ফেরা পর্ব-১২

0
534

#ফেরা

১২.

ছয় বছর পরে…

সকাল থেকে আকাশ মেঘলা হয়ে আছে৷ মনে হচ্ছে এখনই অঝোর ধারায় বৃষ্টি শুরু হবে। কিন্তু হচ্ছে না। সেই মেঘের ফাঁকা দিয়ে রোদ উঁকি দিচ্ছে। জানালার কাছের হাসনাহেনা গাছের ফুলগুলো কেমন নেতিয়ে আছে। রাত হলে এর তীব্র ঘ্রাণে ঘুম আসে না। একদম দক্ষিণে ঘরটা হওয়ায় কেউই এদিকে খুব একটা আসে না৷ তাকেও কেউ খুব একটা ঘাটায় না৷ চাচী তাকে কিছুক্ষণ আগে রান্নাঘরে যেতে বলেছেন৷ আজকে কাজে মন বসছে না তার৷ উদাসীনতার সীমা আজকে মনে হয় সে পার করে দিবে৷ তার ঘরের কাছে নাসরিনের কণ্ঠ শুনতে পেল। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে নাসরিন চড়া গলায় বললেন, ” চাচী যে তোমারে ডাকতাছে সেইটা কানে যাচ্ছে না?”
” আজকে শরীর ভালো লাগছে না৷ ”
” শুনে এসে না হয় আবার রেস্ট নিও। ” নাসরিন চলে যাওয়ার পরে সে রান্নাঘরের গেল। চাচী আজকে মহাব্যস্ত। গাল ভরা পান নিয়ে বেশ আনন্দের সাথে খুন্তি চালাচ্ছেন। তার উপস্থিতি টের পেয়ে পেছনে না ঘুরেই বললেন, ” তোর চাচা তোরে ডাকছে। আর ওড়না ঠিক রাখিস। এতো বড় হইছিস এখনো নিজের ভালোডা বুঝোস না৷ মরলে তোর মারে আমি কী হিসাব দেখামু? বল? তোর মা যখন জিগাবে, ‘ বুবু, আমার মেয়েটারে তুমি কেমন রাখছ? ‘ তখন কী উত্তর দিমু, বল?”
নাসরিন হাসতে হাসতে বলল, ” মনো বু, কথা কমায়া কাজে মন দেন৷ পরে আপনার স্বামী চিল্লাপাল্লা লাগায়া দেবেনে। ” মনো ঝাড়ি দিয়ে বললেন, ” আমারে কথা বলতে দে। এরপরে আর মন খুইলা কথা হবে কিনা কে জানে। ” তারপর পেছন ফিরে বললেন, ” তাহিরা, চাচার জন্য এক কাপ চা নিয়া যাও। তোমার হাতের চা তার খুব পছন্দ। ঘুমের ঘোরেও সে তোমার নাম ধরে ডাকে আর চা চায়। ”
তাহিরা চা বানিয়ে চাচার ঘরে গেলেন। চাচা তার আরাম কেদারায় বসে বই পড়ছিলেন। তাকে দেখে বই রেখে ইশারায় পাশের টুলে বসতে বললেন। আজহারুল ইসলাম চায়ের কাপ নিয়ে বললেন, ” অসুস্থ নাকি? ”
” না ”
” মাস্টার্স এ ভর্তি হয়ে গেছ?”
” জ্বি, চাচা ”
” ক্লাস কবে থেকে? ”
” এখনো বলেনি৷ ”
” তোমার লায়লার কথা মনে আছে? আমার বড় ফুপুর মেয়ের ঘরের মেয়ে? উইযে তোমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদেছিল?”
তাহিরা মনে করতে পারলো না ঠিক। তাকে দেখে সবাই প্রায় জড়িয়ে ধরে বা কষ্ট পায়।
না বললে চাচা বিভিন্ন ভাবে তাকে চেনানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে যাবেন৷
মিথ্যা বলতেও ইচ্ছা করছে না৷ তার এক মিথ্যায় অনেক বড় ধরনের ঝামেলায় তাকে পড়তে হয়েছিল। সে কথা ভাবতেও ভয় লাগে।
” না ”
আজহারুল ইসলাম ভাতিজীকে অবাক করে দিয়ে বললেন, ” থাক চিনতে হবে না। সে তোমাকে তার ঘরের বউ করতে চান। আজকেই ও কাবিন করিয়ে রাখতে চাচ্ছেন। তোমার কি মত?”
তাহিরার হ্যাঁ বলা ছাড়া উপায় নেই। চাচার হুকুম অমান্য করার সাহস তার এজন্মে হবে না।
” ছেলে আপনার মতো ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হলে আমার সমস্যা নেই। ” যেখানে হ্যাঁ না এর মূল্য নেই সেখানে এভাবে কথার প্যাঁচা খাটাতে হয়।
” দেখ, মা। আমরা কেউই মানুষের অন্তরে কি আছে জানার ক্ষমতা রাখি না। পাশাপাশি ত্রিশ বছর যাবত আছি তোর চাচীর সাথে। এখনো বুঝতে পারিনি, সে তোকে পছন্দ করে কিনা। আর সেখানে ওই ছেলেকে আমি নিজেই দেখেছি দুই থেকে তিন বার। আর কোনো অবিভাবকই বিয়ের সময় সন্তানের বদনাম করেন না। তাহলে আমার জানার কথাও না। তারপরও যতদূর শুনেছি ছেলে ভালো। এইরকম ছেলের জন্য তোমাকে চাইতে পারে, এটাই অবাক করার মতো। ” মনে হলো উনি নিজেকেই বোঝাতে চাচ্ছেন।
” আমার তো বিয়ের বয়স হয়েছেই। বিয়ে তো করতেই হবে। আমার না বলার কারণ নেই। ” আজহারুল আরও কিছু বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু পারলেন না। এই কথাটা তার দ্বারা বলা সম্ভব না।
” তোমার চাচীর কাছে ছেলের একটা ছবি রেখেছি। ঘরে যাওয়ার সময় নিয়ে যেও। সে আবার রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। বিয়ের আগে ছেলের ছবি দেখে নেয়া ভালো। ” চাচার কথা শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঘর থেকে বের হয়ে এলো কোনো উত্তর না দিয়েই। আজহারুল জানেন, মেয়ে না করবে না। কিন্তু চিন্তাটা অন্য কোথায়। মেয়ে খারাপ কিছু না করে বসে এটাও চিন্তা।

তাহিরা চলে যাওয়ার পরে মনো আসলেন স্বামীর সাথে কথা বলতে।
” ও কী বলল? বিয়েতে বেঁকে বসেনি তো?”
” না, আমার ভয় হচ্ছে অন্য কোথায়। যদি ছেলে ভালো না হয়? ” মনো আশ্বাস দিয়ে বললেন, ” ওসব ছাড় তো। মেয়ের এমনিতেই বিয়ে হচ্ছে না। ঘরে বসে কি বুড়ি হবে নাকি? ”
” তাই বলে একটু খোঁজ খবর না নিয়েই বিয়ে দিয়ে দিব?” আজহারুল অস্থির হয়ে প্রশ্নটা করলেন।
” খোঁজ খবর নিতে গেলেই তো বিপদ৷ ভালোয় ভালোয় কাবিনটা হোক। এক বাড়ির এক পোলার সাথে বিয়ে হচ্ছে! এটা কি সৌভাগ্য না? তাহিরা যেমন মেয়ে তাতে ও সাক্ষাৎ ইবলিশের কপালে পড়লে, ইবলিশও একসময় ভালো হয়ে যাবে। ” মনো পানের বাটা থেকে আরেকটা পান মুখে পুড়লেন। আজহারুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ” ওর যদি ছেলে অপছন্দ হয়, তখন?”
” কীসব বলো না! ছেলে একটা আস্ত রাজপুত্র । অমন সুন্দর মেয়ের জামাই তুমি সাতবার কপালে ঠুকলেও পাবা না৷ নিজের মেয়েগুলারে তো খালি টাকা দেইখা বিয়ে দিছ। এইটারে একটু সুরত দেইখা দাও। ”
” মিনা, রিনাকে আসতে বললেও তো পারো। ওকে একটু সাজায় গুজায় পরিপাটি রাখতে পারতো। ”
” হ ঢাক ঢোল পিটানোর জন্যি না? ওরা আসলে এলাকাবাসী জাইনা যাইব। আর তখন হইবো বিপদ। এই মেয়েরে রাতের অন্ধকারে বিয়ে দেওন লাগবো। আর সাজগোজের ব্যাপারে চিন্তা কইরো না। নাসরিন এক পার্লারের ছেমরি ঠিক কইরা আইছে। সে মোটা অংকের টানা নিয়া আমাগো তাহিরারে পরিপাটি করে দিয়া যাইবো। ”
” দেইখো পরে ওর যেন ঝামেলায় না পড়তে হয়। ”
” না আল্লাহর রহমতে হইবো না। তুমি শুধু আপ্যায়নে কিপটামি কইরো না। ”

*****

দুপুরের দিকে নাসরিন এসে তাহিরাকে হালকা গরম পানি আর চন্দন দিয়ে গোসল করিয়ে দিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বলতে মনো যা বুঝেন তাই সে করলো। আজকের দিনে পান থেকে চুন খসলে তার রক্ষে হবে না। এদিকে সে রেখাকে আসতে বলেছে দুপুরের মধ্যে কিন্তু তার নাম গন্ধও নেই। যদি না আসে তাহলে মনো তাকে কী করবেন ভাবতেও ভয় লাগে। তাহিরা এমনিতেই কথা কম বলে। আজকে তার মুখে আরো কথা হারায় গেছে। কলাপাতা রঙের টাঙ্গাইল শাড়ি পরে জানালার ধারে সেই যে চুল ছড়িয়ে দিয়ে বসেছে। আর উঠার নাম নেই। গায়ের রঙ আগের থেকে একটু উজ্জ্বল লাগছে। বিয়ের আগে নাকি মেয়েরা সুন্দর হয়ে যায়। তাহিরার ক্ষেত্রেও এটা হয়েছে, নাসরিনের বিশ্বাস।

*****

” মা, আমার পক্ষে বিয়ে করা সম্ভব না। তুমি তো জানোই আমার পরীক্ষা সামনের মাসে। ”
” ক্যান? বউ কি ছোট পোলাপান নাকি যে বই খাতা বসে বসে ছিঁড়বে? ” লায়লা রাগে গরগর করতে করতে বললেন।
” মা, তুমি বোঝার চেষ্টা করো। তুমি আমাকে মিথ্যা বলে এখানে ডেকে এনেছ। আর এখন বলছ, অচেনা একটা মেয়েকে বিয়ে করতে! মানে এটার কিছু অর্থ আসে? ”
” মামুন, তুই আমার পছন্দেই বিয়ে করবি। যদি আর একবার বলিস, বিয়ে করবি না৷ তাহলে আমি এখনই বিষ খাব। ” মায়ের কথায় ছেলে কিছুটা দমে গেল। ছেলের বাবা মিজান মোল্ল্যা চুপচাপ শুনছিলেন৷ স্ত্রীর বিষ খাওয়ার খবর শুনে বললেন, ” মামুন, তোমার মা উত্তম বিষ জোগাড় করে রেখেছেন৷ ধান ক্ষেতে যে কীটনাশক দেয়া হয় ইঁদুর মারতে। সেটাই জোগাড় করেছেন। আমি তো চিন্তায় পড়ে গেছি৷ মোল্ল্যা বাড়ির বড় বউ যদি এভাবে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে মরে তখন সমাজে আমি কী করে মুখ দেখাব?” মামুনের রাগ হলো বাবার উপরে। নিজের জীবন নিয়ে টানাটানি লেগে আছে। কোথাকার কোন গ্রাম্য ভূত তার জন্য ঠিক করেছেন তার মা। আর তার বাবা মান ইজ্জত নিয়ে আছেন।
বাবার দিকে তাকিয়ে অসহায়ের মতো বলল, ” বাবা, মা’কে বোঝাও না। ”
মিজান বললেন, ” বাবা, ও জিনিস আমার দ্বারা হবে না। এই বিয়ে সে আমাকে করতে বললেও, আমার না বলার উপায় থাকতো না। ”
মামুন তার বড় বোনকে ফোন দিতে যাবে তখন লায়লা ফোন কেড়ে নিয়ে মেঝেতে জোরে আছাড় মারলেন। এন্ড্রয়েড ফোন সাথে সাথে তিন টুকরো হয়ে গেল। মামুন ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো৷ একটা শেষ আশা ছিল। তার বড় বোন। সেটাও গেল৷
পাশের ঘর থেকে মামুনের দাদী গলা চড়িয়ে লায়লাকে জিজ্ঞেস করলেন, ” হ্যারে বড় বউ মা, সবকিছু গোছানো হয়েছে তো? নাত বৌ কে তো অসম্মান করা হবেনা তো?”
লায়লা ছেলেকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন, ” না, আম্মা। সবই ভালো করে গোছানো হয়েছে। ”
” বড় বউমা, আমার হতচ্ছাড়ি বড় মেয়েটাকে বিয়ে না হওয়া অব্দি কিচ্ছু বলবে না৷ তা নাহলে ও ঘরে ডিস্কো ড্যান্সার বউয়ের শখ পূরণ করতে চাইবে। ”
” আম্মা, কাবিন হবে তারপর বাসর হবে। তারপর সবাই জানবে বিয়ের খবর। দেখিয়ে দেব, ছেলে জন্ম দিছি আমি। আমিই ওরে বিয়ে দিব। ” মামুন মায়ের হাতের কাচের বোতলে কী আছে বুঝতে পারলেন। সে জানে, মা এক কথার মানুষ। তাকে টলানো তার দ্বারা সম্ভব না। বাবা পারতেন কিন্তু বাবা সেটা করবেন না।
” তোর বালিশের নিচে মেয়ের ছবি রাখছি৷ দেখে নিস আর পাশে নামও লেখা আছে। ভালো করে দেখে নে আর নাম মুখস্থ করে নে৷ তাহলেই তোর জানা হয়ে যাবে। আর বাসররাতে বউরে চিনিস। ” মায়ের কথায় ছেলে কান না দিয়ে নিজের চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। মোবাইল ফোনটা কীভাবে আবার সচল করা যায়?

*****
সন্ধ্যার পনেরো মিনিট আগে কনের বাড়ি পৌঁছে গেলেন লায়লা তার প্রিয় মানুষদের নিয়ে। আজকের দিনে প্রিয় মানুষ ব্যতিত কাউকে তিনি সাথে আনবেন না। মনো আর নাসরিন সব আগে থেকে গুছিয়ে রেখেছিলেন। তাই অতিথি আপ্যায়ন হলো ধীরে সুস্থে আর সুন্দর ভাবে৷ লায়লা তাড়াহুড়ো করছিলেন। বারবার বলছিলেন, ” মামা, বিয়েটা আগে সেড়ে ফেলি। ” আজহারুল বললেন, ” আমাদের কাজী তো এখনো পথে৷ আর দশ মিনিটের অপেক্ষা করেন৷ ”
” আমরাই সাথে কাজী এনেছি। আপনি সবাইকে একসাথে বসতে বলেন। ”

*****
রেখা তাহিরার ঘোমটা ঠিক করার সময় বললেন, ” আপনার মুখের কাটা দাগটা কবেকার? দেখে তো মনে হচ্ছে অনেক পুরনো ক্ষত। ”
নাসরিন পাশ থেকে ধমকের সুরে বলল, ” প্রশ্ন পরে করিস। আগে বল সাজানো হয়ে গেছে কিনা। কাজী ব্যাটা সবকিছু লিইখা বইসা আছে। মেয়ের কবুলের অপেক্ষায়। ”
” সাজার সাথে কবুলের কী সম্পর্ক? কবুল বলতে বলেন। ” আর তখনই পুরো বাড়ি অন্ধকারে ডুবে গেল। আশেপাশে মৃদু মন্দ বাতাস বইতে লাগলো। সারাদিন আকাশ থম ধরে ছিল। আর এখন সে তার মেজাজ হালকা করেছে। জানালা দিয়ে হাসনাহেনার ঘ্রাণ ছুটে আসছে তাহিরার দিকে। তাহিরার মন ওই হাসনাহেনা ফুলে। বহুবছর আগের স্মৃতি হঠাৎ করে জেগে উঠতে চাচ্ছে। সে অনেক কষ্টে নিজেকে দমিয়ে রাখতে চাচ্ছে।
মনো মোমবাতি, চার্জার লাইট জ্বালিয়ে দিলেন। কী মনে করে যেন বাজার থেকে কয়েক ডজন মোমবাতি আনিয়েছিলেন। আল্লাহর রহমত, সবই । ছেলের মা কতকিছু নিয়ে এসেছে৷ দামী শাড়ি, গহনা, কসমেটিকস, মিষ্টিজাতীয় খাবার আরও কত কী। ছেলেটা সাদা রঙের পাঞ্জাবি পরেছে। মায়ের পাশে বাধ্য ছেলের মতো বসে আছে। ছেলেটাকে কেমন মনমরা লাগছে তার কাছে। কিন্তু কারণ খুঁজে বের করার চিন্তা অনুভব করলেন না।
বিয়ে পড়ানো শেষ হওয়ার পরে ঝড় শুরু হলো। এই দিনেও ঝড় হয় এটা ভেবে মামুনের দাদী অবাক হলেন। বউয়ের চেহারাটাও আলোতে দেখতে পেলেন না৷ মোমবাতির আলোতে গুটিসুটি মেরে বসে আছে জানালার ধারে। এমনিতেই চোখে কম দেখেন৷ তার উপর মোমবাতির নিভু নিভু আলো!

*****

তাহিরা বাসর ঘরে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে তার স্বামীর অপেক্ষায়। চাচী তাকে কড়া নিষেধ করেছেন তার আগের নাম বলতে। ওই নাম শুনলে তার অতীত সম্পর্কে জেনে যেতে পারে ছেলে। তখন তার কী হবে ভেবেই বারবার শিউরে উঠছিলেন মনো। শাহাজাদী, সঞ্চয় তাকে শাজু বলে ডাকতো। ছয় বছর হবে তার সাথে কথা হয়না। তার চেহারাও এখন মনে পড়ে না। চেষ্টা করলে আবছা একটা ছবি ভেসে উঠে। তখন আরো বেশি কষ্ট হয়। দরজা খুলে কাউকে আসতে দেখে তাহিরা চমকে উঠলো। এমনিতেই বিদ্যুৎ নেই, তার উপর মোমবাতির আলো আর সামনে বিশাল ঘোমটা! এতো কিছুর মধ্যে আসলেই তার স্বামী ঘরে ঢুকেছে কিনা সেটা বোঝা মুশকিল। চাচীর কাছ থেকে ছবিটা নেওয়া হয়নি। তাহলে অন্ততপক্ষে তাকে খুব বেশি অচেনা মনে হতো না। সামনে এসে যখন বসলো তখন তাহিরার অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতে লাগলো । হাঁটার ভঙ্গি দেখে চেনা চেনা লাগছে। সে কি কখনো এই ছেলেকে দেখেছে? দেখে থাকলে তো চাচা উল্লেখ করতেন। ঘোমটা না খুলেই মামুন বলল, ” দ্যাখো তাহিরা, আমাকে মামুন বলে ডাকবে না। এই নাম আমার চরম অপছন্দের। মামুনুর রশীদ, মানে আরো কোনো নাম পেল না! আমি অবজ্ঞা করছি না। কিন্তু এই নাম আমার পছন্দ না। আর তুমি আমাকে ওগো বলে শাবানার ডাক দিবা না৷ তুমি আমাকে সঞ্চয় বলে ডাকতে পারো। কিন্তু ওগো, হ্যাগো এসব না। ”
তাহিরা ঘোমটার মধ্যে থেকে চমকে উঠলো। সে কি কল্পনা করছে? নাকি সত্যি? সত্যি হবার প্রশ্নই আসে না। তার হ্যালুসিনেশন হচ্ছে। সারাদিন সঞ্চয়কে নিয়ে ভেবেছে তাই এখন এমন হচ্ছে।

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here