ফেরা পর্ব-১৭

0
531

#ফেরা

১৭.

” শ্লা, বিয়ে করে আকাশে উইঠা গেছস। আমাগো তো এখন চিনবি না। ” রাহাত আফসোস করে বলল৷ সঞ্চয় বিরক্তি নিয়ে বলল, ” শ্লা, আমি আছি চিন্তায়। আর তুই আছোস আকাশে উঠা নিয়ে। ”
রাহাত নিজের চকি থেকে উঠে এসে বন্ধুর পাশে বসলো।
” ক্যান, তোর বউ রাগ হয়ে আছে?” সঞ্চয় মোবাইল হাতে নিয়ে বলল, ” এই একবিংশ শতাব্দীতে মানুষ মোবাইল ছাড়া থাকে কীভাবে? আমার বউয়ের হাতে একটা বাটন সেট নাই। মানে এটা কিছু হইলো? ”
” ও এই হলো ব্যাপার। ভাবলাম, না জানিয়ে বিয়ে করেছিস। তাই আরকি। আর তুই বউ নিয়ে আছিস। ”
রুমের দরজায় নক করার শব্দে সঞ্চয় চড়া গলায় বলল, ” আয়, ভেতরে আয়। ”
জারিফ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকার সময় খোঁচা দিয়ে বলল, ” শ্লা, একা একা বিয়ে করছিস। আর এখন সাধু সেজে বসে আছিস। ” সঞ্চয়ের দিকে কাগজের টুকরো ছুড়ে দিয়ে কথাটা বলল।
” আমি নিজেও জানতাম না, আমার বিয়ে। মা বাসায় ডেকে নিলেন প্রাচীন পদ্ধতিতে। তারপর জানালেন, আমার বিয়ে। ”
” আর তুই রাজি হয়ে গেলি?”
” তাছাড়া উপায় আছে আমার? আমার না আছে প্রেমিকা না আছে ফিক্সড কেউ। তাই রাজি হয়ে গেলাম। ” সঞ্চয় অন্যকিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু বলল অন্যকিছু! কেনো যেন সাহস পেল না৷ নীরব ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়েও তার অনেক বড় ক্ষতি করেছিল। তারপর থেকে অনেক কিছুই ফ্রেন্ডদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখে সে৷
সঞ্চয়ের টি-শার্ট এর কলার টেনে ঘাড়ের কাছে দেখে বলল, ” দেখি দেখি, তোর খামচির দাগ নাই?”
সঞ্চয় হাসতে হাসতে বলল, ” শ্লা, আমি পর্ণাসক্ত বিয়ে করিনি। সরল সোজা মেয়ে লজ্জায়… ” থেমে যাওয়াতে রাহাত বলল, ” তো গ্রে ম্যাটার না হোয়াইট ম্যাটার? ”
জারিফ সঞ্চয়ের গাল টেনে বলল, ” তো বাসররাত কীভাবে কাটালে? বউয়ের সাথে লুডু খেলে নাকি হাডুডু খেলে?”
” বন্ধু রে, বাসররাতে অন্ধকারে বসে ছিলাম। ঝড়ের কারণে বিদ্যুৎ ছিলো না। মোমবাতির আলোও ফুরিয়ে গিয়েছিল। অন্ধকারে ডুবে ছিলাম। ” সঞ্চয়ের পিঠে থাপ্পড় মেড়ে রাহাত বলল, ” অন্ধকারে সব একই, তাই না? ” জারিফ হাসি থামিয়ে বলল, ” শ্লা, ওইডা আমার ভুল ছিল। তোরা আর কত খেপাবি?”
সঞ্চয় হাসতে হাসতে বলল, ” মারতে দাম তাক। ”

*****

রিদ্দি তার মুখের উপর ধারালো ব্লেড চালিয়ে দিলো। শাজু চিৎকার করার চেষ্টা করলো। কিন্তু কেউ একজন মুখ চেপে ধরে রেখেছে তার। এলোপাতাড়ি ব্লেড চালিয়ে দিতে লাগলো। শাজুর মনে হলো আজকে তার মুখের চামড়া ব্লেড দিয়ে টুকরো টুকরো করবে। নিজেকে বাঁচানোর জন্য হাত পা ছুড়তে লাগলো। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে তার। রিদ্দি তার চুলের মুঠি টেনে ধরে বলল, ” মা* তোর আজকে সব রস বের করবো। ”
তারপর হুড়মুড় করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। বিকালে বেশিরভাগ সময় সে ঘুমায় না। কিন্তু কীভাবে যেন ঘুমিয়ে পড়েছিল। হাত পা কাঁপছে তার। ঘেমে নেয়ে উঠেছে। প্রায়ই এমন স্বপ্ন দেখে সে। তার মনে হলো, কেউ একজন তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। এমনকি বিছানায় তার পাশেই বসে আছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করলো কে!
” আমি, আমি তোর চাচী। অমনে কী দেখতেছিস?” চোখে কী হয়েছে তার? ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখছে কেন? শব্দের উৎসের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মনো খপ করে হাত ধরে বলল, ” আমি রে। আবার সেই স্বপ্ন দেখছিস? ” মনো রান্নাঘরে কাজ করছিলেন৷ তাহিরার ঘরে গোঙানির শব্দ শুনে প্রায় দৌড়ে এসেছেন। এই বয়সে দৌড়াদৌড়ি তাকে মানায় না৷ কিন্তু মেয়েটা যেভাবে গোঙাচ্ছিল তাতে হেঁটে আসলে তারই মাথা খারাপ হয়ে যেত।
শাজুর মনে হলো সে অন্ধ হয়ে গেছে৷ রিদ্দি তার দুটো চোখই টেনে উঠিয়ে ফেলেছে। সে চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে। শাজু চিৎকার করে বলতে লাগলো, ” চাচী, ওরা আমার চোখ নিয়ে গেছে। চাচী, আমারে ওরা অন্ধ বানায় ফেলছে। আমি কী দোষ করেছিলাম চাচী? আমাকে ওরা মেরে ফেলবে। ” মনো শাজুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললেন, ” আল্লাহ তোরে হেফাজত করবো, মা। শান্ত হ মা। ” শাজু নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু মনোর শক্তির কাছে পারলো না। মনো তার মেয়ের কথা মনে রেখেছে অক্ষরে অক্ষরে। শাজুর যখনই এমন অবস্থা হবে তখনই যেন, শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখে। আর মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা যেন করেন।
মনো ভাবলেন আজকে মুক্তা থাকলে মেয়েটা আরো দ্রুত সুস্থ হতে পারতো।

*****

ঘুমাতে যাবে তখনই রিদ্দির নাম্বার থেকে ফোন আসলো। ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে বলল, ” তুমি ফোন বন্ধ করে রেখেছিলে কেন?”
” ব্যস্ত ছিলাম। ” সঞ্চয় শান্তস্বরে বলল।
” তুমি বিয়ে করে ফেলেছ?”
” হ্যাঁ, আসলে অনেক ব্যস্ত ছিলাম। তাই বলার সময় পাইনি। ” সঞ্চয় মশারি টানাচ্ছিল আর কথা বলছিল। পাশ থেকে রাহাত আফসোস করার মতো শব্দ করলো।
” তুমি আমাকে এভাবে ধোকা দিলা?” নাকি স্বরে প্রশ্ন করলো রিদ্দি।
” একটা কথা ভালো করে শুনে রাখো। আমি কখনোই তোমার সাথে সম্পর্কে যাইনি। তুমি ক্ষণিকের জন্য মোহ তৈরি করেছিলে মাত্র। এবং সেটা স্থায়ীভাবে আমার মধ্যে কোনোদিনও গেঁথে যায়নি। আমার ভেতরে আগেও অন্য কেউ ছিল এবং এখনো সেই আছে। তোমার প্রতি ক্ষণিকের মোহের জন্য আমাকে অনেক বেশি মাশুল গুণতে হয়েছিলও বটে। তোমার জন্য একমাত্র তোমার জন্য আমি শাজুকে হারিয়েছি। তোমার জন্য আমার শাজুকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছিল। আর সেই তুমি কীভাবে ভাবলে, আমি তোমাকে বিয়ে করবো? তুমি হচ্ছ, ওইসব সস্তা প্রোডাক্টের মতো। যেগুলো একবারই ব্যবহার করা যায়, বারবার না। ” কথাগুলো শুনে রিদ্দি হেসে বলল, ” তো, শাজু বুঝি বারবার ইউজ করার মতো মাল ছিল?”
” সে ছিল আমার অনন্যা। তার তুলনা শুধুই সে-ই ছিল। তুমি এসব বুঝবে না। ”
” তোমার স্ত্রী জানে এসব? ”
” রিদ্দি, এসব এখন তোমার ভাবতে হবে না। আমি আমার পরিবারের ইচ্ছায় বিয়ে করে ফেলেছি। এখন তোমার রাস্তা তুমি মাপতে শুরু করো। ”
” তোমার মায়ের পছন্দে বিয়ে হয়েছে, পুরো পরিবারের নয়৷ ফুপ্পি তো মেনে নেয়নি আর নিবেও না। ”
” আমাকে আর ফোন করবে না। আমার এখন এসব বালছাল শোনার টাইম নাই। তোমার নিজের মতো ছ্যাচড়া কাউকে খুঁজে সংসার করো। আমাকে এখন দয়া করে মুক্তি দাও। ” ফোন কেটে দিয়ে সঞ্চয় নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
রাহাত পাশ থেকে বলল, ” তুই শ্লা, কী খাইয়া রিদ্দির মতো মাইয়ার লগে নাচতে গেছিলি?”
” আমার এক মীর জাফর বন্ধু ছিল। ওই মাদারবোর্ডের জন্য আমার এই অবস্থা। শ্লায়, আমার জীবনে চিতাবাঘ ছাইড়া দিয়া গেছে। ” রাহাত আফসোস করার মতো শব্দ করলো আবারও। তারপর বলল, ” তোর কী কপাল রে! এমন বাঘা সুন্দরী পাইয়াও হাতছাড়া করতেছিস। ”
” তোর এতো আফসোস হচ্ছে তাহলে যা। তুই সৌন্দর্য ধুয়ে পানি খাবি আর চাকরগিরি করবি। ” সঞ্চয়ের মনে হলো খারাপ কিছু হতে যাচ্ছে তার জীবনে আবারও। একটা ভুল এভাবে তার পিছু লেগে থাকবে কল্পনাও করতে পারেনি সে!

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here