ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-৩

0
430

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৩
Hasin Rehana

এক হাতের উপর মাথা রেখে চিত হয়ে শুয়ে আছে রায়হান। দুচোখে ঘুমের নাম নিশানা নেই একদম। রাত বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রায়হানের অস্থিরতা। পাশের বালিশটা ফাঁকা। নিকষ কালো অন্ধকার আর একাকীত্বে দম বন্ধ হয়ে আসতে চাচ্ছে ওর।

ঠিক কবে, কখন, কিভাবে বুশরা নামের মায়াবতী ওর ভাঙ্গাচোরা হৃদয়টাকে এভাবে আত্মসাৎ করলো সে প্রশ্নের উত্তর অজানা রায়হানের। শুধু এটুকু জানে, মাত্র এক দিনের ব্যাবধানে মনে হচ্ছে কতসত বছর দেখা হয়না ওদের। রাখা হয়না চোখে চোখ। বলা হয়না কথা। বিরহ কি তবে একেই বলে? কি অসহ্য তীব্রতা এই অনুভূতির।

অনেক্ষন এপাশ ওপাশ করে অবশেষে ফোনটা হাতে তুলে নিল রায়হান। ফোনে কথা বলতে চেয়েও ইতস্তত করলো, অন্যের ফোনে অপ্রয়োজনে কল দেওয়াটা ভালো দেখায় না। তাছাড়া এখন হয়ত ড্রাইভ করছে।

নিজের মনে বিড়বিড় করে রায়হান বলে, “বার বার এজন্য বলে দিয়েছিলাম যে পৌঁছে সিমকার্ড কিনে নিও। কে শোনে কার কথা। অবশ্য আমার সাথে তো কথা বলার ইচ্ছা নাই। আমিই একটা মানুষ অস্থির হচ্ছি। কারো কিছু যায়ই আসে না।“

ফোনটা কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে ইমেইলে চলে যায় রায়হান। রাগে গজগজ করতে করতে টাইপ করে,

বুশরা,
কারো কাছে যে আমার চার আনার ও দাম নেই, আজ বুঝলাম।
থ্যাঙ্ক ইউ।

ইতি,
দূরের মানুষ।

ইমেইলটা সেন্ড করার পরেই মনে হলো বড্ড ছেলেমানুষী হয়ে গেল। কি ভাববে মেয়েটা? আবার মনে মনে বলে, “ভাবলে ভাবুক। বউ ই তো।“

“বউ ই তো”, “বউ ই তো” কথাটা মাথার মধ্যে অনবরত নড়াচড়া করতে থাকে এরপর। বেয়াড়া মশার মত। কি এক উদ্ভট সমস্যা।

ঘুম আজ আসবে না সেটা বোঝা হয়ে গেছে এর মধ্যে। ধীরে সুস্থে বিছানা থেকে উঠে রিডিং লাইটটা জ্বালাল রায়হান। তারপর, মৃদু আলোয় হাতড়ে টেবিলে থাকা গল্পের বইয়ের স্তুপের উপর দিক থেকে একটা বই টেনে নিলো। তবে খোলার পরে বুঝলো এটা বই না, বরং ডায়েরি।

অন্যের ডায়েরি অনুমতি ছাড়া পড়া উচিত না হলেও গোটা গোটা হাতের লেখায় আটকে গেল বেপরোয়া চোখজোড়া। হাতের লেখাটা চেনা রায়হানের। তাই চাইলেও চোখ সরাতে পারলো না। এমনকি প্রথম পৃষ্ঠায় যাওয়ার কথাও মাথায় এলো না। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়তে শুরু করলো সামনে আসা লেখাটাই।

“মানুষটা উদ্ভট। উদ্ভট মানে আসলেই উদ্ভট। আর কি এটিটিউড। বাংলার পাঁচের মত সবসময় কি গম্ভীর মুখ করে থাকে। হাসি সুন্দর না হলে মানতাম। কিন্তু একদিন পিচ্চি একটা বাচ্চার সাথে কথা বলার সময় হাসছিল দেখলাম, এত সুন্দর হাসি পুরুষমানুষের হয় দেখিনি আগে। মাঝে মাঝে একটুখানি হাসলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হবে? থাক ভাল হইছে যে হাসে না। এমনিই এই মানুষের দিক থেকে সহজে চোখ ফেরানো যায় না। হাসলে না জানি……
ছি আমি কি লুচ্চা টাইপের কথাবার্তা লিখছি পরপুরুষকে নিয়ে। কারো হাতে পড়লে খুব লজ্জার ব্যাপার হবে। পৃষ্ঠাটা ছিড়ে ফেলা ”

এই পৃষ্টায় এটুকুনই লেখা। শেষ লাইনটা অসম্পুর্ন। হয়ত কোন কারনে লেখা বন্ধ করতে হয়েছিল অকস্মাৎ। আর তাই হয়ত ছিড়ে ফেলাও হয়নি। পরপুরুষ লেখা থাকলেও রায়হানের কেন জানি ওই যায়গায় নিজেকে ভাবতে ইচ্ছা করছে, হয়ত বিয়ের আগের লেখা।যদি তাই হয় তাহলে আগে থেকেই মেয়েটা…

ডায়েরিটা বালিশের পাশে রেখে চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। লাইট জ্বালিয়ে দাঁড়ালো ড্রেসিং টেবিলের সামনে। জোর করে হাসার চেষ্টা করলো। দেখলো নিজেকে, বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ঘুরে ফিরে। সিদ্ধান্তে যেতে পারলো না। তারপর নিজেকেই নিজে ধমকালো, “হচ্ছে টা কি রায়হান? এখন এসবের বয়স আছে? নাকি সময়?”

ব্যার্থ মনোরথ হয়ে লাইট অফ করে বিছানায় গেল রায়হান। তার আগে ডায়েরিটা ড্রয়ারে রেখে দিলো সযত্নে। একবারে পড়ে ফেললেই তো শেষ হয়ে যাবে। একটু একটু করেই নাহয় হোক এই মধুর রহস্য উন্মোচন। দুই বছর সময় আছে হাতে। রিডিং লাইট অফ করে চোখ বন্ধ করলো মানুষটা, অন্তত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখার লোভেই।

একটা দোতলা বাসার চিলেকোঠায় থাকে তাকে তানিয়া। মোটামুটি সাইজের ছিমছাম একটা রুম আর এটাচড ওয়াশরুম। আলাদা কিচেন নেই তবে রুমের একপাশে সাজানো গোছানো কুকিং জোন কাজ চলার জন্য যথেষ্ট। কম বাজেটের মধ্যে একজন মানুষ থাকার জন্য খারাপ না। এক ঝলক দেখেই বুশরার মনে হলো এই বিশাল শহরে এমন একটা মাথা গোঁজার ছোট্ট ঠাই ওর ও দরকার।

বুশরার চেহারায় প্রশংসাসূচক অভিব্যাক্তি দেখে তানিয়া নিজেই বললো,

“আমার বাসাটা ছোট হলেও ছিমছাম। আমার সাথেই থেকে যেতে বলতাম তোমাকে। কিন্তু এদেশে একোমোডেশনের যা নিয়মকানুন তাতে এইটুকুন যায়গায় দুজন ভাড়াটিয়া এলাউ করবেনা। আজকের দিনটা রেস্ট নাও। কাল থেকে আমরা বাসা খুজবো। কেমন?”

মাথা নেড়ে সায় জানালো বুশরা।

“এখন যাও একটা হট শাওয়ার নিয়ে আসো। ভালো লাগবে।”

লাগেজ থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে এগুলো বুশরা। আর তানিয়া লেগে পড়লো খাবারদাবার গরম করার কাজে। কুকিং জোনের পাশেই একটা ফোল্ডিং টেবিল আর দুটো চেয়ার রাখা। অল্প যায়গায় ম্যানেজ করার জন্য এই ধরনের আসবাবপত্র খুব জনপ্রিয়।

বুশরা গোসল করে বের হয়ে এসে দেখলো খাবার রেডি করে বসে আছে তানিয়াপু। ওভেন বেকড পাস্তা, সাথে টোস্টেড ব্রেড। খেতে বসে চিন্তা করলো ঘরে ঢুকে তো চেয়ারটেবিল চোখে পড়েনি৷ খাওয়া শেষে যখন চোখের সামনে ওগুলো আবার ভ্যানিস হয়ে গেলো তখন বুঝলো এর রহস্য।

বিছানা গুছিয়ে দিয়ে বুশরাকে শুয়ে পড়তে বলল তানিয়া। রাত খুব একটা হয়নি যদিও, কিন্তু জেটল্যাগের কারনে ঘুম আসছে বুশরার। তবু ঢুলুঢুলু চোখে ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াইফাইয়ের পাসওয়ার্ড চাইলো। কানেকটেড হতেই চলে গেল মেইলের ইনবক্সে। লাল রঙের জ্বলজ্বলে নোটিফিকেশন বলছে ক্লান্তি ঠেলে ফোন হাতে নেওয়া সার্থক।

কিন্তু মেইল ওপেন করে মিশ্র অনুভূতি হলো বুশরার। মনে মনে ভাবলো, এই মানুষটা একটু বড় চিঠি লিখতে পারে না? আর কি লিখেছে এসব? হৃদয়পোড়া গন্ধ তো হাজার মাইল দূর থেকে পাওয়া যাচ্ছে। চিরাচরিত চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে কিছুতেই যায়না এই ছেলেমানুষী। আনমনে মেয়েটার ঠোটের কোনে হানা দিল এক চিলতে হাসি। লিখতে বসল ফিরতি চিঠি।

প্রিয় দুরের মানুষ,
সকলের প্রিয় চেয়ারম্যানসাহেব বউয়ের কাছে পাত্তা না পেয়ে কি ফুলে বোম্ব হচ্ছে? সামনাসামনি সাহেবের এই নতুন রূপটাকে দেখতে পেলে বেশ হতো কিন্তু। একটা ছবি দিয়ো তো, দেখবো। শুভরাত্রি।
ইতি,
কাছের মানুষ।

মেইলটা পাঠিয়ে আনমনে হাসলো বুশরা। শুভ সকাল লিখলেই হতো। ঘুম থেকে উঠে রায়হান যখন মেইলটা পড়বে তখন তো আর রাত থাকবে না। দূরত্বের সাথে সাথে সময়েরও কি বিরক্তিকর বিভ্রাট। কিভাবে কাটবে দুটা বছর!

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

সবাই কি আজ কমেন্ট করতে ভুলে গেছেন? পর্ব কি খুব বাজে হয়েছে? আমার লেখা বর্নিল সাদাকালো গল্পটা ১২৩ পৃষ্ঠার একটা জীবনমুখী গল্প। ফেসবুকে দেওয়া “সাদাকালো” গল্পটাই একটু ঘষে মেজে বইটইতে দিয়েছিলাম। অনেকেই পড়েছেন, অনেকেই পড়েননি। যারা পড়েছেন, বেশ পছন্দ করেছিলন। বইটা কিনতে বলবোনা। তবে আমি খুব খুশি হবো যদি আমার বইটই প্রোফাইলটার ফলোয়ার লিস্টে এড হন। প্রিয় পাঠকদের কাছে এইটুকু দাবী তো করতেই পারি, কি বলেন? 💙💙💙
ইবুক লিংকঃ https://link.boitoi.com.bd/gRyX

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here