বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর) পর্ব :৪

বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি

উর্মি প্রেমা (সাজিয়ানা মুনীর)

পর্ব :৪

ঘরের এই মাথা থেকে ঐ মাথা জুড়ে সেহের পায়চারী করছে।চোখ মুখ চিন্তায় কাতর ।লিয়া সেহেরের এই উত্তেজনা প্রবল চেহারা দেখে মিটমিট করে হাসছে।
“আরে এতো নার্ভাস হচ্ছো কেন? ভাবাভাবির কি আছে? ভাইয়ার রুমে যেয়ে টেবিলের উপর লেটার গুলো রাখবে তারপর সোজা চলে আসবে সিম্পল ”
লিয়ার কথায় সেহের থামলো।সরু চোখ করে তাকিয়ে বলল ,”ব্যস! এতোটুকুই? তোমার কাছে সবটা এতো সিম্পল মনে হচ্ছে! যদি তোমার রাক্ষস ভাইয়ের খপ্পরে পরি তখন? ”
“তখন আর কি কান ধরে মিষ্টি করে সরি বলবে।তোমার বাচ্চা বাচ্চা চেহারা দেখে ভাই একদম আইসক্রিমের মত গলে যাবে। ”
লিয়া এতোটুকু বলে শব্দ করে হাসতে লাগে।সেহের গাল ফুলিয়ে নেয়।গলায় অভিমানের সুর টেনে বলে,”আমার সাথে মজা করা হচ্ছে? আমি এতো বড় এক প্রব্লেমে ফেসেছি আর তুমি তা নিয়ে মজা করছো? ”
“এ মা মজা কি? আমি একদম মজা করছি না।সিংহিনী মত যেয়ে লেটার গুলো রেখে আসো।আমি চললাম!”
“আমাকে একা রেখে তুমি কোথায় চললে? ”
“বললাম না আমার ডিপার্টমেন্টের এক ফ্রেন্ডের বার্থডে । কি ভুলে গেলে? ”
“ওহহ! তুমি সত্যি সত্যিই চলে যাচ্ছো? ”
সেহের মন খারাপের স্বরে বলল।লিয়া আশ্বস্ত গলায় বলল,”কাছে্র বন্ধু না হলে সত্যি যেতাম না। ”
“যাও ,তাড়াতাড়ি ফিরে এসো! ”
“তোমাকেও অল দ্যা বেস্ট! ”

লিয়া বেরিয়ে যায়।সেহের সারা দুপুর চিন্তায় বিভোর থাকে।বিকাল হতেই আকাশ কালো মেঘে ভরে যায়।পৃথিবীতে আঁধার ঘনিয়ে আসে।আকাশের লাল আগুনজ্বলা সূর্যটা মেঘের আড়ালে কোথাও হারিয়ে যায়। আষাঢ়ের আকাশ কখনো রোদ ,কখনো মেঘ! রোদ মেঘের লুকোচুরির মাঝে ঝপঝপ বৃষ্টি শুরু হয়।দূর মসজিদে মাত্রই আছরের আজান পরেছে অথচ বাহিরে দেখে মনে হচ্ছে দিনের শেষভাগের সামান্য আলো কাটিয়ে সন্ধ্যার আঁধার নামবে বলে।সেহের ছোট ছোট পা ফেলে সতর্কতা অবলম্বন করে তার রাক্ষস প্রতিবেশীর রুমের দিকে পা বাড়াচ্ছে। মনে মনে পণ করে নিয়েছে যে করেই হোক লেটার গুলো ঐ রুম অবধি পৌছাবেই পৌছাবে।দরজা সামান্য ফাঁকা করে পুরো রুমে চোখ বুলায়।রুমে কেউ নেই।সেহের এই সুযোগে আলতো পায়ে রুমে ডুকে।পুরো রুম আঁধারে ডাকা।ভারী ভারী পর্দার আড়াল থেকে সামান্য আলোক রশ্মি দেখা মিলছে।এ কোন সাধারণ রুম নয় যেন কোন রাজপ্রাসাদের বিলাসকক্ষ । পুরো রুমে অভিজাত্বের ছোঁয়া।ওয়াশরুম থেকে শাওয়ারের শব্দ আসছে।সেহের ভাবলো , রাক্ষস প্রতিবেশী নিশ্চয় শাওয়ার নিচ্ছে! এটাই সুযোগ লেটার গুলো রাখার।বিছানার পাশে ছোট টেবিলটার উপর লেটার গুলো রেখে ,যেই না পিছনে ঘুরবে এমন সময়ই কারো শক্ত চওড়া বুকের সাথে ধাক্কা লেগে সেহের টেবিলের উপর পরে।নিজেকে সামলিয়ে সামনে তাকাতেই সেহের ভয়ে কেঁপে উঠে।ভেজা শরীরে সাদা তয়লা প্যাঁচানো কেউ দাড়িয়ে ।হালকা লোমশ বুকে বিন্দু বিন্দু জলকণা। গাঁ থেকে কেমন যেন মাতাল মাতাল মিষ্টি ঘ্রাণ ।সেহের মুখ না দেখে বলতে পারছে”এটাই তার রাক্ষস প্রতিবেশী আরহাম খান”সেহের ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো।চাইবে না এই মানুষটার দিকে।এই মানুষটার মাঝে কেমন যেন এক মায়া আছে যা মুহূর্তেই মোহিত করে ।আর চোখের দিকে তো একদম তাকাবে না। গুরুজন বলেন,”কাউকে মায়ায় ঘয়েল করার জন্য চক্ষু হলো মুখ্য প্রহরণ ।” যেই মানুষটা দেখতে এতো সুন্দর ,না জানি তার চোখ কতটা সুন্দর হবে? সেহের ভেবেই নিলো দুনিয়া উল্টে যাক,তবুও সে এই মানুষটার চোখের পানে চাইবে না।না মানে একদম না।পরবে না তার মায়াবী চোখের নেশায়।সেহের ভেজা কবুতরির মত দেয়ালের সাথে ল্যাপটানো। চোখ মুখ তখনো শক্ত ভাবে খিঁচে । নিজের খুব কাছে আরহামকে অনুভব করে। আরহামের ভারী ভারী উষ্ণ নিশ্বাস তার ঘাড়ের উপর পরে মনে ভয়ংকর শিহরন তুলছে । সেহের ছোট ঢোক গিলে সরে যেতে নিলে আরহাম শক্ত করে তার কোমর চেপে ধরে। শক্ত গলায় বলে,”চুরি করতে এসেছো মিস. চাশমিস? ”
আরহামের কথায় থতমত খায় ।সে কি দেখতে চোরের মত ? এই রাক্ষসটা তাকে চোর উপাধি দিলো?আর চাশমিস কি?
সেহের চোখের চশমা ঠিক করে রেগে গাল ফুলিয়ে উত্তর দিলো ,”জি না,আমি চোর না। ভয় পাবেন না আমি আপনার খাজানা লুট করতে আসিনি। ”
“তবে কেন এসেছো? প্রেম নিবেদন করতে? ”
“জি না ”
“তো ”
“এই লেটার গুলো দিতে! ”
“আই নো আমি হ্যান্ডসাম ।মেয়েরা আমার জন্য পাগল । তাই বলে প্রথম দেখাতেই লাভ লেটার? কেমন দেখায় না মিস চাশমিস! ”
“ও হ্যালো! আমার এতো খারাপ দিন আসেনি আপনাকে লাভ লেটার দিবো।ভার্সিটিতে রেগিং এর পাল্লায় পরে টাস্ক স্বরূপ আপনার কাছে লেটার গুলো পৌছিয়ে দিতে বলেছে। তাই আমি এখানে।তাছাড়া আমার কোন শখ নেই আপনার মুখোমুখি হওয়ার আর পিয়নের চাকরি নেওয়া ।আপনার প্রতি আমার কোন প্রকার ইন্টারেস্ট নেই । “এক নিমিষে সেহের সবগুলো কথা শেষ করে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে।রাগের মাথা কি কি বলেছে এখনো সে বুঝে উঠতে পারেনি ।
“বাহ! দেখছি কথাও বলতে জানো ।মুখে বুলি ফুটেছে নাকি! “আরাহামের গাঢ় আওয়াজে সেহের ভয় পেয়ে যায়।গলার স্বর শুনে বুঝা যাচ্ছে ভীষণ রেগে গেছে।এই মুহূর্তে জান নিয়ে পালাতে পারলেই বাঁচে ।কে চাইবে এই রাক্ষসটার নৈশভোজ হতে!
সেহের ছোট ডোক গিলে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে আরহাম খপ করে তার হাত টেনে ধরে।বিছানার মাথার সাথে চেপে ধরে।পিছনেই দেয়াল সেহেরের হাত নিজের আঙ্গুলের ভাজে নিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরতেই। দেয়ালে ছবি টানানোর পিন গিয়ে সেহেরের হাতে চুবে।সেহের ভয়ে অনুভূতি ভুলে গেছে।অজান্তেই চোখের পানিতে গাল ভিজছে ।অন্যদিকে হাতের রক্ত দেয়া্ল বেয়ে পরছে। সেহেরের কথায় আরহামের আত্মসম্মানে বেঁধেছে ।ইগো হার্ট হয়েছে। আরহাম রাগী গলায় বলল,”ইন্টারেস্ট নেই মানে কি? হ্যা? তোমার সব ইন্টারেস্ট আমার উপরই থাকতে হবে।তোমার ত্রিসীমানায় অন্যকারো কোন স্থান নাই! ক্লিয়ার? ”
আরহামের ধমকে সেহের কেঁপে উঠে।কোন কথাই তার বোধগম্য হচ্ছে না।আরহাম আরো শক্ত করে হাত চাপতেই সেহের ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে। চোখ বন্ধ করে কষ্ট কাতর নিশ্বাস ফেলছে।আরহাম ভেজা হাত অনুভব করে সেহেরের হাত সামনের আনে।হাতের পিঠ কেটে রক্তে ভিজে আছে ।আরহাম উত্তেজিত হয়ে পরে । অস্থির ভীতু চোখ মুখ তার । সেহেরকে বিছানায় বসিয়ে ।দ্রুত ফাস্ট এইড বক্স এনে ঔষধ লাগাতে নিলে সেহের ঝাড়ি মেরে হাত সরিয়ে নেয়।চিৎকার করে বলে,”গরু মেরে জুতা দান করা হচ্ছে?আমার মেডিসিন চাই না।”
রেগে বড় বড় পা ফেলে আরহামের ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।হুট করে কঠোর মানুষটার এমন ভিতু হওয়ার কারণ সেহের খুঁজে পেল না।আরহামের এমন অদ্ভুত আচরণ সেহেরর মনে ভয়ের দাগ কাটে ।রাজপুত্রের মত দেখতে মানুষটাকে মুহূর্তেই রহস্য মানব মনে হলো।

গভীর রাত চারদিকে শুনশান নীরবতা । সেহের বিছানায় এলোমেলো ভাবে ঘুমাচ্ছে।হাতের ব্যান্ডেজটায় রক্ত ফুটে আছে।হাতে প্রচণ্ডরকম ব্যথা নিয়ে সেহের সন্ধ্যা রাতেই ঘুমিয়ে পরেছে।শরীর খানিক দুর্বল লাগছে । জ্বর আসবে কি? হয়তো। মনিটর স্কিনে অজ্ঞাত সেই ব্যক্তি গভীর চোখে সেহেরকে দেখছে।তার গাঢ় বাদামী চোখের মণি অস্বাভাবিক ভাবে নড়চড় করছে।কপাল বাড়তি চুল গুলো চোখ ছুঁই ছুঁই।সেহেরের ব্যথায় সে যেন গভীর ভাবে ব্যথিত । ক্ষিপ্ত মুখে টলটল রক্তিম চোখে সেহেরের হাতের ব্যান্ডেজটা জুম করে দেখছে।
“খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার তাই না! খুব ব্যথা।ছয়টা বছর নিজের চোখে চোখে রেখেছি।ফুলের টোকা পর্যন্ত লাগতে দেই নি।আর সে কিনা তোমাকে এতো বড় আঘাত দিলো? এতো বড়? এর শাস্তি ওকে পেতে হবে।কঠিন শাস্তি । তোমাকে আঘাত করা প্রত্যেকই শাস্তি পাবে।তাকেও পেতে হবে! ”
শেষের কথা গুলো রাগে গরগর করতে করতে বলে।

বাগানের পাশে ছাই রাঙা পুরানো বাংলোটার অন্ধকার রুম থেকে শা শা চাবুলের ঘায়ের শব্দ আসছে। সেই সাথে কারো ব্যথায় জর্জরীত কষ্ট ভরা আর্তনাদ।

চলবে….❣️

(“বিষাক্ত প্রেমের অনুভূতি ” বলেছিলাম অন্য সিজন থেকে সম্পূর্ন আলাদা হবে।জানি আজকের পার্ট পরে সবার মনে অনেক প্রশ্ন তৈরি হবে।ভরসা রাখুন আমার মত আমি আস্তে আস্তে সব ক্লিয়ার করবো।আর হ্যা ছোট পার্ট দেওয়ার জন্য দুঃখীত সামান্য ব্যস্ত ছিলাম )

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন । প্লিজ সবাই সবার মতামত জানাবেন😊😊😊।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here