ভালোবাসার চেয়েও বেশি💞পর্ব-১৭

0
6827

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৭

★ভোরের আলো ফুটতেই রোজকার অভ্যাস অনুযায়ী নূরের ঘুম ভেঙে গেল। নূর আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। টাইম দেখার জন্য মোবাইল খুজতে লাগলো। চেয়ে দেখলো ফোন বালিশের কাছে পরে আছে। নূর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফোন বন্ধ হয়ে আছে।নূর ফোনটা অন করে দেখলো চার্জ শেষ। নূর ভ্রু কুঁচকে ভাবলো কাল রাতেইতো চার্জ দিয়েছিল। তারপরে তো আর ফোন ধরেনি। তাহলে এতো তাড়াতাড়ি চার্জ কিভাবে শেষ হয়ে গেলো? হয়তো পুরানো হয়ে গেছে তাই এমন হচ্ছে। নূর আর কিছু না ভেবে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

ফ্রেস হয়ে এসে নামাজ পড়ে নিল।তারপর বাসার কাজ শুরু করে দিল।
বাসার সব কাজ শেষ করে নূর ময়লা ফেলার জন্য গেটের বাইরে গেল। গেটের বাইরে এসে ময়লা ফেলে ফেরার সময় নূর দেখলো রাস্তায় মাঝামাঝি একটা মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। হয়তো রাস্তা পার হতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। নূরের খুব মায়া হলো মহিলারটার জন্য। ও এগিয়ে গেল মহিলাটাকে সাহায্য করার জন্য।

মহিলাটার কাছে যেয়ে বললো।
…কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?

মহিলাটা করুন সুরে বললো।
…আসলে আমি ঢাকায় নতুন। রাস্তা পার হতে পারি না। আমার খুব ভয় করে।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….ভয় নেই আমার হাত ধরেন।আমি আপনাকে পার করে দিচ্ছি।

মহিলাটা মাথা ঝাকিয়ে নূরের হাত ধরলো। নূর মহিলাটার হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিলো।

রাস্তা পার হয়ে মহিলাটা কৃতজ্ঞতা মূলক হাসি দিয়ে বললো।
….তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।তুমি না আসলে হয়তো আমি পারিই হতে পারতাম না।

নূর সৌজন্যে মূলক হাসি দিয়ে বললো।
….ইটস ওকে। মানুষই তো মানুষের কাজে আসবে। এটাই স্বাভাবিক।তা আপনি কোথায় থাকেন?আগেতো কখনো দেখিনি মনে হচ্ছে।
….হ্যা তুমি ঠিকই বলেছো।আমি এখানে নতুন। হাত উঠিয়ে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললো। ওইযে ওই বাসাটা দেখছো। ওখানেই নতুন এসেছি।আমার ছেলে আর আমি এই দুজনই থাকি।
….ওহহ।আমি আপনার এই পাশের বাসাতেই থাকি।

মহিলাটা খুশী হয়ে বললো।
…তাই? তাহলেতো অনেক ভালো হলো। জানো,আমার ছেলেটা সেই সকালে চাকরিতে চলে যায় আর রাতে আসে। সারাদিন বাসায় একা একা আমার সময় কাটে না।এখানে তেমন কাওকে চিনিওনা। এখন যখন তোমার সাথে পরিচিত হলাম। তাহলে মাঝে মধ্যে তোমার সাথে এসে সময় কাটাবো। তোমাকে আমার অনেক পছন্দ হয়েছে। তুমি কি রাগ করবে আমি আসলে?

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
..না না রাগ করবো কেন? আমার আরো ভালো লাগবে। আপনার যখন খুশি চলে আসবেন আন্টি।

মহিলাটি খুশি হয়ে বললো।
…ঠিক আছে তাহলে এখুনি চলো।তোমার বাসাটা চিনে আসি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে চলুন।

তারপর নূর মহিলাটিকে নিয়ে বাসার ভেতর চলে গেলো। ভেতরে ঢুকে নূর মহিলাটিকে সোফা দেখিয়ে বললো।
…আন্টি আপনি বসুন।আমি আপনার জন্য চা করে আনছি।

মহিলাটি বললো।
…আরে না না আমি ওসব চা টা খাই না।সকাল সকাল ভাত রান্না করে খেয়ে এসেছি। তাই এখন কিছুই খাবো না।

…আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি তাহলে বসুন।আমি একটু রান্না করে আসছি।

….ঠিক আছে চলো আমিও তোমার সাহায্য করছি।

নূর অপ্রস্তুত হয়ে বললো।
…না না আন্টি, আপনি কেন কাজ করবেন। আপনি এখানেই বসুন। আমি এখুনি কাজ শেষ করে আসছি।

….দেখ আমি গ্রামের মানুষ বসে বসে আমার ভালো লাগে না। টুকটাক কাজ করলে ভালো লাগে।
…তবুও আন্টি আপনাকে দিয়ে কাজ করানো আমার কাছে ভালো লাগছে না।

…দেখো,আমি তোমার মায়ের বয়সী।তোমার মায়ের মতোই। তুমি কি তোমার মায়ের কথা রাখবে না?
…নূরের চোখ দুটো চিকচিক করে উঠলো। আজ পর্যন্ত কেউ ওর সাথে এভাবে ভালোবেসে কথা বলেনি।নূর আর কিছু না বলে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।

নূর সব কাজ শেষ করলো। মহিলাটি সাহায্য করায় নূরের কাজ, আজ অনেক তাড়াতাড়ি আর সহজে হয়ে গেলো। কাজ শেষ করে নূর নিজের রুমে গেল রেডি হতে। রেডি হয়ে এসে নূর মহিলাটিকে বললো।
…..আন্টি আমি এখন ভার্সিটিতে যাবো।

মহিলাটি বললো।
…হ্যা হ্যা চলো আমি আর থেকে কি করবো? আমিও তোমার সাথেই বের হই।

নূর মাথা ঝাকালো। তারপর দুজনে বেড়িয়ে গেলো। বাইরে এসে নূর মহিলাটিকে বিদায় দিয়ে নিজের রাস্তায় চলে গেলো।

মহিলাটি কিছুদূর আসতেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। মহিলাটা এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে নাকি? তারপর ফোনটা রিসিভ করে বললো।
….স্যার, আপনি যেভাবে বলেছেন।আমি সেভাবেই করেছি।

….নূর আপনাকে সন্দেহ করেনি তো?

….আরে না না উনার কোনো সন্দেহ হয়নি।

……হুম গুড। এখন থেকে নূর যখনই ওর বাসায় থাকবে। আপনিও যতটা পারেন ওর সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। ওর ভালো মন্দের খেয়াল রাখবেন। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। ঠিক আছে?

….জ্বি স্যার আপনি যেভাবে বলবেন সেভাবেই করবো। আপনি কোনো চিন্তা করবেন না।

…হুম। ধন্যবাদ।

….আরে আপনি কেন ধন্যবাদ বলছেন? আপনার জন্য কিছু করতে পারাটা আমার জন্য সৌভাগ্য। আপনি না থাকলে আমাদের সবার না খেয়ে মরতে হতো। আপনি আমার মেয়েটাকে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার ছেলেটাকে চাকরি দিলেন। আপনার জন্য যাই করিনা কেন কম হবে।

…আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি।বায়। বলেই আদিত্য ফোনটা রেখে গাড়ির কাচ নামিয়ে মুগ্ধ নয়নে রাস্তা দিয়ে আসা নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো।
হ্যা আদিত্যই ওই মহিলাটিকে পাঠিয়েছে নূরের সাহায্য করার জন্য। যাতে বাসায় থাকা অবস্থায় নূরের খোঁজখবর নিতে পারে।

নূর হাটতে হাটতে সামনে তাকিয়ে দেখলো।আদিত্য গাড়ির ভেতর বসে আছে। নূর ভাবছে, উনি সত্যি সত্যিই আমাকে নিতে এসেছে! কথাটা ভাবতেই নূরের মনে মনে অনেক ভালো লাগলো।নূর মুচকি হেসে আদিত্যের গাড়ির সামনে এসে দাড়ালো।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হলো এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি গাড়ির ভেতর উঠে বসবে?

নূর মাথা নিচু করে ঝাকালো। আদিত্য দরজা খুলে দিতেই নূর উঠে বসলো।নূরের স্বাভাবিক থাকা দেখে আদিত্য সিওর হয়ে গেলো যে রাতের কথা ওর কিছুই মনে নেই। তাই আদিত্যও আর কিছু বললো না। তারপর আদিত্য গাড়ি স্টার্ট দিলো।নূরের কেমন যেন লজ্জা লজ্জা লাগছে। ও জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলো। নূর ভাবছে, আচ্ছা উনি আমার জন্য এতো কিছু কেন করছেন? তাহলে কি তানি যেটা বললো সেটা সত্যি? উনি কি আমাকে সত্যিই পছন্দ করেন? নূর আরচোখে আদিত্যকে দেখতে লাগলো। আদিত্য সোজা সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। নূর আবারও জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। বুকের ভেতর ধুকপুক করছে ওর। একটু পরেই ওরা ভার্সিটি পৌঁছে যায়। আদিত্য নূরকে বললো।
….তুমি নেমে চলে যাও। আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি।
নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।তারপর নেমে চলে গেল।

————————————–

নূর ক্লাস শেষ করে কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে আসছে। পিছন থেকে দেখতে পেল। আদিত্য ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে। নূর নিচের দিকে তাকিয়ে একটু লাজুক হাসলো।তারপর এগিয়ে গেল আদিত্যের কাছে।

নূর আদিত্যের কাছে এসে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আদিত্য বললো।
…বসো।দাঁড়িয়ে আছো কেন?

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই মাথা ঝাকালো। তারপর আদিত্যের পাশে বসে পড়লো। নূর বসতেই আদিত্য বলে উঠলো।
…তোমার চোখ দুটো বন্ধ করো।

আদিত্যর কথা শুনে নূর চমকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বললো।
…জ্বিহ্?

আদিত্য বললো।
…চোখ বন্ধ করতে বলেছি।আরো বড়ো করতে বলিনি। চোখ বন্ধ করো। তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।

নূর অবাক হয়ে বললো
….স সসারপ্রাইজ?

….হ্যা সারপ্রাইজ। এখন বেশি কথা না বলে চোখ বন্ধ করো।

আদিত্যের কথা মতো নূর চোখ বন্ধ করে ফেললো। একটু পরে আদিত্য ব্রঞ্চের নিচ থেকে কিছু একটা বের করে বললো
….. এখন খোলো চোখ।

নূর চোখ খুলে সামনে তাকাতেই অবাক হয়ে গেল। চোখ মুখ খুশিতে চকচক হয়ে উঠলো।দুই হাত ঠোঁটে চেপে ধরে হেসে দিলো।
আদিত্যর হাতে খরগোশ ছানাটাকে দেখে নূর অত্যন্ত খুশি হয়ে যায়। নূরকে খুশি হতে দেখে আদিত্যেরও অনেক ভালো লাগে।

আদিত্য বললো।
….কি হলো শুধু দেখবেই? কোলে নিবে না?

নূর খুশী হয়ে মাথা ঝাকালো। তারপর বাস্কেটের ভেতর থেকে খরগোশ ছানাটাকে হাতে নিল। ছানাটার গায়ে হাত বোলাতে বোলাতে বললো।
…আগের থেকে আরো সুন্দর হয়ে গেছে ও।কতো মসৃণ আর কোমল হয়ে গেছে।
তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপনি ওকে অনেক ভালো রেখেছেন। আপনি সত্যিই এত্তো এত্তো এত্তো এত্তোগুলা ভালো।

নূরের খুশি দেখে আদিত্য মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল। মুচকি হেসে বললো।
…. কালতো তিনটা এত্তো ছিল। আজ আরেকটা বেড়ে গেল?

নূরও হেসে দিয়ে বললো।
…হুম। আপনি যতো ভালো কাজ করবেন। ততই এত্তো বেড়ে যাবে।

আদিত্য দুই দিকে মাথা ঝাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে হাসলো।

নূর ছানাটাকে আদর করতে করতে যখনি চুমু খেতে যাবে। আদিত্য দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে তড়িঘড়ি করে বললো।
…এই এই কি করছো? ওকে চুমু দিচ্ছো কেন?

আদিত্যের এমন রিয়্যাকশন দেখে নূর থতমত খেয়ে গেল। ও চমকে উঠে বললো।
…কেন কি হয়েছে? ওকে চুমু খেলে কি সমস্যা?

আদিত্য আনমনেই বলে ফেললো। অবশ্যই সমস্যা আছে। তুমি শুধু আমাকে চুমু খাবে আর কাওকে না।

নূর বুঝতে না পেরে বললো।
…জ্বিহহহ্?

আদিত্যের এতক্ষণে হুঁশ এলো ও কি বলে ফেলেছে। ও কথাটা ঘুরানোর জন্য আমতা আমতা করে বললো।
…আ আই মিন,ওকে চুমু দিলে ওর লোম পেটে গেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।তাই চুমু দেওয়ার দরকার নেই।

নূর মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

হঠাৎ নূর বলে উঠলো।
…আচ্ছা আমরা কতোদিন ছানটাকে ওকে ওকে বলে ডাকবো? ছানাটার একটা নাম হওয়া উচিত তাইনা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…হুম ঠিকই বলেছো একটা নাম দেওয়া উচিৎ। তা তুমিই বলো কি নাম দিবে?

নূর কতক্ষণ চিন্তা করে হঠাৎ খুশি হয়ে বললো।
…হুম পেয়েছি। ও যেহেতু দুধের মতো সাদা তাই ওর নাম আজ থেকে মিল্কি। ভালো না নামটা?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…হুম অনেক ভালো। তুমি এতো ব্রেন খাটিয়ে রেখেছো, ভালোতো হতেই হবে।

নূরও হেসে দিলো। আরো কিছুক্ষণ ওখানে বসে নূরের চুমু দেওয়ার পর ওরা বেড়িয়ে গেলো। তারপর আদিত্য নূরকে নামিয়ে দিয়ে এলো।গাড়িতে সারারাস্তা নূর ছানার সাথে খেললো।আর আদিত্য মুগ্ধ হয়ে শুধু দেখলো। তারপর নূরকে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেলো আদিত্য।
———————————

রাত ১২ টা নূর যথারীতি ঘুমে কাদা হয়ে আছে। হঠাৎ বাইরে জোরে জোরে বৃষ্টি শুরু হলো।আর বৃষ্টির সাথে শুরু হলো ঠাস্ ঠাস্ করে বাজ পরার শব্দ। বাজ পরার শব্দে এক ঝটকায় নূরের ঘুম ভেঙে গেল। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপা শুরু হয়ে গেল। নূর কাথার ভেতর ঢুকে গুটিশুটি মেরে শুয়ে দুই কান চেপে ধরে দোয়া দরুদ পড়া শুরু করলো। হঠাৎ কারেন্টও চলে গেল। নূর আরো ভয় পেয়ে গেল। চোখ মুখ খিচে থরথর করে কাঁপতে থাকলো।ভয়ে চোখ দিয়ে পানি চলে এলো।

আদিত্য মাত্রই ঘুমিয়েছিল। বৃষ্টির শব্দে ওর ঘুমটা হালকা হয়ে এলো।আদিত্য জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ভাবলো,এই অমৌসুমে আবার বৃষ্টি কোথা থেকে আসলো। আদিত্য আবারও ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করতেই, ঠাস্ করে চোখ দুটো খুলে উঠে বসলো। আদিত্যের মনে পড়লো নূর ওর ডাইরিতে লিখেছিলো। বৃষ্টির বাজ পরার শব্দে ও অনেক ভয় পায়।তাহলে নূর হয়তো এখন ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের অনেক চিন্তা হতে লাগলো নূরের জন্য। আদিত্য তাড়াহুড়ো করে নিজের ফোনটা খুজতে লাগলো। ফোন খুঁজে বের করে নূরের নাম্বারে ফোন দিল।

নূরের ভয়ে বেহাল অবস্থা। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।নূর এমনিতেই ভয়ে ছিল তারওপর এতো রাতে ফোনের রিংটোনে ও আরও ভয় পেয়ে যায়। কাথা জড়িয়ে ধরে আরও গুটিশুটি হয়ে যায়।

নূর ফোন রিসিভ না করায় আদিত্যের টেনশন আরও বেড়ে যায়। আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে সারা ঘরে পায়চারী করতে থাকে। এক হাত দিয়ে নিজের চুল টেনে ধরে আরেক হাত দিয়ে নূরকে ফোন করতে থাকে।

এভাবে দুই তিন বার ফোন বাজার পর।চার বারের বেলায় নূর সাহস করে কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা ধরে। নূর দেখে একটা আননোন নাম্বার। নূর রিসিভ করে কানে নেয়।

নূর ফোন রিসিভ করতেই আদিত্য উদ্বিগ্ন হয়ে বলে।
…হ্যালো নূর? আর ইউ হিয়ার মি?নূর আর ইউ ওকে?নূর?

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে কোনরকমে বললো।
…ক কককে??

…নূর আমি। আমি আদিত্য। শুনতে পাচ্ছো আমাকে?

নূর অবাক হয়ে বললো।
…আ আআপনি?

….হ্যা আমি আদিত্য। নূর তুমি ঠিক আছো? তুমি কি ভয় পাচ্ছো?

নূর ভয় আর কান্না মিশ্রিত কন্ঠে কোনরকমে ঢোক চিপে বললো।
….হুউউম।

নূরের এমন করুন কণ্ঠ শুনে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ইশশ মেয়েটা কতো ভয় পেয়ে গেছে। আদিত্যের ইচ্ছে করছে এখনি দৌড়ে যেয়ে নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে সব ভয় দূর করে দিতে। আদিত্য খাটে বসে চোখ বন্ধ করে হাত শক্ত করে মুঠ করে নিয়ে নিজেকে একটু ঠিক করে নিল।তারপর নূরকে বললো।
…নূর, দেখ ভয় পেয়না। আমি আছি তোমার সাথে। আমার সাথে কথা বলো।

নূরের ভয়ের চোটে কোনো কথায় বের হচ্ছে না। শুধু জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে।
নূর কথা না বলায় আদিত্য আরো চিন্তায় পরে গেলো। নূরের নিঃশ্বাসের শব্দে আদিত্য বুঝতে পারছে নূরের ভেতরে ভয়ে হাইপার হয়ে আছে। নূরকে শান্ত করতে হবে। নাহলে ও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। আদিত্য কিছু একটা ভেবে নূরকে বললো।
…নূর আমার না এখন গান গাইতে ইচ্ছে করছে। তুমি শুনবে আমার গান?

আদিত্যের কথায় নূরের ভয়টা হালকা কমে এলো।আদিত্যের গানতো নূরের কাছে অনেক ভালো লাগে। তাই ও এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না। নূর আস্তে করে বললো।
…হুম

আদিত্য মুচকি হেসে গাওয়া শুরু করলো।

♬ ভেজা সন্ধ্যা, অঝোর বৃষ্টি ♪
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি।

হালকা আধার দিয়েছে ঘিরে
আবছা আলো নিয়েছে ছুয়ে
অল্প করে হোকনা শুরু
ভালোবাসা এখনো ভিরু।

হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি।

ডাকছে সময় পিছু
বলবে কি মন কিছু
নিবিড় এই ভালোবাসা
জোড়ালো কিছু আবাস

হয়নি বলা কোনো কথা
শুধু হয়েছে অনুভূতি

ভেজা সন্ধ্যা অঝোর বৃষ্টি
দূর আকাশে মেঘের প্রতিধ্বনি
বাদলে ঘিরেছে আকাশ, বইছে বাতাস
আড়ালে দাঁড়িয়ে তুমি আর আমি
হয়নি বলা কোনো কথা
♬ শুধু হয়েছে অনুভূতি। ♪ ♩

আদিত্যের গান শুনতে শুনতে নূর একদম শান্ত হয়ে গেলো। মন থেকে সব ভয় দূর হয়ে গেলো। মুগ্ধ হয়ে গান শুনতে লাগলো। গান শুনতে শুনতেই একসময় ঘুমিয়ে পরলো।

আদিত্য নূরের সাড়াশব্দ না পেয়ে।আস্তে করে নূরকে ডাক দিলো।
…নূর? নূর আর ইউ দেয়ার?

নূরের ভারী নিঃশ্বাসের শব্দে আদিত্য বুঝতে পারলো নূর ঘুমিয়ে পরেছে। আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর নিজেও শুয়ে পরে। আবারও নূরের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলো।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here