ফেইরিটেল পর্ব-২৪

0
1217

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–24

মার্চের শেষ ভাগ। বলতে গেলে মার্চ মাসের অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে৷ দু-তিন দিন বাদেই বিদায় নিবে৷ কিন্তু তবুও নিউইয়র্কের বুকে এখনো শীতভাব যায়নি। উষ্ণতারা উদাসিন হয়ে মাঝে মাঝে দেখা দেয়। তবে শোশো করে বাতাস বয়ে চলছে নির্বিকারচিত্তে। বাতাসের ধ্বনি ও গাছের পাতার মড়মড় আওয়াজে চারপাশ মুখরিত। আজ নিউইয়র্কের আকাশ কমলাটে। বিকেলের সোনাবরণ রোদে অন্যরকম সৌন্দর্য বিরাজমান। ইমান মাত্র ঘুম থেকে উঠে বসল। রুমে বাতি জ্বালানো ছিল না। কাজেই হলদেটে ভাবটা তার রুমের সবখানে ছেয়ে গেছে। সে হাই তুলল। অনেক লম্বা ও ক্লান্তিকর জার্নির পর ঘুম ভালো হয়েছে৷ ঘুম ভালো হওয়ার পরও সে ক্লান্ত। সারা শরীর জুড়ে বিষাদময় ক্লান্তি৷ ভীষণ ক্লান্ত সে। চোখ জ্বালা করছে। সে দ্রুতে বেগে পা ফেলে জানালার ধারে হাঁটা ধরে। জানালার কপাট খুলে দিল৷ হিম হাওয়া বইছে। রাস্তার পাশ দিয়ে পথচারীর আনাগোনা, সব মিলিয়ে আজ যেন সবকিছুই ভীষণ অন্যরকম। সে বেশ কিছুক্ষণ জানালার ধারে চেয়ে থাকে। বিশাল, বিস্তৃত আকাশের দিকে তাকাতেই তার মনে হলোঃ আকাশ ছাড়া এই পৃথিবীতে কেউ দীর্ঘস্থায়ী না। সবাই ছেড়ে গেলেও, ফেলে রেখে আসলেও, আকাশ সবসময়ই সব জায়গায় একই রকম। বাংলাদেশের আকাশও যা, আমেরিকার আকাশও তাই! দুটো দেশের মধ্যে এই এক জায়গায় তো মিল খুঁজে পায় সে৷

কেমন বিষন্নতা চারপাশে কিংবা তার মনজুড়েই বিষন্নতা জন্য সবকিছুই বিষাদ লাগছে৷ সে জানালা থেকে সরে এসে ফোন হাতে নিল। অনেক মিসড কল এসেছে৷ হোয়াটস অ্যাপে সোনালী আপুর ম্যাসেজ এসেছে। সে সবার আগে আপুর ম্যাসেজটা দেখল এবং রিপ্লেতে লিখলোঃ নিউইয়র্কে পৌছে গেছি৷ এরপর আরেকটা ম্যাসেজ লিখল,” মিরা কেমন আছে?”

ম্যাসেজ সেন্ট করেই সে চমকিত হয়। এবং ডিলিট করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হলেই, সেটা সিন হয়ে যায়৷ আপু টাইপিং করতে লাগলো। ইমানের অস্বস্তি হচ্ছে বেশ৷ এটা কী করে বসলো সে? মিরা কেমন আছে এটা তার কেন জানতে হবে? আশ্চর্য! একমাস আগেও তার মন এতো বেপরোয়া ছিল না। আজকাল মনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে সে। যা কাম্য নয়৷

আপু ম্যাসেজ দিল। সেখানে লেখা ছিলঃ” মিরা তো ওর রুম থেকে বেরই হচ্ছে না। মাইগ্রেনের ব্যথা উঠেছে ওর। মনে হয় কান্নাকাটি করেছে বেশি। তোর এতো জলদি যাওয়া ঠিক হলো না। মাত্র বিয়ে হলো। এখন এতোটা দূরত্ব তোদের মধ্যে দূরত্ব না আনুক।”

ম্যাসেজটা পড়ামাত্র তার কপালে সুক্ষ্ম বলিরেখার ভাঁজ ফেলে। সে বিরবির করে বলে, ” আচমকা অসুস্থ কেন হলো?” সে আপুর সঙ্গে আর কথপোকথন বাড়ালো না। নিউইয়র্কে আসলে তার কী যেন হয়! কারো সঙ্গেই কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। আপুকে এভাবে ইগনোর করতেও ভালো লাগে না। বাংলাদেশ যাওয়ার পূর্বে আপু তাকে বহুবার ম্যাসেজ দিত। সে গড়িমসি করে কাটিয়ে দিত। এবার কেন জানি খুব খারাপ লাগছে। সবার জন্য মন খারাপ হচ্ছে৷ দাদী! ওনার সঙ্গে কী আর কোনদিন তার দেখা হবে! এতো দূরে সে কেন আসল? যেখানে চাইলেই চট করে কাউকে দেখতে পাওয়া যাবে না৷

তার একবার মন চাইলো মিরাকে কল দিতে৷ কিন্তু কোথায় যেন একটা দ্বিধার সঙ্গে একটা ক্ষোভ কাজ করে। ওর বাবার সঙ্গে তার সম্পর্কের উন্নতি হয়নি। উনি যদি একবারও ক্ষমা চাইতেন তবে সেকেন্ড টাইম ভেবে দেখত ইমান৷ কিন্তু অপরাধী, অন্যায়কারীরাও এতো দেমাগ দেখালো যে, হাত গুটিয়ে সেও বসে থাকবে না৷ তার মনের গুপ্ত ইচ্ছাটাকে মাটি চাপা দিল। মিরাকে ফোন দেওয়া থেকে বিরত রইল সে।

আবারো আকাশের পানে তাকালো। সাদা, পরিষ্কার, শুভ্র আকাশ। ওতো সৌন্দর্যের মধ্যেও কি যেন নাই কি যেন নাই— অনুভূতি ঝাপ্টা মারছে। খালি, খালি, শূন্য, শূন্য লাগছে সবকিছু। সে চেয়ারে গিয়ে হেলান দিয়ে বসল। ফোন চালাতে ব্যস্ত হলো। আজকে অবসরে থাকলেও সে কাল থেকেই অফিস যাবে৷ বাসায় এক একটা মিনিটকে কয়েক ঘন্টা লাগছে৷

ফোন চালাতে চালাতে সময় অতিবাহিত হয়ে বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নামল। বাতাসের তীব্রতা বেড়ে গেল। আচমকা দরজায় নক হলো। সে গলার স্বর উচু করে বলে উঠে, “ইয়েস? কাম প্লিজ।”

দরজা খুলে গেল এবং খুব মিষ্টি কণ্ঠে কেউ বলে উঠে, “হাই মিষ্টার খান।”

সে চকিতে উঠে। মিষ্টার খান বলে বহুজনই ডাকে তাকে৷ কিন্তু এতো সুন্দর ও যত্ন নিয়ে একজনই ডাকে। জুই! তার কলিগ এবং সেই সাথে বান্ধবীও বলা যায়। দে হ্যাভ এ গুড রিলেশন এন্ড আন্ডারস্ট্যান্ডিং।

চোখ উপরে মেলতেই সাক্ষাৎ হলো জুইয়ের সঙ্গে। তার ঝলমলে হাসোজ্জল মুখ দেখে ইমানও স্নান হাসল এবং উঠে দাড়িয়ে বলে উঠে,” হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ!”

জুই এগিয়ে এসে তাকে হাগ করল। সেও রেসপন্স করে এবং হেসে দিয়ে বলে, “তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো। কেমন আছো জুই? ”

জুই হাল্কা হেসে বলে, “এতোদিন ভালো ছিলাম না। বাট আজ খুব খুশি।”

ইমান তার খুশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলো না। এদেশে বেশিরভাগ মানুষই খুশি কারণ এখানে দারিদ্র্যতা নেই বললেই চলে৷ যেখানে দারিদ্র্যতার প্রকট নেই, সেখানে দুঃখ খুব কম রাস্তা মাড়ায়৷

জুই উৎসাহ দেখিয়ে বলে, “নিচে আসো।”

–” কেন?”

— “উফ, আসোই না! এতো প্রশ্ন কর কেন যেন বাঘের খাচার সামনে ফেলে আসব। আস এখনিই।”

–“ওকে আসছি৷”

ইমান ফোন বেডে ফেলে রেখে নিচে নেমে যায়৷ নিচে হলরুমের টেবিলে বিশাল বড় ফুলের বুকেট। এবং একটা কেক রাখা। কেকের উপর লেখা ওয়েলকাম ব্যাক৷ পাশেই কুকিজ, চকলেট এবং তার প্রিয় গ্রিল চিকেন উইথ গার্লিক ব্রেড রাখা। এসব নিশ্চয়ই জুই নিজে কুক করে এনেছে৷ মেয়েটা দারুণ ভালো রাঁধে। নিশ্চয়ই ডান হাতে তিল আছে। এমন চিন্তা মাথায় আসতেই তার একজনের কথা মনে পড়ে গেল। সে সঙ্গে সঙ্গে ব্রেইনকে ডাইভার্ট করল। চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে বাকি জিনিস গুলো৷ একটা হ্যান্ড মেড ওয়েলকাম ব্যাক কার্ডও আছে৷ এতো সময় কই পায় জুই?

তাকে দেখে হাসনাহেনা বলে উঠে, “তোমার জন্য জুই সেই চারটা থেকে এসব প্রিপারেশন নিচ্ছে।আর তোমার এখন সময় হলো নিচে আসার৷”

ইমান কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে কেকের দিকে তাকালো। কেকটা দেখেই তার কেমন লাগছে। শরীর খারাপ হলো নাকী তার? শরীর খারাপ লাগলেই তার খাবার দেখলে গা গুলায়।

জহির সাহেব বাসায় নেই। তবে সাদ মাত্র বাসায় ফিরল। ভাইয়াকে দেখেই গিয়ে হাগ করে বলে, “বিগ ব্রো! ঘুম থেকে উঠলে কখন ? ”

ইমান বলে উঠে, “একটু আগে।”

সাদ আস্তে করে বলে,” তোমার জন্য তোমার গার্লফ্রেন্ড কতকিছু করল৷ ইউ আর লাকি! আমাকে দেখো, আমার গার্লফ্রেন্ড কখনোই এমন কিছু স্পেশাল করেনা৷” উলটো ডেটিংয়ের সব খরচা আমার।”

ইমান চোখ মুখ শক্ত করে বলে, “সি ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড। শুধু ফ্রেন্ড হয়। ”

সাদ হেসে বলে, “জাস্ট ফ্রেন্ড ক্যান বি গার্লফ্রেন্ড ইন ফিউচার৷”

— “নট পসিবেল৷”

— “কেন?”

ইমান উত্তর দিল না৷ হুট করে শরীর খারাপ লাগছে৷ জুই কেক কাটার জন্য জোরাজোরি করলে সে কেক কাটলেও মুখে তুলল না৷ অযুহাত দিয়ে রুমে চলে আসে। বমি বমি লাগছে৷

হাসনাহেনা মুখ বাকিয়ে জুইকে উদ্দেশ্য করে বলে, “ওর সবকিছুতেই প্রবলেম৷”

সাদ পরিবেশ হাল্কা করার জন্য বলে, “বিউটিফুল লেডি, আজকের ওয়েদার এতো রোমান্টিক কেন?আমার সঙ্গে ডে*টে যাবা? ”

জুই হেসে বলে, “নেভার।”

সাদ কষ্ট পাওয়ার মতো ফেস করে। জুই উপরে উঠে যায়। ইমানের রুমে ঢুকে সে সোজাসাপটা প্রশ্ন করে, “তোমার কী মাইগ্রেনের সমস্যা? ”

ইমান মাত্র বিছানায় শুয়েছে৷ এমন প্রশ্ন শুনে সে বলে উঠে, “নাতো।”

–“ওহ। গুগলে মাইগ্রেন নিয়ে সার্চ করেছো জন্য ভাবলাম তোমার অসুবিধা হচ্ছে বোধহয়।”

ইমান নিজেও বেশ অবাক হলো। কখন যে সে মাইগ্রেন নিয়ে সার্চ দিল!

চলবে৷

[ আজকের পার্টটা অগোছালো। তার উপর ফোন বারবার হ্যাং মারছিলো জন্য লিখেও শান্তি পাইন😑]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here