ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-১০

0
478

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ১০
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা

দুয়েক হাত দূর থেকে আরিশ বেশ জোরেই বললো, “এই বুশরা। তোমার সাথে কথা আছে আমার।”

কথাটা ফোনের ওপাশে থাকা রায়হানের কানে গেল মুহুর্তেই। পুরুষ কন্ঠের আকুলতাও যেন কিছুটা আঁচ পেল রায়হান। অন্যদের চোখে ছেলেমানুষী মনে হলেও একটু ভ্রু কোচকালো রায়হান। তবে ব্যাক্তিত্বশালী মানুষ হওয়ার কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।

বরং নিজে থেকেই বললো, “ঠিক আছে, বাসায় গিয়ে ফোন করো।”
“এই, না না, ফোন কাটবে না একদম”, অস্থিরভাবে বললো বুশরা, “যাস্ট একমিনিট লাইনে থাকো।”

এরপর আরিশের দিকে ফিরে সাবলীল কন্ঠ বললো, “সরি আরিশ। ইউ হ্যাভ টু ওয়েট। আমার হাজব্যান্ডের সাথে কথা বলছি। জরুরি না হলে কাল ক্লাসে কথা হবে। আর হ্যাঁ, দুদিনের পরিচয়ে হঠাৎ করে তুমি সম্বোধনে যাওয়াটা আমার পছন্দ না। আই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড।”

রায়হানকে খুব কম সময় ফোনে পায় বুশরা। সেই সময়টুকু অন্য কারো জন্য বিসর্জন দিতে একেবারেই নারাজ ও। স্বয়ং প্রেসিডেন্ট আসলেও বোধহয় বুশরা একই রকম টোনে বলবে “সরি স্যার, ইউ হ্যাভ টু ওয়েট।“
বুশরার সাবলীল কথা, জোর দিয়ে আমার হাজব্যান্ড বলা, বোল্ডনেস অনুভব করে পুলকিত হলো রায়হান। এই মেয়েটা তাকে কতটা গুরুত্ব দেয়!

তবে বুশরার কথা বলার ধরন আরিশের খুব একটা ভালো লাগলো না। এর চেয়ে কেউ দু’গালে কষে চড় মারলে বোধহয় কম অপমানিত লাগতো ওর। তবু চেহারার অভিব্যাক্তি লুকিয়ে খানিকটা জোর দিয়েই বললো করে বললো, “সরি, বুঝতে পারিনি। পরে কথা হবে তাহলে। বাই।”

আরিশ চলে গেল। ফোন কানে নিয়ে বুশরা বললো, “সরি গো। অপেক্ষা করালাম একটু।“

“ইটস ওকে”, শান্ত কন্ঠে বললো রায়হান, “ফ্রেন্ড?”

“ক্লাসমেট। বাঙ্গালী। কেমনজানি একটু গায়েপড়া স্বভাবের।“

“সুন্দরী ক্লাসমেটদের সামনে একটু আকটু গায়ে পড়া সব ছেলেরাই হয়।“
“জেলাস নাকি?”

“তা একটুখানি।“

“বাই দ্য ওয়ে, তুমি কি আমাকে সুন্দরী বললে? আর ওয়েট, সব ছেলের মধ্যে কি তুমিও পড়ো নাকি?”

“ওটা তো কথার কথা।“

“উম… অসুন্দরী বলছো তাহলে?”

“কখন বললাম?”

“এই তো। এখনই”

“পাগল নাকি? আমার ঘাড়ে একটাই মাথা।“

“মানে? আমি কি ডাইনিবুড়ি?”

“উফফ। এই তুমি ডাক্তার হয়েছো কেন? উকিল হলেই পারতে।“

“তাহলে কি আপনার দেখা পেতাম জনাব?”

এ কথায় দুজনেই হেসে ফেলে। হাসতে হাসতে রায়হান বলে, “নসিবে ছিলে যখন, দেখা তো হতোই। আচ্ছা শোনো, এবার যেতে হবে আমার যে।“

“আপনি কি আগের চেয়েও বেশি ব্যাস্ত হয়ে যাচ্ছেন রায়হান সাহেব?”, কথাটা মনে মনে উচ্চারণ করলো বুশরা। কিন্তু মুখে বললো, “ঠিক আছে। সাবধানে থেকো।“

সকালের নাস্তা এর মধ্যে হজম হয়ে গেছে বুশরার। বাসায় ফিরে রান্না করার মত এনার্জি নেই। অথচ খেতে মন চাচ্ছে ভাত, পুইশাক দিয়ে ডাল চচ্চড়ি, আর পাবদা মাছ ভাজা। কতদিন মায়ের হাতের রান্না খাওয়া হয়না। চোখের সামনে ভেসে উঠলো শিউলি বেগমের মততাময়ী মুখটা। মা বলতে তো ওই মানুষটাকেই বোঝে ও। জ্বরটা বাড়ছে। অগত্যা ক্যান্টিন থেকে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু তার আগে ফোন করল শিউলি বেগমকে।

কল রিসিভ হতেই আদুরে গলায় বললো, “আম্মা, ও আম্মা।“

গলার স্বর আর আহ্লাদ শুনে উদ্বেগে অস্থির হলেন পৌড়া রমনীটি, “জ্বর আসছে নাকি মা তোমার?

জোর করে ধরা গলায় বুশরা বললো, “কই না তো? তুমি ভালো আছো?”

“খুব বড়ো হয়ে গেছ না? মায়ের চোখ ফাঁকি দিবার চাও।”

“আমি বড় হতে চাইনা আম্মা। ছোট্টবেলায় ফিরে যেতে চাই। আর তখনও তোমার আদর, স্নেহ, মমতা চাই। আর জন্মে আমি তোমার নিজের মেয়ে হতে চাই।“

“পাগলী। তুই কি আমার নিজের মেয়ের চেয়ে কম? রুকু কিন্তু ভীষণ হিংসা করে তোকে। বলে এখন ওর ভালবাসা কমে গেছে।“

এই মেয়েটা তার বড় আদরের। নিজের ছেলেমেয়ে চোখের সামনে থাকলেও এই পরের মেয়েটার জন্য কেন যে এত মন পোড়ে। ইদানিং মনে হয় পেটের দুইটা ছেলেমেয়ের জন্যও বোধহয় এতটা চিন্তা হয়না। কি জানি, এই বাচ্চাটা একা একা বহুদূরে আছে দেখে হয়তোবা।

খেতে বসে আরিশকে দেখলো বুশরা। দুইটা টেবিল পরে বসেছে। গভীর মনযোগ দিয়ে খাচ্ছে। বুশরাকে দেখে দেখেছে কি না বোঝা যাচ্ছে না। বুশরা খাওয়ায় মনযোগ দিল। জিভে একদম টেস্ট নাই। জোর করে আর কতটুকু খাওয়া আগায়। তবু চেষ্টা করলো অনেক্ষণ।

হাল ছেড়ে দেবে এমন সময় খাওয়াদাওয়ার পাঠ চুকিয়ে সামনে এসে দাড়িয়েছে আরিশ।
“বসতে পারি?”

সামনে তাকিয়ে বুশরা বললো, “হ্যাঁ সিউর। কিছু বলতে চাচ্ছিলেন তখন।“

একটু কাচুমাচু করে আরিশ বললো, “কিভাবে যে বলি?”

একটু অবাক হলো বুশরা। কি এমন কথা বলবে ছেলেটা যে এমন ইতস্তত করছে, ভেবে পেলো না কিছুতেই।

সৌজন্যবোধ ধরে রেখে বললো, “আরে বলে ফেলুন।“

“আসলে প্রফেসর ঝ্যাং এর লেকচার বুঝতে পারছিনা কিছুতেই। উনার এক্সেন্টের সাথে নিজের কানকে এডজাস্ট করতে পারছিনা কিছুতেই। আগের দুইটা এসাইনমেন্টে ডাব্বা খেয়েছি। ক্যান ইউ হেল্প মি উইথ দ্য নেক্সট ওয়ান? আগামী পরশু ডেডলাইন।“

কেউ পড়াশুনার ব্যপারে সাহায্য চাইলে বুশরা কখনোই না করে না। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। “ঠিক আছে, কাল দুটা ক্লাসের মাঝে দুই ঘন্টার গ্যাপ আছে। ওই সময় দেখিয়ে দিব।“

“থ্যাঙ্ক ইউ বুশরা। আচ্ছা লাইব্রেরিতে তো বেশি কথা বলা যাবে না, বাইরে কোথাও বসি কাল?”

এক মুহুর্ত চিন্তা করে বুশরা বললো, “আচ্ছা। বাস্কেটবল কোর্টের পাশের সিড়িতে বসা যায়।”

আরিশ ভেবেছিল ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে আসেপাশের কোন ক্যাফেতে বসবে। ওই সময়টা অফিস আওয়ার হওয়ায় নিরিবিলি ই থাকে। তবে বুশরা সচেতনভাবেই সে অপশনের ধারেকাছেও গেলো না। আরিশও আপত্তি করলো না। একদিনে এটুকু প্রোগ্রেসই যথেষ্ট, সবুরে মেওয়া ফলে। এই বলে নিজেকে বুঝ দিলো ছেলেটা।

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here