ফেরা পর্ব-১১

0
531

ফেরা

১১.

ওয়াশরুমের প্রয়োজন হওয়াতে শাজু নিধিদের ফ্ল্যাটে যেতে বাধ্য হলো। এই ফ্ল্যাটে তার দমবন্ধ লাগে। পুরনো স্মৃতিগুলো তাকে নিশ্বাস নিতে ভুলিয়ে দেয়। যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই ঘটলো। সিঁড়ি ভেঙে আসলেই ভালো হতো। কী ভেবে যে লিফটে উঠলো সে! নিজেকেই থাপড়াতে ইচ্ছা করছে। লিফটে একাই ছিলো কিন্তু ভুলে গ্রাউন্ড ফ্লোরের বাটনে চাপ দিয়েছিল। গ্রাউন্ড ফ্লোরে নামার পরে লিফটের দরজা খোলার সাথে সাথে সঞ্চয়কে দেখল। না দেখার ভান ধরেও লাভ হলো না। নিজেকে আবার এলোমেলো লাগতে শুরু করেছে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না। নেমে যাবে কিনা? কিন্তু তার আগেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। সঞ্চয় তার পাশে এসেই দাঁড়িয়েছে। মনে হলো তার পুরনো ক্ষতে কেউ লবণ মরিচ ছিটিয়ে দিয়েছে। হাতেই মোবাইল ছিল। নিধির নাম্বার থেকে ফোন এসেছে। রিসিভ করতে যাবে তখন সঞ্চয় মোবাইল ওর হাত কেড়ে নিয়ে বলল, ” সিম চেঞ্জ করেছ?”
” হুম ”
” তুমি আমার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছ না কেন?”
” এমনিই ” সঞ্চয় কিছু না বলে শাজুর মোবাইলে নিজের নাম্বার টাইপ করে ফোন দিয়ে নাম্বার নিয়ে নিল। তারপর শাজুর হাতে মোবাইল ধরিয়ে দিয়ে বলল, ” এতো সাজগোজ কেন করেছ? ”
শাজু কোনো উত্তর না দিয়ে সঞ্চয়ের নাম্বার ডিলিট করায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
” তো সেক্স কেমন লাগলো? ” শাজু প্রশ্নটা করতে চায়নি কিন্তু মুখ থেকে বের হয়ে গেছে কীভাবে যেন!
” কিন্তু আমরা তো এখনো ওইদিকে যাইনি। তাহলে কীভাবে বলি?” সঞ্চয় এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। তার হঠাৎ মজাই লাগছে নিজের প্রাক্তনকে দেখতে। মেয়েটা আগের মতোই আছে। চেষ্টা করছে সাহসী হওয়ার। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ডুকরে মরছে। যেমনটা তার হচ্ছে।
” আপনার নতুন জিএফের কথা বলছি। ”
” সে আমার জিএফ না৷ সে আমার ফ্রেন্ড। বলতে পারো ফ্রেন্ড উইথ সাম বেনেফিট! কিন্তু তাই বলে বিছানায় যাইনি। ওটার জন্য তোমাকে ছাড়া বেস্ট অপশন আমি খুঁজে পাব না। Sex is fun i believe. But it gives beautiful pleasure when the person you’re shareing the bed with is your loved one, whom you can call only yours & for me that person is you whom i can call mine. ” শাজু কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। সঞ্চয় এইভাবে তাকে বোল্ড আউট করবে ভাবতে পারেনি।
” শাজু, আমি তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করি? ”
” না ”
” আজকে রাতে আমার সাথে একটু কথা বলতে পারবা? অল্প কিছু সময়ের জন্য? প্লিজ? ”
” কেন?”
” তখনই বলবো। তুমি প্লিজ…” সঞ্চয় তার কথা শেষ করতে পারলো না৷ তার আগেই লিফটের দরজা খুলে গেল৷

*****
” আচ্ছা বলুন। ” শাজুর কথা বলতে ইচ্ছা করছিল না। কিন্তু এতবার অনুরোধ করাতে নাও করতে পারেনি।
” আমার পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি আমার সাথে প্রতিদিন এক মিনিটের জন্য হলেও কথা বলবে? আমি জানি এই অনুরোধটা হাস্যকর। কিন্তু আমি ঠিক পারছি না। আমি থিতু হতে পারছি না। ”
” রিদ্দি আপুকে বলেন৷ তিনি তো আছেনই । আমাকে কেন? আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। তাহলে যোগাযোগ রাখার কোনো মানে হয়না৷ ” শাজুর কথায় সঞ্চয়ের বিরক্তির পরিমাণ বাড়লো।
” বারবার রিদ্দির নাম তুলো কেন? আমার তোমাকে প্রয়োজন। ওকে প্রয়োজন হলে তোমাকে কেন অনুরোধ করব? ”
” আমার পক্ষে সম্ভব না। ”
” আমার পরীক্ষাটা অব্দি? প্লিজ শাজু। পরীক্ষা শেষ হলে আমি তোমাকে আর বিরক্ত করবো না। প্রমিজ করছি। ”

*****
এসএসসির লাস্ট ব্যবহারিক পরীক্ষা দিয়ে বাসায় ফেরার উদ্দেশ্যে রিক্সায় উঠবে। এমন সময় ৫-৬ জন মেয়ে তাকে জোর করে রিক্সায় উঠতে দিলোনা।
খুবই সুন্দরী একটা মেয়ে এসে প্রথমেই ওর চুলের মুঠি ধরে হেচকা টান দিলো। শাজু ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো।
মেয়েটা বলতে লাগলো
– সঞ্চয় তোর এই চুল খুব পছন্দ করে তাই না? এই চুলই রাখবো না।
মেয়েটার হাতে অন্য একটা মেয়ে কেচি দিয়ে বললো
– মাগীর গোড়া থেকে চুল কেটে দে।
রাস্তার লোকজন হা করে দেখছিলো। কেউই কাছে আসলো না। শাজু শুধু চিৎকার করে সাহায্য চাচ্ছিলো।
চুল কেটে ফেলার পর ঠোঁটের উপর ঘুষি মেরে বললো
– তোর সাথে কিছুই রাখবো না। দেখি সঞ্চয় কী কারণে তোর কাছে থাকে।
তারপর যা হলো শাজু কোনোদিনও কল্পনা করতে পারেনি এমন হতে পারে। সঞ্চয় ঢাকায় নেই। আর এই সুযোগে রিদ্দি তার লালন করা স্বপ্নটাকে পূরণ করলো।
নিধিও ছিলোনা আশেপাশে। রত্না এই অবস্থা দেখে এগিয়ে এসে মার ঠেকানোর চেষ্টা করেছে। ক্লাসে যতোই শত্রুতা করুক ক্লাসমেট তো।
অনেক কষ্টে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার পরে শাজুকে হাসপাতালে নেয়া হলো।
পুরো মুখ নীল হয়ে ফুলে গেছে। ডান পাশে চোয়ালে গভীর লম্বা ক্ষত৷
ঠোঁটের কিনারা থেকে রক্ত পড়ছে। মুক্তাকে খবর দেয়া হলে পাগলের মতো ছুটে আসলেন।
পুরো স্কুলে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লো। একেকজন একেক ভাবে গল্প বানাতে শুরু করলো।
মুক্তারও জানতে বাকি রইলো না তার মেয়ের প্রেমের খবর।
মেয়েকে রাগ করারও স্কোপ খুঁজে পাচ্ছেন না। মেয়ে অনেক অসুস্থ।
মুখের দিকে তাকানো যায়না এমন ভয়াবহ অবস্থা।
সঞ্চয় ঘটনাটি ঘটার দিনেই জানতে পারলো কিন্তু এদিকে সে দেশের বাড়িতে কাজে এসেছে।
নিধির সাথে যোগাযোগ আছে তারপরও নিজে থাকার মধ্যে অনেক পার্থক্য।
রিদ্দি এই ধরনের কাজ করতে পারে ওর জানা ছিলোনা। জানলে কোনোদিনও শাজুর কথা ওকে জানাতো না।

ঢাকায় ফিরে আসার পরে শাজুকে হাসপাতালের বেডে ওভাবে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলো সঞ্চয়।
শাজুর কোমড় অবদি চুল নেই। কাধ অবদি চুল তাও অনিয়মিত ভাবে কাটা। পুরো মুখ নীল হয়ে ফুলে আছে। তার জন্যই কি এমন হলো?

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here