ফেরা পর্ব-৬

0
513

#ফেরা

৬.

সময়টা বেশ ভালোই কাটছে শাজুর। সারাদিন সঞ্চয়ের সাথে টুকটাক কথা হয়। সপ্তাহে তিন দিন দেখাও হয়। মাঝেমধ্যে প্রাইভেট থেকে একটু আগে বেরিয়ে ফুসকা খেতে যায়।
সঞ্চয়ের প্রতি উইকনেসটা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। আগে দিনে দুই বা তিন বার কথা হলেই হতো কিন্তু আজকাল চার, পাঁচ বারের কম কথা বললেই মন খারাপ হয়ে যায়।
প্রতিনাসেই সঞ্চয় লুকিয়ে ছাদে আসে। ছাদ থেকে মুক্তার রুমটা বেশ দূরে হওয়ার। সঞ্চয়ের উপস্থিতি বুঝতে পারেননা। গভীর রাত পর্যন্ত দুজনে গল্প করে, হাসি ঠাট্টা করে। সঞ্চয়কে সম্পূর্ণ জোর করে পাঠাতে হয় শাজুর।
একজন মানুষ তার জন্য এতোটা পাগল ভাবতেই বুকের বা পাশটাতে স্পন্দন বেড়ে যায়।
শাজুর বার্ষিক পরীক্ষা সামনে। সঞ্চয়কে পুরোপুরিভাবে আসতে নিষেধ করেছে শাজু। সঞ্চয়ের সাথে এই ব্যাপার নিয়ে ঝগড়াঝাটিও হয়েছে। একসময় সঞ্চয় হার মেনে বললো
– আমি আর আসবোই না। থাকো তুমি একা।
শাজু আর কিছু বললো না। এক্সাম শেষ হলে এই রাগ ভাঙানো যাবে। আপাতত রাগ হয়ে থাকাটাই বেটার।
সালমা ম্যাডামের পড়ানো বেশ ভালোই লাগে শাজুর। প্রথম দিকে তেমন একটা বুঝতে পারতো না।
পরীক্ষার আগের রাতে শাজু লাস্ট রিভিশন দিচ্ছে। ঘড়িতে রাত ১২ টা বেজে ২৫ মিনিট। ছাদে শব্দ পাওয়া গেলো। কারো হাঁটার শব্দ।
সঞ্চয় তো রাগ করে আছে। ও ভুলেও আসবেনা তাহলে কে?
রুমের দরজা খুলে ছাদে যাওয়ার সাথে সাথে কেউ একজন শাজুকে জড়িয়ে ধরলো। শাজুর বুঝতে বাকি রইলো না যে, এই কেউ একজন সঞ্চয়!
চেনা স্পর্শ, চেনা গন্ধ আর মানুষটা খুব বেশি প্রিয়!
দুহাতের মাঝে শাজুর মুখ তুলে নিয়ে সঞ্চয় অভিমানী কণ্ঠে বললো
– আমি বুঝিনা তুমি এমন কেনো? আমাকে না দেখে থাকছো কীভাবে?
– দেখা তো হচ্ছেই।
– ওই দেখা আর এখনকার দেখার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই?
– আছে। কিন্তু আমার পরীক্ষা আগামীকাল।
– আমি কি তোমার পুরো সময় নিয়ে নিচ্ছি নাকি? মাত্র আধা ঘণ্টাই তো।
– পরীক্ষা খারাপ হলে মা রাগ করবে।
– পরীক্ষা খারাপ হবেনা। তুমি চিন্তামুক্ত থাকতে পারো।
– এখন দেখা হয়েছে?
– না হয়নি। আধা ঘণ্টা থাকবো। কেবলমাত্র ১০ মিনিট হয়েছে।
– আমার লাস্ট রিভিশন টা তাহলে কমপ্লিট করে আসি?
– না এখন না। আমি চলে যাবার পরে।
– ফেল করে বসলে?
– ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ক্লাস নাইনের ফার্স্ট গার্ল যদি বাংলায় ফেল করে তাহলে সেটা হবে এই পৃথিবীর নবম আশ্চর্যজনক ঘটনা!
সঞ্চয়ের গাল টেনে দিয়ে বললো
– হয়েছে ডায়লগ বন্ধ করুন। আপনার পড়াশোনা কেমন চলে?
সঞ্চয় হেসে বললো
– নীরব ঠিকই বলে।
– কী বলে?
– ফার্স্ট গার্লের সাথে প্রেম করোস কীভাবে? এরা শুধু পড়াশোনা নিয়ে গল্প করতে ভালোবাসে। টপিক যতোই চেঞ্জ করো এরা ঘুরেফিরে ওই পড়াশনায় গিয়ে আটকে যায়।
সঞ্চয়ের ঘাড় দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে শাজু বললো
– তো মিস্টার সঞ্চয় আপনি তাকে বলেননি যে, গল্পটা আপনি বেশি করেন। আমি শ্রোতা হিসেবে থাকি।
– না বলিনি। কেনো বলবো?
– আচ্ছা আপনাকে বলতে হবেনা।
– শাহাজাদী
– বলেন
– আমার এইচএসসি এক্সাম শেষে ঢাকার বাইরে ঘুরতে যাচ্ছি। মাত্র ৩ দিনের ট্যুর।
– আচ্ছা যাবেন।
– তুমিও সাথে চলো।
– আপনার মাথা নষ্ট নাকি? আমাকে মা নিধিদের বাসায় যেতে দেয় তাও এত্তো এত্তো কন্ডিশন দিয়ে আরতো ঢাকার বাইরে।
– দুজনের একসাথে একটু বেশি সময় হতো ঘুরে বেড়ানোর।
– একসাথে তো এখনো কাটাচ্ছি।
– এই কাটানো সেই কাটানো এক না।
– আমি যেতে পারবো না।
– নীরব ওর গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে যাবে।
– যাক। আমি ওসব পারবোনা।
– ওকে। পরীক্ষা শেষ হবে কবে?
– ১২ তারিখে।
– ভালোভাবে পরীক্ষা দিও। এক্সাম শেষ হলে আসবো আবার।
শাজুর কপালে আলতো করে চুমু দিয়ে দ্রুত চলে গেলো সঞ্চয়।
শাজু অবাক হয় ও কীভাবে তিনতলা বেয়ে উঠে আসে? কেউ কী ধর‍তে পারেনা?
বাংলায় তো একটা প্রবাদ আছে, দশ দিন চোরের এক দিন গেরস্তের!

সকালে মুক্তাকে চিন্তিত দেখে শাজু জিজ্ঞেস করলো
– মা কিছু হয়েছে?
– দোতলার মোহন সাহেব বললেন বাসায় নাকি প্রায় চোর আসে। পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে আসে আবার কিছুক্ষণ পর নেমে যায়।
শাজু ভয়ে ভয়ে বললো
– বলো কী?
– হ্যাঁ। তুই ছাদের দরজা আটকে ঘুমাস না?
– হ্যাঁ আমি তো আগে থেকেই আটকে ঘুমাই।
– দারোয়ান কে টাইট দিতে হবে।
– উনি কি এখন রাত জেগেও কি কাজ করবে নাকি? উনিও তো মানুষ মা।
– নাইট গার্ড রাখলে ভালো হয়।
– কিছু কি চুরি হয়েছে?
– না তেমন কিছুই তো বললো না।
– তাহলে রাখার দরকার নেই। এমনিতেই বাড়িটার লোন কমপ্লিট হতে আরো ১ বছর। বাড়তি খরচ না করাই ভালো।

শাজুর বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলো। এদিকে সঞ্চয়ের সামনে এইচএসসি এক্সাম। তেমন আর আগের মতো দেখা হয়না। টেস্ট এক্সাম খারাপ হওয়াতে সঞ্চয়ের উপর পড়াশোনার চাপ বেড়েছে। সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যেও শাজুকে ম্যাসেজ, ফোন দিতে ভুলে যায়না।
নীরব সঞ্চয়ের রিলেশনশিপ নিয়ে সিরিয়াসনেস দেখে একদিন প্রশ্ন করেই বসলো
– তুই কি ডাই হার্ড প্রেমে পড়েছিস নাকি?
– কেনো?
– রিলেশনশিপ নিয়ে এতো সিরিয়াস ক্যান তুই?
– শাহাজাদী খুব ভালো মেয়েরে।
– তা নাহয় বুঝলাম কিন্তু এই বয়সটা কি এরকম প্রেম করার নাকি? এখন হচ্ছে টাইম পাস করার বয়স। সিরিয়াস প্রেম করবি ইউনিভার্সিটি লাইফে সুন্দরী ক্লাসমেট বা,জুনিয়র দেখে। আর তুই কিনা এরকম একটা খ্যাত মেয়ের সাথে প্রেম করছিস তাও ডাই হার্ড প্রেম!
সঞ্চয় স্বাভাবিকভাবেই বললো
– ওকে আমার প্রচন্ড ভালো লাগে। ভালোবাসিও অনেক।
– হয়েছে আর জ্ঞান দিতে আসিস না।
– জ্ঞান দিচ্ছি না। টাইম পাস শব্দটা আমার অপছন্দ আর আমার শাহাজাদী টাইম পাস করার মতো মেয়ে না।
– হাসাইলি দোস্ত।
– শাহাজাদী আর আমার রিলেশনশিপ নিয়ে তুই কোনো কথা বলিস না তো।
– বাহ এখন ফ্রেন্ড পর হয়ে গেলো?
– ফ্রেন্ড পর হবে কেনো?
– আচ্ছা যাইহোক। রাফিয়া রিদ্দি কে চিনিস?
– তোর পোস্টে কমেন্ট করেছিলো যে মেয়েটা?
– হ্যাঁ। ও তোকে পছন্দ করে।
– করুক।
– মানে কী দোস্ত? এতো হট আর সেক্সি একটা মেয়ে তোমাকে পছন্দ করেছে আর তুমি সেটাকে পাত্তা দিচ্ছো না?
– দিচ্ছি না কারণ আমার অন্য কেউ আছে।
– আমি তো বলছি না তোর শাহাজাদীকে বাদ দিতে। আমি বলছি একটু কথা বল রাফিয়ার সাথে। ঘুরতে বের হ।
তোর ওই শাহাজাদী তো তোকে লিপ কিসই করতে দেয়না। তাহলে কেমন প্রেম করিস?
– না দেয়াই ভালো। যতো ছাড় দিবে ততো আশা বাড়বে।
– লাইফটাকে একটু চিল কর দোস্ত।
– চিল করতে গিয়ে আমি ওকে কষ্ট দিতে পারবোনা।
– কষ্ট দিতে বলছে কে?
– অন্য মেয়ের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ওকে কষ্ট দিবে।

চলবে…

Maria Kabir

বিঃদ্রঃ এই পর্বটা গ্রুপে পোস্ট হলেও পেইজে ভুল বসতো পোস্ট করা হয়নি, এজন্য এখন পোস্ট করা হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here