বেলির_কথা (১৭)

#বেলির_কথা (১৭)

.
বেলি আর হাসনাতের সংসার খুব ভালভাবেই চলছে।একা সব কিছু করতে হচ্ছে বলে বেলি একটু হাপিয়ে উঠছে।কাজের মহিলার কথা বললে বেলি নিষেধ করে।যদিও হাসনাত কলেজে না গেলে বেলিকে সাহায্য করে।বেলি হাসনাত কে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,
‘আপনার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ।আমি একাই একশ।’
হাসনাত বেলির কথায় হাসে।
.
বেলি ছাদে কাপড় শুকাতে দিয়েছিলো।সেগুলো শুকিয়ে আসলে সব কাপড় জড়িয়ে নিয়ে আসে।সব কাপড় জড়িয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে সিঁড়িতে পা দেয়।এমন ভাবে পা দিচ্ছে যেন জোরে পা দিলে বোম টাইপের কিছু ফুটে যাবে।

হাসনাত কলেজ থেকে বাসায় ফিরেছে মাত্র।বেলিকে খুঁজতে খুঁজতে সে ও সিঁড়ির লাস্টে দাঁড়ায়।কিন্তু বেলির মন কাপড় আর সিঁড়ির দিকে।

নিচে তাকাতে তাকাতে হাসনাতের সাথে ধাক্কা খায়।

বেলি তাড়াতাড়ি সামনে তাকায়।হাসনাতকে দেখে বলে,
‘আপনি এসে গেছেন?’
‘হ্যা।’
‘তা এভাবে দাঁড়ায় আছেন কেন?’
‘ধাক্কাটা খাওয়ার জন্য।’
‘কি অদ্ভুত!’

বেলি কাপড়গুলো রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় রাখে।তারপর একটা একটা করে গোজগাজ করে।
‘কত বলছি একটা মহিলা নিয়ে আসি কাজে হেল্প এর জন্য।তা না।’
‘আমি আমার নিজের সংসারের কাজ যদি করতেই না পারি তাহলে আমি কেমন বউ হলাম?’
‘আচ্ছা তাই নাকি?’
‘হ্যা।’

বেলি কাপড়গুলা গোজগাজ করে রেখে দিলো।হাসনাতের এটা খুব ভাল লাগে।বেলি সব কিছু গুছিয়ে রাখছে।একদম পারফেক্ট।
.
পাশাপাশি বাসায় হওয়ায় হাবিবা প্রায় বেলিকে দেখতে আসে।আজকে ও হাবিবা বেলিকে দেখতে বাসায় আসে।হাসনাত আর বেলি তখন রুমেই ছিল।হাবিবা বেলিকে ডাক দেয়।
‘ভাবিই?’
‘আপু যে না?’
‘হ্যা।’

বেলি দৌড়ে যায়।আজকে বেলি শাড়ি পড়েছে শাড়ি পেছিয়ে পড়ে যেতে নিলে আবার নিজেকে সামলায়।হাবিবা এগিয়ে আসে,
‘আস্তে আস্তে।এত তাড়াহুড়ার কিছুই নেই।’

বেলি হেসে বলে,
‘তোমাকে খুব মিস করছিলাম।একা একা দিন কাটতে চায়না।’
‘তাহলে কোলে একটা সঙ্গী আনো?’

বেলি চুপ করে থাকে।হাবিবা বলে,
‘আমি প্রেগন্যান্ট।’

বেলি একথা শুনে খুব খুশি হয়।
‘সত্যি?এ ত দারুণ ব্যপার।’
‘হ্যা তোমার ভাইয়া খুব খুশি।অ হ্য শুনো তোমার ভাবি কল করেছিল আমাকে?’
‘কেন?’
‘তোমার ভার্সিটির যাওয়ার ব্যপারে কথা বলার জন্য।এখান থেকে ত বেশ দূরে হবে তাইনা?’

বেলি চুপ করে থাকে।
‘ভাইয়া বাসায় আছে তাইনা?’
‘হ্যা।’

হাবিবা হাসনাতের কাছে যায় আর বেলির ভার্সিটি চেঞ্জের কথা বলে।
.
.
হাসনাত বেলিকে ভার্সিটি চেঞ্জ করানোর ট্রাই করে।ততদিন হাসনাত নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে দিয়ে আসে বেলিকে।

একদিন কলেজে কাজ ছিল বলে বেলিকে নিয়েই আগে কলেজে যায়।তখন হাসনাতের অনেক কলিগ আগ্রহ নিয়ে বেলিকে দেখতে আসে।মেয়ে টিচাররা বেলিকে দেখে অবাক হয়ে থাকে।

একজন বেশ কৌতুহলী হয়ে মজা করে বলে,
‘কোথায় স্যার?আর কোথায় আপনি মিল হলো কেমনে?’

বেলি কথাটা হেসে উড়িয়ে দিলেও হাসনাতের গায়ে বেশ ভাল করেই লাগে।হাসনাত তখন মেয়ে টিচারকে বলে,
‘বেলি আর আমি চামড়ার সৌন্দর্য্য দিয়ে এক না হলেও মনের দিক দিয়ে হুবহু এক।চামড়ার সৌন্দর্য একদিন চলে যাবে,কিন্তু মন,মানসিকতা, বিবেক এসব আজীবন থেকে যাবে।আর আমি সেই খাটি মনকেই ভালবেসেছি।ভবিষ্যৎ এ ধরনের মজা আমি পছন্দ করবো না।’

মহিলা টিচারটি মুখ শুকনো করে বলে,
‘আসলেই।আমরা এভাবে ভেবে দেখিনা কখনো।আল্লাহ আপনাদের সুখী করুক।’
‘শুকরিয়া।’

হাসনাত বেলির হাত ধরে হাটা দেয়।বেলি তখন বলে,
‘আপনি অনায়াসে ভালবাসার কথা বলে দেন?’
‘ভালবাসার কথা বলতে সাহস লাগে।আমার সে সাহস আছে মিসেস হাসনাত।’


বেলি এখন পড়ালেখা সংসার দুটোই সামলাচ্ছে এখন।মিতু এসে বেলিকে দেখে যায়।মিতুর যেমন অসুস্থ লাগতো এখন বেলির ও তেমন অসুস্থ লাগে।আজকে বেশি মাথা ঘুরাচ্ছে।বেলি শুয়ে থাকে।হাসনাত কলেজ থেকে ফিরে দেখে বেলি শুয়ে আছে।সে হাতের ব্যাগ রেখে তাড়াতাড়ি বেলির কাছে যায়।
‘অসময়ে শুয়ে আছো যে?’
‘কিছুনা এমনি?’
‘বললেই হলো?’
‘আপনি বসুন শরবত করে আনি?’
‘আগে তোমার কি হয়েছে সেটা বলো?’

বেলি চুপ।
‘চলো ডাক্তারের কাছে যাই?’
‘যেতে হবেনা।’
‘কেন?’

বেলি কিভাবে যে কি বলবে ভেবে পায়না।শেষমেশ কাগজ বের করে লিখে দেয়।হাসনাত কিছুক্ষণ কাগজের দিকে তাকিয়ে বলে,
‘সিউর?’
‘আমি জানিনা।’

বেলি চুপ করে বসে থাকে।

______________
সময় দ্রুত চলে যায়।এত দ্রুত যায় যে একদমি টের পাওয়া যায় না।শাহেদের একটা ছেলে হয়।বেলি হাসনাতের সঙ্গে ভাইয়ের ছেলেকে দেখতে যায়।
.
শাহেদ বেলিকে দেখে বলে,
‘আব্বা এসেছে ঘরে।আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।’
‘আব্বা তো এসেছে।আম্মা ও আসবে একদিন ইন শা আল্লাহ।’

বেলি ভাইয়ের ছেলেকে কোলে নেয়।আর বলে,
‘কার মতো হয়েছে?তোমার মতো?’
‘আমার ও তাই মনে হয়।তবে এখন সবটা বুঝা যাচ্ছে না।’
‘আল্লাহ সুস্থ রাখুক আর হায়াত দিক এটাই চাওয়া।’

মিতু এসে বেলির মাথায় হাত রাখে।
‘ভাল আছিস?এ অবস্থাতে পড়ালেখা করতে যাস সাবধানে থাকিস?’
‘আচ্ছা।উনি দিয়ে আসেন গাড়ি করে।আবার নিয়েও আসেন।রিস্ক নিতে চাননা বলে ড্রাইভার আংকেলকেও ছুটি দিয়ে দিছেন।তুমি চিন্তা করো না।’

.
বেলিরা চলে আসে।বেলি রাতের রান্নাবান্না করার জন্য রান্নাঘরে ডুকে।
এখন বেলি প্রায় সব রান্না করতে জানে।অনেক মজা ও হয়।কিন্তু আজকে বেশি অসুস্থ লাগছে।স্বাদ লাগছে না কিছুই।

বেলি বসা থেকে উঠতে নিলে আবার ও মাথা ঘুরে উঠে।হাসনাত রুম থেকে বের হয়ে বেলিকে দেখে।
‘বেশি অসুস্থ লাগছে তোমার?ডাক্তার ডাকবো?’
‘নাহ।’

হাসনাত বেলিকে টেবিলে বসিয়ে ভাত তরকারি নিজে প্লেটে নিয়ে আসে।
‘চুপ করে বসো?’
‘আপনি আবার এসব করতে যাচ্ছেন কেন?আমি পারব তো?’

হাসনাত কিছুই শুনছে না হাসনাত এক লোকমা ভাত বেলির মুখে ধরে।বেলি মুখে নিয়ে অব্ব করে বসে আছে।
‘কি হলো?’
‘মজা লাগছে না।’

হাসনাত নিজেই এক লোকমা মুখে দেয়।তরকারিতে অনেক লবণ।হাসনাত বেসিনে গিয়ে সব ফেলে দেয়।আর বলে,
‘এত লবণ?’

হাসনাত বেলির দিকে তাকায়।বেলি মাথা নিচু করে ফেলে।
‘আমি সরি বুঝতে পারিনি এত লবণ হবে সেটা?’

হাসনাত বেলির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রান্নাঘরে গেলো।তারপর নিজেই ডিম ভেজে এনে গরম ভাত দিয়ে খাইয়ে দিলো।

হাসনাত শান্তস্বর এ বলে,
‘মানুষ ভুল করবেই স্বাভাবিক।কিন্তু ভুল থেকে শুধারানোটা জরুরি।’

বেলি চুপ করে থাকে।বেলি বুঝেছে হাসনাত এসব শান্ত হয়ে বললে ও রেগে ই বলছে।
হাসনাত আবারো বলে,
‘কালকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’

পরেরদিন হাসনাত বেলিকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়।ডাক্তার চেক আপ করে বলে,
‘আপনার ওয়াইফ এর শরীর অনেক দূর্বল তাই এমন মনে হচ্ছে।রেস্টে থাকলে ঠিক হয়ে যাবে।পুষ্টিকর খাবার খাওয়াবেন।’

হাসনাত বেলিকে বাসায় পৌছে দিয়ে বাজারে যায়।ইচ্ছেমত শাক সবজি ফল নিয়ে আসে।
এত বাজার দেখে বেলি হা হয়ে বলে,
‘একদিনে এসব খাইয়ে আমাকে মোটা করে ফেলবেন নাকি?’
‘ডাক্তারে কি বললো শুনো নাই?’
‘তাই বলে এত এত?’
‘হ্যা।না হলে তোমার দূর্বলতা যাবে না।আমার দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র বউ।’
‘আপনি একটা পাগলের চেয়ে ও কম না।’

হাসনাত হাসে।
‘নিয়ম করে করে খালি খাবা আর খাবা।’
‘আমি এত খাই না।আর দেখবেন মোটা হলে তখন সবাই বলবে মোটাবউ।’
‘বলুক কার খেয়ে পড়ে মোটা হয়েছে?লোকের কথার ধার আমি ধারিই না।’

রাতের দিকে হঠাৎ করে বেলির জ্বর চলে আসে।কাথা গায়ে জড়িয়ে কাঁপছে।প্রথমে হাসনাত ব্যাপার টা না বুঝলে ও এখন হারে হারে বুঝছে যে জ্বর এসেছে।কি করবে কিছুই বুঝতেছে না।

হাসনাত শাহেদকে কল করে।শাহেদ সব শুনে ফোনটা মিতুকে দেয়।মিতু জলপট্টি দিতে বলে।আর কিছু খাইয়ে জ্বরের ঔষধ খাইয়ে দিতে বলে।

হাসনাত রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসে।কিন্তু বেলি উঠে না।কি যেন বিড়বিড় করে এটা ত বেলির অভ্যাস। কিন্তু হাসনাত এ অভ্যাসের সাথে পরিচিত নয়।হাসনাত কানটা বেলির মুখ বরাবর রাখে।কি এমন বলছে বেলি?

বেলি বলে,
‘প্রথমে আম্মারে আঁকড়ে ধরলাম সে চলে গেলো।তারপর ভাবি আসলো সে ও দূরে গেলো।হাসনাইত্তা আসলো সে আমারে এত কেন ভালবাসে? হ্যা?

হাসনাত মুখ কুঁচকে বলে,
‘আমি এত কষ্ট করে রাণীর জন্য খাবার আনলাম, আর সে কিনা আমাকে হাসনাইত্তা বলে?’

হাসনাত বেলিকে বলে,
‘এই আমি তোমার স্বামী,আমার নাম এভাবে বলবা?’

বেলি ত কিছুই শুনছে না।সে বিড়বিড় করে কথা বলেই যাচ্ছে।হাসনাত জোর করে বেলিকে বসায়।খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে।তারপর ঔষধ খাইয়ে দেয়।তারপর বলে,
‘আগে সুস্থ হও তারপর আমাকে এভাবে ডাকার মজা বুঝাবো কত সুন্দর নাম আমার।’

সকালের দিকে বেলির জ্বর সেড়ে যায়।হঠাৎ হাবিবার বর কল করে জানায় হাবিবা পা পিছলে পড়ে গেছে…..

চলবে…

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

#তাহরীমা

(আসসালামু আলাইকুম।আমার অসুখ।তাই কোনোমতে লিখেছি।পসা হওয়ার জন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here