ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-১২

0
6558

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১২

★নূর বাসায় এসেই সোজা নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকে। বারবার শুধু আদিত্যের বলা কথাটা কানে বাজছে। নূর দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে লাজুক হাসে।হার্টবিট খুবই দ্রুত চলছে।এ কেমন অনূভুতি? এমন অনূভুতি আগে কখনো হয় নি ওর। কেন এসব হচ্ছে তা বুঝতে পারছে না নূর। তবে যাই হোক এসব নূরের কাছে কেন যেন ভালো লাগছে। যে ভালো লাগা আগে কখনো হয়নি ওর।

নূর পাঁচ মিনিট হলো ওভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ দরজার কলিং বেল বেজে ওঠায় ওর ভাবনায় ছেদ পরে।বাসায় এখন বর্তমানে নূর ছাড়া কেউ নেই।রিপা ভার্সিটিতে , এখনো ফেরেনি।আর রুবিনা বেগম রবিকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছে।তাই নূর নিজের রুমের দরজা খুলে মেইন দরজার কাছে দেখতে যায় কে এসেছে।

নূর ভাবে হয়তো ছোট মা রবিকে নিয়ে চলে এসেছে। তাই আই হোল দিয়ে না দেখেই দরজা খুলে দেয়।
কিন্তু দরজা খুলতেই যাকে দেখলো,তাকে দেখে নূরের অন্তর আত্মা ভয়ে আৎকে উঠলো। এই লোকটা আবার এসেছে? এখন কি করবে ও? বাসায় তো কেউ নেই। ভয়ে জমে যাচ্ছে নূর।

…কি ব্যাপার সুইটহার্ট? আমাকে কি আজ বেশি হ্যান্ডসাম লাগছে? এভাবে তাকিয়ে আছো যে? দেখতে চাইলে দেখো, তবে ভিতরে আসতে দেও।তাহলে আরো ভালো করে দেখতে পাবে। আর আমিও তোমাকে ভা…লো করে দেখতে পাবো।চাইলে আরো অনেক কিছুও করতে পারবো।
নূরের পুরো শরীর স্ক্যান করে, সয়তানি হেসে একটু টেনে টেনে কথাগুলো বললো জনি।

জনির এমন কথা আর কু দৃষ্টি দেখে নূরের সারা শরীর ভয়ে আর ঘৃণায় ভরে উঠলো।

জনি হলো রুবিনা বেগমের ভাইয়ের ছেলে। একনম্বরের বদমাইশ মদখোর আর মেয়েবাজ লোক।নূরের ওপর ওর কু দৃষ্টি অনেক আগে থেকেই। মাঝে মধ্যেই এই বাসায় আসে। আর নূরের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নানাভাবে নূরকে ছোঁয়ার চেষ্টা করে।
নূর এই লোকটাকে দেখলেই ভয়ে ভয়ে থাকে।যতক্ষণ জনি বাসায় থাকে বেশির ভাগ সময় নিজের রুমেই বসে থাকে নূর। কাওকে কিছু বলতেও পারে না নূর। কারণ ও জানে ওর কথা কেউ বিশ্বাস করবে না।উল্টো ওকেই সবাই খারাপ বলবে।

…কি হলো সুইটহার্ট সরো ভিতরে ঢুকতে দেও।

জনির কথা শুনে নূরের ভয় আরো বেড়ে গেল। বাসায় এই মূহুর্তে কেউ নেই। ওনাকে এখন কিছুতেই ঢুকতে দেওয়া যাবে না।
নূর কোনরকমে সাহস নিয়ে বললো।
…ছ ছছোট মা বাসায় নেই। আপনি একটু পরে আসুন।

নূরের কথা শুনে জনি হাতে যেন চাঁদ পেয়ে গেল। এমন একটা সুযোগই তো ও খুঁজছিল।

নূর যেই দরজাটা বন্ধ করতে যাবে। তার আগেই জনি হাত দিয়ে দরজা ঠেকালো।জোর করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে পরলো।তারপর দরজাটা বন্ধ করে দিল। নূরের দিকে লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
…এটাতো আরো ভালো কথা সুইটহার্ট।আমরা দুজন একা কিছু রোমান্টিক মূহুর্ত তৈরী করতে পারবো। কি বলো?বায়দা ওয়ে আজকে কিন্তু তোমাকে সেই হট লাগছে।

জনির দরজা বন্ধ করা এমন চাহনি আর বিচ্ছিরি কথা শুনে নূরের সারা শরীর ঘৃণায় রি রি করছে। ভয়ে ওর আত্মা বেড়িয়ে যাচ্ছে। কি করবে এখন ও? আজ কি ওর সব শেষ হয়ে যাবে? নিজেকে কিভাবে বাচাবে ও?
নূর দৌড় দিয়ে নিজের রুমের দিকে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ।জনি খপ করে ওর হাত টা ধরে ফেলে। সয়তানি হাসি দিয়ে বলে।
…কোথায় যাচ্ছো সুইটহার্ট? মাত্রইতো খেলা শুরু হয়েছে এখনি চলে যাবে। তা কি করে হয়?এখনো তো অনেক মজা করা বাকি আছে।
কথাটা বলেই জনি নূরের হাত টেনে নিজের কাছে আনার চেষ্টা করে।

নূরের ভয়ে জান বেড়িয়ে যাচ্ছে। আর সহ্য করতে না পেরে নূর কান্না করে দেয়। কান্না করতে করতে কাকুতি মিনতি করে বলে।
….প্লিজ ছেড়ে দিন আমাকে।আপনার পায়ে পরি দয়া করে আমার এতো বড়ো ক্ষতি করবেন না। প্লিজ ছেড়ে দিন।
কান্না করতে করতে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে নূর

জনি নূরের হাত টেনে নিজের আরো কাছে এনে বলে।
…সেটা কি করে হয় সুইটহার্ট। আর তুমি কাঁদছ কেন?আমি কি কষ্ট দিব নাকি?আমি তো তোমাকে অনেক আদর করবো। কথাটা বলেই জনি এক হাত নূরের কোমরে রাখে।

নূরের ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে।জনির হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য নিজের সর্বশক্তি দিয়ে জনিকে একটা ধাক্কা দেয়। ধাক্কা খেয়ে জনি খানিকটা পিছিয়ে যায়। নূর সেই সুযোগে এক দৌড়ে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে এসে দরজাটা আটকাতে গেলে জনি এসে দরজা ঠেলে ধরে। নূর প্রাণপণ চেষ্টা করছে দরজা আটকানোর।
হঠাৎ এমন সময় বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। জনি ঘাবড়ে যেয়ে ওর হাত ঢিলা হয়ে যায়। আর সেই সুযোগে নূর দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়।

জনি যেয়ে দরজা খুলে দেখে রুবিনা বেগম চলে এসেছে রবিকে নিয়ে। জনি একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
…আরে তোমরা এসে গেছো?তোমাদের অপেক্ষায় করছিলাম।

রুবিনা বেগম জনিকে দেখে হেসে ভেতরে ঢুকে বললো।
…আরে তুই কখন এলি?কেমন আছিস?
….এই তো ভালো। মাত্রই আসলাম। তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
…আচ্ছা বস। আমি চা নাস্তা দিতে বলছি।
..না না ফুপি আমার একটা জরুরি কাজ আছে। আমি এখন আসছি।পরে অন্যসময় আসবো। বলেই জনি তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যায়।

নূর বাথরুমে যেয়ে শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে শাওয়ারের নিচে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। একটু আগের ঘটনা মনে পরতেই নূরের সারা শরীর ঘৃণায় ভরে যায়। নিজেকে দুনিয়ায় সবচেয়ে অসহায় ব্যাক্তি মনে হচ্ছে।আজ ওরা আর একটু দেরিতে আসলেই ওর সব শেষ হয়ে যেতো।নূরের বারবার জনির ওই জঘন্য কথা আর ছোয়াগুলো মনে পরছে। নূর ফ্লোরে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে
তারপর হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। কেন সবসময় আমার সাথেই এমন হয়?কি দোষ আমার? এর থেকে মরে যাওয়াও ভালো। কান্না করতে করতে এসব বিলাপ করতে থাকে নূর। জনি যেখানে যেখানে ছুয়েছিল নূর সেসব জায়গায় জোরে জোরে ঘষতে থাকে। ঘষতে ঘষতে চামড়া প্রায় উঠে রক্ত বের হয়ে যায়। তবুও নূর থামে না।
প্রায় দু’ঘন্টা যাবত শাওয়ারের নিচে বসে আছে নূর। হাত পা ঠান্ডা বরফ হয়ে গেছে। সারা শরীর ধীরে ধীরে অবশ হয়ে আসছে। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসছে। একসময় চোখ বন্ধ করে ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো নূর

সন্ধ্যা -৬-৩০
পিটপিট করে চোখ দুটো খুললো নূর। মাথাটা প্রচন্ড ভারি আর ব্যাথা করছে। মাথায় হাত চেপে ধরে কোনরকমে উঠে বসলো নূর। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো ও এখনো বাথরুমেই আছে। ওপরে এখনো শাওয়ার চলছে। নূর ওঠার চেষ্টা করতেই সারা শরীরের ব্যথায় ককিয়ে উঠলো। পুরো শরীরে অসম্ভব ব্যাথা অনুভব করছে।
নূর কোনরকমে পানির কল ধরে উপরে উঠে দাঁড়াল। আস্তে আস্তে রুমে এসে ভেজা কাপড় পাল্টে নিল।তারপর বিছানায় শুয়ে পরলো। ওর আর নড়ার ক্ষমতা নেই। একটু পরেই শরীর কাপিয়ে জ্বর এসে গেল।

————————————–

ভার্সিটিতে আদিত্য কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে নূরের অপেক্ষায়।আজ কেন যেন ওর খুব অস্থির অস্থির লাগছে। মনের ভেতর কেমন ছটফট করছে।কিন্তু কেন তা বুঝতে পারছে না।

ধীরে ধীরে আধাঘন্টা পেরিয়ে গেল তবুও নূরের আসার খবর নেই। আদিত্য ভাবছে নূরের কি এখনো ক্লাস শেষ হয়নি?এতো দেরি হচ্ছে কেন? আবার এটা ভেবে নিজেই নিজেকে শান্তনা দেয় যে হয়তো কোনো এক্সট্রা ক্লাস আছে। এজন্য দেরি হচ্ছে। একটু পরেই হয়তো চলে আসবে।
দেখতে দেখতে এক ঘন্টা পার হয়ে যায়। নূর এখনো আসছে না।এবার আদিত্যের অস্থিরতা আরও বাড়তে থাকে। মনের ভেতর কেমন যেন ভয় লাগতে শুরু করে। তাহলে কি নূর আজকে আসেনি? না না এসেছে। হয়তো কোনো কাজে আটকে গেছে। একটু পরেই চলে আসবে।
এসব ভাবতে ভাবতে দু ঘন্টা পার হয়ে যায়।মেয়েটা কি সত্যিই আসেনি আজ?কিন্তু কেন আসেনি? কি হয়েছে ওর? কোনো সমস্যা হলো নাতো?আচ্ছা ওর কি শরীর খারাপ করেছে? এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্যের অস্থিরতা আরও বাড়তে লাগলো। কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে ওর।আদিত্য শার্টের ওপরের দুটো বোতাম খুলে দিল।নিজের অস্থিরতা দূর করার জন্য। তারপর উঠে এদিক ওদিক পায়চারী করতে লাগলো। নাহ্ কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না।
আদিত্য আর থাকতে না পেরে ওখান থেকে বেড়িয়ে এলো।

বেরিয়ে এসে তাসির আর আবিরদের কাছে দাঁড়াল। আবির আর তাসির আদিত্যকে দেখে একটু অবাক হলো।

তাসির ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কিরে তোকে এমন এলোমেলো দেখাচ্ছে কেন?আর নূর কই?ওকেতো আজ যেতে দেখলাম না?

আদিত্য চিন্তিত সুরে বললো।
…নূর আজ আসেনি এখানে।

তাসির বললো।
…আজ ক্যাম্পাসে আসেনি?

…জানিনা?
তারপর আদিত্য আবিরকে জিজ্ঞেস করলো।
…আবির তুই তানিকে জিজ্ঞেস করতো, নূর এসেছে কিনা?

আবির বললো।
….ভাই তানিতো আজ ভার্সিটিতে আসেনি।ওর মামা নাকি অসুস্থ তাকে দেখতে গেছে।

তাসির আদিত্যের কাধে হাত দিয়ে বললো।
…হয়তো তানি আসেনি তাই নূরও আসেনি।তুই চিন্তা করিস না।

আবির একটু দুষ্টুমি করে বললো।
…হ্যা ভাই টেনশন করিস না। একদিন চুমু না খেলে মরে যাবি না তুই। হা হা হা…

আদিত্য ধমক দিয়ে বললো।
…সাট আপ। সবসময় খালি তোর ফান।কথাটা বলেই হনহন করে চলে গেল আদিত্য।

———————————

শরীরের জ্বর আর ব্যথা নিয়েই দুপুরের রান্না করছে নূর। না করেই বা কি উপায় আছে।জ্বরের কারনে সকালে উঠে কাজ করতে না পারায় রুবিনা বেগম দুনিয়ায় কথা শুনিয়েছেন। তাই এখন জ্বর নিয়েই কাজ করছে নূুর।রবি অবশ্য ওকে কাজ করতে না করেছে। কিন্তু ওই ছোট মানুষের কথা এবাড়িতে কেই বা শুনবে।জ্বরের কারণে সকালে ভার্সিটিতেও যেতে পারে নি। রবি একটা নাপা এনে দিয়েছিল। সেটা খেয়ে জ্বরটা একটু কমেছে তবে পুরোপুরি সারেনি।শরীরে এখনো প্রচুর ব্যথা।

রাত ১০ টা
আদিত্য সোফায় বসে খরগোশ ছানাটার দিকে তাকিয়ে নূরের কথা ভাবছে। আজ সারাটাদিন ওর অস্থিরতায় কেটেছে। অফিসের কাজেও মন দিতে পারেনি।কোন কিছুই ভালো লাগছে না ওর।বারবার শুধু নূরের কথা মনে পরছে। আজ ডিনারও ঠিকমতো করেনি।
আদিত্য উঠে গিয়ে নিজের বেডরুমে যেয়ে ঠাস করে খাটে শুয়ে পরলো। চোখ বন্ধ করতেই আবারও নূরের চেহারাটা ভেসে উঠলো।
আদিত্য শুধু এপাশ ওপাশ গড়াগড়ি করছে। ঘুমের ছিটেফোঁটাও নেই ওর চোখে। ভাবছে একবার যদি নূরের সাথে কথা বলতে পারতাম, তাহলে হয়তো একটু শান্তি লাগতো। আদিত্যর নিজের ওপরে নিজেরি চরম রাগ লাগলো । কতো বড়ো ইডিয়ট তুই আদি।এতোদিন হলো নূরের সাথে পরিচয়। অথচ ওর নাম্বার টাই এখনো জানিস না।এতো বড়ো ডাফার তুই? নূরের নাম্বার নিয়ে রাখলে, এখন আর এতো টেনশনে মরতে হতো না।এসব বলে আদিত্য নিজেই নিজেকে বকতে থাকে।
সারারাত ওভাবেই কেটে যায়। কিছুতেই ঘুম আসে না আদিত্যের।

নূর রেডি হচ্ছে ভার্সিটির জন্য।বাসায় থেকেই বা কি হবে? আরামতো আর করতে পারবে না। তার চেয়ে বরং ভার্সিটিতে যাওয়ায় ভালো।মনটা একটু ফ্রেস হবে। শরীরে এখনো একটু একটু জ্বর আছে নূরের। আর ব্যাথাও আছে। অতিরিক্ত ঘষার কারণে নূরের হাতের ওপর চামড়া উঠে ঘায়ের মতো হয়ে গেছে। যার জন্য কাজ করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে ওর।তবুও সকালে উঠে সব কাজ শেষ করেছে। না করে যে উপায় নেই।
অনেক কষ্টে জামাটা চেঞ্জ করে রেডি হলো নূর।

———————————
কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে নূর। একটা ক্লাস করেই ওর শরীরটা কেমন যেন খারাপ লাগছিল।আর তানিও আজ আসেনি, তাই এখানে চলে এসেছে। এখানে আসলে ওর মনটা ফ্রেস হয়ে যায়।
অনেকক্ষন ধরে বসে আছে তানি।এখন ওর মাথাটা কেমন ভারি হয়ে আসছে। মনে হচ্ছে জ্বর আবার বাড়ছে।কাল থেকে না খেয়ে থাকার কারণে অনেক দূর্বলও লাগছে।

আদিত্য তারাহুরো করে আসছে। বুকের ভেতর দুরুদুরু করছে।মনে মনে ভয় লাগছে যদি আজও নূর না আসে?
আদিত্য ব্রেঞ্চের কাছাকাছি আসতেই পিছন থেকে নূরকে দেখতে পেয়ে, আদিত্য ভীষণ খুশি হয়ে গেলো।তারমানে নূর এসেছে। আদিত্যের খুশিতে ইচ্ছে করছে এখুনি নূরকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে। না না এটা একটু বেশি হয়ে যাবে।
আদিত্য নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে গেল নূরের কাছে।

নূর সামনের দিকে চেয়ে অন্যমানুষ্ক হয়ে বসে আছে। আদিত্য যেয়ে নূরের পাশে বসে তড়িৎ গতিতে বললো।
….কাল আসোনি কেন?

আদিত্যের কথা শুনে নূর পাশে ফিরে আদিত্যের দিকে তাকালো।

নূর তাকাতেই আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। চোখে মুখে আতংকের ছাপ ভেসে উঠলো। একি হাল হয়েছে মেয়েটার?এমন দেখাচ্ছে কেন ওকে? মেয়েটা কি অসুস্থ? ভাবতেই আদিত্য অস্থির হয়ে নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…হেইই,,, কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেন তোমাকে?তুমি কি অসুস্থ?

আদিত্যের এমন অস্থিরতা দেখে নূর অবাক চেয়ে রইল আদিত্যের দিকে।শরীরে জ্বর বাড়ার কারণে কেমন ঘোর লেগে আসছে নূরের।ঘোরের ভেতরেই নূর আদিত্যের দিকে একধ্যানে চেয়ে থেকে ভাবে। উনি এতো অস্থির হচ্ছেন কেন আমাকে নিয়ে?আমার জন্য কি উনার চিন্তা হচ্ছে? কিন্তু কেন হচ্ছে? আমি কে হয় ওনার?কেনই বা চিন্তা করবে? আমার জন্য তো কেউ চিন্তা করে না? আমি মরলেও কারোর যায় আসে না।তবে উনি কেন এতো চিন্তা করছে? আচ্ছা উনিওতো একটা ছেলে। তাহলে উনিতো কখনো ওই পঁচা জনির মতো আমার দিকে কু নজরে তাকায় না। উনার চোখে সবসময় শুধু মুগ্ধতা দেখা যায়। কখনো আমাকে খারাপ ভাবে ছোয়ার চেষ্টা করে না। কখনো খারাপ কথা বলে না। আর সবার মতো আমাকে অবহেলা করে না।

নূরের এভাবে চুপ করে চেয়ে থাকা দেখে আদিত্যের ভয় আরো বেড়ে যায়। আদিত্য এবার নূরের হাত ধরে হালকা ঝাকিয়ে বলে।
….কি হলো কথা বলছো না কেন?

আদিত্য নূরের হাত ধরায় নূর হাতে ব্যথা পেয়ে ককিয়ে উঠে।
….আহ্হ,,,

আদিত্য ভ্রু কুচকে নূরের হাতের দিকে তাকায়। আর তাকাতেই আৎকে ওঠে ও। বুকের ভেতর কেমন চিন চিন ব্যাথা শুরু হয়।নূরের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে কতক্ষণ চেয়ে থাকে আদিত্য। ইশশ কি বেহাল অবস্থা হয়েছে। আদিত্যর চোখ দুটো লাল হয়ে আসছে। আর সহ্য করতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে নেয় আদিত্য। কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবার চোখ খুলে চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কিভাবে হয়েছে এটা?কে করেছে? টেল মি এভরিথিং।

নূরের চোখ দুটো জাপসা হয়ে আসছে। শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। নূর আর থাকতে পারে না। চোখ বন্ধ করে আদিত্যের গায়ে ঢলে পড়ে।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here