ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-১১

0
6601

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
# পর্ব -১১

★নূর বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে।তখন লাইব্রেরী থেকে যেয়ে ক্লাস শেষ করে এসে মাত্রই বসেছে।আদিত্যকে আজও প্রিন্সিপাল স্যার ডেকেছে কোনো কাজে।আসতে একটু সময় লাগবে।
নূরের আজকাল এখানে আসতে অনেক ভালো লাগে। তাইতো ক্লাস শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এখানে চলে আসে।
হঠাৎ কিছু একটার শব্দে নূরের ভাবনায় ছেদ পরে। নূর মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করে শব্দটা কিসের? নাহ তেমন কিছু দেখতে পায় না।নূরের এবার একটু ভয় লাগতে শুরু করে। কোন ভূত টুত নেই তো?তারপর আবার নিজেই নিজেকে আস্বস্ত করে বলে, আরে না না ভূতরা কি আর দিনের বেলায় আসে নাকি? তুই শুধু শুধু ভয় পাচ্ছিস নূর।

হঠাৎ নূর সামনে একটা গাছের আড়ালে সাদা সাদা কি জেনো দেখতে পেল। নূর ভয় পেলেও মনে একটু সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলো দেখার জন্য কি আছে ওখানে।
নূর গাছটার কাছে যেয়ে দেখলো, একটা সাদা ধবধবে ছোট্ট খরগোশ ছানা। মূহুর্তেই নূরের সব ভয় চলে গেলো। চোখে মুখে বিস্ময় আর খুশি চলে এলো। নূর নিচু হয়ে বসে ছানাটাকে হাতে তুলে নিল।ইশশ কি সুন্দর আর মোলায়েম দেখতে। নিশ্চয় মা বাবার কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছে। নূর ছানাটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ওর সাথে একা একাই কথা বলছে।

আদিত্য তাড়াতাড়ি করে আসছে নূরের কাছে। আজও লেট হয়ে গেছে। ব্রেঞ্চের কাছে আসতেই আদিত্য চমকে যায়। নূর সেখানে নেই। আদিত্য ভাবছে নূর কি তাহলে চলে গেছে? কিন্তু তাসিরতো আমাকে কিছু বললো না।
হঠাৎ আদিত্যের নজর যায় সামনের গাছটার পেছনে। ওখান থেকে নূরের একাসাইড দেখা যাচ্ছে। একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে আদিত্য। তারমানে নূর যায় নি।কিন্তু ও ওখানে কি করছে? আদিত্য ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে যায় নূরের দিকে। নূরের পিছনে যেয়ে দাড়াতেই দেখে ও কার সাথে যেন কথা বলছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বলে।
…কার সাথে কথা বলছো?

হঠাৎ আদিত্যের কথায় নূর চমকে পিছনে তাকায়।আদিত্যকে দেখে নূর উঠে দাঁড়িয়ে অতি উৎসাহ নিয়ে বলে।
…আরে আপনি এসেছেন? এই দেখুন আমি কি পেয়েছি? খরগোশ ছানাটাকে উপরে তুলে দেখিয়ে বললো নূর।

আদিত্য একটু ছিটকে সরে এলো। আসলে ওর পেটস একদম পছন্দ না।

নূর ছানাটাকে আদর করতে করতে আবার বললো।
…কত্ত কিউট না ছানাটা?

আদিত্য জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…হ্যা হ্যা অনেক কিউট। তা কোথায় পেলে ওকে।

…আরে এখানেই তো ছিল। বেচারা, মনে হয় ওর মা বাবার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে।

আদিত্য বলে উঠলো।
.…যাই হোক এখন ছেড়ে দেও ওকে।এদের শরীরে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। তোমার ইনফেকশন হতে পারে।

নূর অবাক চোখে তাকিয়ে বললো।
…কি বলছেন আপনি? এতো ছোট বাচ্চাকে এভাবে ছেড়ে দিলে,যখন তখন শেয়াল কুকুর ওকে খেয়ে ফেলবে। না না ওকে একদম একা ছাড়া যাবে না।

আদিত্য কপাল কুঁচকে বললো।
…তো তুমি কি এখন এটাকে নিজের সাথে নিয়ে যাবে নাকি?

নূর খুশী হয়ে বললো।
…হ্যা দরকার হলে তাই করবো। এমনিতেও ওকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কত্ত কিউট একটা
ছানা।

আদিত্যের এখন বিরক্ত লাগছে। এতো কিউট কিউট করার কি আছে? একটা ছানাই তো,তাকে আবার এতো আদর করার কি আছে?
নিজের ভাবনার উপর নিজেই অবাক আদিত্য। ওর কি এখন এই ছানাটার ওপরও হিংসে হচ্ছে? লাইক সিরিয়াসলি?

হঠাৎ নূরের খুশি মুখটা চুপসে গেলো। ওর বাস্তবতার কথা মনে পরে গেলো। নূরের ছোট মা কখনও এই ছানাকে বাসায় রাখতে দিবে না।ভাবতেই নূরের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এখন কি করবে ও? আর এই ছানাটারই বা কি হবে?

এসব ভাবতে ভাবতেই নূর মুখটা ছোট করে ছানাটাকে নিয়ে ব্রেঞ্চের এসে বসলো।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকালো নূরের দিকে। এইমাত্রই তো এতো খুশী ছিল। হঠাৎ কি হয়ে গেলো মেয়েটার?
ভাবতে ভাবতে আদিত্যও নূরের পাশে যেয়ে বসে, নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…কি হয়েছে? মন খারাপ করলে কেন?

নূর কি বলবে বুঝতে পারছে না। সত্যিটা তো আর উনাকে বলা যাবে না। নূর অসহায় ভাবে বললো।
…আসলে আমার ফ্যামিলিতে এসব কেউ পছন্দ করে না।তাই ওকেও রাখতে দিবে না। এখন ওর কি হবে?

নূরের এমন মন খারাপ হওয়া দেখে আদিত্যের একটুও ভালো লাগে না।একটু আগেই কতো খুশি মেয়েটা।আর এখন মন খারাপ করে আছে।আদিত্য নূরকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললো।
…আরে মন খারাপ করোনা। আমরা অন্য কোন উপায় বের করবো।তুমি চিন্তা করোনা।

নূর কিছু একটা ভেবে ফট করে বলে উঠলো।
…আপনি ওকে রাখবেন প্লিজ?

আদিত্য অবাক হয়ে নূরের দিকে বড়ো বড়ো করে চেয়ে বললো।
…আমিইই?

…হ্যা আপনি। আমি রাখতে পারবো না। কিন্তু আপনি তো রাখতে পারবেন তাই না?আপনার কি কোনো সমস্যা হবে ওকে রাখলে? প্লিজ রাখুন না?

আদিত্য পরেছে বিপাকে।ও কি বলবে এখন নিজেই বুঝতে পারছে না।এসব পেটস ওর কাছে ইরিটেটিং লাগে। কিন্তু এইমূহুর্তে না বললেও আবার নূরের মনটা খারাপ হয়ে যাবে।

নূর অধীর আগ্রহে চেয়ে আছে আদিত্যের জবাবের আশায়। নূরের এমন চাহনি দেখে আদিত্যের না করার সাহস হয় না।ও রাজি হয়ে যায়।
…ঠিক আছে। আমার কাছেই রাখবো

নূর অনেক খুশী হয়ে যায়। একরাশ হাসি নিয়ে আদিত্যকে বলে।
…ধ্যাংক ইউ,ধ্যাংক ইউ সোওওও মাচ। আপনি সত্যি অনেক ভালো।

নূরের এমন খুশি দেখে আদিত্যের মনপ্রান জুড়িয়ে যায়। ওর মনে হচ্ছে এই মেয়েটার খুশির জন্য ও নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারবে।
নূরের কথায় আদিত্য ভাবনা থেকে বের হয়।

…তাহলে ও এখন থেকে আপনার কাছেই থাকবে। আপনি ওর একটু দেখাশোনা করেন। মাঝে মাঝে আমাকে একটু ওর ছবি তুলে দেখায়েন তাহলেই হবে।

আদিত্য ভাবছে কি দিন এসে গেলো।এখন আমাকে একটা খরগোশ ছানার দেখাশোনা করতে হবে। বাচ্ এটাই বাদ ছিল। আদিত্যের ভাবনার মাঝে নূর আবারো বলে উঠলো।
…তাহলে নিন, ওকে ধরুন।

আদিত্য হ্যা তো বলে দিয়েছে। এখন এটাকে ধরবে কি ভাবে।কিছু একটা ভেবে আদিত্য বললো।
….এক মিনিট দাঁড়াও।
তারপর পকেটে থেকে একটা টিস্যু বের করে সেটা দিয়ে আদিত্য ছানাটাকে ধরে কোনরকমে হাতের ওপর নিলো।
তারপর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…এইযে নিলাম। এখন খুশিতো?এখন ফটাফট তোমার কাজটা করে ফেলো।

নূর চুমু দিয়ে দেয়। আজকের চুমুটা ও খুশি হয়ে দেয়। আদিত্য সেটা বুঝতে পেরে নিজেও খুশি হয়ে যায়।
রোজকার মতোই নূর চুমু দিয়েই চলে যায়।

আদিত্য ওখান থেকে বেড়িয়ে আসতেই তাসির আর আবিরের সামনে পরে।আদিত্যের হাতে খরগোশ ছানা দেখে ওরা দুজনই চরম অবাক। আবির ভ্রু কুচকে আদিত্যকে বললো।
…ভাই তুই এটা কোথায় পেলি?আর তুইতো এসব পছন্দই করিস না।এমনকি আমাদেরও কখনো পেটস আনতে দিস নি।আর আজ নিজেই নিয়ে ঘুরছিস?দিস ইস নট ফেয়ার হাঁহ।
আদিত্য বিরক্ত হয়ে বললো।
…এই তুই থামবি?এতো কথা কিভাবে বলতে পারিস তুই?
তাসির বলে উঠলো।
…ওতো ঠিকই বলেছে আদি।আর তুই এটা কোথায় পেলি?
আদিত্য একটু ঘাড় এদিক ওদিক ঘুরিয়ে গলা খাঁকারি দিয়ে আমতা আমতা করে ওদের সবটা বললো।
সবকথা শুনে আবির আর তাসির কতক্ষণ একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। তারপর হঠাৎ দুজন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।
আদিত্য ধমক দিয়ে বললো।
…সাট আপ।এখানে এতটাই হাসির কি হলো?

আবির কোনরকমে হাসি থামিয়ে তাসিরকে বললো।
…ইয়ার আমার না একটা কবিতা মনে পরেছে, শুনবি।

তাসিরও দুষ্টু হেসে বললো।
..জ্বি জ্বি অবশ্যই বলুন বলুন।

“জরিনা তোর প্রেমে আমার একি হলো হাল,
কখনো মালি,কখনো টিচার, কখনো হলাম রাখাল।”

তাসির নিজের ডান হাত মুখের সামনে নিয়ে বললো।
…ওয়াহ্ ওয়াহ্ ওয়াহ্…. একদম বাথরুম লেভেলের। আমার পক্ষ থেকে তোর জন্য একটা বদনা এওয়ার্ড।

…শুকরিয়া দোস্ত। একমাত্র তুই বুঝলি আমার ট্যালেন্ট।🤧

এদের কান্ড দেখে আদিত্য বিরক্তির চরম পর্যায়ে। ও ভেবে পায় না এরা এতো ড্রামা কিভাবে করতে পারে। আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…তোরা কি আজ বাসায় যেতে চাস? নাকি হসপিটালে?

আদিত্যের গম্ভীর কণ্ঠের আলটিমেটাম শুনে, ওরা দুজন শুরশুর করে চলে যায়।

——————————-

বিকাল ৫ টা
নূর খাটে বসে একটু বই নিয়ে দেখছিল। হঠাৎ এমন সময় রবি কোথা হনহন করে এসে নূরের পাশে খাটে বসে পরলো।নূর চেয়ে দেখলো রবি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে। চোখে মুখে কেমন রাগ ফুটে উঠেছে। নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কি হয়েছে ভাই? এমন গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেন?

রবি বললো।
…কারণ আমি রেগে আছি। ওর সাহস কি করে হলো?

…কার সাহস কি করে হলো?কার কথা বলছিস তুই?

…কার কথা আবার,ওই নিনার কথা বলছি।

…কেন? ও আবার কি করলো? ও না তোর ফ্রেন্ড?

…ফ্রেন্ড না। বলো গার্লফ্রেন্ড। আর ও কি করেছে জানো?আমি মানা করার পরেও ওই দিপুর সাথে খেলেছে। আবার ওর দেওয়া চকলেটও খেয়েছে।

…তাতে কি হয়েছে?একসাথে পড়াশোনা করলে সবার সাথেই মিশে থাকতে হয়।এতে এতো রাগ করার কি আছে?

নূরের কথা শুনে রবি নূরের দিকে এমন ভাবে তাকালো,যেন নূর বিরাট একটা ভুল কথা বলে ফেলেছে। যেন এমন কথা নূরের কাছ থেকে একদমই আশা করেনি সে।রবি অবাক হয়ে নূরকে বললো।
…কি বলছ এসব আপু?ও সবার সাথে কেন মিশবে? আমার গার্লফ্রেন্ড শুধু আমার সাথে মিশবে। হ্যা চাইলে মেয়েদের সাথে মিশতে পারে, কিন্তু ছেলেদের সাথে কোনো মিশবে?এটা আমি কখনোই মানব না।

নূর রবির কথা কিছুই বুঝলো না।ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…মানে?কি বলছিস তুই? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।

…উফফ আপু তুমিনা আসলেই একটা বোকা।কিছুই বোঝনা। একটা ছেলে যখন একটা মেয়েকে পছন্দ করে। তখন সেই ছেলেটা কখনোই ওই মেয়টার অন্য কোন ছেলের সাথে মেলামেশা পছন্দ করে না।

নূর একটু কৌতুহল নিয়ে বললো।
…সত্যিই??

রবিও একটু ভাব নিয়ে বললো।
..অবশ্যই।আর এটা শুধু ছেলেদের ক্ষেত্রে না, মেয়েদের ক্ষেত্রেও হয়।এটাকে বলে জেলাসি,হিংসা, রাগ,একদম জ্বলে পুড়ে যাওয়া অবস্থা।

নূর খুব মনযোগ দিয়ে রবির কথা শুনছে। মনে হচ্ছে রবি কোন বিজ্ঞ জ্ঞানী ব্যক্তি। আর নূর তার শীর্ষ। যে তার গুরুর কথা একদম মন লাগিয়ে শুনছে।

কিছুক্ষণ পর রবি চলে গেলো। নূর বসে বসে ভাবছে, আজ ভার্সিটিতে আদিত্যও তো এমন রেগে গিয়েছিল। তাহলে কি উনিও আমাকে ওই ছেলেটার সাথে দেখে রেগে গিয়েছিল। তার মানে কি উনিও আমাকে..?? না না কি ভাবছি আমি এসব? উনি কিভাবে আমাকে পছন্দ করতে পারে? কিন্তু রবি যে বললো…?? ধূরর আমি একটু বেশিই ভাবছি।এই রবিটাও না আমার মাথায় কিসব উল্টো পাল্টা জিনিস ঢুকিয়ে দিয়ে গেল।

রাত ৯ টা
আদিত্য খরগোশ ছানার জন্য একটা বাস্কেট নিয়ে এসেছে।বাস্কেটের ভেতর ছোট্ট গদি পেরে ছানার জন্য সুন্দর বিছানা বানিয়ে দিয়েছে। আদিত্য কোন রিস্ক নিতে চায়না। তাই বিকালেই পশু ডাক্তারের কাছে যেয়ে ছানাকে টিকা দিয়ে নিয়ে এসেছে । বাসায় এসে আগে ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করিয়েছে ছানাকে। তারপর খাবার খাইয়ে গদি বিছানো বাস্কেটে শুইয়ে দিয়েছে। আদিত্য আজ পর্যন্ত এতো এফার্ট ওর বড়ো কোনো বিজনেস ডিলেও করেনি।আদিত্য ছানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…তুই কতো বড়ো ভি আই পি পারসন জানিস?সয়ং সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য তোর সেবা করছে। আর কি লাগে তোর?তারপর মুচকি হেসে শুয়ে পরে। রোজকার মতো নূরের চেহারা দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পরে।

নূর বিছানায় শুয়ে শুয়ে রবির বলা কথাগুলো ভাবছে।উপরে উপরে যতই না না করুক। মনে মনে কোথাও না কোথাও এটা ভেবে খুশি লাগছে যে,আদিত্য হয়তো ওকে পছন্দ করে।

——————————-

সকাল বেলা নূর সব কাজ শেষ করে ভার্সিটির জন্য রেডি হচ্ছে।
আজ হঠাৎ নূরের একটু সাজতে ইচ্ছে করে। তানি নূরকে সাজগোজের অনেক জিনিস মাঝে মধ্যেই কিনে দেয়। নূর মানা করলেও শোনেনা।জোর করেই কিনে দেয়। কিন্তু নূর ওগুলো কখনোই ব্যবহার করেনি। আসলে তেমন কোন সুযোগই হয় নি।তবে আজ কেন জেনো একটু সাজতে ইচ্ছে করছে ওর।
নূর মুখে একটু স্নো দেয়। তারপর চোখে একটু কাজল দেয়। ঠোটে হালকা পিং কালারের লিপস্টিক দেয়।ব্যাচ্ এটুকুতেই যেন অসম্ভব সুন্দর লাগছে ওকে।নূর আয়নায় নিজের চেহারা দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে যায়। কেন লজ্জা পায় তা ও নিজেই জানে না।

ভার্সিটিতে এসে নূর দেখে তানি একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। নূর ওর দিকে এগিয়ে যায়। তানির কাছে এসে নূর তানিকে বলে।
…কখন এসেছিস?

…এইতো এক….
তানি আর কিছু বলতে পারে না। নূরের দিকে তাকিয়ে ও হা হয়ে যায়।
নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে কথা বলছিস না কেন? এমন হা করে আছিস কেন?

তানি বিস্ময় নিয়ে বললো।
…আফা আপনে কেডা?আফনারে তো চিনবার পারলাম না। আমগো নূর কই গেলো গা?

নূর একটু বিরক্ত হয়ে বললো।
….এই কি বলছিস এসব?পাগল হয়ে গেছিস?
তানি দুষ্টু হেসে চোখ টিপ দিয়ে বললো।
…জানেমন,পাগল আমি না।পাগল তো আজকে অন্য কেউ হবে মনে হচ্ছে। যা লাগছে তোকে, একদম ফাটাফাটি।

নূর লজ্জা পেয়ে গেল। মাথাটা এদিক ওদিক ঘুরিয়ে বললো।
…এ এএমন কিছুই না।তুই একটু বেশি বেশি বলছিস।সামান্য একটু কাজল আর লিপস্টিকিই তো দিয়েছি। এ আর এমন কি?

….হুম সময় হলেই বুঝবি।বেশি বলছি না কম বলছি।

…আচ্ছা হয়ছে এখন চল ক্লাসে যাই।

…হুম হুম চল। দেখিস আজ ক্লাসের সব ছেলেরা তোর দিকে কেমন তাকিয়ে থাকে।

নূর হালকা রাগ দেখিয়ে বললো।
…থামবি তুই? চল এখন।
নূর তানির হাত ধরে নিয়ে যায় ক্লাসে।

———————————

নূর ক্লাস শেষে ওদের দেখা করার জায়গায় এসেছে।নূর পেছন থেকে দেখতে পাচ্ছে, আদিত্য ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে।
নূরের বুকের ভেতর হঠাৎ ধুকধুক করছে। হার্টবিট অনেক জোরে জোরে চলছে। নূর লম্বা একটা নিঃশ্বাস নিয়ে, ধীরে ধীরে এগিয়ে গেল।
আদিত্য বসে ফোনে কি যেন করছিল। নূর এসে দাঁড়াতেই, আদিত্য বুঝতে পারে নূর এসেছে। ও ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো।
…বসো।
নূর আস্তে করে বসে পরলো।
আদিত্য ফোনটা রেখে বললো।
…কেমন আ….
আর বলতে পারলো না আদিত্য।নূরের দিকে তাকাতেই ও থমকে গেল। চারপাশে সব শুন্য হয়ে গেলো। হার্টবিট প্রচন্ড গতিতে বাড়তে শুরু করে দিল।হা করে চেয়ে রইল নূরের দিকে। এই অতি সামান্য সাজেও কাওকে এতো সুন্দর কিভাবে লাগতে পারে।

আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। ওড়নার কোণা ধরে আঙুল দিয়ে প্যাচাতে লাগলো আর এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।
নূরের লজ্জায় লাল আভা ছড়ানো মুখটা যেন আরো সৌন্দর্য হাজারগুন বারিয়ে দিয়েছে।
আদিত্য তাকিয়ে আছে তো আছেই। আর কোন হুশ জ্ঞান নেই। নূরের ডাগর ডাগর চোখে কাজল দেওয়াতে চোখ দুটো আরো অপূর্ব লাগছে।
হঠাৎ করে আদিত্যের চোখ গেল নূরের ঠোঁটের দিকে। পিংক কালারের লিপস্টিক দেওয়া ঠোঁট দুটো দেখে আদিত্যের সারা শরীরে কারেন্ট বয়ে গেলো। গলা কেমন শুকিয়ে যাচ্ছে। শুকনো ঢোক গিললো আদিত্য।প্রচুর গরম লাগছে ওর। শরীর দিয়ে ঘাম বের হচ্ছে।
আদিত্য এখনো নূরের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর তিব্র ইচ্ছা জাগছে নূুরের ওই পিংক রসালো ঠোঁট দুটো ছুয়ে দেওয়ার। নাহ আর পারছে না আদিত্য।এক ঝটকায় অন্য দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল আদিত্য। হাত দুটো শক্ত করে মুঠো করে নিয়ে নিজেকে অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে।
আদিত্য চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই নূরকে বললো।
…চুমু দিয়ে চলে যাও তুমি।

নূর একটু অবাক হলো। এমন করে চোখ বন্ধ করে কথা বলছেন কেন উনি?নূরের কেন যেন হালকা মন খারাপও হলো।
নূর চুমু দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য দাঁড়াতেই আদিত্য খপ করে নূরের হাতটা ধরে ফেলে। নূর ভীষণ লজ্জায় পরে যায়। নূর লজ্জায় আর আদিত্যের দিকে ঘুরে তাকায় না
উল্টো দিকেই ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকে।
আদিত্য নূরের হাত ধরে থেকে বলে।
…আর কখনো আমার সামনে ঠোঁটে লিপস্টিক দিয়ে আসবে না। নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারবো না। কোন ভুল করে বসবো।কথাটা বলেই আদিত্য নূরের হাত ছেড়ে দেয়।
নূর লজ্জায় আর এক মূহুর্তও দাড়াতে পারে না ওখানে। দৌড়ে চলে আসে ওখান থেকে।

আদিত্য ঠোট কামড়ে হাসে।গালে হাত দিয়ে একটু মুছে নিয়ে হাত টা সামনে আনে আদিত্য। দেখে ওর আঙ্গুলের সাথে নূরের লিপস্টিক লেগে আছে। আদিত্য আঙুল নিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপর রাখে।তারপর নূরের লিপস্টিকের ওপর চুমু খায়।তারপর বিড়বিড় করে বলে।
..পাগল করে দিবে তুমি আমায় নূরপাখি।💘💘

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here