও?এককাজ কর, মিরাকে নিজের কলিজার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখ৷

ইমান অপ্রতিভ কন্ঠে বলে উঠে, “আপু”

আপু আবারো হাসল। এরপর বলে, আয় খেতে আয়।

— খাব না এখন৷

— আমার শ্বশুড়বাড়ি প্রথম আসলি। না খেয়ে যেতে দিব কীনা। এছাড়া আর কোনদিন আসবি তার ঠিক আছে? এরপর এক দন্ড থেমে বলে, কত বছর পর আসলি দেশে। দাদী আর আব্বু একদম ঠিক করেছে। তোদের দুইজনের বিয়ে ঠিক একদম উচিত কাজ করেছে। বউয়ের জন্য হলেও চ্যালচ্যালাইয়া দেশে আসবি এবার। নাহলে নানী-বোনের কথা তো নিউইয়র্ক গেলে মনে থাকে না৷ বিদেশের হাওয়া লাগে তোর।

সে কিঞ্চিৎ হাসলো। আপু উঠে যেতেই, সে ফোন বের করে ফোন লাগায় মিরাকে। বাংলাদেশ আসার পরপরই সোনালী আপু তাকে মিরার নাম্বার দিয়েছিল। আপু নাম্বার দিয়েছিল ফোনে কথা বলার জন্য।দুজনের মধ্যে চেনা-জানা হওয়ার জন্য। কিন্তু সে নাম্বার সেইভ করে রেখেও কল তো করেই নি বরং একটা ম্যাসেজও দেয়নি৷ আজ নিজ থেকে মিরাকে প্রথম কল দিচ্ছে৷ কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, মিরার নাম্বারে কল দিলেও কেউ রিসিভ করল না। এতে হাল্কা চিন্তারা এসে তার মনের এক পাশ খামচে ধরে৷

আপুর ডাক পরতেই সে ডাইনিং রুমে খেতে বসে। হরেকরকমের খাবার। আপু প্লেট এগিয়ে দিল। এদিকে তার খাওয়ায় একদম মনোযোগ নেই বরং প্রতি মনোবিয়োগ হচ্ছে। আচানক তার ফোন বেজে উঠল। সে কল রিসিভ করতেই, একটা পুরুষালী ভরাট কন্ঠে এক লোক বলে উঠে, আপনি মাত্র একটা নাম্বারে কল দিয়েছিলেন। সেই সিমের মালিক আপনার পরিচিত কেউ?

ইমান হতভম্ব হলো। সে এইমাত্র মিরাকে কল দিয়েছিল৷ লোকটি কি মিরার কথাই বলছে? সে বলে উঠে, কার কথা বলছেন?

— আমি সিটি হাসপাতালের একজন কর্মচারী। আপনি যেই মেয়েটাকে কল দিলেন, উনি এখন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি। উনার ফোনে সমস্যা হচ্ছে জন্য তার আত্নীয়দের জানাতে পারছি না। আপনি কল দিচ্ছেন দেখে আপনার নাম্বার কালেক্ট করে কল দিলাম। আপনি তার পরিচিত কেউ হলে রুগীর কাছে আসুন৷

কথাগুলো কর্ণপাত হওয়া মাত্র তার যেন দুনিয়া থমকে যায়৷ পা থেকে মাটি ক্রমশ সরে আসতে লাগে৷ মাথা ঝিম মেরে উঠে মিরা হাসপাতালে ভর্তি কেন? কি হয়েছে ওর? এসব প্রশ্ন করার মতো পরিস্থিতি রইল না তার। সে মিনিট দশ মূর্তির মতো বসে থাকে। এই দশটা মিনিট তার কাছে দশ মাসের মতো দীর্ঘ লাগলো। এরপর হুট করে উঠেই দ্রুত গতিতে বের হয়ে যায়। আপু পেছনে থেকে তাকে ডাকতে লাগে। সে সাড়া দেওয়ার মতো মানসিকতায় ছিল না তখন৷

____________________

তীব্র পা ব্যথা আর বিচ্ছিরি একটা গন্ধে মিরা জাগ্রত হলো। চোখ খুলেই সে প্রথমে ব্যথা অনুভব করে। এজন্য আপনা-আপনি তার মুখ থেকে “উফ” শব্দটা বেরিয়ে আসে। সে অধো অচেতন অবস্থায় নিজের পেটের উপর ভারী কিছু অনুভব করে। ঘাড় তুলে তাকাবার সামর্থ্য নেই জন্য বুঝতে পারছে না ভারী জিনিসটা আসলে কী? নিজের অবস্থান বোঝার চেষ্টা করল। পরমুহূর্তেই মনে পড়ল, দুপুরে তার দিকে দ্রুতগামী একটা বাইক ছুট্র আসছিল। এরপর আর কিছু মনে নেই। আচ্ছা সে এখন কোথায়? চোখ খুলেই সে ফ্যান ঘুরতে দেখছে। আশেপাশে তাকানোর জন্য ঘাড় নাড়াতে পারছে না সে। শুধু পেটের উপর কিছু একটার উপস্থিতি অনুভব করছে৷ সে নিজের হাত উঠালো। হাতে ক্যানেল। তার বুক আতকে উঠে। সে কী হাসপাতালে? মা-বাবা কোথায়? আর সে-ই বা কোথায় আছে বর্তমানে?

নিজের হাতটা পেটের ওই জিনিসের উপর রাখতেই কিছুটা নড়েচড়ে সরে যাওয়ার পদক্ষেপ অনুভব করে। আচমকা মিহি কণ্ঠে বলে উঠে, এখন কেমন লাগছে?

মিরা চকিতে উঠে। এই কণ্ঠ তার পরিচিত। সে বহু কষ্টে বামে ফিরে তাকালো। তার পাশের চেয়ারে ইমান বসে আছে। ছেলেটার চোখ লাল। মনে হয়, না ঘুমিয়ে আছে জন্য চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণা করেছে৷ সে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু বলার শক্তিটা বোধহয় তার শরীরে নেই৷

ইমান এই প্রথম তার উপর সহানুভূতি দেখালো। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, তুমি রেস্ট নাও। চিন্তার কিছু নাই। সব ঠিক আছে। সামান্য একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। পায়ে ব্যথা পেয়েছো। এই যা ভয়ের কিছু নেই। আর তোমার আব্বু-আম্মুও আছে। হাসপাতালে বেশি মানুষ এলাও করেনা জন্য আমি একাই আছি আপাতত।

মিরা বলে উঠে, আপনি কেন আছেন?

এই কথায় যেন ইমান তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। এরপর বলে, জেনে যাবে কেন না ঘুমিয়ে তোমার পাশে আছি৷

মিরা ঘাড় নড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ব্যথা পাচ্ছে সে।

ইমান বলে উঠে, কিছু খাবে মিরা?

মিরা তার দিকে তাকিয়ে বলে, পানি খাব৷

ইমান সঙ্গে সঙ্গে পানি এগিয়ে দেয়। সে বলে উঠে, ঠাণ্ডা পানি নেই?

ইমান উঠে দাড়ালো এবং বিনাবাক্যে দুই মিনিটের মধ্যে ঠাণ্ডা পানি এনে দেয়। মিরা পানি পান করে। তখনি তার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চাপে। ইমানকে শায়েস্তা করার বুদ্ধি। এই ছেলেকে দিয়ে সে আজ অযথা খাটাবে যেমনটা ও তার সঙ্গে করে৷ পানি খেয়ে মিরা মিষ্টি করে বলে, আমার জুস খেতে ইচ্ছা করছে৷

ইমান অদ্ভুত ভাবে তার দিকে তাকালো। তা দেখে মিরা বলে, হাসপাতালে ভর্তি জন্য কী জুস খাওয়া মানা?

এই কথায় ইমানের চাউনি স্বাভাবিক হলো। সে উঠে দাঁড়িয়ে সত্যি একটা জুসের বোতল আনলো। তা দেখে মিরা বলে, ইয়ে মানে আমার ম্যাংগো জুস খেতে ইচ্ছা করছে৷ অরেঞ্জ জুস পছন্দ না আমার৷

ইমান মাত্র খেয়াল করে এটা অরেঞ্জ জুস। সে বিরক্তিপ্রকাশ না করে আবার ক্যান্টিনে গিয়ে জুস পরিবর্তন করে এনে তাকে দেয়। মিরা ভদ্র মেয়ের ন্যায় জুস খায়।

জুস খাওয়ার মিনিট এক পর সে বলে উঠে, আমি চা খাব৷ মাথা ব্যথা করছে। চা খেলে ব্যথা দূর হবে৷

ইমান পকেটে হাত গুটিয়ে নিল এবং বলল, চা খেলে ব্যথা দূর হয়?

— হ্যা হয়৷

— আচ্ছা৷

সে আবার হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল। তা দেখে মিরা হাসতে হাসতে শেষ। তার ভীষণ মজা লাগছে৷

এবারে ইমান পনের মিনিট পর ফিরে আসে। তাও দুঃখী দুঃখী মুখ করে। সে হাপাতে হাপাতে বলে, রাত হওয়ার জন্য চা ক্যান্টিনে নেই৷ এক নার্সকে বলে এসেছি। স্টাফ কোয়ার্টার থেকে বানিয়ে এনে দিবে৷ একটু অপেক্ষা কর প্লিজ৷

ইমানের কথায় আজ কোন তেজ নেই। বরং ঝড়ে হেলে পরা গাছের মতো দুর্বল তার কণ্ঠস্বর।

মিরা মন খারাপ হওয়ার ভান ধরে বলে, আপনাকে অনেক কষ্ট দিলাম তাই না?

ইমান নিজের চুল ঠিক করতে করতে বলে, আরে না। তুমি অসুস্থ। তোমার খেয়াল রাখা আমার দায়িত্ব। আর কিছু দরকার?

ইমান জানে মিরার আর কোন কিছুর দরকার নেই৷ সব দরকার ফুরিয়ে যাওয়ার কথা৷ কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে মিরা বলে, আমার না ক্ষুধা পেয়েছে৷

ইমান ফোস করে একটা দম ফেলে বলে, ক্যান্টিন এখনো খোলা আছে৷ আমি খাবার আনছি৷

মিরা পুনরায় হাসল। ইমান তার জন্য চাওমিন আনলো। এই একটা আইটেমই নাকী ছিল৷ কিন্তু চাওমিন সে খাবে কীভাবে? ডান হাতে ক্যানেল দেওয়া।

অগত্যা তাকে খাইয়ে দেওয়ার দায়িত্ব ইমানকে পালন করতে হলো৷ বাধা-বিপত্তি ঘটলো যখন ইমানের খেয়াল হলো সে চামচ আনতে ভুলে গেছে৷

মিরা বলে উঠে, হাত দিয়েই খাইয়ে দেন৷ আমি আপনার জন্য রাত একটায় ভাত রেধেছি৷ আপনি আমাকে খাইয়ে দিতে পারবেন না?

ইমান হাত দিয়েই তাকে খাইয়ে দিতে দিতে বলে, মামী খুব করে চাইছিল থেকে যেতে৷ আমি মানা করলাম। কারণ তার প্রেশার বেড়ে গিয়েছে। তোমার অবস্থা দেখে কাদছিল খুব।

— আফসোস হচ্ছে থেকে যেয়ে?

— উহু৷ এমনি বললাম।

আচমকা মিরা তার হাতে কামড় দিয়ে বসে৷ মিরার দাতে যেন বিষ আছে। এতো জোরে ব্যথা পেল সে। সে মুখে হাসি ফুটিয়ে রেখে বলে, ইটস ওকে৷

মিরা বলে উঠে, সর‍্যি।

ইমান আর কিছু না বলে তাকে চুপচাপ খাইয়ে দেয়। এরপর বলে উঠে, তুমি তো রাকিবের সঙ্গে ছিলে। কিন্তু হাসপাতালে তো ওকে দেখলাম না৷

রাকিবের কথা শুনেই মিরা যেন নিভে গেল। সে মলিন গলায় বলে, ওর কথা আমার সামনে বলবেন না।

ইমান ভারী মজা পেয়ে বলে, কেন?

— আজকে ও আমাকে প্রোপোজ করেছে। যা রাগ উঠেছে না আমার। মাথা কাজ করছিল না তখন৷

ইমানের ভ্রু কুচকে যায়। সে ধারণা করছিল রাকিবের মনে কিছু আছে৷ কিন্তু এতো দ্রুত রাকিব এমন স্টেপ নিবে তা ভাবে নি সে৷

সে প্রশ্ন করে, প্রোপোজ করতেই পারে৷

— উহু পারে না৷ আমি যাকে ভালোবাসি না তার আমাকে “আই লাভ ইউ” বলার অধিকার নেই। এটা একটা দামী কথা। যাকে আমি ভালোবাসি শুধু সেই আমাকে “ভালোবাসি” বলার অধিকার রাখে। যার-তার কাছ থেকে শুনতে ভালো না৷ একজনই বলবে। এবং প্রতিদিন বলবে আর যতোবার বলবে অনুভূতি প্রতিবার একইরকম থাকবে।

ইমান অবাক হয়ে গেল এবং বলে, তাহলে সেদিন যে আমি “আই লাভ ইউ” বললাম তখনো এমনি রাগ হচ্ছিল তোমার?

মিরা মুখ ফোসকে না বলে দেয়। আর সঙ্গে সঙ্গে তার উত্তর শোনার পর ইমানের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠে।

মিরা আমতাআমতা করে বলে, ওটা তো ডেয়ার ছিল। এজন্য আরকি………

ইমান বলে, সেটাই সামান্য একটা ডেয়ারই তো।

মিরা মাথা নিচু করে ফেলে। ক্ষণেই ইমান তার দিকে এগিয়ে এসে বসে। এরপর দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়।

সে কোমল গলায় বলে, তুমি কী সত্যিই কিছু বুঝো না? কিছু জানো না? কিছু দেখো না মিরা?

— কী দেখি না?

ইমান আচমকা তার একটা হাত মিরার গাল ছুইয়ে দেয় আর আরেকটা হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে, দুইদিন পর যে আমরা স্বামী-স্ত্রী হবো এটা জানো না?

মিরা বিষ্ফোরিত চোখে তার পানে তাকায়। ইমান আস্তে আস্তে তার দিকে এগিয়ে এসে গাল স্লাউড করতে থাকে। সে আবেশে চোখ বুজে ফেলে ঘণ ঘণ শ্বাস ফেলতে থাকে। এই সুযোগ ইমান তার কপালে গাঢ় কিস করে ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হয়। মিরা চোখ খুলে ফেলে। তবে বাধা দেয় না।

ইমান আরো নিকটে আসতেই কেবিনের দরজা খুলে যায়। নার্স চা হাতে ভেতরে ঢুকেই, মাগো বলে উঠে।

ভীষণ বিব্রতকর অবস্থা তখন। লজ্জায় যেন মাথা কাটা যাচ্ছে। ইমান বিড়বিড় করে বলে, ভাগ্যই খারাপ। এতো খাটলাম অথচ একটা চুমু অব্দি দিতে পারলাম না। এরা সবাই আমার দুশমন। চুমু-দুশমন।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here