ফেরা পর্ব-১৬

0
575

#ফেরা

১৬.

” মিজান মোল্ল্যা, এই শায়লাটাকে তুমি কবে ভুলবে? ” মিজান মোল্ল্যা কান ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললেন, ” এমন কেউ নাই লায়লা। ”
” তুমি আবারও মিথ্যা বলছো। ছেলের বউ ঘরে চলে এসেছে। আর এখনো তুমি অন্য নারী…” লায়লা দম নিলেন। তার এই শায়লা নামের মহিলাকে খুঁজে বের করতে হবে। তারপর একটা বিহিত করবেন৷
” বিশ্বাস করো, বিয়ের পরে আমি অন্য কারো দিকে তাকাই নাই। ” লায়লা আরো জোরে কান টেনে বলেন, ” এজন্যই , মামুন পেটে আসার আগে দ্বিতীয় বিয়ে করতে গিয়েছিলে। তোমার বড় বোনের সাথে মিলে তো বিয়েই করে বসতে। ” লায়লা পুরনো কথা টানতে চাননি। কিন্তু টেনে ফেলেছেন। মিজানের চেহারা সাথে সাথে পাণ্ডুবর্ণ হয়ে গেল। লায়লাও স্বামীর কান ছেড়ে দিয়ে সোজা তার ঘরে চলে এলেন।
এজন্যই তিনি ছেলেকে নিজের পছন্দে বিয়ে দিয়েছেন। এক বুড়ো শ্বাশুড়ি ছাড়া পুরো শ্বশুরবাড়িতে তার পক্ষে কেউ নেই। বুড়ো শ্বাশুড়ি কতদিন থাকবেন তার কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ লিমার অসুন্দর, আনস্মার্ট, ডিভোর্সি ঘরের মেয়ে পছন্দ না। তাই সে খুঁজে এমনই মেয়ে বের করেছে। একটা মাত্র মেয়ে, সেও বড় ফুপুর দলে। ছেলেটাও সারাদিন বড় ফুপু বড় ফুপু করে। এই একটাই সুযোগ তার এই কষ্ট ভোলার। তাহিরা শব্দের অর্থ – মহা পবিত্র। যেদিন প্রথম দেখেছিলেন সেদিন খুব মায়া হয়েছিল। সবার মাঝে থেকেও খুব একা।নিসঙ্গতা তার আশেপাশে বিশাল দেয়াল মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে কড়া পাহারায়। যেন কেউ সেই দেয়াল ডিঙিয়ে তার কাছে না আসতে পারে। ঠিক তার মতো! নিজেরই প্রতিফলন দেখেছিলেন সেদিন।

*****

তাহিরার পাশে যে শুয়ে আছে সে নাকি সঞ্চয়! মিনা আপাকে বলতে হবে, তার হ্যালুসিনেশনের মাত্রা এখন মঙ্গলগ্রহে পৌঁছে গেছে। তাহিরা নিজের মনেই হাসলো। মনে হলো হাসির শব্দ হয়েছে। শব্দ করে হাসতে সে ভুলেই গিয়েছিল। পাশ ফিরে সঞ্চয়ের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো, আসলেই কি তার হাসিতে ঘুম ভেঙে গেছে?

কপালের উপরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিল৷ মুখের উপর খানিকটা ঝুঁকে এসে নাকের নিচে কিছু একটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতে লাগলো। কয়েক সেকেন্ডের মাথায় পেয়েও গেল। সঞ্চয়ের নাকের নিচটায় ছোট্ট একটা তিল আছে। খুব খেয়াল করে দেখলে চোখে পড়ে। মানুষের মস্তিষ্ক অনেক পাওয়ারফুল। সঞ্চয় প্রায়ই কথাটা বলত। মানুষের মন যে জিনিস খুব বেশি চায় কিন্তু পায় না। সেই জিনিস নাকি সে তার কল্পনায় নিয়ে আসে। তার ক্ষেত্রেও নাকি এমন হয়েছে। মিনা আপা তাকে এটাই বুঝিয়েছে। সে যে তার সাথে সঞ্চয়কে সবসময় দেখে, সেটা পুরোটাই কল্পনা বৈ কিছু না। এমনকি আজকে তার স্বামীর… তার মনে হলো সঞ্চয়ের ঠান্ডা লাগছে৷ জানালার একটা পাল্লা এখনো খোলা৷ ঝড় থেমেছে কিন্তু হালকা ঠান্ডা বাতাস এখনো বইছে। পাতলা কম্বল আছে আলমারিতে। কাঁথায় কাজ হবেনা৷ বিছানা থেকে নামার পরে বুঝতে পারলো তার গায়ে শুধু সঞ্চয়ের টি-শার্ট। টি-শার্টের ঘ্রাণ নিল তাহিরা। সঞ্চয়ের শরীরের ঘ্রাণ! সবকিছু এতো বাস্তব কেনো মনে হচ্ছে?
কানে কানে তার মা বললেন, ” আমাকে করা ওয়াদা মনে আছে তো? ”
তাহিরা থমকে দাঁড়ালো।

*****
মনো স্বামীর পানের বাটায় সুপারি রাখার সময় বললেন, ” বলেছিলাম না, ছেলে খাঁটি সোনা। ”
” ওগো আমার গিন্নি! দুই দিনেই কি চেনা যায়?” আজহারুল গলা নামিয়ে বললেন৷ বাসায় লায়লারা এখনো আছে।
” যায় গো। আমি মামুনকে সেই কখন শোবার ঘরে ঢুকতে দেখেছি৷ এখনো একবারের জন্যও বাইরে আসেনি। তাহলে বুঝো, কী পরিমাণ বউ বলতে পাগল। ” স্ত্রী’র কথায় আজহারুল হাসলেন। বিয়ের প্রথম প্রথম সবাই অমন থাকে৷ কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবর্তন আসে৷ যেমনটা তার ছোট ভাইয়ের এসেছিল। সুন্দর একটা পরিবার কীভাবে ভেঙে গেল তার চোখের সামনে৷ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সেই কষ্ট চেপে রাখলেন।

***
তারপরের দিন বাসায় ফিরেই মামুন তার ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে বের হলো । লায়লা ছেলের হাতে আইফোন সেভেন এক্স ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ” এই ফোনই তো চাচ্ছিলে?”
মামুন মায়ের উপর বিয়ের বিষয় নিয়ে অনেক কৃতজ্ঞ। তার উপর এমন উপহার!
” আমি এমনিই বলেছিলাম। তুমি আমাকে… ” ছেলেকে কথা শেষ করতে দিলেন না। কথার মাঝেই বললেন, ” আমি তোর সাথে অন্যায় করে ফেলেনি তো, বাবা? ”
মায়ের হাত ধরে বললেন, ” কেনো এমন মনে হচ্ছে, মা? ”
” এইযে, জোর করে বিয়ে দিলাম। জানি মেয়ে তোর পছন্দ হয়নি। কিন্তু বাবা, মেয়েটা অনেক ভালো। ” মায়ের উপর রাগ তার ছিলো খানিকটা। কিন্তু ইমাম সাহেবের কথা শোনার পরে সেটুকুও চলে গেছিল।
” আমি জানি। তুমি আর বাবা কখনোই আমার জন্য ভুল সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। ” ছেলের কথায় লায়লার বুকটা ভরে গেল আনন্দে৷ তিনি চিন্তায় ছিলেন ছেলেকে নিয়ে ।
” মাকে খুশি করার জন্য বলছিস না তো? আমাকে সরাসরি বলতে পারিস। ”
মায়ের হাতে মৃদু চাপ দিয়ে মামুন বলল, ” না, মা। তোমাকে মিথ্যা বলে লাভ কী? সেই তুমি তো একসময় জানতেই পারবে। ” ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, ” বাবা, সত্যিই করে বল তো, তাহিরাকে তোর ভালো লেগেছে তো?” লায়লার মনে হলো ছেলে তাকে না-ই বলবে।
” আমার ভালো লেগেছে অনেক । তোমাকে কীভাবে আমি ধন্যবাদ বলি? ”
” একটা ছোট্ট মামুন এনে দিলেই হবে৷ ধন্যবাদ জানাতে হবে না। ” লায়লা হেসে ছেলেকে বললেন। মামুন দাঁত বের করে হেসে বলল, ” ওকে ডান, শুধু পরীক্ষাটা যেতে দাও। তারপর তোমার ক’জন ছোট্ট মামুন লাগবে, দেখা যাবে! ” ছেলের কান টেনে বললেন, ” ছোট্ট তাহিরা হলেও চলবে আমার। ” মামুন মনে মনে বলল, ” তাহিরা একজনই হবে এই দুনিয়ায় আর সে হবে শুধু আমার। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here