বদ্ধ হৃদয়ের অনুভুতি পর্বঃ২৯

0
3429

#বদ্ধ_হৃদয়ের_অনুভূতি
#পর্বঃ২৯
লিখাঃতাজরিয়ান খান তানভি

সারা ঘরের আসবাবপত্র ভেঙে এধার ওধারে পড়ে আছে।কাঁচ ভাঙার ঝন ঝন শব্দে ঝিমুনি দিয়ে উঠে মাথা।দুজন লোক শুয়ে আছে সেই কাঁচ ভাঙার উপরে।শুয়ে আছে বললে ভুল হবে তারা মৃত।শরীর থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে ফ্লোর ভেসে আছে।চোখ দুটো এখনো জীবন্ত।যেনো বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে।গলার দিকটা তীক্ষ্ম ছুরির সাহায্যেই কাটা হয়েছে।

কাউচের উপর রাজকীয় চালে বসে আছে মাহতাব খান।তার থেকে একটু দূরে অপরাধীর মতো হাঁটু ভেঙে তা দু হাতে জড়িয়ে ধরে বসে আছে আলতাফ।নিরুত্তাপ সে।তার দুটো চোখ ভীতসন্ত্রস্ত।নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে মাহতাব এর দিকে।মাহতাব মৃদু হাসলেন।তার পাশেই আরো দশেক লোক দাঁড়িয়ে আছে।কোমল গলায় প্রশ্ন করলেন মাহতাব—

“মেয়েটাকে ভালোবাসে মাহাদ?

আলতাফ কিছুক্ষন চুপ থেকে মুখ খুললেন।নরম গলায় বললেন—

” এতে তার দোষ নেই বড় সাহেব।বউমনি কে মারবেন না।”

মাহতাব উচ্চ শব্দে হাসলেন।শান্তু গলায় অবাক হয়ে বললেন—

“বউমনি!এই নামে তো তুমি আদ্রিতাকে ডাকতে!এখন ওই মেয়েকে ডাকছো।মাহাদ তাহলে তাকে বিয়ে করেছে?

আলতাফ অস্বীকার করে বললেন–

“নাহ।আমিই তাকে ভালোবেসে এই নামে ডাকতাম।”

“ও আচ্ছা।এতো ভালোবাসো তাকে যে আমার মেয়ের জায়গায় বসালে!

আলতাফ কিছু বললেন না।মাহতাব এর পাশ থেকে একজন লোক গিয়ে আলতাফ কে দুটো চড় মারলো।আলতাফ এর গাল কেটে রক্ত পড়ছে।কিন্তু তবুও সে কোনো প্রতিবাদ করলো না।মাহতাব আবারো নমনীয় গলায় বললেন—

“মাহাদ নিশ্চয়ই মেয়েটার সাথেই আছে?

আলতাফ তার ব্যথাকে অগোচরে রেখেই দৃঢ় গলায় বললেন—

“আমি জানি না।গত কয়েকদিন সে বাসায় আসে না।আমার সাথেও কোনো যোগাযোগ করেনি।”

মাহতাব কিছু একটা বোঝার ছলে মাথা ঝাঁকালেন।শীতল গলায় বললেন—-

“মেয়েটা কী আমার মেয়ের চেয়েও সুন্দরী!মাহাদ কেনো তাকে ভালোবাসে বলতে পারো?

আলতাফ দৃঢ় গলায় বললেন—

“ভালোবাসা রুপ দেখে হয়না বড় সাহেব।আদ্রিতা মামুনি কখনো মাহাদ বাবাকে ভালোবাসেনি।আর তার মৃত্যুতেও মাহাদ বাবার হাত নেই।আপনি শুধু শুধু নিজের আধিপত্য,ক্ষমতা আর অহমিকায় বিভোর হয়ে তার জীবনটা অতিষ্ঠ করে তুলেছেন।”

মাহতাব এর চোখ জ্বলে উঠলো।দারাজ গলায় বললেন—

“তোমার এতোবড় সাহস!তুমি ওই মালির মেয়ের সাথে আমার মেয়ের তুলনা করো!

মাহতাব ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে এলেন আলতাফ এর সামনে।কাঁধ ঝাঁকিয়ে তাকে দাঁড় করালেন।নিজেই আলতাফ কে কতগুলো চড় থাপ্পড় মারলেন।রুষ্ট গলায় বললেন—

“আমার মেয়ে নাহয় একটা ভুল করেছে।তাই বলে মাহাদ ওকে ফিরিয়ে দিবে!মেয়েটা আমার কতোটা কষ্ট পেয়েছে তুমি ভাবতে পারছো!দশ বছর বয়স থেকে আদ্রিতাকে আমি ড্রাইভিং শিখিয়েছি।কোনোদিন ড্রাংক করেও আমার মেয়ে কোনো ধরনের অ্যাকসিডেন্ট এর সম্মুখিন হয় নি।আর সেই মেয়ে অ্যাকসিডেন্ট করে মারা গিয়েছে।তুমি বুঝতে পারছো কতটা ডিপ্রেসড ছিলো আমার মেয়ে!

আলতাফ কিছু বললেন না।তার চোখ দিয়ে জল বেয়ে পড়লো।আদ্রিতাকে তিনিও কম ভালোবাসেন নি।কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আদ্রিতা স্বাধীনচেতা মেয়ে।মাহতাব তার মেয়ের কোনো কিছুর কমতি রাখেন নি।পাঁচ বছর বয়সে আদ্রিতার মা মারা যাওয়ার পর নিজের বুকে আগলে রেখে আদ্রিতাকে তিনি বড় করেছে।তার দুনিয়া ছিলো তার মেয়ে।আর মেয়ের এই অনাকাঙ্খিত মৃত্যুতে মাহতাব হিংস্র বাঘে পরিণত হয়েছে যা এখন মাহাদ এর জীবেন সর্বনাশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
,
,
,

আম্বের এখন রিমেল এর বাসায় ই থাকে।মাহাদও সেখানেই থাকে।রিমেল কিছুদিনের জন্য বাইরে গেছে।সামান্তাকে পুরো ঘটনা জানালে সামান্তা ক্ষেপে উঠে আম্বের এর উপর।তাকে বোঝানোর চেষ্টা করে মাহাদ তাকে নিয়ে খেলেছে।কিন্তু আম্বের সামান্তাকে আশ্বাস দেয় মাহাদ তাকে সত্যিই ভালোবাসে নাহলে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে নিজের বন্ধুকে তার খেয়াল রাখতে পাঠাতো না।কিন্তু সামান্তা তারপরও মানতে নারাজ।আম্বের আর কথা বাড়ালো না।

আজ রান্না করতে করতে বেশ দেরি হয়ে যায়।আম্বের এর পেট খিদেয় মোছড় দিয়ে উঠে।তাই কোনোমতে শাওয়ার শেষ করেই খেতে বসে আম্বের।তার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহাদ।আম্বের চোখ ছোট ছোট করে বললো–

“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

মাহাদ মৃদু হেসে বিগলিত গলায় বললো—

“চোখের ডক্টর তো দেখাইনি।”

আম্বের লাজুক গলায় বললো–

“বাচ্চা মানুষের সামনে কী বলছেন এইসব!

খিলখিলিয়ে হেসে উঠে রিঝুম।ঝলমলে গলায় বললো—

“তোমরা দুইজন সবসময় ঝগড়া করো কেন!অবশ্য আমিও প্ল্যান করেছি বিয়ের পর আমিও আমার বরের সাথে ঝগড়া করবো।”

আম্বের নাক উঁচু করে বললো–

“ছিঃ
এইসব কী ধরনের কথা!

ফিকে হাসে রিঝুম।আম্বের কপট রাগ দেখিয়ে বললো–

“এইসব আপনার জন্য হয়েছে।”

মাহাদ নিরীহ গলায় বললো—

“আমি আবার কী করলাম!

রিঝুম ধমকে উঠে বললো—

“উফ!
তোমরা থামোতো।কী শুরু করলে!
তবে ব্রো তুমি কিন্তু ভাগ্যবান ভাবির মতো বউ পেয়েছো।রোজ রোজ ভালো ভালো খাবার খেতে পারবে।”

রিঝুম এর কথায় প্রসন্ন হাসে মাহাদ।
খাওয়া শেষে বিকেল দিকে আম্বের আর রিঝুম ক্যারাম খেলছে।মাহাদ মোবাইলে কিছু একটা দেখছে।ডোর বেল বাজতেই চকিতে সবাই সেদিকে ফিরে তাকায়।মাহাদ ওদের কে বসতে বলে নিজেই দরজা খুলে।তার সামনে দাঁড়ানো আলতাফ।তাকে দেখে অপ্রস্তুত হয় মাহাদ।আলতাফ এর চোখে মুখে ব্যান্ডেজ।ভেতরে আসতেই তাকে দেখে বিস্মিত হয় আম্বের।প্রশ্ন করতেই জবাব দেয় তার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে।আম্বের তাকে পানি খেতে দেয়।রান্না ঘরে যায় চা বানাতে।আম্বের মাহাদ কে অনেকবার বলেছিলো স্বপ্নমহল নিয়ে যেতে কিন্তু মাহাদ বলেছে এখন এই জায়গাই তার জন্য সেইফ।

মাহাদ এর মুখোমুখি বসে আছে আলতাফ।সব কিছু খুলে বললেও মাহাদ কোনো প্রতিক্রিয়া করলো না।সে স্থির হয়ে বসে রইলো।আলতাফ মাহাদ এর দিকে উজ্জ্বল চোখে তাকিয়ে গাঢ় গলায় বললেন—

“আপনি বউমনি কে নিয়ে এই শহর ছেড়ে চলে যান।”

মাহাদ তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।সন্দিগ্ধ গলায় বললো–

“কোথায় যাবো বলতে পারেন!কোথায় গেলে সে আমাকে খুঁজে পাবেনা!আর কতদিন পালিয়ে বেড়াবো আমি!

“তাহলে কী করবেন এখন?

“জানি না।”

“মাহতাব খান এইবার বউমনি কে ছাঁড়বে না।তার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি তাকে ভালোবাসেন।সেই ছবি তার হাত লেগেছে।”

মাহাদ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।ততক্ষনে আম্বের চা নিয়ে আসে।চা দিতেই আলতাফ আম্বের এর কাছে আবার পানি চায়।আম্বের পানি আনার জন্য কিচেনে গেলে আলতাফ ব্যস্ত গলায় বললেন —-

“যা করার তাড়াতাড়ি করেন মাহাদ বাবা।জানি না কী হবে!শুধু এইটুকু বলবো বউমনিকে আর কষ্ট দিবেন না।”

আলতাফ আর বসলো না।সে চলে যায়।মাহাদ তার মোবাইল সিম সব বদলে ফেলেছে।তাই আলতাফ স্বয়ং এসেছে।আম্বের পানি নিয়ে এসে দেখে আলতাফ নেই।মাহাদ কে জিঙ্গেস করতেই বললো কোন জরুরি কাজ আছে তাই চলে গেছে।আম্বের এর কপালে ভাঁজ পড়ে।সে বুঝতে পারছে কিছু একটা হচ্ছে কিন্তু আসলে তা কী তা সে জানে না।

মাহাদ ভালো করেই জানে মাহতাব আর কিছুক্ষনের মধ্যেই হয়তো জানতে পারবে মাহাদ এখানেই আছে।আলতাফ এর এখানে আসা উচিত হয়নি।মাহাদ কাউকে কল করে বললো—

“আপনি আসেন।আমি তাকে নিয়ে আসছি।”
,
,
কিছুক্ষন পরই আম্বের কে নিয়ে নিজের একটা অ্যাপার্টমেন্টে আসে মাহাদ।আম্বের বেশ কয়েকবার প্রশ্ন করেও কোনো জবাব পায় নি।মাহাদ ঘরে এসে বিছানায় বসে।আম্বের হেঁটে হেঁটে পুরো অ্যাপার্টমেন্ট দেখতে থাকে।দেখা শেষ হলে মাহাদ এর পাশে এসে বসে আম্বের।কৌতূহলী গলায় প্রশ্ন করলো—

“এখানে কেন এসেছেন মাহাদ?

মাহাদ শান্ত গলায় বললো–

“আপনার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

আম্বের ব্যস্ত গলায় বললো—

“কী?

মাহাদ একটা প্যাকেট এগিয়ে দেয় আম্বের কে।তাতে একটা লাল শাড়ি,চুড়ি আরো অনেক কিছু।আম্বের স্বাভাবিক গলায় প্রশ্ন করলো —

“এগুলো কেন মাহাদ।”

মাহাদ নরম গলায় বললো–

“আজ আমি আপনাকে নিজের হাতে বউ সাজাবো।”

আম্বের সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো মাহাদ এর দিকে।মাহাদ নিজ হাতে সাজায় আম্বের কে।আয়নার সামনে দাঁড়াতেই নিজেকে দেখে নিজেই অবাক হয় আম্বের।ঝট করে পিছন ফিরে মুখ গুঁজে মাহাদ এর বুকে।মাহাদ ব্যস্ত গলায় বললো—

“কী হয়েছে প্রজাপতি?

থমথমে গলায় আম্বের বললো—

“আমি একদম আপনার মতো সুন্দর নই।আমাদের বাবুরা যেনো কখনো আমার মতো না হয়।ওরা যেনো আপনার মতো হয়।”

মাহাদ আলতো করে আম্বের এর পিঠের উপর হাত রাখে।হালকা গলায় বললো—

“রঙের সৌন্দর্যই আসল সৌন্দর্য নয়।মনের সৌন্দর্য ই আসল।নেলসন ম্যান্ডেলা কে দেখেছেন!কৃষ্ণবর্নীয় হয়েও হাজারো মানুষের অন্তরে বিরাজ করে।”

আম্বের অস্ফুটভাবে বললো–

“হু।”

“চলেন আজ আপনাকে একজনের সাথে পরিচয় করাবো।”

আম্বের উৎসুক গলায় বললো—

“কে?

“আসেন আমার সাথে।”

মাহাদ আম্বের কে নিয়ে ড্রয়িং রুমে আসে।আম্বের দেখতে পায় সেখানে একজন মহিলা বসে আছে।ফর্সা মতো মহিলা কে দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক উচ্চ ফ্যামিলির সে।আম্বের কে দেখে হাসি হাসি মুখে তার কাছে এসে দাঁড়ায়।আম্বের এর চিবুকে হাত দিয়ে আনন্দিত গলায় বললো—-

“মাশাআল্লাহ!
আমার ছেলের পছন্দ আছে।কী মিষ্টি দেখতে!

আম্বের ভ্রু ক্রটি করে তিক্ত মুখভঙ্গি করে মহিলার হাত সরায়।কেনো যেনো মহিলাকে তার ভালো লাগলো না।মাহাদ এর দিকে মুখ করে বললো—

“কে উনি?

মাহাদ স্বাভাবিক গলায় বললো—

“উনি আপনার হবু শাশুড়ি।তার ছেলের সাথে আমি আপনার বিয়ে ঠিক করেছি।”

আম্বের বিস্ফোরিত চোখে তাকায় মাহাদ এর দিকে।ব্যস্ত গলায় বললো–

“এইসব কী বলছেন আপনি!

“ফাহাদ।তার ছেলে ফাহাদ আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসে।সে আপনার সকল স্বপ্ন পূরণ করবে।”

আম্বের অবাক গলায় বললো–

“ফাহাদ!

“জ্বী।চট্টগ্রামে যে আপনাকে তুলে নিতে চেয়েছিলো উনি সে ফাহাদ এর মা।”

আম্বের এক লাফে সরে আসে সেখান থেকে।ঝামটা মেরে বললো—

“যে ছেলে আমাকে তুলে নিতে চেয়েছিলো আপনি ভাবলেন কী করে আমি তাকে বিয়ে করবো!

মহিলাটি আম্বের এর কাছে গিয়ে তার পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন—

” আমার ছেলে তোমায় খুব ভালোবাসে।সে তোমাকে খুব ভালো রাখবে।”

আম্বের ঝাঁঝিয়ে উঠে বললো—

“কিন্তু আমি তাকে ভালোবাসিনা।আমি মাহাদ কে ভালোবাসি।”

মাহাদ কাউচে বসে ধীর গলায় বললো—

“কিন্তু আমি তো আপনাকে ভালোবাসিনা মিস আম্বের।”

আম্বের চোখ রাঙিয়ে বললো—

“একদম আমার সাথে তামাশা করবেন না।ভালো লাগছে না এইসব আমার।”

আম্বের মহিলার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বললো—

“আপনি যান এখান থেকে।না আমি আপনার ছেলেকে ভালোবাসি না তাকে বিয়ে করবো।”

মাহাদ শক্ত গলায় বললো—

“আপনাকে যেতেই হবে মিস আম্বের।”

“মাহাদ!
আপনি বলেছেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।”

মাহাদ ঝট করে উঠে দাঁড়িয়ে বললো—

“আপনি ভাবলেন কী করে আমি আপনার মতো দুই টাকার মেয়েকে বিয়ে করবো!আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করবো।”

তখনই মাহাদ পাশে এসে দাঁড়ায় একটি মেয়ে।অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটির পড়নে ওয়েষ্টার্ন ড্রেস।মেয়েটিকে দেখে কটমটিয়ে উঠে আম্বের।তপ্ত গলায় বললো—

“এইসব কী নাটক শুরু করেছেনে আপনি!

মাহাদ শান্ত গলায় বললো—

“নাটক নয়।আমার জীবনের আখেরি ক্লাইম্যাক্স।আপনার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।আপনি যেতে পারেন।”

জ্বলে উঠে আম্বের।ঠাস করে এক চড় বসিয়ে দেয় মাহাদ এর গালে।মাহাদ নিরুত্তেজ।ঘি ঢালা আগুনের মতো তেতে উঠে বললো—-

“কি পেয়েছেন আপনি!যখন যা ইচ্ছে তাই করবেন আমার সাথে!
আমি কী পুতুল!যখন ইচ্ছে খেলবেন যখন ইচ্ছে ছুঁড়ে ফেলবেন!নো মি.মাহাদ আবইয়াজ।নো।আমি কোথাও যাবো না।অনেক সহ্য করেছি আপনার এই ধরনের অসভ্য আচরণ।আপনাকে আমায় বিয়ে করতেই হবে।”

মাহাদ রুষ্ট গলায় বললো–

“তুই ভাবলি কী করে তোকে আমি বিয়ে করবো!বের হ আমার বাড়ি থেকে।”

মহিলাটি কে উদ্দেশ্য করে বললো—

“আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন!
নিয়ে যান তাকে।বেশি দেরি করলে আমার মত পাল্টাবে যাবে তখন কিন্তু আমি অন্য কোথাও নিয়ে বিক্রি করে দিবো তাকে।”

আম্বের ক্ষেপে উঠে আরো কয়েকটা চড় মারে মাহাদ এর গালে।তার বুকেও কতগুলি কিল ঘুষি মারতে থাকে।মাহাদ একটা শব্দও করলো না।তার পাশে থাকা মেয়েটি মাহাদ কে ছাড়িয়ে নিলো।আর মহিলাটি আম্বের কে ছাড়িয়ে নিয়ে তার চোখে মুখে হাত বুলিয়ে বললো—-

“ও তোমাকে ভালোবাসে না।আমার ছেলে তোমাকে খুব সুখে রাখবে ।রাণীর মতো রাখবো।”

“ঘুটে কুড়োনি কখনো রাণী হতে পারে না।”

“এমন বলে না মা।তুমি চলো আমার সাথে।”

আম্বের যেতে চায় না।কিন্তু মহিলাটি জোর করে আম্বের কে নিয়ে চলে যায়।যাওয়ার আগ পর্যন্ত মাহাদ এর কানে বাজতে থাকে আম্বের এর আর্তনাদ।কিছুক্ষন পর সব শান্ত।ধপ করে কাউচে বসে মাহাদ।পকেট থেকে একটা নগদ টাকার বান্ডিল বের করে মেয়েটার হাতে দিয়ে বললো—

“আমি যেনো তোমাকে এই শহরে আর না দেখি।”

“ওকে স্যার।”

মেয়েটি চলে যায়।পুরো অ্যাপার্টমেন্টে মাহাদ একা।ধুম ধরে বসে থাকে সে।তার মনে হচ্ছে এখনো আম্বের তাকে ঢেকে চলছে।মাহাদ কাউচে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়।ভেসে উঠে সেই দুঃস্বপ্ন।তাহলে সত্যিই কী সে তার প্রজাপতি কে হারিয়ে ফেলবে!!

চলবে,,,

(বিঃদ্রঃ
কাল মন সায়রের মাঝি এর প্রথম পর্ব আসবে।জানি না ভালো লাগবে কি না!
😊😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here