বিদায়_বরণ পার্ট ৭

#বিদায়_বরণ
পার্ট ৭
লেখা- মেহরুন্নেছা সুরভী

প্রিয়ম চলে গেল। আর যামিনী চোখে জল নিয়ে প্রিয়মের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
গত একমাসে এই ছেলেটার কী এমন ক্ষতি করেছে সে! পিছনে লেগেই আছে এভাবে!
যামিনী চোখের জল মুছে ক্ষনিক সেখানে দাঁড়িয়ে রইল।

প্রিয়ম হাসি হাসি মুখে নিজের বাইক নিয়ে এগিয়ে গেল। গেটের সামনে একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটাকে প্রিয়ম চিনে। ছেলেটাকে যামিনীর সাথে কয়েকদিন যাবত দেখেছে। ওদেরই ব্যাচের। হাবাগোবা একটা ছেলে।বেশ সাধারণ। যামিনীর মতই তার ক্লাসমেট।এটা ভেবেই প্রিয়ম ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে।

কদিন যাবত প্রিয়ম দেখেছে যামিনীর সাথে বেশ ভাব। একসাথে ক্লাসে বসে। ক্যাম্পাসে ঘুরে ফিরে।রাস্তায় দাঁড়িয়ে একসাথে ফুসকাও খায়! যেটা প্রিয়মের রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ছোপছোপ লাল রঙের টি-শার্ট, আর প্যান্টপরে আছে ছেলেটা। কাঁধে ব্যাগ, বা-হাতে ঘড়ি। চুলগুলো তেল দিয়ে কী অবস্থা করে রেখেছে। প্রিয়ম একরাশ বিরক্ত নিয়ে বলল, “এই ছেলে,এই তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
ছেলেটার নাম অয়ন। প্রিয়মকে দেখে অয়ন তুতলানো কণ্ঠে বলল,
” জি ভাইয়া, যামিনীর জন্য।”
” যামিনী আজ যাবে না, আর ভাইয়া কী হ্যাঁ?, বস বলো। ”
” জি বস। ”
অয়নকে মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভালোই লাগছে।কিন্তু কখন না আবার যামিনী বেড়িয়ে আসে,যে ত্যাড়া মেয়ে! প্রিয়ম তাড়াতাড়ি করে বলল,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক আছে, এখন যাও এখান থেকে। ”
” কিন্তু যামিনীর আজ তো ক্লাস টেস্ট! যাবে না কেন!”
প্রিয়ম ব্যঙ্গামো স্বরে বলল, “সেটা নিয়ে তোমার এত টেনশন কেন!
অয়ন শান্ত হলেও, কথা বলায় বেশ পটু। প্রিয়মকে ধমক খেয়েও হরহর করে বলতে লাগল,
” না মানে, আসলে, আজ ক্লাস টেস্ট টা খুবই জরুরি যামিনীর জন্য। ওর স্কলারশিপের রেজাস্ট এই টেস্টের উপর নির্ভর করছে। আমার সাথে তো এতদিন পড়াশোনা নিয়ে খুব সিরিয়াস ছিলো। অনেক পড়া কাভার করতে ওর বেশ বেগ পেতে হয়েছে। সেজন্য বলছিলাম, ও কি সত্যি যাবে না?বিশ্বাস হচ্ছে না আমার! ”

প্রিয়মের একটু খারাপ লাগল। যামিনীকে না বুঝে কেমন ব্যবহার করল সে!
তবুও ছেলেটাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দিতে চাইল। কিন্তু অয়নও নাছোড় বান্দা। ক্রমশ বিরক্ত হলো প্রিয়ম।
“দেখো, আমি জানি না ও কেন যাবে না। তুমি এখান থেকে যাও তো। বাড়িওয়ালা দেখলে খুব রেগে যাবে। অচেনা কাউকে এখানে এলাও নয়!

অয়ন মন খারাপ করে বলল, জি আচ্ছা!
অয়ন গেট থেকে চলেই যাচ্ছিল, তখনি যামিনী আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে। সেটা দেখে অয়ন একগাল হেসে বলে উঠে,
” আরে, ঐ তো যামিনী আসছে! ”

প্রিয়ম চমকে উঠে যামিনীকে দেখতে পেয়ে খুব রেগে গেল। তার কথার অমান্য করল মেয়েটা। অয়নকে সেদিকে আর আগাতে দিলো না। রাগী চোখে তাকালো, অয়ন চুপসে গেল।
এই চাচা, থামো!”
একটা রিকশা থামিয়ে অয়নকে উঠিয়ে চলে যেতে বলল। রিকশাওয়ালাকে বলল, চাচা, যাও সামনে।
রিকশা চলার সময় অয়ন শুধু বলল, কিন্তু যামিনী! প্রিয়মের রাগ দেখে আর কিছু বলতে পারল না। ভার্সিটির সিনিয়র প্রিয়ম! সে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে চলেই গেল।

যামিনী ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে রাস্তায় রিকশার জন্য দাঁড়াল।মনে মনে প্রিয়মকে গালাগাল দিতে থামল না। কিন্তু তাকে ভার্সিটি শীঘ্রই পৌঁছাতে হবে। এবার প্রিয়ম বাঁধা দিলে সত্যি চিৎকার করবে! যা হয় হবে।
কিন্তু প্রিয়ম এসে যামিনীর সামনে দাঁড়ালো। হাত ধরে টেনে বাইকের সামনে এনে বলল, “উঠে বসো।”
” না, আমি যাবো না আপনার সাথে। আপনি চলে যান। আমি রিকশায় করে চলে যেতে পারব।
যামিনী রাগ নিয়ে দূরে সরে গেল। প্রিয়ম রেগে গেলেও নিজেকে সামলে বলল, “দেখো, ভদ্র ভাবে বলছি উঠো৷ আমি বলছি না উঠতে, কানে কী তুলো গুঁজে এসেছ!লেট হয়ে যাচ্ছে আমার জলদি উঠো।নয়ত…
” নয়ত… কী, মারবেন, শুধু ওটাই করা বাদ আছে!”
প্রিয়ম হুট করে হাসতে হাসতে বলল, “প্রিয়ম চৌধুরী মেয়েদের মারে না! তবে তোমাকে মারব না, তোমার এই গুমোটকে মারব।
যামিনীর সামনা সামনি এসে ঝুঁকে বলে, সারা এলাকায় একটা রিকশাও আসতে দিবো না। তখন দেখব, পায়ে হেঁটে কতদূর যেতে পারো। সো, মিস গাইয়া ভূত, চুজ মাই ওয়ান অপশন! না হয়…
একটু থেমে চারপাশে তাকিয়ে বলল, স্কলারশিপের ভুত ঘার থেকে নামিয়ে দাও। আর বাসায় গিয়ে বিশ্রাম করো। টাটা।

প্রিয়ম বাইকে গিয়ে বসল। যামিনী আর অপেক্ষা না করে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাইকে উঠে বসল। আজ ভার্সিটি থেকে আগে আসা হোক। শিখিনীর কাছে সব নাশিল করবে ভেবে নিলো যামিনী।

প্রিয়ম চাবি দিতে দিতে বলল,
“বাইকে যেতে সমস্যা নেই তো? ”
“না, পারব, আমার ভাইয়ের ছিল, মাঝে মাঝে উঠতাম। ”
“আমাকে ধরে বসো৷ নয়ত পরে যাবে।”

যামিনী একটু অসস্তি নিয়ে প্রিয়মের কাঁধে হাত রাখল। যামিনীর ভয় হতে লাগল, প্রিয়মের কথায় বিশ্বাস করে ঠকবে না তো সে। যদি এসব প্রিয়মের মিথ্যে নাটক হয়। এত নরমাল হয়ে কথা বলায় ভয়টা আরো বেশি হচ্ছে! এখনি না বলে বসে, তুমি কী ভাবছিলে, আমি তোমায় গাড়িতে চড়িয়ে নিয়ে যাবো, সেগুরে বালী! বা মাঝ রাস্তায় যদি নামিয়ে দেয়। অন্যকোনো প্লান নেই তো প্রিয়মের এমন ভালো মানুষী রুপের মাঝে!

ভোর হয়েছে বেশীক্ষণ হয়নি, তাই রাস্তায় জ্যাম কম। প্রিয়ম বেশ স্বাভাবিক হয়েই বাইক চালাচ্ছে। কিছুদূর এগিয়ে যেতেই দেখল, অয়ন রিকশায় যাচ্ছে। যামিনীকে প্রিয়মের বাইকে দেখে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। ভীষণ মন খারাপ হলো অয়নের। অয়নকে দেখে যামিনী মাথা নীচু করে ফেলল।

অয়নকে পার করে এসে প্রিয়ম বলল,
“তারপর তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে। ”
“ভালো”
“কোনো সমস্যা হলে আমায় বলবা সরাসরি। অন্য কাউকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরা ফেরার দরকার নেই!”
যামিনী শুধু হালকা মাথা ঝাকিয়ে হুমম বলল।

“একটা কথা জিগ্যেস করব?
“জি।”,
“অয়নকে ওভাবে তাড়িয়ে না দিলেও পারতেন। ও কী ভাবল।” কী করেছিল ছেলেটা?”
“অন্যের ভাবা নিয়ে আমার টেনশন নেই। আমি চেয়েছিলাম, তুমি আমার সাথে যাও। ”

প্রিয়ম বাইকের আর একটু স্পিড বাড়ালো। যামিনী আর কিছু বলতে পারল না! সত্যি প্রিয়ম চেয়েছিল? যামিনী তার সাথে যাক?

“খেয়েছ?”
যামিনী আবার মাথা ঝাকিয়ে উহু বলল।
“এই মাথা ঝুলানো, উহু, না, এসব শব্দ না বলে, হ্যাঁ বা না বলতে পারো না! ”
প্রিয়মের রাগী কণ্ঠে কথা শুনে, যামিনী দম আটকিয়ে শব্দ করে বলে উঠল, “না হয়নি!”

প্রিয়ম একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে দাঁড়ালো। এত সকালে দোকান পার্ট খোলা না থাকলেও এই রেস্টুরেন্ট চব্বিশ ঘন্টা খোলা থাকে। কারণ, এটা প্রিয়মের রেস্টুরেন্ট। প্রেম বিদেশ থেকে পড়াশোনা শেষ করে এসে এ রকম একটা প্লান কাজে লাগায়। যেন সবাই সব সময় আসতে পারে। আর এখানে বেশ কাস্টমারও আসে। এতে করে ব্যবসাও চলবে আরামছে!

প্রিয়ম প্রতিদিন এখানে এসে সকালের খাবার খায়।

প্রিয়ম ভিতরে ঢুকে একটি টেবিলে বসে একজনকে ইশারা করল খাবার আনতে।
দু’জনে খাওয়া দাওয়া শেষ করে ভার্সিটির উদ্দেশ্য আবার রওনা হলো। এতক্ষণ প্রিয়ম, যামিনীর সাথে বেশ ভালো ব্যবহারই করল।
যামিনীর ডিপার্টমেন্টের সামনে নামিয়ে দিয়ে প্রিয়ম চলে গেল নিজের রেয়ার্সালের ঠিকানায়।
যামিনী আনন্দ ভরা চোখে প্রিয়মের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
এই প্রথম প্রিয়ম তার সাথে ভালো ব্যবহার করল। নয়ত, সেই ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে অকারণে যামিনীর পিছনে লেগেই থাকত।
যামিনীর মাঝে অন্যরকম অনুভূতি হলো। ভালোলাগার অনুভূতি!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here