বেখেয়ালি মনে পর্ব-২৯

0
517

#বেখেয়ালি_মনে
#লেখনীতে- Ifra Chowdhury
পর্ব-২৯
.
.
ত্রয়ী ঘাড় ঘুরিয়ে হিমাকে দেখতে পেয়ে নিঃশ্বাস ছাড়ে। ঠোঁটে হালকা হাসি এনে বলে,
– হিমাপ্পা, তুমি! আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।

– হ্যাঁ রে, আমি। ঘুম আসছিলো না তাই উঠে পড়লাম। তোর রুমের এদিকটায় এসে দেখলাম তুই সজাগ, তাই তোর কাছে চলে আসলাম।

– কফি খাবে?
– নাহ, এখন কিছু খাবোনা। চল ছাদে যাই।

ত্রয়ী আর কথা না বাড়িয়ে হিমার সাথে ছাদে চলে আসে। হিমা তার তীক্ষ্ণ নজরে ত্রয়ীকে একবার পর্যবেক্ষন করে বলে,
– ইনান কে তোর কেমন লাগে?

হিমার কথা শুনে ত্রয়ী থতমত খেয়ে যায়। কী বলবে ও?

হঠাৎ হিমা এখন ইনানের কথা-ই বা জিজ্ঞেস করছে কেন? মাথায় এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে তার। মুখে উত্তর দেওয়ার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছেনা।

হিমা ত্রয়ী বিব্রত করাতে পেরে হেসে ফেলে। হঠাৎ হিমার এমন হাসি দেখে ত্রয়ী হকচকিয়ে যায়।

অস্বস্তিকর কন্ঠে বলে,
– হিমাপ্পা, হাসছো কেন তুমি?

হিমা হাসিটা একটু থামিয়ে বলে,
– তোর এখনের মুখের অবস্থা দেখে হাসি পাচ্ছে।

ত্রয়ী মুখ নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। হিমা ত্রয়ীর হাত ধরে বলে,
– শোন, প্রেম যখন করছিস তাহলে এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? জোর গলায় বলবি, বেশ করেছি প্রেম করেছি।

ত্রয়ী ড্যাবড্যাব চোখে হিমার দিকে তাকায়। এমন সময় ঝুমা চলে আসে ওদের কাছে। ঝুমা কে দেখে হিমা ও ত্রয়ী দু’জনেই চুপ করে যায়। এই মুহুর্তে ঝুমাকে এসব বলাটা ঠিক হবেনা ভেবে হিমা কথার প্রসঙ্গ পালটায়।

ঝুমা ও ত্রয়ীকে উদ্দেশ্য করে হিমা বলে,
– কিরে কাল তো তিশান ভাইয়ার হলুদের অনুষ্ঠান। তোদের প্ল্যান কী?

ত্রয়ী হিমার দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়,
– হিমাপ্পার উদ্দেশ্যটা কী? কিছুই তো বুঝতে পারছিনা। যাকগে, এখন ইনানের প্রসঙ্গ টা এড়িয়ে গেছে যখন, তাহলে আমিও এড়িয়ে যাই।

তিন বোন মিলে হলুদে কী করবে না করবে সেসবের প্ল্যান করছে। তাদের গোল মিটিংয়ে নিশান এসে উপস্থিত হয়।

নিশানকে দেখে ত্রয়ী চেঁচিয়ে বলে,
– ভাইয়া, কাল তিশান ভাইয়ার এমন অবস্থা করবো জীবনেও ভুলবে না সেই কথা। ঠিক আছে?

নিশান হাসতে হাসতে বলে,
– তা আর বলতে!

সবাই সবার প্ল্যান শেয়ার করার পর একসাথে হাত মিলিয়ে নেয়। সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশে সবাই সবার দুষ্টুমি বুদ্ধি গুলোর কথা মনে করে এক যোগে হেসে উঠে।

_________________________________________________________
ত্রয়ী জেসিয়ার সাথে ফোনে কথা বলছে। ইনান বারংবার তাকে ডেকে চলেছে, কিন্তু সেদিকে তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এক মনে জেসির সাথে কথা বলছে আর হাসছে। ইনান বিরক্ত হয়ে ত্রয়ীর হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে কল কেটে দেয়। এতে ত্রয়ী খুব রেগে যায় ইনানের উপর।

ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে,
– সমস্যা কী আপনার? দেখছেন তো ফোনে কথা বলছিলাম, তাহলে?

ত্রয়ীর ঝাঁঝালো কন্ঠ শুনে ইনান দমে যায়। মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
– ইয়ে মানে.. জরুরি কথা ছিলো তোমার সাথে।

– তো সেটা তো পরে বললেও পারতেন। বলুন কী বলবেন?

ইনান একটা দম নিয়ে কাল বিকেলে হিমার সাথে যেসব কথা হয়েছিলো সেগুলো ত্রয়ী কে বলে।

সবটা শুনে ত্রয়ী ভাবুক কন্ঠে বলে,
– ওহ এ জন্যই হিমাপ্পা সকালে আমাকে আপনার কথা জিজ্ঞেস করছিলো। কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছিনা। হিমাপ্পা তো আপনাকে পছন্দ করতো, তাহলে এতো সহজে আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিলো কেন?
এর পিছনে অন্য কোনো রহস্য নেই তো?
– একই প্রশ্ন আমার মাথায়ও ঘুরপাক খাচ্ছে বোকাপাখি। হিমা চাচ্ছেটা কী?

– আচ্ছা বাদ দিন। হিমাপ্পা হয়তো বুঝে গেছে আপনি ওকে কোনোদিন ভালোবাসবেন না। তাই আর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি।

ইনান একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
– আচ্ছা তুমি কার সাথে কথা বলছিলে তখন?
– জেসির সাথে। আপনার জন্য তো পুরো কথা শেষই করতে পারলাম না। পঁচা লোক একটা।
– হাহাহা পঁচা লোকের বউ একটা।

ইনানের দুষ্টুমি মাখা হাসি দেখে ত্রয়ী আরো ক্ষেপে যায়। ইনানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে গটগট পায়ে ইনানের সামনে থেকে চলে যায়।

ইনান নিজের কপালে আসা চুল গুলো ঠিক করতে করতে ত্রয়ীর হাঁটা দেখছে। আর বিড়বিড় করে বলছে,
– পাগলী একটা।

ইনান সোফায় বসে আছে। ত্রয়ী ওর বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে করেই কাছে আসছে না সে। হিমা বেশ কয়েকবার ডাকার পরও ত্রয়ী আসছে না। ইনানের সামনে সে পরতে চায় না।

এই যে দূরে দাঁড়িয়ে আছে, তবুও তার বুকের ভেতর টায় ঢিপঢিপ করছে। নিঃশ্বাস গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। ইনান আড়চোখে ত্রয়ীর দিকে তাকাচ্ছে। হঠাৎ করে দু’জনের চোখাচোখি হয়ে যেতেই ত্রয়ী লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত চোখ সরিয়ে নেয়। হৃদস্পন্দন জ্যামিতিক হারে বাড়ছে তার। ইনান সবার চোখ এড়িয়ে দ্রুত পায়ে ত্রয়ীর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

ধীরে ধীরে ত্রয়ীর কপালে আসা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। ত্রয়ী থরথর কাঁপছে। ইনান ত্রয়ীর হাত ধরে হ্যাচকা টান দিয়ে ওকে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসে।

তারপর ফিসফিস করে বলে,
– লজ্জাবতী, তুমি জানো কী?

প্রেমে পড়েছি আমি তোমার এই লাজুক চোখের দৃষ্টিতে।
প্রেমে পড়েছি তোমার এই উষ্ণ ওষ্ঠদ্বয়ের।

ত্রয়ী চোখ বন্ধ করে আছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। কাঁপা গলায় বলছে সে,
-ছাড়ুন আমায়। এভাবে বলবেন না। আমি মরে যাবো।

নেশায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছি আমি। এভাবে আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো আমি জ্ঞান হারাবো।

হঠাৎ করে ত্রয়ী ওর চোখেমুখে পানির ছোঁয়া পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। নিজেকে সে আবিষ্কার করে ড্রইংরুমের মেঝেতে। চারপাশে লোকজনের ভীড় দেখে হুড়মুড় করে উঠে বসে।

তনয়া ত্রয়ীর হাতে তেল মালিশ করছিলো। মেয়ের জ্ঞান ফিরেছে দেখে চোখে মুখে তার খুশির ঝিলিক। ত্রয়ীর বাবা আলফাজ খান স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,
– মা, কী হয়েছিলো তোমার? জ্ঞান হারিয়েছিলে কেন?

ত্রয়ী অবাক দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমি! আমি আবার জ্ঞান হারালাম কখন?

ত্রয়ী অজ্ঞান হয়ে গেছে শুনে ইনান দ্রুত ত্রয়ীর কাছে আসে। ইনানকে দেখে ত্রয়ী ঢোক গিলে। বসা থেকে লাফ দিয়ে উঠে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে।
সেখানের উপস্থিত সবাই হা হয়ে ত্রয়ীর এহেন কান্ডে।

__________________________________________________________

হলুদের আয়োজন করা হচ্ছে। আর দু’তিন ঘন্টা পর-ই হলুদ লাগানো হবে তিশানের গায়ে। বিকেলে সবাই রিসার বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে।

ত্রয়ী লাল-হলুদ রং মিশ্রিত জামদানী পড়েছে। চুল গুলো খুলে রেখেছে। হাতে রেশমি চুড়ি পড়েছে। কপালে লাল টিপ, চোখে কাজল পড়েছে। গাঢ় লাল রঙের লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট রাঙিয়েছে।

ইনান মুগ্ধ নয়নে নিজের মানুষটাকে দেখছে। ত্রয়ী মুখে এসে পড়া চুলগুলো কে বারবার কানের পিছনে গুজে দিচ্ছে আর হেসে হেসে জেসিয়ার সাথে কথা বলছে।
ইনান তার লজ্জাবতীর হাসিটার উপর ক্রাশ খাচ্ছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে।

হঠাৎ করে ব্যস্ত পায়ে সে এগিয়ে যায় তার লজ্জাবতীর দিকে। ইনানকে দেখে ত্রয়ী অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ইনান ওর হাত ত্রয়ীর দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই ত্রয়ী চোখ বন্ধ করে ফেলে। তা দেখে ইনান মুচকি হাসে।

ত্রয়ীর কপালের বাঁকা টিপটা ঠিক করে দিয়ে বলে,
– ডাকাতি করতে আসি নি। টিপটা বাঁকা হয়ে গেছিলো, সেটাই ঠিক করে দিলাম।

ইনানের কথাখানা শুনে ত্রয়ী চোখ মেলে তাকায়। ইনান নিজের কপালের চুল ঠিক করে হাসতে হাসতে ত্রয়ীর সামনে থেকে চলে যায়।

ইনান চলে যাওয়ার পর ত্রয়ী নিজের জিভ কেটে বলে,
– তোর একেবারে মাথাটা গেছে ত্রয়ী! উনি কাছে আসলে যত্তসব আজব চিন্তাভাবনা করে ফেলিস তুই। আসলেই তুই বোকা।

.
.
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here