ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৫৮

0
7363

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৫৮

★ দুপুর ১টা
নূর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। আজ ভার্সিটি বন্ধ। তাই নূর ভেবেছে ও আজ অফিসে গিয়ে আদিত্যকে সারপ্রাইজ দিবে। তাই সকাল থেকে আদিত্যর পছন্দের খাবার রান্না করেছে। আদিত্যর জন্য লাঞ্চ নিয়ে যাবে আজ।

নূর শাড়ি পরতে পারে না। আসলে আদিত্য ওকে শিখতে মানা করেছে, তাই ও শিখেনি। নূর তাই একটা লাল রঙের জরজেটের ফ্লোর টাচ গোল জামা পড়েছে। হাতে লাল কাচের চুড়ি কানে বড়ো বড়ো ঝুমকা পরেছে। চোখে কাজল আর ঠোঁটে নুড লিপস্টিক লাগিয়েছে। মাথায় লাল হিজাব পড়ে রেডি হয়ে বের হলো নূর।
বাসায় নূরের জন্য আলাদা একটা ড্রাইবার সহ গাড়ি রাখা আছে। নূর সেই গাড়িতে করে আদিত্যের অফার গেল।

এই প্রথম নূর আদিত্যের অফিসে যাচ্ছে, তাই ওর একটু নার্ভাস লাগছে। নূর অফিসে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে রিসিপশনের মেয়েটির কাছে যেয়ে জিজ্ঞেস করলো।
….এক্সিউজ মি, আপনি কি বলতে পারবেন মিঃ আদিত্যর কেবিন কোনদিকে?

মেয়েটি বললো।
….আপনি কে? আর সারের সাথে কি দরকার?

নূর আদিত্যকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। তাই নিজের পরিচয় না দিয়ে বললো।
…আসলে আমি উনার ফ্রেন্ড। উনাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছি।

…ও আচ্ছা, কিন্তু ম্যাম স্যারতো এখন মিটিং করছে। আপনি একটু বসে ওয়েট করুন। স্যারের মিটিং শেষ হলে আপনি দেখা করতে পারবেন।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো
…ঠিক আছে।

নূর যেয়ে ওয়েট করতে লাগলো।

একটু পরে মেয়েটা আবার ডেকে বললো।
…ম্যাম সারের মিটিং শেষ। আপনি যেয়ে দেখা করতে পারেন।
মেয়েটি হাতের ইশারায় আদিত্যের কেবিন দেখিয়ে দিল।

নূর আদিত্যের কেবিনের সামনে এসে দরজায় নক করলো। আদিত্য ভেতর থেকে বললো।
…কাম ইন।

নূর আস্তে করে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। আদিত্য মাথা নিচু করে ফাইল দেখছে, তাই নূরকে খেয়াল করেনি। নূর মুচকি হেসে গলা খাঁকারি দিয়ে বললো।
….মে আই কাম ইন স্যার?

নূরের কন্ঠ শুনে আদিত্যের ভ্রু কুঁচকে এলো। এক ঝটকায় মাথা তুলে সামনে তাকালো। নূরকে অফিসে দেখে একটু অবাক হলো আদিত্য। তারউপর নূরকে এতো সুন্দর লাগছে যে আদিত্য চোখই ফেরাতে পারছে না।

আদিত্য উঠে এসে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…..ওয়াও প্রাণপাখী, তুমি কিভাবে জানলে যে এখন আমার তোমাকেই দরকার ছিল?

নূর কনফিউজ হয়ে বললো।
….মানে?

আদিত্য নূরকে ছেড়ে নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
….আজকে একটা স্টাফের ভুলের জন্য মেজাজ অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল। এখন তুমি আসায় মেজাজ আবার ফুরফুরে হয়ে গেলো। ইউ নো ওয়াট? ইউ আর দা বেস্ট।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।

নূরকে কোলে নিয়ে নিজের চেয়ারে বসিয়ে দিল। নূর একটু হকচকিয়ে উঠে বললো।
….আরে আরে কি করছো? এটা তো তোমার চেয়ার। আমাকে এখানে বসাচ্ছ কেন?

আদিত্য নূরের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে নূরের হাত দুটো একসাথে করে হাতের তালুতে চুমু দিয়ে বললো।
….তো? তোমাকে না আগেই বলেছি, তোমার আমার বলতে কিছু নেই । সবই আমাদের বুজেছ। আর যেন এই কথাটা না শুনি?

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। আদিত্য বলে উঠলো।
….তুমি বস আমি লাঞ্চের অর্ডার দিচ্ছি। কি খাবে বলো।

…কিছুই না। কারণ আমি তোমার জন্য লাঞ্চ নিয়ে এসেছি। গাড়িতে রাখা আছে। আমি ড্রাইভার কাকাকে বলছি নিয়ে আসতে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….এটাতো আরো সোনায় সোহাগা হয়ে গেলো। ওঁকে তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
কথাটা বলে আদিত্য ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হতে।

একটু পরে হঠাৎ কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো। নূর ভাবলো হয়তো ড্রাইভার কাকা এসেছে, তাই ভেতরে আসতে বললো।
দরজা ঢেলে আদিত্যর পি এ মিস লিনা ভেতরে ঢুকলো। ভেতরে ঢুকে নূরকে এভাবে আদিত্যর চেয়ারে বসে থাকতে দেখে লিনা ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..এই মেয়ে কে তুমি? ভেতরে কিভাবে ঢুকলে? আর সারের চেয়ারে বসার সাহস হলো কি করে?

লিনার কথায় নূর থতমত খেয়ে গেল। নূর বুঝতে পারছে যে মেয়েটা নিশ্চয় এখানকার স্টাফ। আর ওকে চিনতে না পেরে এমন করছে। নূর মুচকি হেসে লিনাকে বোঝানোর চেষ্টা করলো।
….আমার কথাটা তো শুন,,,,,

নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই লিনা আবার তেজী কন্ঠে বললো।
….চুপ কর তুমি। তোমাদের মতো মেয়েদেরকে ভালো করে চেনা আছে আমার। সুযোগ পেলে নাতো চলে এলে বড়লোক ছেলেদের ফাঁসাতে। তোমাকেতো আমি দেখ,,,,,

…..জাস্ট সাট আপ।
আদিত্যর ঘর কাঁপানো গর্জন শুনে কথা বন্ধ হয়ে গেলো লিনার।

আদিত্যকে দেখে নূর একটু ভয় পেয়ে গেল। ও বুঝতে পারছে যে আদিত্য চরম পর্যায়ে রেগে গেছে। নাজানি এখন কি করে বসে।

এদিকে লিনাও ভয়ে থরথর কাঁপছে।

আদিত্য অগ্নিমূর্তি হয়ে লিনার কাছে এগিয়ে এসে ক্রুদ্ধ কন্ঠে বললো।
….. হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো ওর সাথে এভাবে কথা বলার?

লিনা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোনো রকমে বলে উঠলো।
….উ উনি আপনার চেয়ারে,,,

লিনার কথা শেষ হওয়ার আগেই আদিত্য আবার গর্জে উঠে বললো।
……তো? চেয়ারে বসেছে তো কি হয়েছে? তুমি জানো ও কে? ও শুধু চেয়ারে কেন, ইচ্ছা করলে যেখানে খুশি সেখানে বসতে পারে। ইচ্ছা হলে তোমার মাথায়ও বসতে পারে। কারণ ও এই কোম্পানির মালিক। সি ইস মাই ওয়াইফ। সি ইস মিসেস সাদমান শাহরিয়ার। বুঝতে পেরেছ তুমি?

আদিত্যর কথায় লিনা চমকে গেল। তারপর কাপতে কাঁপতে বললো।
….স সসরি স্যার। আমি জানতাম না।

….ওয়াট সরি?হ্যাঁ ওয়াট সরি? তোমার সরি দিয়ে আমি কি করবো? চেন না বলেই কি তুমি একটা মেয়েকে যা খুশি তাই বলে যাবে?

নূর আদিত্যকে শান্ত করার জন্য আদিত্যের সামনে এসে আদিত্যের হাত ধরে বললো।
….ইটস ওকে ছাড়না। ও চিনতে পারেনি তাই এমন করেছে। বাদ দাও এখন।

…নূর তুমি এর মধ্যে এসোনা। এই মেয়েকে আমি আজ ছাড়বো না। ওর সাহস কি করে হলো তোমার সাথে এমন ব্যবহার করার?

লিনা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….সরি ম্যাম আমি বুঝতে পারিনি। আই এ্যাম রিয়েলি সরি।

নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
……ইটস ওকে, আপনি এখন যান। আমি দেখছি।

লিনা মাথা ঝাকিয়ে বেড়িয়ে গেলো।

….তুমি ওকে যেতে দিলে কেন? ওকে তো আজ আমি ফায়ার করেই ছাড়বো।

আদিত্য আবার তেড়ে যেতে নিলেই নূর আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….প্লিজ প্লিজ শান্ত হও। দেখ এতো হাইপার হওয়ার কিছুই হয় নি। ও ভুল করেছিল তার জন্য সরি বলেছে। এখন ছেড়ে দেও ওকে প্লিজ। দেখ আমি তোমার অফিসে প্রথম এসেছি আর তুমি এভাবে রেগে থাকবে। প্লিজ শান্ত হওনা।

আদিত্য তবুও যেন নিজেকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না।
নূর এবার আদিত্যের শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে আদিত্যের বুকে চুমু খেতে লাগলো। আদিত্য এবার একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্য নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে আবেসে চোখ বন্ধ করে নিল।

একটু পরে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে কেবিনে থাকা সোফায় গিয়ে বসলো। এক হাত দিয়ে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে, আরেক হাত নূরের কানের নিচ দিয়ে চুলের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে বললো।
….এভাবে হবেনা প্রাণপাখী। ডোজ আরেকটু বেশি লাগবে।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরের ঠোঁটে ডুব দিল। স্বাদ নিতে থাকলো নূরের রসালো ঠোঁটের। নূরও আদিত্যের চুল খামচে ধরে আদিত্যের আদরে সায় দিল। নূরের মোহে ডুবে আদিত্যর সব রাগ, ক্ষোভ পানি হয়ে গেল গেল।

ওদের চুম্বনলিলার মাঝে হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো। নূর শুনতে পেলেও আদিত্যের সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওতো ওর কাজে মগ্ন আছে। নূর আদিত্যকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে মুখ দিয়ে শুধু উম উম শব্দ বের হচ্ছে।
আদিত্য নূরকে ছেড়ে দিয়ে বললো।
….কি হয়েছে? এমন করছ কেন? শান্তিমত কি চুমুও খেতে দিবানা?

…আরে রাগ করছো কেন? দরজায় কে যেন নক করছে সেইজন্য ডাকছিলাম।

আদিত্য বিরক্ত হয়ে বললো।
…কে আবার আসলো এখন আমার রোমাঞ্চে ডিস্টার্ব করতে।

আদিত্য উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো, ড্রাইভার কাকা খাবার নিয়ে এসেছে। আদিত্য মুচকি হেসে খাবার টা হাতে নিল। তারপর ভেতরে এসে দুজনে লাঞ্চ করে নিল।

লাঞ্চ শেষে আদিত্য নূরকে বললো।
…তুমি একটু বস। আমার একটু কাজ বাদ আছে। ওটা শেষ করে আমরা একসাথে বের হবো।

নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।

বিশ মিনিট পরে আদিত্য কাজ শেষ করে নূরকে নিয়ে বের হলো। কেবিনের বাইরে এসে আদিত্য নূরের হাত ধরে সবার সামনে এসে বললো।
….এভরি ওয়ান মে আই হ্যাভ ইউর এ্যাটেনশন প্লিজ।

আদিত্যের কথায় সবাই আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….আমি আজকে আপনাদের সাথে একজনের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আর সে হলো আমার লাইফ পার্টনার, আমার ওয়াইফ মিসেস নূর সাদমান শাহরিয়ার।
আদিত্য হাত দিয়ে নূরের দিকে ইশারা করে কথাটা বললো।

সবাই ওদের জন্য তালি বাজিয়ে অভিনন্দন জানালো।
আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…ধন্যবাদ, আপনারা এখন যার যার কাজ করুন।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে বেড়িয়ে গেলো।

গাড়িতে বসে নূর বললো।
….আচ্ছা শোন না?

…..হ্যাঁ বলোনা?

….আসলে আমি আজকে সব দলবলকে ডিনারে ইনভাইট করেছি। তাই যাওয়ার সময় কিছু কেনাকাটা করতে হবে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…জো হুকুম রানী সাহেবা।
———————–

সন্ধ্যা ৭-৩০
একে একে সবাই আসা শুরু করেছে নূরদের বাসায়। সানা অনেক আগেই চলে এসেছে নূরের হেল্প করার জন্য । একটু পরে তাসির আসলো। তাসির একটা ফুলের বুকে নিয়ে এসে নূরের হাতে দিল। নূর মুচকি হেসে বললো।
….থ্যাংক ইউ ভাইয়া।

কিছুক্ষণ পরে আবির আর তানি এলো। নূর দরজা খুলে দিতেই আবির বলে উঠলো।
…. বা আদাব, বা মুলায়জা হোশিয়ার। আপনাদের সামনে হাজির হয়েছে, দ্যা গ্রেট আবিররর। সোয়াগাত নেহি কারোগি হামারা?

সানা এগিয়ে এসে বললো।
…..ঝাড়ু ছে কারেঙ্গে আপকা সোয়াগাত। টাটান টা টানা না টাট টাট টানা না,,

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..ভাবি আপনাদের বাসায় ঝাড়ুদার রেখেছেন কবে থেকে? তাও আবার এমন বেত্তামিজ ঝাড়ুদার।
তারপর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই ঝাড়ুদার দূরে যাও শু শু শুহ। আমার এত দামী কাপড় চোপড় ময়লা হয়ে যাবে। কোথাথেকে যে এসব আসে ? কথাগুলো বলে আবির ভেতরে চলে গেলো। আর সানা কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলো।

একটু পরে সায়েম আর নিশি আসলো। নূর দরজা খুলে দিয়ে বললো।
….আরে এসে গেছ তোমরা? কেমন আছো তোমরা?

….ভাল,,,,,

সায়েমের কথা পুরো হওয়ার আগেই নিশি বলে উঠলো।
….এমনিতেতো বেশি কথা বলার অভ্যাস আমার নেই। তবুও আপনি যখন জিজ্ঞেস করছেন তাই বলছি। জানেন কি হয়েছে?

নূর কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই নিশি বলে উঠলো।
….আরে আপনি কি করে জানবেন? আমি বলছি, এই সায়েম আছে না? ওকে আমি বলেছিলাম ৬টায় আসতে। ও কখন এসেছে জানেন? ও এসেছে ৬ টা ৫ মিনিটে। পুরো পাঁচ মিনিট লেট।কেমন লাগে বলেন? যাইহোক বেশি কথা বলার অভ্যাস তো আমার নেই। তবুও বলছি আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?

…আমি ভা,, ,

আবারও নূরকে থামিয়ে দিয়ে নিশি বলে উঠলো।
…অবশ্যই ভালো আছেন, তাইতো আমাদের ইনভাইট করেছেন। আমি আবার বেশি কথা বলতে পারি না। তাই আমি ভেতরে যাই।

নিশি ভেতরে যেতেই নূর হা হয়ে সায়েমের দিকে তাকালো। সায়েমও করুন চোখে নূরের দিকে তাকালো।

একটু পরে নূর ডিনার টেবিল রেডি করে সবাইকে ডিনারের জন্য ডাকলো। সবাই একে একে এসে চেয়ারে বসে গেল। আদিত্য এসে বললো।
….সানা কোথায় দেখছি না যে?

আবির বলে উঠলো।
….তাসির কোথায় ওকেও তো দেখছি না?

নূর বললো।
….তাসির ভাইয়া তো বললো, উনি একটু ফ্রেশ হয়ে আসছে। আর সানা মনে হয় রুমে গেছে, আমি ওকে ডেকে আনছি।
কথাটা বলে নূর সানার রুমের দিকে এগুলো।

সানার রুমের সামনে এসে দরজাটা একটু খুলে সানার নাম ধরে ডাকতে গিয়েও আবার থেমে গেল। রুমের ভেতর তাসির সানার কোমড় জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে, আর সানা তাসিরের গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এসব দেখে নূর থ হয়ে গেলো। ও এমন কিছু দেখতে পাবে তা কখনো ভাবেনি।

সানা আর তাসির উল্টো ঘুরে থাকায় নূরকে দেখতে পায় নি। নূর আর এক মূহুর্তও ওখানে দাঁড়িয়ে না থেকে, আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে ওখান থেকে সরে এলো। নূর মনে মনে ভাবলো, তারমানে সানা আর তাসির ভাইয়া একজন আরেকজনকে ভালবাসে। কিন্তু ওরা এটা আমাদের কাছ থেকে কেন লুকিয়েছে? আমি কি আদিত্যকে সব বলবো? নানা আমাকে আগে সানার সাথে কথা বলতে হবে।

এসব ভাবতে ভাবতে নূর ডাইনিং টেবিলের কাছে চলে এলো। নূরকে এমন অন্যমনস্ক দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি হয়েছে? কি ভাবছ এতো? আর সানা কোথায়?

নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….না না কিছু না এমনই। সানা আসছে একটু পরে। তোমরা শুরু কর।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ঠিক আছে তুমিও বস।

…তোমরা খাও আমি সার্ভ করে দিচ্ছি।

আবির বলে উঠলো।
….ভাবি আমাদের মতো হাভাতে পাবলিকদের সার্ভ করে দিতে হবে না। আমরা নিজেরাই পাতিলের তলিশুদ্ধ আঁচড়ে নিয়ে খেয়ে ফেলবো। তুমি বসতো।

তানি বলে উঠলো।
….আবির ঠিকই বলেছে নূর,আমাদের সাথে এতো ফর্মালিটি করতে হবে না। আমরা সবাই নিয়েই খেতে পারবো। তুই জিজুর কাছে বস। নাহলে দেখা যাবে আমাদের জিজু এখুনি কেঁদে ফেলবে।

তানির কথায় সবাই হেসে দিল।

একটু পরে ওখানে তাসির চলে এলো। তার কিছুক্ষণ পরে সানা এলো। নূর আরচোখে ওদের দিকে তাকিয়ে, ওদের সব এক্টিভিটি ফলো করছে।
——-

রাত ৯টা
ডিনার শেষে সবাই ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে কথা বলছে। আবির তখন বলে উঠলো।
…এমন শুধু শুধু বসে থেকে বোরিং লাগছে। কোনো গেমস খেললে কেমন হয়।

সায়েম বলে উঠলো।
…হ্যাঁ ব্রো ঠিকই বলেছো একটা গেম হলে ভালোই জমবে। তা কি গেম খেলা যায়?

তানি বলে উঠলো।
…এক কাজ করি, আমরা সবাই গানের কলি খেলি অনেক মজা হবে।

তাসির বলে উঠলো।
…আরে না না এগুলো সব মেয়েলি খেলা।

আবির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
…তারচেয়ে বরং আমরা কুতকুত খেলি। আই লা…..ভ কুতকুত।

তানি বুঝতে পারছে যে আবির কি মিন করছে। তাই দাঁত চিবিয়ে বললো।
…শুনুন গানের কলি খেলা এত সহজ না। এর জন্য ট্যালেন্ট লাগে ট্যালেন্ট। শুধু চাপাবাজী করলে হয় না। আসলে তোমরা হেরে যাওয়ার ভয়ে খেলতে চাচ্ছ না।

আবির বলে উঠলো।
…আর ইউ চ্যালেঞ্জিং আস?

সানা বলে উঠলো।
….ইয়েস, উই আর চ্যালেঞ্জিং ইউ। হয়ে যাক ছেলে ভাস এস মেয়ে। যে দল হারবে তাকে উইনার দল যা করতে বলবে, তাই করতে হবে। বল মঞ্জুর?

আবির বলে উঠলো।
…মঞ্জুর হে। এমনিতেও আমরাই জিতবো। মেয়েরা তো শুধু জানে হিন্দি গান। আর এখানে বাংলা ছাড়া আর কোনো গান হবে না। তাও বাংলাদেশের বাংলা গান। ভারতীয় বাংলা গান না। বুজেছিস?

সায়েম বলে উঠলো।
….জিতবো তো আমরাই। কারণ আমাদের কাছে আছে আদিত্য ভাইয়ার মতো সিঙ্গার। তাইনা ভাইয়া?
কথাটা বলে সবাই আদিত্যের দিকে তাকাতেই বেকুব হয়ে গেল।

কারণ আদিত্য আর নূর অন্য এক জগতেই আছে। এদের কথায় কোনো ধ্যান নেই তাদের।ওরা দুজন সোফার এককোনায় বসে আছে। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে রোমান্টিক ভাবে মুচকি হেসে, নূরের হাতের আঙ্গুলের ভেতর নিজের আঙুল ঢুকিয়ে আঙুলের সাথে খেলছে। আর নূর মাথা নিচু করে শুধু লাজুক লাজুক হাসছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে না যে এখানে আর কেউ আছে।

সবাই বেকুবের মতো ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। আবির তাসিরের দিকে ঝুকে বিড়বিড় করে বললো।
….ইয়ার আমরা কি ইনভিসিবল হয়ে গেছি নাকি? আমরা যে এতক্ষন ধরে মহাভারত করে যাচ্ছি তা ওনাদের কানেই ঢুকেনি?

তাসিরও বিড়বিড় করে বললো।
….নো আইডিয়া ইয়ার।

মেয়েগুলো শুধু মিটিমিটি হাসছে। আবির এবার উচ্চস্বরে ডেকে উঠলো।
….ভাইইইই,,

আবিরের চিল্লানিতে দুজনেই হকচকিয়ে উঠলো। নূর লজ্জায় মাথা নিচু করে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো। আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..কিরে, এভাবে ষাঁড়ের মতো চিল্লাচ্ছিস কেন? আমি কি বয়রা নাকি?

আবির বলে উঠলো।
….শুধু বয়রা কেন, সাথে অন্ধও হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে। তুই এখানে বসে বসে রোমাঞ্চ করছিস। আর আমরা যে এখানে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঘোষণা করে দিয়েছি, সে খেয়াল আছে তোর?

…..মানে?

….মানে আমাদের মধ্যে এখন গানের কলি কম্পিটেশন হবে। ছেলে ভাস এস মেয়ে। আর তুই যেহেতু জন্মগত ছেলে, তাই তুই আমাদের দলে বুজেছিস?

…আরে প্রতিযোগিতার কি দরকার আছে? সবাই মিলেমিশে খেললেই তো হয়। আলাদা আলাদা হয়ে খেলতে হবে কেন?

সায়েম বলে উঠলো।
….ব্রো বি এ ম্যান, মেয়েরা আমাদের চ্যালেঞ্জ করেছে। তো আমারা কি হার মেনে নিব নাকি? রোমাঞ্চ পরে কইরো, এখন আমাদের দলে যোগদান করো।

তানি নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ নূর তুইও আমাদের দলে চলে আয়। আজতো এদের ব্যান্ড বাজিয়েই ছাড়বো।

কথাটা বলে তানি নূরকে,আর সায়েম আদিত্যকে টেনে নিয়ে নিজেদের পাশে বসালো। আদিত্য আর অনিচ্ছা সত্ত্বেও ওদের সাথে বসলো।

দুই দল পুরো দমে রেডি। ছেলেরা আর মেয়েরা সামনাসামনি দুই সোফায় লাইন হয়ে বসে আছে। একজন আরেকজনের দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন জাত শত্রু। তবে লাইনের শেষের দিকের চিত্র ভিন্ন। সেখানে আদিত্য নূরের দিকে রোমান্টিক ভাবে তাকিয়ে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখাচ্ছে, আর নূর শুধু লাজুক লাজুক আসছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে না যে ওদের এই কম্পিটিশনে কোনো ইন্টারেস্ট আছে।

আবির ওদের ভাবতাল দেখে তাসিরের দিকে ঝুকে আস্তে আস্তে বললো।
….ইয়ার আমার তো মনে হচ্ছে, আদিত্যকে দলে নিয়ে ভুল করছি। ওর ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে ও আমাদের জন্য মীরজাফর প্রমানিত হবে। যে নিজের বউকে জিতানোর জন্য আমাদের কেই হারিয়ে দেবে।

….আরে নানা এমন কিছুই হবে না। আমরা আছি তো।

আবির সবার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো।
….ওঁকে দেন লেটস স্টার্ট দা গেম।

চলবে…..
( গেম পরবর্তী পর্বে শুরু হবে। আপনারা কোন দলকে সাপোর্ট করবেন, সেটা অবশ্যই জানাবেন 🙅‍♂️🙅‍♀️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here