ফেরা পর্ব-১৮

0
456

#ফেরা

১৮.

” দোস্ত, তোর কি এখানে কোনো দোষ ছিল না? সব দোষ কি রিদ্দির?” রাহাতের প্রশ্নে সঞ্চয় কিছুটা অবাক হলো। কিন্তু বিষয়টা হজম করে বলল, ” অবশ্যই ছিল বাট আমি কখনো কমিটমেন্টে যাইনি৷ কখনোই বলিনি, তাকে ভালোবাসি। আমি সবসময়ই তাকে বলেছি, শাজুই সব৷ ” থামলো। আরো কিছু রয়ে গেছে।
” আমি অনেক কিছুই জানি। রিদ্দিকে তুই কিস পর্যন্ত করছিস। এমনকি মেয়েটার সাথে খোলামেলা ভাবে ঘোরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া করেছিস। মেয়েটার সাথে যত কথা তুই বলেছিস ততটা তো তুই শাজুর সাথেও বলিসনি। এখানে কি মেয়েটার পাগল হওয়ার কথা না? ” রাহাত অনেক দিন যাবত কথাগুলো জমিয়ে রেখেছিল কিন্তু বলার মতো সাহস সে পায়নি। সবসময় সঞ্চয় মেয়েটার উপরে দোষ চাপিয়ে দেয় আর নিজেকে ও শাজুকে ভিক্টিম হিসেবে প্রকাশ করে। এখন আবার নতুন কাউকে জুটিয়েছে। বিয়ে করে শাজুকেও ভুলে গেছে।
” রিদ্দি অনেক আগে থেকেই আমাকে পছন্দ করতো। আর জানতো যে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে। ” কিছু একটা বলার প্রয়োজন ছিল তাই বলল৷
” তাহলে দোস্ত, তুমি তো ওর ইমোশন নিয়ে খেলেছ! ” রাহাত না বলে পারলো না। অনেক দিন যাবত এই কথাটা বলার জন্য মুখিয়ে ছিলো সে।
” একটা কথা কি জানোস? ” সঞ্চয়ের প্রশ্নে রাহাত বলল, ” কী বল?”
” সুবাহ একটা কথা বলেছিল, মজা তুমিও পাইছো আমিও পাইছি। ব্যাপারটা সেরকম ছিল। আমার দিক থেকে পরিষ্কার ছিল সবকিছু। আমি কোনোকিছু লুকাই নাই৷ রিদ্দি জানতো আমি টাইম পাস করছি। এক্ষেত্রে কেউ ফল করলে তো আমার দোষ না। আর রিদ্দির জন্য এতো পুড়তেছে তোর। তাহলে যা না রিদ্দির কাছে। ” রাহাতের মনে হলো কেউ ওর শরীরে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
” আচ্ছা তাহলে বল, বিনা কারণে রিদ্দি শাজুকে মারতে গেল কেনো?” রাহাতের মনে হলো সে ছক্কা হাঁকিয়েছে৷ সঞ্চয় হেসে বলল, ” আমি রিদ্দির সাথে সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে ছিলাম। ফোন, ম্যাসেজ, দেখা করা সবকিছু। আমি যখন বুঝতে পেরেছি, আমার গন্তব্য শাজু ছাড়া অন্য কেউ না। আর তাকে পেতে হলে, এসব বাহিরের বিরিয়ানি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ব্যাস, আমি আমার পথ বেছে নিলাম। এখানে শাজুর কোনো দোষ ছিল না। বেচারি আমার জন্যই ঝামেলার মধ্যে পড়েছিল। আর রিদ্দির পক্ষ নেয়ার আগে একটা ব্যাপার জেনে নে। শাজুকে মারার ভিডিও সে সোসিয়াল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছিল। যার কারণে, শাজুর বাবা স্ট্রোক করে বসেন। এমনকি, শাজুর বাবা মা ডিভোর্স ছিলেন। আর তার পেছনে ওর বাবার দোষ ছিল। সেটাও প্রচার করেন। তুই যে রিদ্দির পক্ষপাতিত্ব করতেছিস সেটা করার আগে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিৎ। টাইম পাস করছি আমি। তাহলে ঝামেলা যা করবে, আমার সাথেই করা উচিৎ। শাজুকে গিয়ে কেনো ধরবে? ” রাহাত কিছুটা দমে গেল। রিদ্দি তাকে এটা তো বলেনি! তাকে বলেছে, শাজু নাকি খোলাখুলি যুদ্ধের ময়দানে ডেকেছিল। সঞ্চয় আবারও বলল, ” শাজুর মুখে অজস্র ক্ষতের চিহ্ন ছিলো। কোমড় সমান চুল কেটে ঘাড় অব্দি করে দিয়ে ছিলো। আরে শ্লা, পক্ষপাতিত্ব করবি ঠিক আছে। তাই বলে নির্দোষকে কেনো দোষ দিস? জীবনে শাজুর মতো মেয়ে চোখে দেখেছিস নাকি? আজীবন রিদ্দির মতো মেয়েদের লেজ ধরেই তো রইলি। আর কী বলবো তোকে?”
” কিন্তু দোষ তোর ছিল। তুই সবকিছুর মূলে ছিলি। তোর কারণেই সব হয়েছে। এটা স্বীকার করে নে। ”
” তাহলে এটাও স্বীকার করে নে যে, রিদ্দিও ভাগীদার ছিল। ”
রাহাত কাঁথা দিয়ে পুরো শরীর ঢেকে শুয়ে পড়লো। কিছু বলার মতো আপাতত নেই৷ শাজু মেয়েটাকে খুঁজতে হবে রে!

*****

রিদ্দি হাতে একটা ছবি নিয়ে তার রিডিং রুমে বসে আছে। ছবিটাতে সঞ্চয় হাসছে। সঞ্চয়কে কখনো অন্য কারো সাথে এভাবে হাসতে দেখেনি। সঞ্চয় নিজেই বলেছিল, ” তোমার সাথে থাকা অবস্থায় নিজেকে সবচেয়ে বেশি স্বাধীন মনে হয়। মনে হয়, আমি মুক্ত বিহঙ্গ! ”
” শাজুর সাথে মনে হয় না এমন?”
সঞ্চয় ভেবে বলল, ” না, ওর সাথে যখন থাকি তখন নিজেকে অনেক নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কথা বলার আগেও ভাবতে হয়। ”
” তাহলে প্রেম কেনো করছ ওর সাথে? ” এর উত্তরে সঞ্চয় বলেছিল, ” ঠিক জানি না৷ বিষয়টা খুবই সহজ আবার জটিলও। আমি তোমাকে ঠিক বুঝাতে পারবো না। বিষয়টা আমি অনুভব করতে পারি। তাকে আমার অনন্যা মনে হয়। হাজার না লাখ লাখ মেয়ের মাঝে সে আমার দৃষ্টিতে আলাদা ধরনের। আমি যখনই ওর দিকে তাকাই তখনই একটা শান্তি শান্তি অনুভব পাই। মনে করো, আমি প্রচণ্ড মেন্টাল প্রেশারে আছি। তখন ওর চোখের দিকে তাকালে বা ওর সাথে কথা বললে, নিজেকে হালকা লাগে। ও হচ্ছে সফট একটা মেয়ে। বলতে পারো, আমার উইকনেস, আমার সফট কর্ণার, আমার পারসোনাল কেউ। যার দিকে তাকিয়ে আমি বলতে পারবো, ও শুধুই আমার। আরো অনেক কিছু আছে, রিদ্দি। আমার মাথায় এখন আসছে না। ” কথাগুলো শুনে রিদ্দির মনে হয়েছিল। এগুলো তারও মনের কথা। সেও ঠিক এভাবেই সঞ্চয়কে নিয়ে ভাবে। ছবিটাতে সঞ্চয় তার ডান হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। কতো সুন্দর একটা মুহুর্ত ছিলো। রিদ্দির বুক ফেটে কান্না আসছে৷ অনেক কষ্টে আটকে রেখেছে। প্রথম যেদিন সঞ্চয় তাকে চুমু খেল, সেদিন কিন্তু সে এক পা-ও এগিয়ে আসেনি। সঞ্চয় নিজেই এসেছিল তার দিকে। ওইসময় সঞ্চয়েত চোখের ভাষায় বলে দিচ্ছিল, শাজু তার মোহ ছাড়া কিছুই না। কিন্তু এই কথাটা সঞ্চয়ের মাথায় নেই। সে শুধু বুঝাতে চেয়েছে এতোটা বছর যে, শাজু তার কিছুই না মোহ ছাড়া।
সঞ্চয় তাকে ফেলে কীভাবে বিয়ে করলো? আমি তাকে পছন্দ করি। এটা জেনেও কেনো আমার সাথে সময় কাটিয়েছে? কেনো সে আমার শরীর তার চাহিদার জন্য ব্যবহার করেছে? আমার কি একারই সব দোষ? নাকি…
লিমার নাম্বার ডায়াল করলো। এতো রাতে রিসিভ করবে কিনা সেটা ভাবারও সুযোগ দেয়নি নিজেকে৷ কয়েকবার ফোন দেয়ার পরে রিসিভ হলো।
ঘুম জড়ানো কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো, ” কী হইছে মা? এতো রাতে ফোন দিলে যে?” রিদ্দি দৃঢ় কণ্ঠে বলল, ” আপনি আমাকে ওয়াদা করেছেন যে, সঞ্চয়ের বউ বানাবেন। এখন সময় হয়েছে সেই ওয়াদা পূরণ করার। ”
” কিন্তু মা, এখনই কিছু করতে পারবো না। আমাকে একটু সময় দাও। ”
” আর কতো সময় চান আপনি? আপনার এই সময় সময় করে তো সঞ্চয় বিয়ে করেই বসেছে। আপনার জন্য আমি নিজ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেইনি৷ তা নাহলে এতদিন ওকে যেভাবেই হোক আমি জোর করে বিয়ে করে নিতাম। পারলে, ওর মাথায় গুলি ঠেকিয়ে করতাম। আর আপনি এখন কি চান, একটা বাচ্চা হোক? ”
” না, মা আমি সেটা বলিনি। ওর তো স্টুডেন্ট অবস্থায় বিয়ে করার কথা না৷ ওর মা ঝামেলা পাকিয়েছে। ”
” আমি কিচ্ছু জানিনা৷ আপনি যেভাবেই পারেন সেভাবেই সঞ্চয়কে আমার হাতে তুলে দিবেন। ”
” ঠিকাছে মা, ঠিকাছে। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো। ”

চলবে…

~ Maria Kabir

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here