ফেরা পর্ব-১৫

0
562

#ফেরা

১৫.

” শাজু?” অস্ফুটস্বরে ডাকলো৷ চোখ মুখ ঢেকে কান্না থামানোর চেষ্টা করছিল তাহিরা। পুরনো এই নামের ডাকে সাড়া দেয়ার অভ্যাসটা চলেই গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে… হাত সরিয়ে ডাকের উৎসের দিকে তাকিয়ে দেখলো। মামুন তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
” তুমি শাজু? ” মামুন প্রশ্ন করলো৷ তাহিরা কান্নার দমকে কোনো কথা বলতে পারলো না। কিন্তু মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সে আজকে তার হ্যালুসিনেশনের শেষ পর্যন্ত যেতে চায়। সে কখনোই এর শেষ দেখার সাহস সে করেনি! সঞ্চয় তার জন্য না। সঞ্চয়, রিদ্দির মতো মেয়েকে পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সে তো শুধু সঞ্চয়ের জীবনের পথের কাঁটা ছিলো। রিদ্দি নিজ হাতে সেই কাঁটা সরিয়েছে। তার মুখের যে হাল করেছিল সেটা তো ভুলবার নয়! তার মুখের কয়েক জায়গার ক্ষতে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। এমনিতেই চেহারা তেমন ভালো না তার। তার উপর সেই ঘটনায় তো একেবারেই… পুরোপুরি রিকভার হওয়ার পরে চেনা মানুষও প্রথমে চিনতেও পারতো না।
মামুনের মনে হলো সে কানে ভুল শুনছে বা চোখেও কম দেখছে৷ তাহিরার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না৷ শাজু, এই মফস্বলে এসে পৌঁছালো কীভাবে? আন্টি কোথায়? ওর চাচা, চাচীর কথা তো কখনো শুনেনি সে৷ তাহিরা তার নাম কীভাবে হলো? এই নামে তো…
চোখ তুলে তাকানোর পরে মামুনের মনে হলো সামনে থাকা তাহিরাই তার শাজু। বাহিরে আবারও ঝড়ো হাওয়া বইতে শুরু করেছে। চোখের তাকানোর ভঙ্গিতে মিল, কথা বলার ধরনে, কান্নার ধরনে… সবকিছুতে মিল। কিন্তু আশেপাশের পরিস্থিতি, তার স্বভাব সবকিছু আগের মতো না। দুই হাত দিয়ে তার গাল চেপে ধরে বললাম, ” শাজু, সত্যি তুমি? ”
মাথা নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বলল, ” আপনি কেনো বারবার ফিরে আসেন? আপনার আর আমার পথ তো এক না৷ মা আপনার সাথে সব সম্পর্ক নষ্ট করতে বলেছেন৷ তা নাহলে মা আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন। ”
” হ্যাঁ, আমারই শাজু ” মামুন কিছু না বলেই জড়িয়ে ধরলো সামনে থাকা তার নববিবাহিতা স্ত্রী অথবা তার জীবনের প্রথম প্রেম! তার মনে অনেক অনেক প্রশ্ন জমেছে৷ কিন্তু এর উত্তর পাবার সময় এখন না৷ শাজু এখন উত্তর দেয়ার অবস্থায় নেই। তার হঠাৎ করে সবকিছু সুন্দর আর সুখকর লাগছে। বাহিরের এলোমেলো ঝড়ো হাওয়া তার মাঝে নতুন বসন্তের আভাস দিয়ে যাচ্ছে। জানালার একটা পাল্লা খোলা। আর সেই পাল্লা দিয়ে ঝড়ো হাওয়ার সাথে হাসনাঘেনার ঘ্রাণও নাকে আসছে। শাজু তার বুকে মুখ গুঁজে দিয়ে কাঁদছে। কেন যেন এই কান্নার শব্দ তার ভালো লাগছে। Sometimes, crying is the only way your eyes speak when your mouth can’t explain how broken your heart is.
পিঠে আলতো স্পর্শে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে৷ She needs comfort. তার আমার শরীরের উষ্ণতা প্রয়োজন।
প্রিয়তমার ঘাড়ে গভীর চুমু এঁকে দিয়ে বিরবির করে সঞ্চয় বলল, ” তুমি তো আমারই ছিলে। আমারই আছ! ”
বাহিরের ঝড়ের মাত্রা যত বাড়তে লাগলো ততই দুজনের মধ্যের বন্য উন্মাদনা উন্মোচিত হতে লাগলো। শাজুর অতীতের সঞ্চয়ের বলা একটা কথা মনে করলো।

” Sex is fun i believe. But it gives beautiful pleasure when the person you’re shareing the bed with is your loved one, whom you can call only yours & for me that person is you whom i can call mine.”

*****
রিদ্দি কাঁদতে কাঁদতে বলল, ” ফুপ্পি, আমি শুনেছি ও নাকি বিয়ে করে ফেলেছে। ”
লিমা বেশ ঝামেলায় পড়েছেন। সঞ্চয়ের মোবাইল বন্ধ বলছে দুই তিন যাবত। এদিকে তার বড় ভাই আর ভাবীও ফোন কল রিসিভ করছে না। বাসার চাকরদের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছে তাতে বিয়ে করার চান্স বেশি। এতো সুন্দর করে তিনি পরিকল্পনা সাজিয়েছেন একমাত্র ভাতিজার বিয়ে নিয়ে। সেটা মাটি হয়ে গেল। রিদ্দির মতো হাই প্রোফাইল সুন্দরী মেয়ে সে কতো কাঠখড় পুড়িয়ে ধরে রেখেছে সেটা সেই ভালো জানেন। তার বন্ধুর মেয়েকে এইভাবে হাত ছাড়া করতে পারেন না।
” তুমি চিন্তা করো না। আগের ছুচো মুখোকে যদি আমরা তাড়াতে পারি, তাহলে এখন তো কিছুই না। আমি যতদূর জেনেছি মেয়ে গেয়ো ভূত। এরে তো তুমি ফুঁ দিলেই উড়ে যাবে। ” লিমা রিদ্দির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন।
” ফুপ্পি, ওই মেয়ে তো প্রেমিকা ছিল। তাই পেরেছিলাম। কিন্তু এই মেয়ে তো বউ! ” তারপর আবার নাকি স্বরে কাঁদতে শুরু করলো। লিমার মাথা ধরে গেছে এই কান্নার শব্দে। কীভাবে থামায় এই মেয়েকে? মনে হচ্ছে আর কয়েক মিনিট এই কান্না শুনলে তার মাথা ফেটে যাবে। তখন একমাত্র ভাতিজার বউ দেখা পাবে না সে।
” শুনো, এই আমি সবকিছু ঠিক করে দিব৷ তুমিই সঞ্চয়ের বউ হবে। ” এই কথা শুনে রিদ্দি লিমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ” ফুপ্পি, তুমি বেস্ট! ”

*****

মিজান ছেলের সাথে কথা বলার জন্য তাদের শোবার ঘরের দিকে এসেছিল। বাহিরে ঝড়, বিদ্যুৎ চলে গেছে। তাই মোমবাতি দেয়ার বাহানায় জরুরি কথা বলতে এসেছেন। দরজায় নক করতে যাবেন তখন ঘরের ভেতর থেকে শব্দ কানে ভেসে আসলো। বাহিরে ঝড় তারপরও শব্দ ভেসে আসছে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলেন৷ ছেলে আর ছেলের বউ নিজেদের সুখ দুঃখের কথা কি ঠিক হবে? ছেলের কণ্ঠ শুনতে পাচ্ছেন তিনি৷ ছেলে বলছে, ” আমি তোমাকেই ভালোবাসি ঠিক আছে, শাজু?”
এই নাম শুনে আৎকে উঠলেন৷ ছেলে বউকে যদি প্রাক্তন প্রেমিকার নাম ধরে ডাকে তাহলে কী হবে ভাবাও ধৃষ্টতা। তিনি একবার মাত্র একবার ভুলে লায়লাকে শায়লা ডেকে ফেলেছিলেন। তাও ভুলে। শায়লা নামে তিনি একটা মাছিকেও চিনেন না। টাং স্লিপ যাকে বলে সেটাই হয়েছিল। কিন্তু লায়লা সেটা মানলেনই না। এখনো পান থেকে চুন খসলে শায়লার নাম ধরে খোঁচানো শুরু করে। তার একটা ভুলের জন্য এখনো মাশুল গুণতে হচ্ছে। আর এখন তার ছেলেও একই পথে হাঁটছে!
মিজানকে ছেলের ঘরের দরজার সামনে এভাবে কান পেতে থাকতে দেখে লায়লা বেশ চটে গেলেন। স্বামীর কান ধরে টেনে গলা নামিয়ে বললেন, ” এই বয়সে কোন ধরনের কাজকর্ম করছ, হ্যাঁ? ”
নিজের সাফাই দিয়ে বললেন, ” আমি তো এসেছিলাম মোমবাতি দিতে। যদি বিদ্যুৎ চলে যায়, তাই। ”
” নব দম্পত্তির কখনো আলোর প্রয়োজন পড়ে না৷ এরা ঘুটঘুটে অন্ধকারেও দারুণ গল্প জমাতে জানে৷ নিজে তো জীবনে রোমান্টিক গল্প করোনি । তাই ওসব বুঝবে না। ”
” কীসব বলো? আমি তোমার জন্য জীবনানন্দের কবিতার বই মুখস্থ করেছি। রুদ্র সাহেবের কবিতা পর্যন্ত ঠোঁটস্থ করেছি। এমনকি কবর কবিতা দাড়ি, কমা সহ মুখস্থ করেছিলাম। আর তুমি এসব বলছ?”
” একবারও তো রোমান্টিক স্বরে কবিতা আবৃত্তি করে শোনাতে পারোনি। প্রতিবারই রোবটের মতো মুখস্থ লাইন বে লাইন বলে গেছ। ” লায়লা স্বামীর কান ধরে টেনে দরজার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে আনলেন।
” তাও তো চেষ্টা করেছি, শায়লা। ” সাথে সাথে জিহবায় কামড় দিলেন মিজান সাহেব। এতো বড় ভুল কীভাবে হলো! এখন কী হবে তার!

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here