বেখেয়ালি মনে পর্ব-২০

0
532

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-২০
.
.
ইনান ওর বুক থেকে মেয়েটাকে সরিয়ে দিয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে ৪৪০ ভোল্টের শক খায়। চোখ পাকিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে,
– তুমি এখানে কেন? আর আমার বাসার ঠিকানাই বা পেলে কোথায়?

মেয়েটি কাঁপা গলায় বলে,
– ম-মণি দিয়েছে ঠিকানা।
– মা!
ইনান চেঁচিয়ে ডাকলো রাবেয়া হককে।

ছেলের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে রাবেয়া হক হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন সদর দরজার সামনে। প্রিয়াকে দেখে মৃদু হাসেন। পরক্ষণেই ইনানের দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
– কী হয়েছে?
– তুমি ওকে এ বাসার ঠিকানা দিয়েছো?

ছেলের রাগ বুঝতে পেরে রাবেয়া হক বলে,
– হ্যাঁ দিয়েছি।

ইনান ওর হাত সজোরে দেয়ালে আঘাত করে বলে,
– কিন্তু কেন মা? কেন? তুমি কি আমার শান্তি চাও না? এই মেয়েটাকে আমি সহ্য করতে পারিনা এটা জেনেও তুমি ওকে এখানে আসতে বলেছো।

ইনানের এমন কান্ডে সবাই চমকে উঠে। ত্রয়ী কী বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা। রাবেয়া হক হকচকিয়ে উঠেন। প্রিয়ার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।

রাবেয়া হক বলে,
– বাবুসোনা, একটু শান্ত হ। আমি তোকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।
– আর কী বুঝাবে তুমি? আমি আর কিছু শুনতে চাই না।

এই বলেই ইনান ব্যস্ত পায়ে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। ত্রয়ী মূর্তির ন্যায় সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

_________________________________________________________

গোধুলী বিকেলে ইনান ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে আর ভাবছে প্রিয়া হঠাৎ করে ঢাকায় আসলো কেন? এর পিছনে কী বড় কোনো উদ্দেশ্য আছে? নাকি আমার জন্যই এসেছে?
মস্তিষ্কে হাজার প্রশ্নের উড়াউড়ি। কিন্তু উত্তর কোথায়?

ত্রয়ী কোচিং থেকে ফিরে বড় রাস্তার মোড়ে দাঁড়াতেই ইনানকে দেখতে পায়। ইনান রাস্তার পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে। ইনানকে দেখে ত্রয়ী দ্রুত পায়ে হাঁটা শুরু করে। তার উদ্দেশ্য ইনানকে এখন এড়িয়ে যাওয়া। এর কারণ সে জানেনা তবুও এই মুহুর্তে ইনানের মুখোমুখি সে হতে চায় না।

ত্রয়ী কিছু দূর যেতেই ইনান পিছু ডাকে। সেটা সে না শোনার ভান করেই খানিকটা এগিয়ে যায়। ইনান প্রায় দৌড়ে এসেই ত্রয়ীর সামনে দাঁড়ায়। হাপাচ্ছে সে। খুব হাপাচ্ছে। কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে।
বাম হাত দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে ইনান বলে,
– ডাকছিলাম তো। দাঁড়ালে না কেন?
– শুনিনি।

ইনান ত্রয়ীর দিকে ভালোভাবে খেয়াল করে বলল,
– সত্যিই শুনতে পাওনি?
ত্রয়ী খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,
– আজব! আপনাকে মিথ্যা বলতে যাবো কেন?
– বিরক্ত হচ্ছো?
– না।
– মনে হলো।

ত্রয়ী আর কিছু বললো না। নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে থাকে। ইনান শরতের নীল রঙা আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে উল্টো হাঁটা ধরে। ত্রয়ী পিছু ডাকতে গিয়েও ডাকেনা।

হঠাৎ কেন জানি ইনানের উপর ওর খুব রাগ হচ্ছে। ভালোবাসা হয়তো এমনি, কারণে অকারণে প্রিয় মানুষটার উপর হুটহাট রেগে যাওয়া।

__________________________________________________________
ত্রয়ী বাসায় ফিরেই ফেসবুকে লগ ইন করে। প্রিয়ার আইডি সার্চ দিয়ে বের করে। তারপর আইডি থেকে প্রিয়ার ছবি কালেক্ট করে ওর বান্ধবী জেসিয়া কে ফোন করে।
– হ্যালো জেসিয়া?
– হুম বল।
– হোয়াটসঅ্যাপে আয় তো একটু।
– কেন?
– একটা ছবি দিচ্ছি দেখে বল মেয়েটা কেমন।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
ত্রয়ীর কথানুযায়ী জেসিয়া প্রিয়ার ছবি দেখে। ত্রয়ী ডান হাতের নখ কামড়ে বলে,
– দোস্ত মেয়েটা কেমন?
– মেয়েটা সুন্দরী। মায়াবতী।

জেসিয়ার কথাটা শুনে ত্রয়ীর মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। রাগি স্বরে বলে,
– আমার থেকেও বেশি সুন্দরী? বেশি মায়াবতী?
– কাহিনী কী দোস্ত? তুই হঠাৎ এই মেয়েটার সাথে তোর তুলনা করছিস কেন?

দাঁত কটকট করে ত্রয়ী বলে,
– সব বলবো। আগে তুই আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
জেসিয়া খানিকটা ভেবে বলে,
– মেয়েটা সুন্দরী ঠিক আছে। কিন্তু তার থেকে তুই বেশি সুন্দরী। তোর মুখে ওর থেকে বেশি মায়া আছে। তোর নাকটা সরু, চোখ ডাগর ডাগর। মুখটা গুলুমুলু। কিন্তু মেয়েটার মুখে মায়া থাকলেও নাক মোটা, চোখ ছোটো আর মুখটা লম্বাটে। যা আমার একদম পছন্দ না।

জেসিয়ার কথা শুনে ত্রয়ী লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর ওকে সবটা বলে। সব কথা শুনে জেসিয়া বলে,
– দোস্ত! তুই তাড়াতাড়ি ইনানকে তোর মনের কথা বলে।
ত্রয়ী মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
– আমি কোনোদিন উনাকে এই কথাটা বলতে পারবো না।

জেসিয়া ক্রুদ্ধ কন্ঠে বলে,
– তাহলে প্রিয়া না হয় তোর হিমাপ্পা ইনানকে নিয়ে যাক। আর তুই বসে বসে আঙ্গুল চুষতে থাক।
– জেসি প্লিজ, এমন বলিস না। উনি অন্য কারো হবে এটা আমি সহ্য করতে পারবো না।
– তাহলে আর কী বলবো শুনি? তুই তোর মনের কথা তাকে বলবিও না, আর সে অন্য কারো হয়ে যাবে এটাও সহ্য করতে পারবি না।তাহলে করবি টা কী?

ত্রয়ী গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
– দেখা যাক কী হয়। আমি যদি তার বাম পাঁজরের হাড় হয়ে থাকি, তাহলে ঠিক তাকে নিজের করে পাবো।
জেসিয়া ত্রয়ীর কথা শুনে রেগে ফোন কল কেটে দেয়।
ত্রয়ী ফোনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসে।

________________________________________________________
রাতের বাড়ছে। ইনান এখনো বাসায় ফিরেনি। রাবেয়া হক অপেক্ষা করতে করতে ডাইনিং টেবিলে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত দেড়টায় ইনান বাসায় ফিরে। দরজা লকের শব্দে রাবেয়া হকের ঘুম ভাঙে৷

ইনান মায়ের দিকে একবার তাকিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। রাবেয়া হক খাওয়ার জন্য ডাকলেও আর তাকায় না সে।

নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রকিং চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়। হাতের ডান পাশের ল্যাম্পের সুইচ টা হাতে নিয়ে অন-অফ করতে থাকে। তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকেছে বিধায় দরজা লক করতে ভুলে যায় সে।

কিছুক্ষন পর কারো ছায়া দেখতে পায় তার পিছনে। বুঝতে বাকি থাকে না কে সে? ইনান রেগে রকিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় তারপর বলে,
– এতো রাতে তুমি আমার রুমে কী করছো?

ইনানের চিৎকারে প্রিয়া আৎকে উঠে বলে,
– আ-আ-আমি তোমার কাছে আবার ফিরে আসতে চাই।

এই বলেই ইনানকে এসে জড়িয়ে ধরে। ইনান ছাড়াতে চেষ্টা করলে প্রিয়া ইনানের টি-শার্ট আরো শক্ত করে খামচে ধরে।

ইনান তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে প্রিয়াকে ছাড়িয়ে ধাক্কা দেয়। ধাক্কা দেওয়ার ফলে বেডের সাইডে ছিটকে পড়ে সে।

প্রিয়া কাঁদছে, অনবরত কাঁদছে। কান্নারুদ্ধ কন্ঠে বলে,
– আই লাভ ইউ ইনান, আই লাভ ইউ সো মাচ।
– বাট আই হেট ইউ। আমি তোমাকে সহ্য করতে পারিনা এটা বুঝো না তুমি? কেন এসেছো তুমি এখানে? কেন এসেছো?
– তোমাকে নিজের করে পাওয়ার জন্য এসেছি।

ইনান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে,
– কোনোদিন পাবে না তুমি আমাকে। কোনোদিন না।
– কেন তুমি কি এখন অন্য কাউকে পেয়ে গেছো?

প্রিয়ার প্রশ্ন শুনে ইনান থমকে যায়। অন্যদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মুহুর্তেই ত্রয়ীর মুখ ভেসে উঠে চোখের সামনে। বুকের ভেতর তোলপাড় শুরু হয়ে যায় তার। অস্বস্তিকর অনুভূতির সম্মুখীন হয়। হৃদয়ের কোণে শূন্যতা অনুভব করতে থাকে ইনান।
.
.
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here