ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-১৫

0
8171

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-১৫

★নূর বসে আছে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে। মনে মনে একটা আশা নিয়ে বসে আছে। হয়তো আদিত্যের কাছে ওর ডাইরিটা পেতে পারে।

আদিত্য আসে ওখানে। পিছন থেকে দেখতে পায় নূর ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে। নূরকে দেখে ওর ডাইরির কথাগুলো মনে পরে যায়। আদিত্য পেছন থেকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে থাকে নূরের দিকে। এতো নিস্পাপ মায়াবী মেয়েটাকে কেউ কিভাবে কষ্ট দিতে পারে। ভাবতেই আদিত্যর বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা শুরু করে। ইচ্ছে করছে এখুনি যেয়ে নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিতে।
আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেকে ঠিক করে নেয়।নূরের সামনে ওকে স্বাভাবিক বিহেব করতে হবে। তানা হলে নূর সন্দেহ করবে। মেয়েটা যেহেতু নিজের ব্যাপারে কখনো কিছু বলে না। তার মানে সে কারোর সিমপ্যাথি চায় না। তাই আমাকেও ওর সামনে স্বাভাবিক থাকতে হবে। যাতে ও বুঝতে না পারে যে আমি সবটা জেনে গেছি। এসব ভেবেই আদিত্য নিজেকে ঠিক করে নূরের সামনে যায়।

আদিত্য নূরের পাশে গিয়ে বসে। আদিত্য বসতেই নূরও আদিত্যের দিকে তাকায়। আদিত্য দেখে নূরের মুখটা কেমন ছোট হয়ে আছে। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
…কি হয়েছে? মন খারাপ কেন? আবার শরীর খারাপ করেছে? সকালে ওষুধ খাওনি?

নূর বললো
…না না কিছু হয় নি।আমি ঠিক আছি।আর আমার শরীরও ঠিক আছে।

…তাহলে মুখটা এমন ছোট করে রেখেছো কেন?

নূর আমতা আমতা করে বললো।
…আ আআসলে একটা কথা বলার ছিল আপনাকে।

আদিত্য আগ্রহ নিয়ে বললো।
…হ্যা বলো কি বলবে?

…আসলে আপনার গাড়িতে কি কাল কিছু পেয়েছেন?

আদিত্য এতক্ষণে বুঝতে পারলো। নূর তার ডাইরির কথা বলছে।আদিত্য একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো।
…কেন গাড়িতে কি কিছু থাকার কথা ছিল নাকি?

নূর মুখটা ছোট করে বললো।
…আসলে আমার একটা ডাইরি আছে। কাল আমার ব্যাগেই ছিল। কিন্তু বাসায় যেয়ে আর পাচ্ছি না।ক্যাম্পাসেও অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি।তাই ভাবলাম হয়তো আপনার গাড়িতে পড়েছে কিনা?

নূরের এমন চেহারা দেখে আদিত্যের অনেক হাসি পাচ্ছে। আর একটু মজা নেওয়ার জন্য আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…তোহ তোমার কি আমাকে চোর মনে হয়? যে আমি তোমার ডাইরি চুরি করে রেখে দিব?হাহ্?

আদিত্যের এমন রিয়্যাকশন দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল।
ও ভীতু স্বরে বললো।
…না না কি বলছেন আপনি? আপনাকে চোর কেন ভাববো?আপনিতো অনেক ভালো মানুষ। অনেক সাধু মানুষ, অনেক সিধা মানুষ, অনেক সুধু মানুষ, অনেক সিধি মানুষ, অনেক দিধি মানুষ। ভয়ের চোটে নূর কি বলছে ও নিজেও জানেনা।

নূরের এসব কথা শুনে আদিত্য হাসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। নিজের এমন প্রশংসা ও বাপের জনমেও শোনেনি। আদিত্য নিজের মাথাটা একটু অন্য দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসে।তারপর আবার নূরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে।
…সে যায় হোক। তোমার কথাতে তো তাই আসে। আর তাই আমি অনেক হার্ট হয়েছি।কথাটা বলে আদিত্য মিথ্যে রাগ দেখিয়ে সামনে তাকিয়ে থাকে। নূরের দিকে আরচোখে তাকিয়ে মনে মনে হাসতে থাকে।

নূর পরে গেছে মহা মুশকিলে।কি বলতে যেয়ে কি হয়ে গেলো। উনিতো সত্যি সত্যিই রাগ করে ফেলছে। এখন কি করবো? নূর ওড়নার কোণা আঙুল দিয়ে পেঁচাতে পেঁচাতে অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো।
…দেখুন আপনি রাগ করবেন না প্লিজ। আমি সত্যি বলছি। আমি ওসব ভেবে বলিনি। আমিতো শুধু বলতে চেয়েছিলাম যে।হয়তো কাল ভুলবশত আমার ব্যাগ থেকে ডাইরিটা আপনার গাড়িতে পড়েছে। তাই আপনাকে জিজ্ঞেস করছিলাম আপনি পেয়েছেন কিনা। আর কিছুই না।

আদিত্যর পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে নূরের এমন অবস্থা দেখে। কোনরকমে গম্ভীরতা বজায় রেখে আদিত্য বললো।
…ঠিক আছে তুমি যখন এতো করে বলছো আমি মেনে নিলাম তোমার কথা। আর হ্যা তোমার ডাইরি আমি গাড়িতে পেয়েছি। ভেবেছিলাম কার না কার হবে? তাই ফেলে দিতে চেয়েছিলাম।

আদিত্যের কথা শুনে নূরের এখন কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা।

আদিত্য বুঝতে পেরে বললো।
…চিন্তা করোনা ফেলিনি। গাড়ির ভেতরেই রেখে দিয়েছি।

নূর খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললো।
…সত্যিই? আপনিনা সত্যিই অনেক ভালো। একদম এত্তো এত্তো এত্তগুলা ভালো। নিজের দুই হাত দুই দিকে ছড়িয়ে পরিমাপ দেখিয়ে কথাগুলো বললো নূর।

আদিত্য মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে নূরের দিকে।নূরের খুশি দেখে ওর মনটাও ভালো হয়ে যায়। সামান্য একটা ডাইরির জন্য কতো খুশি মেয়েটা।

নূর খুশী মনে বললো।
….তাহলে চলুন ডাইরিটা নিয়ে নেই আমি।

আদিত্য গলা খাঁকারি দিয়ে বললো
…হুম দিব। আগে তোমার কাজটা করে ফেলো।তারপর।

নূর লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো। তারপর মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝালো। আদিত্য চোখ বন্ধ করতেই নূর এসে চুমু দিয়ে দিলো। তারপর রোজকার মতো ওখান থেকে চলে গেল। কিন্তু আজ আর একেবারে বাসায় গেল না। মাঠের একপাশে এসে দাঁড়িয়ে রইল।আদিত্যের কাছ থেকে যে ওর ডাইরিটা নিতে হবে তাই জন্য।
আদিত্য বেড়িয়ে এসে ওর গাড়ির দিকে এগুলো। নূর দেখতে পেয়ে সেও আদিত্যের পিছে পিছে গেল। আদিত্য গাড়ির কাছে এসে লক খুলতেই নূর ওর পিছনে এসে দাড়ালো। আদিত্য পিছনে ফিরে নূরের তাকাতেই নূর মাথা নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।
….আ আমার ডাইরিটা?

আদিত্য বাঁকা হেসে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে যেয়ে বসলো। তারপর পাশের সিটের দরজাটা খুলে বললো।
…গাড়িতে বসো।

নূর চমকে তাকালো আদিত্যের দিকে। তারপর বললো।
…গাড়িতে বসার কি দরকার? আপনি এখানেই দিয়ে দিন না?

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…ডাইরি চাই কি চাই না?

নূর দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…হ্যা হ্যা চাইতো।

….তাহলে গাড়িতে এসে বসো।

নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে গাড়িতে যেয়ে বসলো।নূর গাড়িতে বসার সাথে সাথেই আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। নূর ঘাবড়ে যেয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো।
…আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন? আমিতো শুধু ডাইরি নিতে এসেছিলাম। ডাইরিটা নিয়ে আমি বাসায় চলে যাবো। প্লিজ গাড়ি থামান।

আদিত্য নূরের দিকে না তাকিয়েই সামনের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো।
…. ডাইরি নিতে চাইলে আগে আমি যেটা বলবো সেটা মানতে হবে। নাহলে পাবে না।এখন তুমি বলো তুমি কি করবে?

আদিত্যের কথা শুনে নূর একটু ঘাবড়ে গেল। ভাবছে ডাইরির জন্য এখন আবার কি করতে বলে কে জানে?আবার কি নতুন কোনো শাস্তি দেবে নাকি? কিন্তু ডাইরিটা তো আমার চাই। এখন কি করবো?এমন কেন উনি? ধ্যাৎ উনাকে যতটা ভালো ভেবেছিলাম ততটা ভালো না উনি।তিনটা এত্তো থেকে একটা এত্তো বাদ হুহ্😤

নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য বলে উঠলো।
…কি ভাবছো ডাইরি কি চাই না তোমার? না চাইলে সমস্যা নেই। আমি বাসায় যেয়ে ওটা ডাস্টবিনে ফেলে দিব কেমন?

নূর তড়িৎ গতিতে বলে উঠলো।
…না না আমি চাইতো।প্লিজ দিয়ে দিন আমাকে।

….তাহলে আগে বলো আমার শর্তে রাজি কি না?

নূর আর কোনো উপায় না পেয়ে মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝালো। তারপর গাল ফুলিয়ে জানালার দিকে তাকিয়ে বসে রইলো। আদিত্যের ওপর একটু অভিমান হলো নূরের।
আদিত্যর নূরের এমন মুখ ফুলানো দেখে মিটিমিটি হাসছে।

হঠাৎ গাড়ি ব্রেক করায় নূর ভ্রু কুঁচকে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে।
…কি হয়েছে?এখানে গাড়ি থামালেন কেন?

আদিত্য বললো।
… আগে নামো তারপর বলছি।

নূর নেমে দাড়ালো। সামনে তাকিয়ে দেখলো অনেক বড়ো একটা রেস্টুরেন্টে। আদিত্যকে জিজ্ঞেস করলো।
…এটাতো রেস্টুরেন্ট। এখানে কি করবো আমরা।

আদিত্য বললো।
…ক্রিকেট খেলবো।

নূর থতমত খেয়ে বললো।
….মানে?কি বলছেন আপনি? রেস্টুরেন্টে কেউ ক্রিকেট খেলে নাকি?

….জানোই যখন তখন ফালতু প্রশ্ন করছো কেন?বেশি কথা না বলে আমার সাথে চলো।বলেই আদিত্য নূরের হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভেতরে নিয়ে গেল।

ভেতরে যেয়ে একটা টেবিল বুক করে বসে পড়লো।আদিত্য আর নূর দুজন সামনা সামনি হয়ে বসলো।নূর নম্র সুরে বললো।
……দেখুন আমার বাসায় যেতে দেরি হলে সমস্যা হবে। আমাকে কি করতে হবে সেটা বলুন। যাতে আমি আমার ডাইরিটা নিয়ে বাসায় যেতে পারি।

…আপাতত আমার ক্ষুধা লেগেছে।আর তুমিতো জানোই আমার একা একা খেতে ভালো লাগে না।তাই তুমিও আমার সাথে খাবে। মনে করো এটাও একটা শর্ত। বুঝতে পেরেছে? আর হ্যা চিন্তা করোনা বাসায় টাইম মতোই পৌঁছে দিব আমি।

নূর একটু অবাক হলো। এটা আবার কেমন শর্ত। তারপর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…হুম।
নূর চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।এর আগে কখনো এতো বড়ো রেস্টুরেন্টে আসেনি নূর। ওরা যে টেবিলে বসেছে।সেটা কাচের দেয়ালের পাশে। তাই নিচের সবকিছু দেখা যাচ্ছে। নূরের ভালোই লাগছে জায়গাটা।
একটু পরেই একটা ওয়েটার খাবারের অর্ডার নিতে আসলো। আদিত্য নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…কি খাবে তুমি?

নূর এতক্ষণ নিচের মানুষ দেখায় ব্যাস্ত ছিল। আদিত্যর কথায় নূর সামনের দিকে তাকালো। তারপর বললো।
…আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাই অর্ডার করুন।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…এটা আবার কেমন কথা। আমার পছন্দ আর তোমার পছন্দ তো আর এক না।তুমি যেটা খেতে পছন্দ করো সেটা অর্ডার করো।

নূর মাথা নাড়িয়ে নিজের জন্য খাবারের অর্ডার দিল।একটু পরেই সব খাবার চলে এলো। আদিত্য নূরের প্লেটে খাবার সার্ভ করে দিল।নূর সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আসলে নূর না বললেও ক্ষুধা ওরও লেগেছে খুব। রোজকার মতো আজও সকালে না খেয়েই এসেছে ও। এতোবেলা হয়ে গেছে ক্ষুধাতো লাগারি কথা। তাই আর কিছু না ভেবে খাওয়া শুরু করলো নূর।
আদিত্য খাচ্ছে কম নূরকে বেশি দেখছে। শুধুমাত্র নূরকে খাওয়ানোর জন্যই এতক্ষণ যাবৎ এসব করেছে আদিত্য। এখন নূরকে খেতে দেখে ওর শান্তি লাগছে।
খাওয়া দাওয়া শেষে ওরা বেড়িয়ে আসে। গাড়িতে বসে নূর বলে।
…এখন বলুন আমার ডাইরিটা পেতে আর কি করতে হবে?

আদিত্য গাড়ি চালাতে চালাতে বললো।
….হুম শোন তাহলে,আমার প্রথম শর্ত হলো। আমি এখন থেকে রোজ তোমাকে বাসা থেকে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসবো আর দিয়ে আসবো। আর দ্বিতীয় শর্ত হলো।তোমাকে রোজ আমার সাথে খাবার খেতে হবে। বলো রাজি?

নূর অবাক আর বিস্ময় নিয়ে চেয়ে রইল আদিত্যের দিকে। ও ভেবে পাচ্ছে এটা শর্ত নাকি কেয়ার।এসব করে ওনার কি লাভ? আর কেনই বা করছে এসব? নূর জিজ্ঞেস করলো।
…এসব করে আপনার কি লাভ?

আদিত্য গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
…নো কোশ্চেন এলাউড। অনলি ইয়েস অর নো।

নূর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…ঠিক আছে আমি রাজি।

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।যাক শেষমেষ ওর প্ল্যান কাজে দিয়েছে।
আদিত্য নূরের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো।
নূর বললো।
…এখন তাহলে আমার ডাইরিটা দিন।

আদিত্য ডাইরি বের করে নূরের হাতে দিল।নূর ডাইরিটা পেয়ে একটা স্বস্তির হাসি দিল।তারপর মুচকি হেসে আদিত্যকে বললো।
…বায়। আজ তাহলে আসি।

আদিত্য বললো।
…হুম ঠিক আছে। কাল সকালে আমি এখানেই ওয়েট করবো। সময়মতো চলে এসো।

নূর মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুঝালো। তারপর গাড়ি থেকে নেমে চলে গেল। নূর যেতেই আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিল।
একটু পরেই আদিত্যের ফোনটা বেজে উঠলো। আদিত্য ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই, ওপর পাশের ব্যাক্তির কথা শুনে আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
….আ্যাম কামিং।
তারপর ফোনটা কেটে আবির আর তাসিরকে একটা টেক্সট করে দিল।

আবির আদিত্যের টেক্সট দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে তাসিরকে বললো।
….ইয়ার, অনেক দিন হলো হকি খেলিনা। চল আজকে একটু হকি খেলে আসি।
তাসিরও হেসে বললো।
…হ্যা চল। হকির সাথে আরও অনেক কিছুই খেলা হবে।

——————————

অন্ধকার একটা গোডাউনের ভেতরে চেয়ারের সাথে হাত পা বেধে রাখা হয়েছে জনিকে।অনেকক্ষণ ধরেই চিল্লাচ্ছে জনি।
….কে এখানে? কে ধরে এনেছে আমাকে?কি চাই তোদের?ভালোই ভালোই বলছি ছেড়ে দে আমাকে?নাহলে কিন্তু তোদের জন্য ভালো হবে না বলে দিলাম।

একটু পরে হঠাৎ গোডাউনের লাইট জ্বলে উঠলো। জনি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো কারা যেন আসছে। ধীরে ধীরে তারা সামনে এসে দাড়ালো। জনি রাগী কন্ঠে বললো।
…কে তোরা আমাকে এখানে কেন এনেছিস?

আদিত্য প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বললো।
….তোর নাকি অনেক যৌবন জ্বালা? সেটাই মেটাতে এসেছি।

আবির তৎক্ষনাৎ চমকে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কি বলছিস ভাই? তুই কেন ওর যৌবন জ্বালা মেটাবি?এই তুই কি সত্যি সত্যিই গে হয়ে গেলি নাকি? ছিঃ ছিঃ ভাই তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি। আরে গে হলেও, তোরও তো একটা লেভেল আছে। শেষমেশ কিনা এই থার্ডক্লাস জনির সাথে?

আদিত্য অগ্নিচোখে আবিরের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
…জাস্ট সাট আপ ইডিয়ট। নাহলে ওর আগে তোকেই শায়েস্তা করবো।

আবির বেচারা ভয় পেয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
…না না ভাই তার কোনো দরকার নেই। আমিতো শুধু মজা করছিলাম। হে হে

তাসির আবিরকে বললো।
….তুই আসলেই একটা ইডিয়ট। দেখছিস একটা এ্যাকশন সিন চলছে। তারমধ্যে তুই কমেডি ঢুকিয়ে দিয়ে সব ঘেটে দিলি।

এদের কথার মাঝেই জনি আবার বলে উঠলো।
…আমাকে ছেড়ে দে তোরা।ভালো হবে না কিন্তু বলে দিচ্ছি।

আদিত্য এবার চোয়াল শক্ত করে এক হাত দিয়ে জনির মুখ চেপে ধরে রাগে কটমট করতে করতে বললো।
…কি করবি তুই? দেখা দেখি কি করতে পারিস তুই।দূর্বল মেয়েদের ওপর নিজের পুরুষত্ব দেখানো ছাড়া আর কি ক্ষমতা আছে তোর? আজ দেখে ছাড়বো তোর কতো শক্তি আছে। আবির ওর বাধন খোল। দেখি ওর কতো পাওয়ার?

আবির জনির কাছে এসে সয়তানি ভাব নিয়ে বললো।
…আব তেরা কেয়া হোগা কালিয়া।?মুহ হা হা হা

আদিত্য আর তাসির ভ্রু কুচকে তাকালো আবিরের দিকে। ওদের তাকানো দেখে আবির হাসি থামিয়ে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো।
…ওয়াট?এখন কি আমি একটু ডায়লগও বলতে পারবো না? এরকম একটা সিন কি রোজ রোজ হয় নাকি?

তাসির বিরক্ত হয়ে বললো।
…হয়েছে তোর ডায়লগ বলা?নাকি আরো আছে?

আবির ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললো।
…দোস্ত আর মাত্র একটা বলবো। প্লিজ প্লিজ।

…ঠিক আছে বক তোর ডায়লগ।

আবির আবারও জনির দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললো।
…চিতে কি চাল, বাজ কি নাজার অর আবির কি মারপে কাভি সন্দেহ নেহি কারতে।

আদিত্য এদের কান্ড দেখে চরম বিরক্ত। ইচ্ছে করছে আগে এদেরকেই পেটাতে। রাগী স্বরে বললো।
…এখন তোর ফালতু কথা বন্ধ হলে ওর বাধনটা খোল।

আবির জনির বাঁধন খুলে দিল।আদিত্য জনিকে বললো।
…তো দেখা তোর পাওয়ার।

জনির তো ভয়ে কাঁপুনি উঠে গেছে। এতক্ষণ এতো কথা বললেও এখন সব ফুস হয়ে গেছে। কারণ ও আদিত্যকে চিনতে পেরেছে। আর আদিত্যের পাওয়ার সম্পর্কে ওর ভালোই ধারণা আছে। এখানে ওকে মেরে গুম করে ফেললেও কেউ জানবে না।জনি ভয়ে ভয়ে বললো।
…ভাই আমার অপরাধটা কি?আমিতো আপনার কোনো ক্ষতি করি নাই। আমারে ছেড়ে দেন প্লিজ।

আদিত্যর এবার নূরের লেখা কথাগুলো মনে পরে যায়। রাগে কপালের রগ ফুলে ওঠে। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জনির নাক বরাবর একটা ঘুষি মারে।ঘুষি খেয়ে জনি ছিটকে নিচু পরে যায়। সাথে সাথে ওর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে। আদিত্য আবারও জনির কলার ধরে টেনে তুলে এলোপাথারি মারতে মারতে বলতে থাকে।
…কি করেছিস তুই জানিস না তাইনা? মেয়েদের দেখলেই তোর ভোগের বস্তু মনে হয় তাইনা?আজ তোর এমন অবস্থা করবো যে কোনো মেয়ের ছবি দেখলেও ভয়ে পালাবি।
আদিত্যর মনে পরে ওর জন্য নূরের হাতের কি অবস্থা হয়েছিল।ওটা মনে পরতেই আদিত্যের রাগ আরো বেড়ে যায়। আদিত্য জনির হাতটা নিচে ফেলে নিজের পায়ের বুট দিয়ে পিসতে থাকে। জনি জোরে আর্তনাদ করতে থাকে। একসময় নিস্তেজ হয়ে অজ্ঞান হয়ে যায় জনি।আদিত্য তাও থামেনা মারতেই থাকে। ওর মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে।
তাসির আর আবির দুজনেই আদিত্যের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। ওকে এতো রাগতে আগে কখনোই দেখেনি ওরা।আদিত্যকে এখন না থামালে জনি নির্ঘাত মরে যাবে। তাই আবির আর তাসির দৌড়ে যেয়ে
আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঠেকানোর চেষ্টা করলো। তাসির বললো।
…বাচ কর ইয়ার। ও মরে যাবেতো।
আদিত্য বললো।
…মরুক ওর মতো কিটকে মরে যাওয়াই উচিত।

আবির বললো।
…ভাই এমনিতেও ওর যে অবস্থা হয়েছে। আর কখনো উঠতে পারবে কিনা সন্দেহ। এখন ছেড়ে দেও ওকে।

দুজন মিলে কোনরকমে আদিত্যকে ঠেকালো। আদিত্য একটু শান্ত হয়ে ওর লোকগুলোকে ডাক দিল।ওরা আসতেই আদিত্য বললো।
…ওকে হসপিটালে ফেলে এসো।

লোকগুলো মাথা ঝাকিয়ে বললো।
… জ্বি স্যার।

তারপর ওরা তিনজন বেড়িয়ে গেলো।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here