#ভরসার_দুহাত
#শোভা_আক্তার(লাভলী)
#পর্ব_৯
রাত ধীরে ধীরে গভীর হয়ে গেল। উমায়ের বুরাকের হাতে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে। বুরাকের চোখে ঘুম নেই। তার চারপাশে নজর রাখতে হবে। বাসে অনেক মানুষ রয়েছে। কারো ক্ষতি হতে দেয়া যাবে না। হঠাৎ বাসচালক বলল-
“সামনের ধাবাতে বাস থামাতে হবে।”
বুরাক শুনে বলল-
“কেন ভাই তারাতাড়ি যাওয়া যাবে না?”
“আমি বাথরুমে যাব ভাই। আর এইখানে অনেকজনই আছে খাওয়া দাওয়া করেনি।”
“ঠিক আছে, থামিয়ে দিন।”
বাসচালক ধাবার সামনে বাস থামিয়ে দিলো। যারা যারা জেগে রয়েছে তারা এক এক করে নেমে গেল। বুরাক উমায়েরকে ডাকলো। এক ডাকেই উমায়ের লাফিয়ে উঠল। কিন্তু পাশে বুরাককে দেখে সে সাহস পেল।
“সরি ডাকার জন্য।”
“সমস্যা নেই, কোথায় আমরা এখন?”
“তা জানি না, কিন্তু খুব শীগগিরই পৌঁছে যাব। চলো কিছু খেয়ে নাও।”
“আমার তো ক্ষুধা নেই।”
“আমার আছে, চলো আমার পাশে বসে থাকবে আর আমি খাব।”
উমায়ের হেসে মাথা নাড়াল। বুরাকও মুচকি হাসলো। দুজন বাস থেকে নেমে ধাবার দিকে এগিয়ে গেল। বুরাক উমায়ের এর চেহারা দেখে বলল-
“তুমি ঘুম ধুয়ে নাও চোখ খুলতে পারছো না ঠিক মতো।”
“কি করবো আমার ঘুম আসছে।”
“তাই বলেছিলাম সিটে গিয়ে বসো আমি তো টিকিট কিনে নিয়েছিলাম।”
“থাক না এত টেনশন করো কেন। চলো তোমার ক্ষুধা পেয়েছে না?”
বুরাক হেসে উমায়েরকে ইশারায় বলল বেঞ্চে গিয়ে বসতে। উমায়ের বেঞ্চে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। বুরাক পানি কিনে উমায়ের এর হাতে দিয়ে বলল মুখ ধুয়ে নিতে। উমায়ের মুখ ধুয়ে বেঞ্চে ফিরে আসলো। এসে দেখে বুরাক নেই। উমায়ের ভয় পেয়ে গেল। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কোথাও নেই। আশে পাশে অচেনা মানুষের ভির। উমায়ের দৌড়ে বাসে গেল। বাস পুরো চেক করে বুরাককে পেল না। উমায়ের ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। বাস থেকে নেমে এদিক সেদিক দেখছে। বুরাক হঠাৎ কোথায় গেল বুঝতে পারছে না। আবার ফিরে আসলো বেঞ্চে। হঠাৎ পেছন থেকে বুরাকের কন্ঠ ভেসে আসলো।
“মুখ ধুতে এতক্ষণ লাগে? কোথায় ছিলে?”
উমায়ের চমকে পেছনে ফিরলো। বুরাক হাতে প্লেট নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। উমায়ের এর চোখে পানি দেখে বুরাক অবাক হয়ে বলল-
“কি হলো তুমি কাঁদছো কেন?”
উমায়ের চোখের পানি মুছে বলল-
“না.. না তো, মু..মুখ ধুয়ে এ..এসেছি। তাই ভি..ভিজে আছে।”
বুরাক টেবিলের উপর প্লেট রেখে বলল-
“আমার চেহারায় কি লিখা আছে আমি বোকা? চোখের পানি আর স্বাভাবিক পানি চেনার ক্ষমতা আমার আছে। কাঁদছিলে কেন?”
উমায়ের মাথা নিচু করে বলল-
“ফিরে এসে দেখি তুমি নেই। অনেক খুঁজেছি তুমি ছিলে না। বাসে পর্যন্ত খুঁজেছি কিন্তু পাইনি তোমাকে। মনে উল্টা পাল্টা ভাবনা আসছিল তাই কেঁদে দিয়েছিলাম।”
“বুরাক বেইমান, বুরাক খারাপ, আমাকে রেখে চলে গেল, আমি বাসায় কি করে যাব ব্লা ব্লা ব্লা এসব ভাবছিলে?”
উমায়ের ধীরে ধীরে চোখ তুলে বুরাকের দিকে তাকাল। বুরাক এক ভ্রু উঁচু করে রেখেছে। উমায়ের আবার মাথা নিচু করে ফেলল। বুরাক না হেসে পারলো না। উমায়ের এর এক্সপ্রেশন দেখে হেসে দিলো। হেটে গিয়ে বেঞ্চে বসে বলল-
“তোমাকে রেখে পালিয়ে যাওয়ার কথা আমি কল্পনাও করতে পারবো না। বসো এখন খেয়ে নাও।”
উমায়ের বুরাকের দিকে তাকাল। কেন যে এই মানুষটাকে মাঝে মধ্যে অবিশ্বাস করে ফেলে৷ বুরাক ইশারায় বলল বসতে। উমায়ের গিয়ে বুরাকের পাশে বসলো।
“খিচুড়ি পেয়েছি,খাও তো না-কি?”
“বলেছিলাম না আমার খাবার নিয়ে সমস্যা নেই।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ কিন্তু খাবারটা টাটকা, ভালো ও হালাল হতে হবে।”
উমায়ের হেসে দিলো৷ বুরাক ঘড়ির সময় চেক করে দেখে গভীর রাত সাড়ে ৩ টা বাজে। সময়টা যেন কাটতেই চাচ্ছে না। উমায়ের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
“বৃষ্টি পরবে হয় তো।”
“হ্যাঁ চারপাশে বেশ ঠান্ডা। তারাতাড়ি খেয়ে নাও বাসে জানালার পাশে বসে বৃষ্টি উপভোগ করতে পারবে।”
উমায়ের মুচকি হেসে মাথা নাড়াল।
অন্যদিকে…..
খালিদ খান রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাশিদ খানের লাশের দিকে। যে ভাইকে নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করেছে আজ সেই ভাই তাকে ছেড়ে কত তারাতাড়ি চলে গেল। ডাক্তার এগিয়ে এসে বলল-
“আমাকে ডেকেছেন মিস্টার খালিদ?”
খালিদ খান চোখ তুলে ডাক্তারের দিকে তাকাল। ডাক্তার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খালিদ খান বলল-
“আমি বলেছিলাম আমার ভাইয়ের কিছু হলে আমি তোমার হসপিটালে আগুন লাগিয়ে দিব।”
“আমাকে হুমকি দিয়ে লাভ নেই। আমি বলেছিলাম আগেই আপনার ভাই আর বেঁচে নেই। তবুও আপনার হুমকিতে বাকি ডাক্তাররা ভয়ে ওর চিকিৎসা করেছে। কখনো শুনেছেন মৃত মানুষের চিকিৎসা করা যায়?”
“আমার সাথে তর্ক? আমি বলেছিলাম আমার ভাই জীবিত আছে। আমার ভাই তোমার জন্য মরেছে।”
“আপনার ভাইকে রড দিয়ে পেটানো হয়েছে। তাকে এমনভাবে পিটিয়েছিল বেঁচে থাকার চান্সই ছিল না। শুধু তাই না তার বুকে রড ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। কপালে ২ বার গুলি করা হয়েছে। আপনি তো কত মার্ডার করেছেন আপনার তো জানার কথা এভাবে কাওকে মারা হলে বেঁচে থাকা সম্ভব না।”
খালিদ খান হাতমুঠো শক্ত করে রেখেছে। রাশিদের মৃত্যু তার মাথা খারাপ করে দিচ্ছে। ডাক্তার লম্বা নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে বলল-
“মাফ করবেন, আমি জরুরি অপারেশনে যাব এখন। মাথা ঠান্ডা রাখাটা জরুরি আমার। ডাক্তার হিসেবে আপনার ভাইয়ের জন্য আমাদের খারাপ লেগেছে। কিন্তু এতে আমাদের কোন দোষ নেই। তাকে তারাতাড়ি কবর দেয়ার ব্যবস্থা করুন। অনেকক্ষণ হয়েছে ওর মৃত্যুর।”
ডাক্তার এইটুকু বলে হাঁটা ধরলো। খালিদ খান হাত মুঠো নরম করে রাশিদ খানের দিকে তাকাল। বুক ফেটে কান্না আসছে। রাশিদ খানের গালে হাত বুলিয়ে কেঁদে উঠলো। তখনই তার এক লোক এসে বলল-
“বস, বুরাক আর উমায়েরকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। ওরা বাসে করে রাঙামাটি যাচ্ছিল।”
খালিদ খান হেসে উঠলো।
“শুনলি রাশিদ? বলেছিলাম না তোর খুনীকে আমি পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করবো? দেখ ৫ ঘন্টাও হয়নি তাকে পেয়ে গিয়েছি আমরা।”
খালিদ খান সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পেছনে ফিরলো। লোকটার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
“তাদের বল বুরাক আর উমায়েরকে যাতে কিছু না করে। তাদের আমি নিজের হাতে মারবো।”
“জি বস”
বুরাক আড়চোখে বার বার উমায়েরকে দেখছে। মেয়েটা বকবকও ভালো করতে পারে। বুরাক শুধু একবার তার পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করেছে। ব্যস, উমায়ের গল্পের ঝুড়ি খুলে বসলো। বুরাক হাসছে তার কথা শুনে। উমায়ের এর কথা শুনে বুরাক বুঝতে পারলো সে তার পরিবারকে খুব ভালোবাসে। পরিবার, বুরাকেরও পরিবার আছে। শুধু কথা হয় না এই আর কি। আচ্ছা বুরাক যদি বাসায় যায় আব্বু আম্মু মেনে নিবে বুরাককে। বড়ো ভাইয়া কি আগের মতো জড়িয়ে ধরবে? বুরাক লম্বা নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিলো। উমায়ের কথা বলতে বলতে হঠাৎ সামনের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-
“বু..বুরাক সামনে..সামনে দেখো।”
বুরাক চোখ খুলে দেখে খালিদ খানের লোকেরা দৌড়ে আসছে৷ বুরাক আর উমায়ের দাঁড়িয়ে গেল তাদের দেখে। আশে পাশে যত মানুষ ছিল তারা সবাই এদিক সেদিক দৌড়াতে লাগলো। বুরাক উমায়ের হাত ধরে টেনে বাসের দিকে দৌড় দিলো। তারা বুরাক আর উমায়েরকে দেখতেই দৌড়ে এগিয়ে আসলো। বুরাক উমায়েরকে বাসে তুলে দিয়ে বাসচালককে বলল বাস স্টার্ট দিয়ে দিতে। উমায়ের বুরাককে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই বুরাক বলল-
“আমার জন্য টেনশন করো না। আমার কিছু হবে না৷ তুমি ভেতরে গিয়ে বসো। আমি খুব শীগগিরই আসবো।”
“কিন্তু বুরাক..”
“বিশ্বাস করো তো আমার উপর?”
“বুরাক তুমি আসবে তো ফিরে?”
বুরাক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়াল। বাসচালক বলল-
“আপা তারাতাড়ি ভেতরে যান বাস চালু করবো।”
বুরাক ইশারায় বলল ভেতরে যেতে। উমায়ের না চাওয়ার শর্তের পিছিয়ে গেল। বাস চালু করে ফুল স্পিডে এগিয়ে গেল। বুরাক দাঁড়িয়ে আছে। তারা বুরাক থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়াল। তাদের মধ্যে একজন বলল-
“বুরাক, আমরা তোকে মারতে চাই না। নিজেকে বসের হাতে তুলে দে।”
“তোরা মারবি না, কিন্তু তোদের বস ঠিকই মেরে ফেলবে আমাকে।”
“তুই কেন বেইমানি করলি?”
“উমায়েরকে বাঁচানোর একটাই উপায় ছিলো।”
“পর নারীর জন্য তুই সে মানুষটাকে ধোকা দিলি যে তোকে ছোটোবেলায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বাসায় জায়গা দিয়েছিল।”
“এখন তোদের কিভাবে বুঝাবো আমি ইচ্ছে করে সে রাস্তায় বসে ছিলাম যাতে বস আমাকে নিজের বাসায় জায়গা দেয়।”
“মানে কি?”
“কিছু না, যদি আমি নিজেকে সারেন্ডার করি বস কি উমায়েরকে ছেড়ে দেবে?”
“না, তোদের দুজনকে ভয়ংকর মৃত্যু দিবে ভেবে রেখেছে।”
“যাকে মৃত্যু থেকে বাঁচালাম তাকে আবার মৃত্যুর রাস্তায় নিয়ে যেতে পারবো না। বসকে বলে দে আমি নিজেকে সারেন্ডার করতে রাজি। কিন্তু উমায়ের এর যাতে কোন ক্ষতি না হয়।”
সামনে থাকা লোকটা কিছু বলল না। কারণ বুরাকের পেছন থেকে দু’টো গাড়ি ফুল স্পিডে এগিয়ে আসছে। বুরাক পেছনে ফিরলো। খালিদ খানের গাড়ি আসছে। বুরাকের বরাবর গাড়ি থামিয়ে খালিদ খান গাড়ি থেকে বের হলো। সাথে তার কয়টা লোকও বের হলো। বুরাক চারপাশে চোখ বুলালো। খালিদ খানকে ছেড়ে এখানে মোট ২১ জন মানুষ আছে। তাদের সবার হাতে কোন না কোন অস্ত্র রয়েছে। বুরাককে ভালো মতো ভাবতে হবে কিভাবে কি করা লাগবে। খালিদ খান শান্ত গলায় বলল-
“আমার সাথে তুই বেইমানি করবি আমি কখনো কল্পনাও করি নি বুরাক। এইভাবে ধোঁকা দিলি আমাকে।”
“আপনাকে ধোঁকা দেয়ার আমার ইচ্ছে ছিল না। আমি আজও আপনার সম্মান করি। আপনার কোন দোষ নেই। কিন্তু আপনি অনেক অপরাধ করেছেন।”
“অপরাধ যেহেতু করেছি। বলেই দে আমি কি অপরাধ করেছি।”
“আপনার অপরাধ ভাইকে সাপোর্ট করেছেন।”
“তো কি করতাম? কি করতাম বল। মেরে ফেলতাম?”
“শাস্তি দিতেন, তার পাপের জন্য তার শাস্তি পাওয়া জরুরি ছিল।”
“আমি আমার বাবা মাকে বলেছিলাম রাশিদের কোন ক্ষতি হতে দিব না। নিজের সন্তান ভেবে পেলেছি।”
“এমনভাবে লালন পালন করেছেন সে বিগড়েই গিয়েছিলো। বড়ো থেকে বড়ো অপরাধ করেছে কিছু বলেন নি।”
“তুই করিস নি? তুই তো আমার বলায় কত মানুষকে মেরেছিস সেটা কি?”
বুরাক হেসে দিলো। হাসি মুখেই বলল-
“বস, আপনার প্রত্যেকটা শত্রুই আপনার মতো। আমি কাওকে মারার আগে কেন তার ডিটেইলস বের করি বলুন তো। আমি তার ব্যাকগ্রাউন চেক করি যে সে খারাপ কাজের সাথে জড়িত কিনা। যারা যারা জড়িত তাদেরই একমাত্র মেরেছি। কেও খাবারে ভেজাল মেশাতো, কেও ড্রাগস ডিলার ছিল, কেও কিশোর গ্যাং তৈরী করতো আবার কেও মেয়েদের বিদেশে পাচার করতো। আমি এমন মানুষদেরই মেরেছি। কিন্তু আমার একটা ভুল হয়েছে অনেক বড়ো। আমি ফিরোজ আনোয়ারের ডিটেইলস বের করেও চেক করি নি। মানুষটা ভালো তাই তো আমার হাতে তার বা তার পরিবারের খুন হয় নি।”
“তার মানে এক সময় তুই আমাকেও মেরে ফেলতি।”
“জানি না, আমি চাইলি আপনাকে যে কোন মুহূর্তে মারতে পারতাম কিন্তু মারি নি। কেন মারি নি তা জানি না। হয় তো আপনার প্রতি আমার মনে মায়া আছে তাই।”
“রাখ তোর মায়া। তুই আমার কলিজা ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছিস। এখন আর বলিস না আমাকে সম্মান করিস বা ভালোবাসিস।”
বুরাক কিছু বলল না। তার যেটা সঠিক লেগেছে সে করেছে। এখন আর পিছুটান নিয়ে পড়ে থাকতে চায় না। খালিদ খান আবার বলল-
“বুরাক, যদি সত্যি তোর মনে আমার জন্য মায়া আছে আমার জন্য শেষবারের মতো একটা কাজ কর। এই কাজটা করলে আমি তোকে সারাজীবনের জন্য মুক্ত করে দেবো। ওয়াদা করছি তোর কোন ক্ষতি করবো না।”
“বলুন, আমি চেষ্টা করবো।”
“উমায়েরকে নিজের হাতে মেরে ফেল।”
বুরাকের মন বলছিল এটাই বলবে খালিদ খান। বুরাক হেসে দিলো। শব্দ করে হাসছে বুরাক। খালিদ খান রাগে আগুন হয়ে গেল।
“হাসছিস কেন তুই?”
বুরাক হাসতে হাসতে বলল-
“আপনি আমাকে পাগল পেয়েছেন? যার জন্য আপনার ভাইকে মরলাম তাকেই মেরে ফেলবো?”
বুরাক হাসি থামিয়ে আবার বলল-
“উমায়ের এর গায়ে ফুলের টোকাও লাগতে দিব না মেরে ফেলা তো দূরের কথা।”
“আগে নিজেকে বাঁচিয়ে নে।”
খালিদ খান তার লোককে ইশারায় বলল বুরাককে মারতে। বুরাক আড়চোখে সেই লোকটাকে দেখে প্রস্তুতি নিলো। কিন্তু লোকটা এগিয়ে আসছে না। বুরাককে দেখে ঢোক গিলছে। খালিদ খান রাগী কন্ঠে বলল-
“কি হলো ইশারার কথা বুঝিস না?”
“বস, বুরাকের সাথে পারবো না আমি।”
“ফিল্মি ডায়ালগ দেয়া বন্ধ কর। এগিয়ে যা।”
“আ..আমি একা যাব না।”
বুরাক বলল-
“আমাকে মারতে হলে তোদের সবাইকে একসাথে আসতে হবে। একসাথে আসলেই আমাকে মারতে পারবি।”
খালিদ খান বলল-
“সবাই একসাথে হামলা কর।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ সবাই একসাথে আয়। তোদের মধ্যে ৬/৭ জন তো আমার হাতে মরবেই মরবে লিখে রাখ। এখন তোদের ২১ জনের মধ্যে কারা মরবে আমি জানি না।”
সবাই চুপসে গেল বুরাকের কথা শুনে। খালিদ খান রাগে গজগজ করতে করতে বলল-
“ও তোদের ভয় দেখাচ্ছে। ১ জন মানুষ কখনো ২১জনের সাথে পারবে না। এগিয়ে যা তোরা তারাতাড়ি।”
সবাই একসাথে দৌড়ে এগিয়ে গেল বুরাকের কাছে। বুরাক দ্রুত তার পেন্টের বেল্ট খুলে নিলো৷ সবাই তা দেখে দাঁড়িয়ে গেল। বুরাকের এই বেল্টে ব্লেড লাগানো। সে সবসময় এই বেল্টটা পড়ে। ইমারজেন্সির সময় কাজে লাগে নিজেকে প্রটেক্ট করতে। বুরাক বেল্টটা ঘুরাতে ঘুরাতে বলল-
“আজ নিজেও মরবো তোদেরকেও মারবো, আয় এগিয়ে। তোরা ভালো মতো জানিস আমি এটা দিয়ে কতজনকে মেরেছি।”
খালিদ খান রাগে গর্জন করে উঠলো-
“তোরা এগিয়ে না গেলে আমি তোদের সবাইকে মেরে ফেলবো বলে দিলাম।”
বুরাক হেসে বলল-
“আমাকে না মারলে বস তোদের মেরে ফেলবে। আবার তোরা আমার দিকে এগিয়ে আসলে আমি তোদের মেরে ফেলবো। তো বল কার হাতে মরবি তোরা?”
সবাই একে অপরের দিকে তাকাল। সবার চোখে মুখে চিন্তার ছাপ। একজন বলল-
“চল একসাথে যাই। বুরাককে মারতে পারলে বস আমাদের প্রমোশন দিবে।”
বাকিরা মাথা নাড়াল। সে মন্দ বলেনি। সবাই একসাথে আবার দৌড়ে গেল। বুরাক বেল্ট ঘুরাতে ঘুরাতে এগিয়ে গেল। বেল্টের ব্লেড রেগে একজনের গাল কেটে গেল। সে গাল ধরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। বুরাক ঘুরানোর স্পিড আরো বাড়ালো। এইবার একসাথে তিনজনের গলায় ব্লেড লেগে কেটে গেল। বুরাক পাগলের মতো এদিক সেদিক বেল্ট ঘুরিয়ে মারছে। শেষে ক্লান্ত হয়ে দাড়িয়ে গেল। সবাই মাটিতে শুয়ে গড়াগড়ি করছে। রক্তাক্ত অবস্থা চারপাশ। বুরাকের ডান হাত থেকে হঠাৎ রক্ত ঝড়তে লাগলো৷ বুরাক ঘনঘন নিশ্বাস ফেলছে। হাতটাও বেশ ব্যাথা করছে। হাত থেকে বেল্টটা ফেলে দিলো। খালিদ খান বলল-
“এই কারণেই তোকে এত বেশী স্নেহ করতাম। তোর সামনে সবাই কমজোর। আমার স্নেহের মর্যাদা রাখলি না তুই।”
বুরাক কিছু বলল না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। খালিদ খান হঠাৎ এগিয়ে আসতে লাগলো। বুরাক বাম হাত দিয়ে তার ডান ধরে দাঁড়িয়ে রইলো। হঠাৎ চোখে ঝাপসা দেখতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে আবার খুললো। বেশ রক্ত ঝড়ার কারণে সে শক্তি পাচ্ছে না। খালিদ খান হঠাৎ এসে বুরাকের গালে ঘুষি দিয়ে বসলো। বুরাক দু কদম পিছিয়ে গেল। খালিদ খান আবার বুরাকের পেটে লাথি মেরে দিলো। বুরাক পেট ধরে হাঁটু গেড়ে বসলো। খালিদ খান বুরাকের চুল ধরে টেনে গাল চেপে ধরলো-
“কি হলো মার আমাকে। সবাইকে তো মারলি আমাকে মারছিস না কেন?”
“জা..জানি না”
খালিদ খান দাঁতে দাঁত চেপে বুরাকের চুল ছেড়ে বুকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিলো। বুরাক যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে সে বুঝতে পারছে না। খালিদ খান ইচ্ছে মতো বুরাকের পেটে বুকে লাথি মারতে লাগলো। বুরাকের নাক মুখ দিয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো। খালিদ খান ক্লান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। চারপাশের চ্যালাপ্যালাদের ধমকের স্বরে বলল-
“হয়েছে তোদের ঢং? বুরাকের হাতে মরার ভয়ে তোরা ইচ্ছে করে শুয়ে পড়ে আর উঠিস নি। উঠ এখন, বাসটার পিছা করতে হবে।”
বুরাকের কানে কথাটা যেতেই বলল-
“বস, মারলে আমাকে মারুন। উমায়েরকে ছেড়ে দিন।”
“যার কারণে তুই আমার ভাইকে মারলি তাকে কি করে ছেড়ে দেই?”
“তোকে মেরে তারপর ওকে মারবো।”
খালিদ খান পকেট চেক করে দেখে রিভলবার নেই। বিরক্ত হলো, তারাহুরোয় রিভলবার নিয়ে আসে নি। হঠাৎ একটা কথা মনে আসতেই দ্রুত গাড়ির দিকে গেল। দরজা খুলে সিটের নিচ থেকে রড বের করলো। বুরাকের দিকে এগিয়ে এসে বলল-
“এই রড দিয়েই মেরেছিস না ওকে? এই রডই তোদের প্রাণ টেনে বের করবে।”
বলেই খালিদ খান সজোরে বুরাকের কপালে রড দিয়ে আঘাত করলো। বুরাক থমকে গেল। কান ঝিমঝিম করছে তার। চারপাশে অন্ধকার হয়ে আসছে। খালিদ খান রাগে এখনো গজগজ করছে। ঘুরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল-
“মরে গেছে বুরাক। তারাতাড়ি চল বাসটা খুঁজতে হবে। উমায়েরকে মারা হলেই আমার প্রতিশোধ পুরো হবে।”
বুরাকের ঠোঁট কাঁপছে। হাত বাড়িয়ে খালিদ খানকে কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। খালিদ খান এগিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে চলে গেল। গাড়ির দিকে বুরাক রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু সে শক্তি পাচ্ছে না উঠে যাওয়ার। হঠাৎ চারপাশে অন্ধকার হয়ে গেল।
চলবে…..