বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :৩

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৩

ঘুমের ভেতর সেহের কারো মিষ্টি মিষ্টি ঘ্রাণ অনুভব করে।ঘ্রাণটা তার খুব কাছ থেকে আসছে। হঠাৎ রাতের কথা মনে করে সেহের লাফিয়ে উঠে। বড় বড় শ্বাস ফেলতে থাকে।জানালার দিকে তাকিয়ে দেখে দিনের আলো ফুটেছে।রাতের কথা মনে করতেই সেহের মাথা চেপে ধরে।পুরো ঘটনা মনে করার চেষ্টা করছে।কফির মগটা টেবিলে রেখে দিশা খানম পাশ থেকে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে।শান্ত করার চেষ্টা করে বললেন,”কি হয়েছে? খারাপ স্বপ্ন দেখেছো? ”
সেহের ভীতু কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,”আমার সাথে কে ছিলো? সেই বাদামী চোখওয়ালা রাক্ষস ।সেই ডাক ,আ..আমি তো জানালার কাছে ছিলাম! এখানে কি করে? ”
“রিলেক্স সেহের ,শান্ত হও! এখানে আমি ছাড়া অন্য কেউ নেই।কাল রাতে বাড়ী ফিরে তোমাকে বিছানায়ই দেখেছি । আর সারারাত তোমার সাথে আমিই ছিলাম। ”
“মা সে এখানে ছিলো ,আমি তাকে দেখেছি! সে এখানেই ছিলো “সেহের কান্নারত স্বরে বলল।দিশা মেয়েকে শান্ত করার চেষ্টা করে আশ্বস্ত স্বরে বললেন,”কেউ ছিলো না মা। হয়তো খারাপ স্বপ্ন দেখেছো । ”
দিশা মেয়েকে বুকে টেনে নিলেন । সেহের ধীরে ধীরে শান্ত হয়।রাতের ঘটনাটা দুস্বপ্ন ভেবে ভুলে যায়। দিশা সেহেরের চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,”ঘুম কেমন হলো? কোন অসুবিধা হয়নি তো? হুট করে একটা মিটিং পরে তাই ভোর সকালে বেরিয়ে যেতে হয়েছে! সরি বেটা তোমাকে স্টেশন থেকে রিসিভ করতে পারিনি ।খুব ইচ্ছা ছিলো।কিন্তু.. ”
“থাক মা আফসোস করতে হবে না। এসব ছোট খাট অবহেলা আমার সয়ে গেছে।এসব নিয়ে এখন আর মন খারাপ হয় না। ”
দিশা মুখ মলিন করে নিলেন ।মেয়ের কথায় স্পষ্ট অভিমানের ধাঁচ ।মেয়ের কাছে সে বড্ড অপরাধী।দিশা মুখে হাসি টেনে বললেন,”এই ঘর তোমার পছন্দ হয়েছে?আমি রুমের থিম হোয়াইট আর লাইট ব্রাউন রাখতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তার আগেই আরহাম পুরো দোতলা নিজের পছন্দে অনুযায়ী রি- ডেকোরেট করেছে ।তোমার ভালো লেগেছে ? ”
“এসব তুমি করনি? ”
“না ,আমি করার আগেই আরহাম নিজের রুমের সাথে সাথে পুরো দোতলা ডেকোরেট করিয়েছে।তাই আর ..তাছাড়া ডেকোরেশন সুন্দর ছিলো তাই কোন কিছু চেঞ্জ আনিনি । ”
মায়ের কথায় সেহেরের ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে।স্ট্রেঞ্জ! কোন এক অজানা মানুষ কি করে তার পছন্দ এতোটা আন্দাজ করতে পারলো? এটা কি শুধু কো- ইন্সিডেন্ট? নাকি অন্যকিছু?
মায়ের কথায় সেহেরের ধ্যান ফিরে।দিশা কাবার্ড খুলে সেহেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলে,”এই কাবার্ডে তোমার প্রয়োজনের সব কিছু রাখা আছে।প্রথম তাক আ এ ড্রেস ,দ্বিতীয়টায় পার্স পার্ফিউম জুয়েলারি । আর শেষেরটায় জুতা। আর ঐ ড্রেসিংটেবিলে সবরকম কসমেটিকস রাখা আছে।যদিও আমার চাঁদের টুকরো মেয়ের কোন কৃত্রিম সাজের প্রয়োজন নেই।হয়তো তোমার প্রয়োজন হতে পারে ! এভেবে ইউএস থেকে আনিয়ে রেখেছি । ”
সেহের মায়ের কথায় ম্লান হাসলো।দিশা মেয়ের দিকে কফির মগ এগিয়ে তাড়া দিয়ে বলল,”দ্রুত কফি শেষ করে রেডি হয়ে নিচে আসো ।লিয়া’র ভার্সিটিতে তোমার এডমিশন করিয়েছি।আজ থেকেই ক্লাস করছো। কেমন? ”
“ঠিক আছে মা “সেহের মুচকি হেসে বলল।
মা বের হতেই সেহের বিছানা ছেড়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।আয়নার সামনে দাড়াতেই অদ্ভুতুড়ে এক অনুভূতি হয়।এই ড্রেসিংটেবিলটায় কিছু একটা আছে। এক জোড়া ক্ষিপ্ত চোখের ভয়ানক দৃষ্টি । কেন জানো মনে হয় আয়নার ভিতর থেকে কেউ তাকে দেখছে।আয়নার অপর পাড়ে কেউ একজন আছে যার গভীর চোখ সেহেরকে গভীরতর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।কোন এক অদৃশ্য শক্তি যা তার চোখের সামনে থেকেও একদম অদেখা!
রেডি হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই সেহেরের চোখ আটকায় আরহামের রুমের দিক।
মানুষের মন বরাবরই অবাধ্য । নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মন সর্বদাই ব্যাকুল।এক টান টান আকর্ষণ এই দিকটায় অনুভব করে।সেহের আরহামের রুমের দিকে কয়েক কদম পা বাড়িয়েও আবার পিছু পা হয়।কোন এক অজানা ভয় তার ব্যাকুলিত মনকে বাঁধা দিচ্ছে।হল ঘর থেকে মায়ের আওয়াজে সেহের কেঁপে উঠে ।দ্রুত পায়ে সিড়ি বেয়ে নামে।

আজ সকালের আহার দিশা নিজ হাতে তৈরি করেছেন। রাজনীতিতে নিযুক্ত থাকায় পরিবারকে খুব একটা সময় দেওয়া হয় না।সারাক্ষণ বিভিন্ন প্রেস মিটিং- এ ব্যস্ত থাকে।রাজনীতির উচ্চপদস্থ একজন নেত্রী কি না । পরিবারের সাথে সময় কাটানোর মত হাতে সময় কই?
সেহের আসায় আজ সারাদিনের সকল মিটিং রদ করেছেন। এতো বছর পর মেয়েটা তার কাছে এসেছে। পুরোটা সময় মেয়ের সাথে কাটাতে চায়।সকালের ব্রেকফাস্টে সবকিছু সেহেরের পছন্দের।টেবিলে আগের থেকেই দিশা লিয়ানা মালিহা খানম অপেক্ষা করছে। সেহের হাসি হাসি মুখে লিয়ানার পাশের চেয়ারটায় বসে। আট চেয়ারের বড় ভারী কারুকাজকারী টেবিলটা নানারকম বাঙালী আর ইংলিশ ব্রেকফাস্টে সাজানো।এর মাঝে বেশিরভাগ খাবার সেহেরের পছন্দের তালিকার।সেহের চটজলদি খিচুড়ি আর গরুর মাংস প্লেটে তুলে নেয়।আজ কতবছর পর মায়ের হাতের রান্না খাবার খাচ্ছে।দিশা তৃপ্তিকর দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে,”খাবার ভালো হয়েছে? ”
“অনেক ভালো হয়েছে মা। একদম পার্ফেক্ট! ”
মালিহা খানম টুস্ট মুখে নিতে নিতে বলে,”শুনলাম আজ থেকে ভার্সিটি যাচ্ছ।”
“জি ”
“তো কোন বিষয়ে নিয়ে পড়বে?মার্কেটিং ? ”
“না,একাউন্টিং ”
“বেশ ভালো।তো তোমার মা কিছু বলেনি? ”
সেহের একবার মায়ের দিকে তাকিয়ে আবার মালিহা খানমের দিকে ফিরে বলল,ঠিক কোন বিষয়ে? ”
দিশা শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে কাঠকাঠ স্বরে বললেন,”মা এখন থাক না! ব্রেকফাস্ট টা শেষ হোক।”
“এখন বলতে সমস্যা কোথায়? দিশা সেহেরকে কি তুমি বলবে ? না আমি বলবো! ”
দিশা মালিহার মধ্যেকার কথাবার্তার সেহের বুঝে উঠতে পারছেনা।মায়ের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকাতে। উত্তর স্বরুপ দিশা সেহেরের হাতের উপর হাত রেখে ভীতু স্বরে বলে,”সেহের তুমি তো জানো আমি রাজনীতিতে যুক্ত।পলিটিকাল ক্যারিয়ারের কেউ আমার পাস্টের সম্পর্কে জানে না।এখন হুট করে যদি জানতে পারে আমার আগের সংসারের একটা মেয়ে আছে।তাহলে পুরো শহরে হৈ চৈ শুরু হবে।এসব নিয়ে লিখালিখি হবে। সামনে ইলেকশন । অপজিট পার্টি এসব নিয়ে মাতামাতি করবে। বুঝতেই পারছো আমাকে কতটা অপমানিত হয়ে হবে?আমার এতো বছরের ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে মিলিয়ে যাবে …….তাই চাই …মানে …”
পরের বাক্যটা বলতে দিশার গলায় দলা বাঁধিয়ে আসছে।বুকটা চিনচিন করছে।কথাটা মেয়েকে কি করে বলবে?
“তুমি চাও আমি যে তোমার মেয়ে সবার সামনে এই পরিচয়টা না দেই! তাই তো? কি বলে ডাকবো আন্টি? “মায়ের কথা কেটে তার প্রতি বুকে একরাশ চাপা অভিমান রেখে টলটল চোখে বলল।দিশা চোখে নোনা জল এলো।সেহের ব্যথাতুর স্বরে আবার বলল,”চিন্তা নেই।আমার আর তোমার সম্পর্কের সত্যিটা কেউ জানতে পারবেনা। কেউ জিগ্যেস করলে বলবো আমি এই বাড়ীর আশ্রিতা! ”
কথা শেষ করে সেহের নাস্তা না করেই উঠে যায়।দিশা মেয়ের যাওয়ার দিকে চোখের জল ফেলে।মালিহা খানম ছুড়ি দিয়ে আপেল স্লাইস করতে করতে বললেন,”মায়ের কাছ থেকে সন্তান দূর হলে এমনই যন্ত্রণা হয়।আমারো ঠিক একই অনুভূতি হয়েছিলো ”
দিশা শাশুড়ির দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।

সেহের লিয়ানা আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টে।কোন কারণে সেহেরের পড়াশোনা একবছর গ্যাপ গেছে।পুরানো বন্ধুদের কথা ভীষণ মনে পরছে।ক্লাস মাত্রই শেষ হলো।লিয়ানার এখনো একটা ক্লাস বাকি।লাইব্রেরি থেকে কিছু প্রয়োজনীয় বই নিয়ে ,ক্যাপাস ঘুরে দেখছে।শুনেছে তার মাও এখানে পড়াশোনা করেছে।অনেক বছরের পুরানা ভার্সিটি কিন্তু চাকচিক্য দেখে তা বুঝা মুশকিল ।ডিপার্টমেন্টের সামনে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটা পেরিয়ে সবুজ ঘাসের বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে পা মাড়িয়েছে।চোখ বুলিয়ে চারদিক দেখছে ,অনেক মাস পর আজ খোলা আকাশে প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছে।বেখেয়ালি সেহের নিজের মাঝে এতোটা ডুবে যে আশেপাশে কোন কিছু তার ধ্যানে নেই।কারো মাতাল চোখের তীব্র নেশা বাড়ছে।কারো পাগলামো নিজের মাত্রা ছাড়িয়ে ভয়ংক রূপ নিচ্ছে।
দোতালার রেলিং ধরে দাড়িয়ে সবুজ বিস্তীর্ণ মাঠের পানে তাকিয়ে আছে।এখান থেকে ভার্সিটির আনাচেকানাচে সব দেখা যায়।ঠোঁটে মিষ্টি হাসি রেখে মাঠের অপর প্রান্তে চেয়ে আছে।শীতল হাওয়ায় বেগুনি উড়নার আঁচলটা উড়ছে।হঠাৎ সেহের পেছন থেকে উড়নায় টান অনুভব করে। মাথা ঘুরিয়ে পাশ ফিরে চাইলে দেখতে পায় আট দশ বছরের এক বাচ্চা।সেহের মুচকি হেসে হাঁটু গেড়ে বসে জিগ্যেস করে,”বাবু তোমার কি চাই”
বাচ্চা কথার উত্তর না দিয়ে সেহেরের হাতে একটা গিফট বক্স ধরিয়ে দেয়।আর কিছু জিগ্যেস করবে তার আগেই বাচ্চাটা চলে যায়।বক্সের উপর বড় বড় অক্ষরে সেহের লিখা।সেহেরের কপাল কুঁচকে আসে। এই বক্স কে পাঠিয়েছে? মালিকের তল্লাস করতে রেপিং পেপারটা খুলে।বক্স খুলতেই সেহেরের চোখ কপালে। ভিতরে অতি সুন্দর স্বচ্ছ কাঁচবন্ধী লাল গোলাপ।হুবাহু “beauty and the beast “সেই মোহিত জাদুমুগ্ধ গোলাপটার মত।এমন সুন্দর উপহার তাকে কে দিতে পারে? তা দেখার জন্য চিরকুট খুলে।যেখানে লিখা,

“হেই হুর,
তোমার সৌন্দর্য এই কাঁচ বন্দী মোহিত লাল গোলাপের মত।যার উপর কেবল মাত্র আমার অধিকার।আমার থেকে পালাতে চেয়েছিলে? ঘুরে ফিরে সেই আমার কাছেই ধরা দিলে। তুমি আমার থেকে যত পালাবে আমাকে নিজের তত কাছে পাবে।অতিদ্রুত তুমি আমার হবে।আমার শহরে তোমার স্বাগতম।

ইতি
তোমার প্রেমে মাতাল প্রেমিক ”

চিরকুট পড়ে সেহের থরথর কাঁপতে লাগে।হাতের মোহিত গোলাপটা মাটিতে পরে সাথে সাথে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে পরে।যার থেকে পালাতে এতো দূর আসা সে এখানেও পৌছিয়ে গেছে? ভয়ে সেহেরের গাঁ শিউরে উঠে।জন মানবহীন নীরব দোতালা থেকে নামতে সিড়ির দিকে ছুটে যায়।ভয় দম বন্ধ হয়ে আছে। বড় বড় পা ফেলে সিড়ি দিয়ে নামছে এমন সময়ই কারো সাথে ধাক্কা লাগে ,পা স্লিম কেটে পরে যেতে নিলে সামনের মানুষটা সেহেরের কমোড় শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। সেহের সাথে সাথে চোখ মুখ খিঁচে নেয়।অনুভব করে হাওয়ায় ভাসছে ।ভয়ে তীর তীর করে কাঁপা চোখ জোড়া আলতো করে খুলে মাথা উঁচু করে তাকায়।এক সুদর্শনের বুকে মিশে আছে সে।এটা রূপকথার সেই মায়াবী রাজকুমার? ফর্সা গালে কালো চাপদাড়ি ঠিক কালো বলা যায়না হাল্কা বাদামী বাদামী ।মুখের উপর সিড়ি কৌটার জানালা ভেদ করা রোদ পরায় দাড়ি গুলো চকচক করছে। লম্বা উঁচু নাক । সুন্দর গোলাপি বর্ণের ঠোঁটের নিচে মিচমিচে কালো তিল। গায়ে কালো লেদার জেকেট।হাতে দামী ঘড়ি।কালো সানগ্লাসে চোখ ডেকে। লম্বায় ছয় ফুট তো অনায়াসে হবে।দেখে মনে হচ্ছে সুদর্শন এই দেশের না ভিনদেশী কেউ।সেহেরের থমথমে ভেজা চোখ তখনো মানুষটার দিকে। কোন পুরুষ কতটা সুদর্শন হলে তাকে দেখে একটা মেয়ের হার্টবিট এভাবে কাঁপতে পারে?
“আরহাম ভাই সেহের তোমরা এখানে? “লিয়ানার উঁচু স্বরে সেহেরের ধ্যান ভাঙে ।ভয়ে চট করে সরে দাড়ায়। মানে কি? এটাই লিয়ানার আরহাম ভাই? তার রাগী রাক্ষস প্রতিবেশী? দুনিয়াতে কি ধাক্কা লাগার জন্য উনিই ছিলো? সেহের দ্রুত কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,”সরি সরি রাক্ষস ভাই ,আই মিন ভাইয়া। আমি ইচ্ছে করে এমনট করিনি । ক্ষমা করবেন! ”
বলেই দ্রুত পায়ে একপ্রকার ছুটে সেখান থেকে বেরিয়ে পরে।আরহাম সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,”যতই পালাও ধরা তো আমাকেই দিবে! ”

সেহের লিয়ানা চায়ের অর্ডার দিয়ে ক্যান্টিনে বসে আছে।মাথাটা এখনো ভনভন করে ঘুরছে। এই কি থেকে কি হলো? যার থেকেই সে পালায় নিয়তি ঘুরে ফিরে সেই মানুষটার সামনেই কেন দাড় করা। লিয়ানা আশ্বস্ত স্বরে বলে,”কি ব্যাপার তুমি এমন কাঁপছো কেন? কিছু হবে না রিলেক্স! ”
“রিলেক্স? কি করে রিলেক্স হবো? তোমার রাক্ষস ভাইটাকে কি আজই ভার্সিটি তে আসার ছিলো? আমি ভেবেছিলাম মোটাসোটা ভুড়িয়ালা হবে। কিন্তু কে জানে সে এমন হেন্ডস্যাম হলিউড হিরো হবে! ”
লিয়ানা শব্দ করে হেসে বলে ,”কেন ক্রাশ ট্রাস খেয়েছ নাকি? ”
“ক্রাশ খাই আর না খাই টাশকি ঠিক খেয়েছি! ”
লিয়ানা হেসে উঠে। দুজন গল্প করছে এমন সময়’ই একদল মেয়ে টেবিলের সামনে এসে দাড়ায়।দেখে মনে হচ্ছে সিনিয়র । সেহেরের ভ্রু কুঁচকিয়ে আসে।তাদের একজন সেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলে,”ফাস্ট ইয়ার তাই না? ”
সেহের বাধ্য মেয়ের মত হ্যা সূচক মাথা নাড়ায়।লিয়ানা পাশ থেকে বলে,”ইশা স্টপ ,নো রেগিং ।ওকে ছাড় দে ”
“রুলস আর রুলস । সবার জন্য সমান। তোর আত্মীয় বলে ছাড় পাবে এমন কিন্তু না। শুনো মেয়ে লিয়াদের বাড়ী থাকো তাই না? তাহলে আরহাম স্যারকে তো অবশ্যই চিনো । তোমার টাস্ক হলো এই লাভ লেটার গুলো উনার কাছে পৌছিয়ে দেওয়া।না করলে ভার্সিটির সামনে কান ধরে দাড় করিয়ে রাখবো ।”
সেহের স্পষ্ট বুঝতে পারছে এসব রেগিং টেগিং কিছু না।নিজেদের কাজ করিয়ে নেওয়ার ধান্দা ।রাগে তার মাথা ধপধপ করে কাঁপছে।যার জন্য দিনে শ’খানেক প্রেমপত্র আসে এখানে এসে সে কিনা পিয়নের চাকরী করবে? তাও আবার সেই প্রতিবেশী রাগী রাক্ষসটার? এই ছিলো তার হতভাগী কপালে!

চলবে …..❣️

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here