#ব্রোকেন_হার্ট
লেখাঃ মান্নাত মিম
|২|
সারাদিনের আমোদে থাকার খুশিতে যেন গ্রহণ লাগল। আমার হাসি হাসি সুখে হঠাৎই কারো নজর লেগে আঁধারে ছেয়ে গেল। তবুও সারাটা পথ মুখ ভার করে এলাম না। বলা যায়, একটুকরো হাসি ঠোঁটের কোণ বিদ্যমান ছিল তখনো ভালোকিছুর আশায় হয়তো। সেটাই হলো অবশেষে। কারণ আমাদের বাড়ির পাশেই তবে বেশকিছুটা দূরে এন্ডারসনের বাড়ি। রাজপ্রাসাদ যেন! দেখেই চমকে থমকে গেলাম। অবশ্য এন্ডারসন আমাকে অনেক রিকোয়েস্ট করেছিল ভেতরে যাওয়ার জন্য তখন নিজের উগ্রভাবের বেশভূষা দেখিয়ে কোনরকমের তালবাহানা দিয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম। যদিও আসতে চায় না বেহায়া মনটা। তাকে শুধু দেখতেই মন চায়। হঠাৎ হাওয়ার মতো করে কীভাবে যেন ভালোবাসার প্রজাপতিরা আমাকে আলতো স্পর্শ করে মাতোয়ারা বানিয়ে দিয়ে গেল। হৃদয়ে তখনো তোলপাড় বিদ্যমান। বাকি পথ সাইকেল দিয়েই বাড়ি ফিরলাম। যেটা কি না গাড়ির ডিক্কিতে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছিল৷ কী অদ্ভুত!
ক্লান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরলাম। মাম্মা নেই বাড়িতে। তিনি কর্মঠ নারী। রুজিরোজগারের উদ্দেশ্য বেরিয়েছেন। বসে থাকেন না, আমি-ও আগে জব করতাম পার্টটাইম। মাম্মার কাজটা-ও পার্মানেন্ট নয়। এখানে সম্ভবত জুটিয়েছেন কোন একটা কাজ। এখন তিনি সেখানেই বোধহয়। যাইহোক টমাসকে দেখতে না পেয়ে হাঁক ছাড়লাম। নাহ, কোথাও নেই ছেলেটা। অত্যন্ত দুরন্তপনার সে। পড়ালেখা তার চোখে বিষকাঁটার স্বরূপ। আগের এলাকার একটা স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলাম তাকে। কিন্তু এতএত অভিযোগ আসতো তার নামে যে, সেখান থেকে প্রিন্সিপাল তাকে বের করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর কিছুদিন যাক তারপর এখানের স্কুলে ভর্তি করাব ভাবছি। ততদিনে আমি-ও একটা জব খুঁজতে থাকি। কারণ আমার আর টমাসের লেখাপড়ার খরচাপাতি আমি-ই বহন করে থাকি। সবকিছু চিন্তাভাবনা করতে করতে ওয়াশরুম থেকে গোসল দিয়ে বের হলাম। পেটে তখন ক্ষিদে চোঁচোঁ শব্দ করছে। বাহ! কী সৌভাগ্যের পেট আমার! রেস্টুরেন্টে এতকিছু খেলাম তাও তার আসলে আমার পেট ভরে না? কবে থেকে রে? নিজেই নিজেকে শোধালাম। হেসে নিচে নামলাম। বাড়িটা বড়সড় নয়। অল্প-সল্প জায়গা নিয়ে তৈরি। ওপরে আমার রুমের সাথে তিনটা রুম। একটা একটু বড়ো, আর দু’টো সীমিত পরিমাণে ছোটো-ছোটো। সেই দু’টোই আমাদের ভাই-বোনের। আর বড়োটা মাম্মার। নিচে কিছুটা জায়গা নিয়ে অর্থাৎ তিনটে সোফা রেখে অল্প খানিক জায়গা নিয়ে ড্রয়িংরুম। ড্রয়িংয়ের পিছন দিকেই খোলা রান্নাঘর। যা ড্রয়িংরুম থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায়। তবে এতটুকু বাড়ি-ই আমাদের মতো তিনজন মানুষের জন্য যথেষ্ট।
রান্নাঘরে ছোটো একটা ফ্রিজ রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখি শুধু ডিম। বাজার করা হয়নি। সময়ই বা কোথায় ছিল বাজার করার। যাইহোক ডিম যে মাম্মা বুদ্ধি করে আমার জন্য কিনে রেখে গেছে এইতো বেশি। আপাততের জন্য আমার খাবার এটা দিয়েই চলবে। বারবার অর্ডার করার মতো বাড়তি খরচ করার কোন মানেই হয় না।
______
আমার রুমে বারান্দার বদলে জানালাটা বেশ কাজে দিয়েছে। জানালায় বসে আরামে কফি পান করছি আর আকাশে মিটিমিটি তারার মাঝে ড্যাডকে খুঁজছি। ড্যাড আমাকে অনেক আদর করত। মন খারাপে পাশে থেকে গল্প শোনাতো। টমাস-ও জেগে থাকলে আমাদের আড্ডাতে যোগ দিতো। তখন মন খারাপ কোথায় যে মিলিয়ে যেত বোঝা দায়। কিন্তু এই যে বাবাকে হারিয়ে মন খারাপের বস্তুটা যেন জীবনের অধ্যায় হিসাবে যোগান্তে ভোগাচ্ছে। এখন ড্যাড তুমি কোথায়? দেখে যাও তোমার মেয়ের খুব খুব করে কান্না পাচ্ছে। এই রাতের শহরে হাঁটতে মন চাচ্ছে। কিন্তু শরীর সায় দিচ্ছে না। কী উপায়? পরক্ষণেই খেয়াল এলো আমার ভালোবাসার মানুষটাকে একনজর দেখা যাক। যেই ভাবনা সেই কাজ। জিন্স, টপ পরে বেরিয়ে পড়লাম সাইকেল নিয়ে উদ্দেশ্য এন্ডারসনের দেখিয়ে দেওয়া তার বাড়ি!
আগেই বলেছিলাম রাজপ্রাসাদ বাড়ি, অবশ্য এন্ডারসনের মতো রাজপুত্রের জন্য এমনই বাড়ি আশা করা যায়। তার তো আমার আমার মতোন অবস্থা নয়। বাড়ির সামনে খোলা প্রাঙ্গণে ভেতরে প্রবেশ করলাম। বাড়ির সামনেই সুইমিংপুল। তারপরে সাইড ঘেঁষে বাড়ির প্রবেশপথ। এখন এরমাঝে ভেতরে যাওয়া তো সম্ভব নয়। দারোয়ান দাঁড়িয়ে বাড়ির গেটে। চিন্তা করলাম আশেপাশে দিয়ে যদি জানালা থাকে টপকে-টোপকে যদি যেতে পারি এই আরকি। কিন্তু একরাশ হতাশা ঘিরে ফেলল। যখন দেখতে পেলাম বাইরে থেকে গাড়ি আসছে বাড়ির ভেতরে। দ্রুত পা চালিয়ে নিজেকে আড়াল করলাম সুইমিংপুলের পাশে থাকা গাছগুলোর মাঝে। ভেতরে গাড়িটা চলে গেলেই আমি বের হওয়ার জন্য উদ্যত হই। একবার পিছু ফিরে তাকাই দেখি গাড়ি থেকে এন্ডারসন নামছে। থেমে যাই, খুশি হই। ভাবনা এলো, এখানে আসা সফল হলো তাহলে। এগিয়ে যাব কথা বলতে, এমন সময় অত্যাধিক সুন্দরী মেয়ে গাড়ি থেকে নামছে। আর তার হাত ধরে এন্ডারসন-ই নামাচ্ছে। স্তব্ধ, বিমূঢ়, নির্বাক আমার চাহনি তখন।
________
চলবে…