ফেইরিটেল পর্ব-২৫

0
1139

#ফেইরিটেল
#Arishan_Nur (ছদ্মনাম)
Part–25

হুট করেই আকাশটা মেঘলা হয়ে গেল। ঘণ হয়ে ধেয়ে আসতে লাগলো মেঘকুঞ্জ৷ এমন ধুলো ওড়া বাতাসের মাঝে বৃষ্টি তেমন একটা হয়না। কিন্তু ইমানকে বোকা বানিয়ে দিয়ে ঝুমঝুম করে রেইনফল হলো। নিউইয়র্ক রেইনফলের চেয়ে স্নো-ফলের জন্য বেশি ফেমাস৷ তার মানে এই না যে নিউইয়র্কের বৃষ্টি সুন্দর না। অপূর্ব সুন্দর করে বৃষ্টি নামে এখানে৷ স্বচ্ছ, টলটল, পরিষ্কার বৃষ্টি দেখামাত্র ভিজতে মন চায়৷ ইমানের রুমের উইন্ডো খোলা আছে হাট করে। বৃষ্টির ফোঁটা এসে রুমের একভাগ ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে৷ সে বেডে বসে লাইট নিভিয়ে দিল। নিশ্চুপ লোকালয়ে বৃষ্টি পড়ার শব্দ অন্য এক ভূবনের স্বাদ দেয়। মনে হবে কোন বন-অরণ্যের মাঝে বসে আছে সে। লাইট নিভিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তার রুমে কেউ প্রবেশ করে। এখানে লাইট বন্ধ করে রাখলে কেউ আর ডিস্টার্ব করেনা। আজ ব্যতিক্রম হলো যেন৷ কেউ দরজার নব ঘুরিয়ে ভেতরে ঢুকে। তার পায়ের শব্দ ইমানের কানে এলো। অবশেষে ছায়ামূর্তি বলে উঠে,

–“মিষ্টার খান, আপনি কী একটু বেশি সিক?”

ইমান সচকিতে উঠে। এবং হাল্কা গলায় বলে, ” সামান্য সিক। রেস্ট নিলে সেরে যাবে৷”

সে এগিয়ে এসে তার সামনে দাড়ালো। ইমান একবার চোখ তুলে তাকালো। এবং সেকেন্ডের মধ্যে চোখ নামিয়ে নিল৷

জুই জানালার দিকে তাকিয়ে বলে, “বৃষ্টিতে সব ভিজে যাচ্ছে তো।”

–” ভিজুক।”

জুইয়ের কি যেন হলো। ইমানের চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করল। এরপর সে চেয়ার টেনে এনে ইমানের মুখোমুখি বসে মিষ্টি গলায় বলে, ” মন খারাপ কী জন্য?

ইমানের জুইয়ের কথায় হচকচিয়ে যায়৷ এতোক্ষণ পর সে নিজে উদাসীন থাকার কারণ ধরতে পারল। তার আসলে মন খারাপ। এই সামান্য বিষয়টি মাথায় আসেনি৷

সে জুইয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,” কীভাবে বুঝে গেলে? আমি নিজেই তো ধরতে পারছিলাম না৷”

–মন খারাপ হলেও বুঝো না?

–” প্রথমবার মন খারাপ হলো সেজন্য বুঝিনি। এরপর যদি কখনো মন খারাপ হয়, সঙ্গে সঙ্গে বুঝে ফেলব৷”

জুই ঠাট্টা করে বলে, “এমন হলে তো ফাস্ট টাইম প্রেমে পড়লে টের পাবে না।”

ইমান তার দিকে অবাক হয়ে তাকালো। জুই প্রশ্ন করে, “তোমার কি মাথাব্যথা?”

–“না।একবার বললাম তো।বাই দ্যা ওয়ে, তুমি কীভাবে জানলে আমি মাইগ্রেন নিয়ে সার্চ দিয়েছি?”

–” তোমার উপর এফবিআই গিরি করি স্যার।”

–” মজা করো না। মুডে নেই৷”

জুই তার চুলগুলো পলিটেল করার চেষ্টা করতে করতে বলে,” তোমার ফোনের স্ক্রিনে দেখেছি। সুইচ অফ না করেই ফেলে রেখে গিয়েছিলে৷”

–“ওহ।”

–” মাথাব্যথা নাহলেও তোমাকে সিক দেখাচ্ছে৷

তখন হুড়মুড় করে বাতাস বইতে লাগে। গায়ে কাঁটা দেওয়ার মতো শীতল বাতাস। এ বাতাসে মনে হয় সব উড়ে নিয়ে যাবে৷ জুইয়ের চুলও বেশ ভালোভাবেই উড়াউড়ি শুরু করল। ঘর ক্রমশ অন্ধকার হতে লাগলো। অবশ্য বাইরে থেকে আলো আসছে। কিন্তু পর্দার বেসামাল নড়চড় যখন-তখন অন্ধকারের আগামন ঘটাচ্ছে৷ ইমান সেজন্য বাতি জ্বালিয়ে দিল। হলদে রঙের আলো নির্গত হয় এই বাতি দিয়ে। হাল্কা টিমটিমে চোখ না লাগার মতো এর ভোল্টেজ। এই বাতির নিচে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলেই ঘুম পাবে ভীষণ।

বাতি জ্বালানোর সাথে সাথে জুইয়ের মুখশ্রী দৃশ্যমান হলো৷ মেয়েটার চেহারায় লাবণ্যতায় ঘেরা৷ টানা টানা চোখে যখন তাকায়,মনে হবে সে মনের ভেতরটা পড়তে জানে৷ সে আপাতত ব্যস্ত তার চুল নিয়ে। ব্রাউন কালার করা চুলগুলোকে একসঙ্গে বিন্যস্ত করে ঝুটি করতে গেলে, ইমান বলে উঠে, “চুল খোলাই রাখো।”

জুই ভ্রু কুচকে তাকালো তার পানে৷ ইমান জানালার ফাক গলে কিঞ্চিৎ আকাশ টুকরোর দিকে তাকিয়ে বলে, “এমন হাওয়া-বাদলের দিনে চুলগুলোকে ছুটি দাও। উড়াউড়ি করুক। তুমি বাতাসের প্রকটে উড়ন্ত এলোমেলো চুলের ঝাপটা উপভোগ করো৷”

–“ওকে।”

ইমান আনমনে বলে উঠে, “আমি আমার প্রেয়সীকে কোনদিন এমন বৃষ্টির দিনে চুল বাঁধতে দিব না৷ বাতাসে চুলের দুষ্টুমির জন্য যতোবারই সে বিরক্ত হবে, ততোবারই আমি তার কপালে চুমু দিব৷”

লাইনটা বলেই ইমান ভীষণ অপ্রস্তুত বনে যায়। জুইয়ের সামনে এমন কথা বলা একদম ঠিক হলো না৷ সাধারণত কাজের কথা ছাড়া এমন বেখাপ্পা কথাবার্তা সে বলে না৷ কিন্তু জুই এর বিপরীত। অনর্গল কথা বলে যাবে তার সাথে। কোন সমস্যা ফেস করলেই তার কাছে আসবে। ইমান অবশ্য মন-প্রাণ দিয়ে জুইয়ের মঙ্গল কামনা করে। মেয়েটা খুব ভালো৷

জুই যেন তার কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ মানে মিষ্টার খানের মুখ দিয়ে এমন কথাও বের হয়৷ এই প্রথম প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সে তার সঙ্গে কথা বলছে। সেই সাথে জুই আরেকটা বিষয় নিয়ে খুব উত্তেজিত। মিষ্টার খান তো তাকে চুল বাঁধতে বারং করল৷ আবার বলছে নিজের প্রেয়সীকে কোনদিন এমন ওয়েদারে চুল বাঁধতে দিবে না৷ তবে কী তাকেই ইনডিকেট করল? উফফ এই ইমান এতো কমপ্লিকেটেড কেন?

দুইজনের মধ্যেই নীরবতা। জুই সর্বপ্রথম মৌনতা ভেঙে বলে, ” তোমার আসলে মনের অসুখ হয়েছে। মনকে খুশি রাখতে হবে। চল হাঁটতে বের হই। তোমার এমন আবহাওয়ায় হাঁটতে নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। সতেজ লাগবে৷ ”

ইমান বলে, আজ না। আরেকদিন যাব৷

— আরেকদিন কী তোমার মন খারাপ থাকবে? কাম অন৷ প্লিজ!

অগত্যা সে উঠে দাঁড়িয়ে ট্রাউজার চেঞ্জ করে নিল। এবং নিচে নেমে যায়। জুই তার আগেই নিচে নেমে গেছে। সে যখন করিডোর বেয়ে সদর দরজার সামনে আসলো, তখন জুই ছাতা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা বেরিয়ে গেল। হাসনাহেনা একবার তাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে কাজে মনোযোগ দিলেন৷

রাস্তায় বেরিয়ে আসলেই ইমানের সতেজ লাগা শুরু করলো। স্নিগ্ধ শীতল আরামদায়ক বাতাস এসে গায়ে ধাক্কা লাগলো। চারপাশ নিরিবিলি। কয়েকজন রেইনকোট পরে হেঁটে যাচ্ছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি পাড় হচ্ছে৷ ইমানরা মেইন সিটিতেই থাকে। তবে তার বাসা মেইনরোড থেকে দশ মিনিটের হাটাপথ৷ জুই একটামাত্র ছাতা নিয়ে বের হয়েছে৷ আর বাইরে বেশ ভালোই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে এখনো৷ সামান্য হাঁটলেই গা ভিজে যাবে। জুই ছাতা মেলে ধরে ইমানের জন্য অপেক্ষা করল। ইমান ইতস্তত করে হলেও জুই সঙ্গ নিল। দু’জনে একটা ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরে সামনের দিকে।

দুইজন নিঃশব্দে হাঁটছে। পরিষ্কার রাস্তায় কোথাও বৃষ্টির পানি জমে নেই। অদৃশ্যমান ড্রেনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে। বিশাল উচু ভবন গুলোর মাঝের রাস্তার দুইধারে গাছ আর গাছ। গাছে বৃষ্টির পানি পরায় পাতাগুলো যেন আরো ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠেছে৷ কোনদিকে একবিন্দু ময়লা কিংবা নোংরা নেই। চোখে আরাম দেওয়ার মতো দৃশ্য৷

ইমান চলতে চলতে একবার জুইয়ের দিকে পরখ করল৷ ও এমন পরিবেশ দারুণ উপভোগ করছে৷ সত্যি বলতে ঘণ ধূসর মেঘের নিচে এমন মনোমুগ্ধকর বাতাস, সঙ্গে ল্যাম্পপোস্টের হলদে আলো। বর্ননার বাইরের মুহুর্ত যেন!

সে বলে উঠে, ” জানো ভাংলাদেশে যখন বৃষ্টি হয় তখন একদম মেঘ ভেঙে বৃষ্টি নামে। মুষুলধারে বৃষ্টি হলে রাস্তায় পানি জমে যায়। একবার কী হলো জানো? বৃষ্টির মধ্যে গাড়ি বের করে বেকায়দায় পরে গেলাম। রাস্তায় এতো পানি জমে গেছে যে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে গেল। গাড়ি আর স্টার্ট হয় না৷ ”

জুই অবাক হলো। রাস্তায় পানি জমার চিন্তা তার মাথায় কোনদিন আসেনি৷ আর বৃষ্টির পানি ইঞ্জিনে ঢুকা। বাপরে! কী ভয়াবহ ঘটনা৷

সে চোখ বড় করে বলে, “ডেঞ্জারাস ব্যাপার তো। অনেক বড় বিপদে পড়ে গিয়েছিলে? ”

— “আরে ধুর। বাংলাদেশে এসব কোন ব্যাপার না৷”

— “এতো বৃষ্টির মধ্যে বের হওয়ার দরকার কী ছিল?”

ইমান উত্তর দিল না৷ কী বলবে সে? কাজী ডাকতে গিয়েছিল?

জুই অবশ্য আর ঘাটালো না। তারা মেইনরোডের দিকে এসে গেছে। মেইন রোড ধরে একাধারে বেশ কিছু শপ আছে। সবার আগে তার চোখে পড়ল আইসক্রিম পার্লার। আচানক তার আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করল। ক্রেভিংস উঠলো খুব৷ এমন ওয়েদারে আইসক্রিম খাওয়া ডিমান্ডেবেল৷

সে তার ইচ্ছে প্রকাশ করে বলে,” চল আইসক্রিম খাই৷”

ইমাম হতভম্ব হয়ে বলে, “এমন ঠাণ্ডা পরিবেশে কেউ আইসক্রিম খায়?”

— ” আমরা আইসক্রিম লাভাররা খাই৷ ”

–” তুমি খাও। এখন আইসক্রিম খেলে আমার টনসিল ফুলে যাবে৷ ”

জুই তাকে আর জোরাজোরি করল না। সে একটাই বাটারস্কচ ফ্লেবারের আইসক্রিম কিনল। এবারে ছাতা ধরল ইমান। জুই আইসক্রিম খাচ্ছে। তারা ফিরে আসছে। উলটো পথ ধরল। দু’মিনিট হাটার পর জুই তার মুখের সামনে আইসক্রিম ধরে বলে, “টেক আ্য বাইট৷ ”

এর আগে বহুবার জুইয়ের সঙ্গে ফুড শেয়ার করেছে সে। তাই কোন বাহনা না দিয়ে ইমান জাস্ট একটা বাইট নিল৷ আইসক্রিম খেয়ে সে জুইকে ফেরত দিল। জুই তার আড়ালে ওই জায়গায় একটা বাইট বসালো। যে-জায়গা থেকে ইমান মাত্র বাইট নিল।

বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় নিয়ে আইসক্রিম খাওয়ার অভিজ্ঞতা এই প্রথমবার হলো ইমানের বিষয়টা মজার অনেক। তার কেন যেন মনে হলো, এই জায়গায় মিরা থাকলে অনেক বেশি মজা পেত মেয়েটা৷ না জানি অসুস্থ অবস্থায় ঠিকঠাক কিছু খেতে পারছে কিনা!

–” কী ভাবছ?”

ইমান থেমে গিয়ে দূরের সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, “একজনের কথা ভাবছি। সে অসুস্থ। ”

— “তার দ্রুত সুস্থতার জন্য দোয়া প্রার্থনা করছি৷”

ইমান পুনরায় উদাস হয়ে পরে। জুই ব্যাপারটা খেয়াল করল। মিষ্টার খানের খুব কাছের কেউ অসুস্থ কী?

ইমানের বাসার সামনে এসে দুইজনই থামল। ইমান বাসায় ঢুকার আগে জুইকে বলে, “থ্যাংক ইউ জুই৷ বিশ্বাস কর এখন অনেক টা হাল্কা লাগছে৷ কালকে দেখা হবে অফিসে৷ ”

— “বাই৷”

জুই ছাতা হাতে তার বাসার দিকে হাটা ধরল৷ ইমান একবার তাকে দেখেই ভেতরে ঢুকে যায়৷

বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে সে ফোন হাতে নিয়ে বসল৷ অনেক ভাবার পর সে সোনালী আপুকে সরাসরি কল দিল। আপু তিনবার রিং হওয়ার পর ফোন ধরে বলে, “নিউইয়র্কবাসীর আমার কাছে কী?”

ইমান চুপ করে থাকলো৷ সকালে তাকে ইগনোর করায় আপু রেগে আছে বোধহয়।

ইমান এসব তোয়াক্কা না করে বলে, “মাইগ্রেন হলে কালিজিরার গন্ধ নাকে নিলে রিলিভ পাওয়া যায়৷ ”

— “এটা আমাকে বলে লাভ কী?”

— “কোন লাভ নাই তোমার। ”

— “তাহলে আমাকে কেন বলা হচ্ছে? যার মাইগ্রেনের ব্যথা উঠছে, তাকে গিয়ে বল কালিজিরার গন্ধ নিতে। ”

— “তুমি বলে দিও৷ ”

— “তুই বললে কালিজিরা কাজ করবে না?”

ইমান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বলে,” এতো প্যাচাও কেন?”

— “তুই প্যাচাস সবকিছু। কী সমস্যা তোর? মিরা কত আপসেট হয়ে আছে! বেয়াদব একটা। তুই মিরাকে কল দিস না কেন? ”

ইমান দু’মিনিট চুপ থেকে বলে, “ঝগড়া হইছে৷”

আপুর সঙ্গে কথা বলে ফোন রাখতেই বাংলাদেশী নাম্বার থেকে কল আসে একটা। সে মনে মনে খুশি হলো। মিরা কল দিতে পারে। তার উচিত কল দেওয়া। সে এতো পথ পাড়ি দিয়ে এলো, শক্রু হলেও অন্তত একটা কল দিয়ে খোঁজ নেওয়া মানবিকতার মধ্যে পড়ে৷ সে এক বুক আশা নিয়ে ফোন রিসিভ করে৷ কিন্তু তার আশায় পানি ঢালা হলো যেন। বিল্ডার্ডস কল করেছে তাকে। উনি আনন্দের সঙ্গে জানালেনঃ “আগামীকাল বাসা ছাড়ার নোটিশ দিব ভাইয়া। তিন মাস সময় দেওয়া হবে। এরপর বাসা ভেঙে আগামী পাঁচ মাসের মাথায় কন্সট্রাকশনের কাজ শুরু করা হবে৷”

_____________________

রাতে ইমান শুধু গ্রিন টি খেল। এবং শুতে যায়। কাল অফিস যেতে হবে৷ অনেক কাজ পড়ে আছে৷ আজ সাউন্ড স্লিপ দরকার। কিন্তু ঘুম বাবাজির দেখা নাই। সে বিছানায় গড়াগড়ি করল। এরপর বিরক্ত হয়ে উঠে বারান্দায় গেল। তখনো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে৷ আজকে কী তবে আকাশেরও মন খারাপ?

সে একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকালো। শুকতারা দেখা যাচ্ছে। চাঁদ আপন গতিতে মিষ্টি কিরণ বিলিয়ে দিতে ভারী ব্যস্ত৷ জোত্যি ছড়াচ্ছে। সেই জোত্যির সঙ্গে টুপটুপ বৃষ্টি কেমন গা ছমছমে ভাব তৈরি করছে৷

সে ফোন বের করে কাঙ্খিত নাম্বারে কল দিল। ওই সময় তার বুকে দ্রিমদ্রিম শব্দ হতে লাগে৷ সে কী সম্মুখীন হতে ভয় পাচ্ছে?

ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হলো। মিরা বলে উঠে, “হ্যালো?”

কণ্ঠটা শোনামাত্র কোথা থেকে যেন এক পশরা শান্তি তার মনে এসে আছড়ে পড়ল। সে মুখ দিয়ে কোন শব্দ উচ্চারণ করতে পারল না৷

মিরাও চুপ রইল। তার গলার স্বর ভেঙে গেছে বোধহয়। দুইজন প্রায় ছয় মিনিট চুপ থেকে সিম কোম্পানির লাভ বাড়ালো৷ অবশেষে ইমান নীরবতা ধ্বংস করে বলে, কেমন আছো?

সুদীর্ঘ সাত সমুদ্র তের নদীর ওপ্রান্ত হতে মিরা বলে উঠে, “ভালো নেই৷”

ইমানের বুক ছ্যাত করে উঠল। সে নির্বাক হয়ে পড়ে৷ মিরা বলে উঠে, ” এই কথাগুলো শোনার জন্যই তো এতো ব্যাকুলতা! এতো শ্রম দিলেন আমার উপর । আপনি সফল হয়েছে৷ আমি ভালো নেই। খুশি? এবার সেলিব্রেশন করুন৷”

মিরার খোটা মারা কথাগুলো তার মনকে করাত দিয়ে কেটে দু’ভাগ করে দিল যেন। মিরার বলা কথাগুলো তার ভেতরকার ব্যক্তিকে নাড়িয়ে তুলল। অশান্তি নামক কুচকুচে বিশ্রী পাখিটা আবারো মনের রাজ্যে এসে হানা দিল৷ সবকিছুই আগের মতো বিষাক্ত হতে লাগলো৷

রাতের হাসনাহেনা বেশ রাগী চেহারা নিয়ে জহির সাহেবের কাছে অভিযোগ করে বলেন,” তোমার বড় ছেলে খুব বাড়াবাড়ি করে। আমরা রক্ষণশীল সভ্য পরিবার থেকে বিলং করি। আমেরিকায় থাকলেও আমরা মুসলিম কালচার মেনে চলি। সে বাসায় মেয়ে এনে একসঙ্গে রুমে একা সময় কাটায়। এসব বেহায়াপনা আমি সহ্য করব না৷”

জহির সাহেব অবাক হয়ে স্ত্রীর দিকে তাকালো। উনি বলে উঠে, ” ছেলের চরিত্র নষ্ট হওয়ার আগে বিয়ে দিয়ে দাও৷”

জহির সাহেব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। আসলেই কী তার ছেলে এমন বেহায়াপনা করে? তার বিশ্বাস হলো না৷ তবুও ছেলের বিয়ের বয়স হচ্ছে। বিয়ে তো দেওয়া উচিত।

চলবে৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here