ভালবাসা বাকি আছে পর্ব-৭

0
480

#ভালবাসা_বাকি_আছে – ৭
Hasin Rehana – হাসিন রেহেনা
ডাক্তাররা আগেই বলে দিয়েছিলেন কোন আশা নেই আর। তবু খুব কাছের মানুষরা প্রাণপন দোয়া করছিল যদি কোন মিরাকল হয়। আলী হায়দার সাহেবের ছেলে পৌঁছেই ছুটে গেছিল আইসিইউতে। অনেকটা সময় বাবার নিথর হাতটা ধরে বসে ছিল স্থানুর মত। নাহ জীবন তো নাটক সিনেমা না, তাই কোন মিরাকলও হয়নি। সকাল ছয়টা নাগাদ খুলে নেওয়া হলো লাইফ সাপোর্ট। সবসময় শেতশুভ্র পাঞ্জাবি পায়জামা পরা মানুষটার শেষ আবরণ হলো কাফনের শুভ্রতা।

বাদ যোহর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আলী হায়দার সাহেবের যানাজা অনুষ্ঠিত হয় তাঁর শহরে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর থেকে এতগুলো বছর অপ্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন তিনি নিজের এলাকায়, এমনকি বিরোধীদলের শাসনামলেও তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। প্রিয় জননেতাকে শেষ দেখা দেখতে জনসাধারনের ঢল নেমেছিল। পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় এই ডাকসাইটে সংসদ সদস্যকে।

আর ওই বিকেলেই বসলো পার্টির হর্তাকর্তাদের আনফিশিয়াল বৈঠক। বিষয়বস্তু অবশ্য অনুমেয়, কে পাবে এই শূন্য আসনের মনোনয়ন। আলী হায়দার সাহেব এত বছর একচাটিয়াভাবে এই আসনে রাজত্ব করেছেন, দলকে রিপ্রেজেন্ট করেছেন। তাই এই এলাকায় দলের মধ্যে অন্য কোন স্ট্রং অলটারনেটিভ প্রার্থী তৈরি হয়নি সেভাবে। আর এই সুযোগটা বিরোধীদল লুফে নেবে আগামী বিশেষ নির্বাচনে। তাই সেটা প্রতিহত করতে একজন সুযোগ্য প্রার্থী প্রয়োজন। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রচার প্রচারণা।

কথায় আছে, নানা মুনির নানা মত। এখানেও তাই। নানা প্রস্তাবনা, কথা চালাচালি, বাকবিতন্ডা চলতে লাগলো দীর্ঘ সময় ধরে। কিন্তু কিছুতেই সহমত হতে পারছেন না তারা। একজন কারো নাম প্রস্তাব করলে অন্যরা সেটাতে বাগড়া দেন। আবার অন্য কেউ যাদের নাম প্রস্তাব করেন সেগুলোও বাকিদের পছন্দ হয়না। হায়দার সাহেবের অপূরণীয় শুন্যস্থান পুরনের যোগ্য মানুষ পাওয়া যে খুব কঠিন হবে তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল গতকালই, তবে সেটা যে এ কঠিন হবে কে জানতো।

পার্টির একজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব, হাসান তালুকদার, যাকে কিনা সকলে প্রয়াত সাংসদের খুব কাছের মানুষ বলে জানে তিনি বললেন,

“একজন আছে, যে কিনা তরুণ হলেও সৎ আর যোগ্য।“

সবাই আগ্রহী চোখে তাকালেন তাঁর দিকে।

“কার কথা বলছেন?”

“রায়হান শেখ। বয়স কম হলেও ছেলেটা স্ট্রং লিডারশিপের কারনে এলাকায় জনপ্রিয়। “

“কি বলেন? ওই চ্যেয়ারম্যান ছেলেটা? মাথা ঠিক আছে আপনার? ওইটুকুন ছেলে হবে এমপি?”, তীব্র অসোন্তষ নিয়ে বললেন একজন।

আরেকজন বললেন, “তাই তো। এলাকায় জনপ্রিয় বুঝলাম, কিন্তু এলাকা বলতে তো ওই একটা ইউনিয়ন পরিষদ। আমরা সংসদ সদস্য মনোনয়নের মিটিং করছি, ভুলে গেলেন নাকি?”

“ছেলেটাকে আলী সাহেব নিজে গ্রুম করেছিলেন কয়েক বছর পর যাতে ঐ আসনে তার রিপ্লেসমেন্ট হতে পারে। সেটা নাহয় কয়েক বছর আগে হলো। আর নির্বাচনে পাবলিক সেন্টিমেন্ট গুরুত্ব নিশ্চয় অস্বীকার করবেন না আপনারা। ছেলেটা অনেকটাই এমপি সাহেবের সাহেবের প্রতিবিম্ব। এলাকার জনগণের কাছে ছেলেটার গ্রহনযোগ্যতা আছে আলী সাহেবের শিষ্য হিসেবে। খুব সহজেই পাবলিক সেন্টিমেন্ট ক্যাচ করতে পারবে সে।“

“তারপরেও… তার চেয়ে আরো বেশি যোগ্য আর অভিজ্ঞতাসম্পন্ন প্রার্থী আছে আমাদের হাতে। আর পাবলিক সেন্টিমেন্ট কাজে লাগাতে চাইলে উনার ছেলেকেই তো নমিনেট করা যায়। অকালপ্রয়াত এমপির ছেলের ভোটের অভাব হবে না।”

“উনার ছেলে বাবার আসনে ভোটে দাড়ালে পাবলিক সেন্টিমেন্ট পাবে, কিন্তু তার না আছে অভিজ্ঞতা, আর না আছে ইচ্ছা। আর আপনারা অনেকেই বোধহয় রায়হান ছেলেটার ব্যাকগ্রাউন্ড জানেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল ডিপার্টমেন্ট থেকে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েও এলাকার মানুষের জন্য কাজ করবে বলে রাজনীতিতে আসছে। নিজের এলাকার চেহারাই বদলে দিয়েছে যাস্ট পাঁচ বছরে। কিছু তো আছে ছেলেটার মধ্যে। আমরা প্রবীনরা আর কতদিন লীড দিবো? নবীনদের সুযোগ দেওয়া উচিত মনেহয়।“

অনেক আলোচনা সমালোচনার পরে তারা একটা উপসংহারে আসলেন যে এই বিশেষ নির্বাচনে রায়হান ছেলেটাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। দেখা যাক সে কতদূর কি করতে পারে। বিফল হলে দুবছর পর অনুষ্টীতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অন্য কোন প্রার্থীকে যোগ্য করর গড়ে তোলা হবে।

মিটিং শেষে রায়হানকে ফোন করলেন হাসান তালুকদার।

“আসসালামুআলাইকুম চাচা।”

“ওয়ালাইকুমুস সালাম। তুমি কি ব্যাস্ত?”

“না চাচা। কোন দরকার?”

“কথা ছিল একটু। আচ্ছা তোমার আগামী নির্বাচনের নমিনেশনের আবেদন জমা দিয়েছো?”

“না, এখনো দিতে পারিনি চাচা। কি থেকে কি হয়ে গেল, আমি এখনো স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারছিনা।”

“যে চলে গেছে তার জন্য থমকে গেলে তো হবে না বাবা। তার স্বপ্নপূরনের পথে যোদ্ধা হতে হবে।”

“জি চাচা। দুইদিন টাইম এক্সটেনশন করতে পারে। আজ গিয়ে কাগজপত্র গুছাবো।”

“তুমি চেয়ারম্যান নির্বাচনের নমিনেশনের আবেদন করোনা।”

“কেন চাচা?”

“পার্টি থেকে তোমাকে নমিনেশন দিবে না।”

এমনিতেই মানষিকভাবে বিপর্যস্ত রায়হান। তার মধ্যে তালুকদার সাহবের কথার আগাগোড়া কিছুই বুঝলো না। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,

“আমি কি কোন ভুল করেছি চাচা?”

ফোনের এপাশে হাসান সাহেব গুছিয়ে নিচ্ছেন কিভাবে কথাটা বলবেন। আর ওপাশে উৎকন্ঠার শীতল স্পর্শ ছুঁয়ে যাচ্ছে রায়হানকে।

“কিছুদিনের মধ্যে আলী সাহেবের শূন্য আসনে নির্বাচনের ঘোষণা আসবে। তোমাকে সংসদ সদস্য পদে নমিনেট করা হবে।”

বিষ্ময়ের আতিশয্যে কথা বলতেও যেন ভুলে গেল রায়হান। প্রবীণ মানুষটাও ওকে সময় দিল সামলে নেওয়ার।

“আপনাদের বোধহয় ভুল হচ্ছে কোথাও। আমি হায়দার চাচার রিপ্লেসমেন্ট হতে পারবো না কখনোই। আমাকে নিয়ে দলের ভরাডুবি হবে কনফার্ম।”

“আগেই নেগেটিভ ভেবো না ছেলে। আজ হোক কাল হোক, হায়দার তোমাকে ওর প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখতে চেয়েছে, সেটা তুমিও ভালো জানো।”

“কিন্তু সে সময় আসেনি। আমার ওই যোগ্যতা নেই।”

“যোগ্যতা জন্ম থেকে থাকে না কারো, অর্জন করে নিতে হয় সু্যোগ পেলে।”

রায়হান কিছু বলছে না দেখে শেষ তীরটা ছুড়লেন তালুকদার সাহেব।

“এইযে তুমি এলাকার জন্য ডেডিকেটেড ভাবে কাজ করছো গত পাঁচ বছর। সেখানে কি হায়দার ভাইয়ের ছত্রছায়ার কোন অবদান নাই বলছো?”

“না না চাচা। ভুল বুঝবেন না আমাকে প্লিজ।”

“কালকে কোন করাপ্টেড লোক এমপি হলে আগের মত এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যেতে পারবে তো? এখনকার মত?”

এভাবে ভাবেনি রায়হান। আসলে কোনভাবেই ভাবে নি। আলী হায়দার নামক মানুষটার মৃত্যু থেকেই এখনো বের হতে পারেনি ও। তবে হাসান তালুকদারের কথা শুনে মনে হচ্ছে ভাবতে হবে। হায়দার চাচার আদর্শ ধরে রাখার জন্যই ভাবতে হবে।

“চাচা আমাকে একটু সময় দেন ভাবার।”

এবার আর জোর করলেন না তালুকদার সাহেব। জোর জবরদস্তি করে তো নেতৃত্ব আসেনা। ওটা আসতে হয় মন থেকে, স্বতস্ফুর্তভাবে। ফোন রাখার পর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন তালুকদার সাহেব। তার ঢৃড় বিশ্বাস রায়হান সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিবে।

চলবে…

#ডাক্তার_মিস – সিকুয়েল
#ভালবাসা_বাকি

সিডিউল অনুসারে গল্প আসার কথা ছিল আগামীকাল। তবে আজ একটা বিশেষ দিন। ছোট্ট এই পরিবারটা দুই হাজারের মাইলফলক ছুঁয়েছে আজ, সেই খুশি ভাগ করে নিতেই একদিন আগে গল্প নিয়ে হাজির হলাম। আর আজকের পর্বটাও যে বিশেষ সেটা নিশ্চয় বুঝে গেছেন। এই পর্বের গল্প এটুকুই। চাইলেও টেনে লম্বা করা সম্ভব না। আর অন্য দৃশ্যপট এর মাঝে দেখাতে চাইনি আমি। তাই প্লিজ পর্ব ছোট কেন এমন প্রশ্ন করবেননা। সবাই আপনাদের বইপোকা বন্ধুদের এই পেইজে ইনভাইট করুন খুশিমনে। ধন্যবাদ 💙💙

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here