বেখেয়ালি মনে পর্ব-১৯

0
510

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-১৯
.
.
তিশানের বিয়ের আলোচনার জন্য খান বাড়ির ড্রইংরুমে বৈঠক বসেছে। সবাই চাচ্ছে আগামী সপ্তাহেই তিশান আর রিসার এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠান সেরে ফেলতে। রিসা এবার অনার্স থার্ড ইয়ারে। কিছুদিন পর ওর ফাইনাল এক্সাম। তাই সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে থার্ড ইয়ারের ফাইনাল এক্সামের পর ধুমধাম করে বিয়ের অনুষ্ঠান করবে। আফটার অল, তিশান খান বাড়ির বড় ছেলে বলে কথা। তার বিয়ে শহর কাঁপিয়ে হতেই হবে।

সবার মুখে হাসির ছড়াছড়ি এমন মুহুর্তে ত্রয়ী মুখ গোমড়া করে এসে উপস্থিত হয় ড্রইংরুমে।

ত্রয়ীকে দেখে আলফাজ খান বলেন,
– মা, তোমার মন খারাপ?

ত্রয়ী মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে। ত্রয়ীর মন খারাপ শুনে সেখানে উপস্থিত সবার নজর ওর দিকে যায়।
তনয়া বলে,
– তোর হঠাৎ মন খারাপ কেন?
ত্রয়ী কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,
– তোমরা সবাই খুব পঁচা। আমার এক্সাম সামনে অথচ তোমাদের সেই খেয়াল নেই। তোমরা বড় ভাইয়ার বিয়ে ঠিক করে ফেললে। এক্সামের জন্য তো আমি ভাইয়ার বিয়েতে থাকতে পারবো না।

ত্রয়ীর কথাশুনে আলফাজ খান আর তনয়া একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে ফিক করে হেসে ফেলেন। আলফাজ খান নিজের কাছে ত্রয়ীকে ডেকে নেন। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলেন,
– পাগলী মেয়ে আমার। তোকে ছাড়া তিশানের বিয়ে হবে নাকি? তোর এক্সামের তো আরো দেরি আছে। ওদের এনগেজমেন্ট সামনের সপ্তাহে। আর তোর এক্সামের পর ধুমধামে বিয়ের অনুষ্ঠান হবে।

বাবার কথা শুনে খুশিতে গদগদ হয়ে যায় ত্রয়ী। এনগেজমেন্ট পার্টিতে কী পড়বে এটা নিয়ে আলোচনা শুরু করে হিমা ঝুমার সাথে৷

বিয়ে না শুরু হতেই বিয়ের আমেজ লেগে যায় খান বাড়িতে। কে কী করবে এই লিস্ট করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সবাই।

এদিকে তিশান তো খুশির জোয়ারে ভাসতে শুরু করেছে। তা দেখে নিশান তিশানের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– ভাই কামাল করে দিলি। যাকে পছন্দ করেছিস, তাকেই পেতে যাচ্ছিস। কেমন ফিল হচ্ছে ভাই?

নিশানের কথা শুনে তিশান খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায়। নিশানের কান টেনে বলে,
– খুব বেশি পেকে গেছিস না? দিবো একটা ধরে!

– আহ ভাই লাগছে তো!
– লাগার মতো কথা বলিস কেন তাহলে?
তিশান, নিশানের কান ছেড়ে দিয়ে কথাটা বলে।

ভাইয়ের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে নিশান দৌড় দেয়। আর চেঁচিয়ে বলে,
– মাত্র তো শুরু। দেখ তোকে আর কী কী ভাবে পঁচাই।
তিশানও নিশানের পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে বলে,
– একবার হাতের কাছে পাই। তারপর তোকে দেখাচ্ছি মজা।

_________________________________________________________
ইনান বসে আছে ত্রয়ীদের ফ্ল্যাটে। তনয়া ডেকে পাঠিয়েছে ওকে তিশানের বিয়ের বিষয়ে। কোনো কারনে সে গম্ভীর হয়ে আছে। বারবার আড়চোখে ত্রয়ীকে দেখছে। ত্রয়ী আশেপাশে তাকিয়ে দেখে ও ছাড়া এই মুহুর্তে আর কেউ নেই।

তাহলে ইনান কী ওর উপর কোনো কারণে রেগে আছে? মনে হঠাৎ করেই এমন প্রশ্নের উদয় হয়। ক্ষীণ স্বরে জিজ্ঞেস করে,
– আপনার কী আজ মুড অফ?

ইনান ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
– না, মুড অফ না। নাচতে মন চাচ্ছে আমার।
– এ্যাঁ! হঠাৎ নাচতে মন চাচ্ছে কেন?
ত্রয়ীর প্রশ্নের উত্তর দেয় না ইনান। নিশ্চুপ হয়ে যায়। ত্রয়ীও নিশ্চুপ!

নিরবতা ভেঙে ইনান বলে,
– আন্টি কোথায় ত্রয়ী?
– আম্মু রুমে আছে। একটু বসুন, এক্ষুনি চলে আসবে।

– জানো ত্রয়ী, আজ আবার প্রিয়া ফোন করেছিলো।
প্রিয়ার নাম শুনে ত্রয়ীর বুক ধক করে উঠে।
কাপা গলায় বলে,
– তারপর?
ইনান নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
– ও আবার ফিরে আসতে চায়।

এতোক্ষণে ত্রয়ীর চোখ ছলছল হয়ে গেছে। ফিরে আসতে চায় কথাটা শুনে এক ফোটা পানি পড়ে যায়।
মৃদু স্বরে বলে,
– আপনি কী বললেন তখন?
– আমি কিছু বলিনি।
ত্রয়ী ছোট করে বলে,
– ওহ।

ইতিমধ্যে তনয়া চলে এসেছে। তাই ত্রয়ী সেখান থেকে চলে যায়। তনয়া ইনানের সাথে তিশানের বিয়ের বিষয় নিয়ে খোশগল্প জুড়ে দেন।

ওদিকে ত্রয়ীর মনে ইনানকে পাওয়ার আগেই হারানোর ব্যথা জেগে উঠে। বালিশ খামচে কাঁদতে থাকে। ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গিয়ে ইনানকে জড়িয়ে ধরে বলতে,
‘ভালোবাসি আমি আপনাকে। অসহ্যরকম ভালোবাসি!’

_________________________________________________________

বেশ কিছুদিন হলো ইনান ত্রয়ীর দেখা পাচ্ছে না। হয়তো ইদানীং খুব বেশিই ব্যস্ত। আজ হঠাৎ ইনানের মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠে ত্রয়ীকে একনজর দেখার জন্য।

কিন্তু দেখার উপায় কী সেটাই ভাবতে থাকে সে। এই মুহুর্তে ত্রয়ীদের বাসায় যাওয়া যাবেনা। কারণ কিছুক্ষন আগেই সে ওদের বাসায় গিয়েছিলো কিন্তু ত্রয়ী তখন ঘুমে ছিলো। এখন আবার গেলে সবাই সন্দেহ করতে পারে।

ইনান ইফতিহাকে পাঠায় ত্রয়ীকে ডেকে আনার জন্য। ত্রয়ী বারণ করে দেয়, কিন্তু ইফতিহা নাছোড়বান্দা, সে ত্রয়ীকে নিয়েই যায়।

ইনান ওর রুমে অপেক্ষা করছে। ইফতিহা গিয়ে ডাক দেয়। ইনান বেরিয়ে আসে। ত্রয়ীর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– একটু রুমে আসো কথা আছে।

ত্রয়ী চোখ বাঁকিয়ে তাকায় ইনানের দিকে। তারপর বলে,
– যা বলার আছে এখানেই বলেন।

ইনান ইতস্তত অনুভব করে। ইফতিহার দিকে তাকায়। ইফতিহা ভাইয়ের অস্বস্তি বুঝতে পেরে সরে যায়।

ইনান ত্রয়ীর কাছে আরেকটু এগিয়ে যায়। ফিসফিস করে বলে,
– সরি।

ত্রয়ী এতোক্ষণ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলো। ইনানের কথা শুনে মাথা তুলে তাকায়। বলে,
– সরি? কিন্তু কেন?
– জানিনা। হঠাৎ মনে হলো আমার এই কথাটা বলা উচিত।

ত্রয়ী মুচকি হেসে বলে,
– আজব লোক তো আপনি। কোনো কারণ ছাড়াই সরি বলছেন।

ত্রয়ীর হাসি মুখ দেখে ইনানের মন ফুরফুরে হয়ে যায়। গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলে,
-বোকাপাখি, তোমার এই হাসি মুখটাই তো দেখতে চাই।

হঠাৎ করেই ইনানের ফোন বেজে উঠে। ইনান হকচকিয়ে যায়। আননোউন নাম্বার দেখে ভ্রু কুঁচকায়। ফোনটা রিসিভ করার আগেই কেটে যায়।
কিছুক্ষন পর কলিং বেল বেজে উঠে। ইনান গিয়ে দরজা খুলতেই কেউ একজন ইনানকে জড়িয়ে ধরে।

ত্রয়ী ইনানের পিছনে তাই মেয়েটার মুখ দেখতে পায় না। ইনান চমকে যায় এমন ঘটনায়। ইনানের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। হৃদপিন্ড দ্রুতগতিতে লাফাতে থাকে।
.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here