ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৭৬

0
5087

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৬

★ আদিত্য গাড়ি থামিয়ে দ্রুত বাসার ভেতর ঢুকলো। বাসায় ঢুকে দৌড়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। নিজের রুমে যেয়ে দেখলো নূর ভয় জড়োসড়ো হয়ে এককোনায় দেয়ালের এটে বসে ফোঁপাচ্ছে। তানি আর সানা মিলে নূরকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আদিত্যকে এগিয়ে আসতে দেখে নূর আরও ভয়ে তানির পেছনে লুকালো। নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের কলিজাটা ছিড়ে যাচ্ছে। ওর প্রাণপাখী ওকে দেখে ভয় পাচ্ছে। আদিত্যের অপরাধ বোধটা আরও বেড়ে যাচ্ছে। নিজেকে নিজের কাছে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক মনে হচ্ছে।

আদিত্য চোখের ইশারায় তানি আর সানাকে চলে যেতে বললো। ওরা মাথা ঝাকিয়ে চলে যেতে নিলেই নূর ওদের হাত টেনে ধরলো। ওরা অনেক বুঝিয়ে একরকম জোর করেই নূরকে রেখে গেল। ওরা চলে গেলে নূর ভয় আর অভিমানে অন্য কোনো মুখ ঘুরিয়ে দেয়ালের সাথে এঁটে বসে রইলো।

আদিত্য নূরের সামনে হাটু গেড়ে বসে নূরের দিকে হাত বাড়াতে নিলেই নূর ভয়ে আরও সেঁটে গেল। নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর ছুড়ি চালাচ্ছে। আদিত্য নিজের দুই কান ধরে ছলছল চোখে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…..এমন করোনা প্লিজ? আমার সহ্য হচ্ছে না। একবার আমার দিকে তাকাও। আই এ্যাম সরি প্রাণপাখী। আমি জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছি। কিন্তু কি করবো বলো? হসপিটালে তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমি পাগল হয়ে গিয়েছিলাম। তোমাকে একবার হারিয়ে পেয়েছি, আরেকবার তোমাকে হারানোর ক্ষমতা নেই আমার মাঝে। তোমার কিছু হয়ে গেলে যে আমি বাঁচব না প্রাণপাখী। তাইতো তাসির যখন ফোন করে সবকিছু বললো। তখন আমার অনেক রাগ উঠে গিয়েছিল। আর রাগের মাথায় তোমার সাথে এমন আচরণ করে ফেলেছি। আই সরি প্রাণপাখী। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও দাও। তবুও আমাকে ভয় পেয়ে এভাবে আমার কাছ থেকে দূরে চলে যেওনা প্লিজ? আমি সহ্য করতে পারবোনা। প্লিজ প্রাণপাখী?

আদিত্যের কথায় নূর একটু শান্ত হয়ে এলো। এখন আদিত্যের জন্য প্রচুর মায়া লাগছে ওর। দোষতো ওর নিজেরই। ওভাবে হসপিটাল থেকে চলে যাওয়া টা ওর ঠিক হয় নি। আদিত্যের রাগ করাটা স্বাভাবিক। নূর শান্ত মায়া ভরা চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। আদিত্যের দিকে তাকাতেই হঠাৎ নূর দেখলো আদিত্যের হাত কেটে হাতে রক্ত জমে আছে। নূর আৎকে উঠে আদিত্যের কাছে এসে ওর হাত ধরে চিন্তিত স্বরে বললো।
….এই আ আপনার হাতে রক্ত কেন? কি হয়েছে আপনার হাতে?

নূরকে নিজের জন্য চিন্তিত হতে দেখে আদিত্য মুচকি হেসে ছলছল চোখে নূরের দিকে তাকিয়ে রইলো। আদিত্যকে চুপ থাকতে দেখে নূর আবারও বলে উঠলো।
….কি হলো বলছেন না কেন? হাতের এই অবস্থা কি করে হলো?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ও কিছুনা, এই হাতটা অনেক বড়ো অপরাধ করে ফেলেছিল। তাই ওকে শাস্তি দিয়েছি। যদিও এটা ওর জন্য খুবই সামান্য শাস্তি। ও যে অপরাধ করেছে তার জন্য ওরতো আরও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিৎ।

আদিত্যের কথায় নূর ছলছল চোখে আদিত্যের দিকে তাকালো। এই লোকটা আমাকে কত ভালোবাসে। আর আমি কিনা বোকার মতো উনাকে ভুল বুঝে ওমন একটা কান্ড করে বসলাম? উনি ঠিকই করেছে আমাকে চড় মেরে। আমাকেতো আরো মারা উচিৎ, ডাফার একটা। এসব ভেবে নূরের অনেক অপরাধ বোধ হলো। নূর তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স এনে আদিত্যের হাত পরিস্কার করে দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো।
….আপনি আসলেই একটা পাগল। এমন কেউ করে? দেখুন কতো রক্ত বের হয়েছে? রক্তের কতো মূল্য জানেন? আর যদি ইনফেকশন হয়ে যায় তখন?

আদিত্য শুধু নূরের তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। নূরের এই মিষ্টি শাসন ওর কাছে অনেক ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে ওর সেই আগের নূর ফিরে এসেছে। হঠাৎ আদিত্যের নজর পড়লো নূরের গালে। নূরের গালে লাল হয়ে আঙুলের দাগ ফুটে উঠেছে। এটা দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠলো। ইশশ কতো জোরে মেরেছি প্রানপাখী টাকে, কেমন ফুলে উঠেছে। কতো ব্যাথা করছে নিশ্চয়। এসব ভেবে আদিত্যের অপরাধ বোধ ওকে আরও কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

নূর আদিত্যের হাত পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ করে দিল। তারপর মাথা নিচু করে কান ধরে অপরাধী সুরে বললো।
….আই এ্যম অলসো সরি। আমার ওভাবে চলে যাওয়াটা একদম উচিৎ হয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিন প্লিজ। আমি আর কখনো এমন করবো না।

নূরের কথা শুনে আদিত্য আর থাকতে পারলো না। আবেগে আপ্লূত হয়ে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে নূরের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলো।চোখ বন্ধ করে কিছু সময় ওভাবেই ঠোঁট চেপে ধরে থাকলো। নূর এসবের জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। হঠাৎ আদিত্যের এমন কাজে নূর একদম ফ্রিজড হয়ে গেল।
আদিত্য নূরের ঠোঁট ছেড়ে এবার সারামুখে চুমু খেতে লাগলো। আবেগের বসে ও কি করছে তা ও নিজেও জানেনা। আদিত্য নূরের গালে চড় দেওয়া জায়গায় বারবার চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বলতে লাগলো।
….আমার কলিজাটাকে আমি মেরেছি। ইশশ অনেক লেগেছি বুঝি আমার সোনাটার? ব্যাথা করছে তাইনা? আই প্রমিজ প্রাণপাখী। আর কখনো এমন হবে না। কখনো না। এবারের মতো মাফ করে দাও আমাকে প্লিজ?

নূর আর কি বলবে? বেচারিতো শক থেকেই বেরুতে পারছে না। পুরো স্টাচু হয়ে গেছে। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেডে বসিয়ে দিল। তারপর অয়েন্টমেন্ট এনে নূরের গালে লাগিয়ে দিল। নূর এখনো শুধু আদিত্যের সেই চুমুর কথায় ভাবছে। আদিত্য চুমু দিতেই আমার এমন লাগলো কেন? যেন সারা শরীরে একটা বিদ্যুৎ বয়ে গেল। মনে হচ্ছে এই ছোয়াটা আমার অনেক চেনা। আগেও অনেক বার এই ছোঁয়া পেয়েছি। কেমন যাদু আছে উনার ছোঁয়ায়।

নূরকে চুপ থাকতে দেখে আদিত্য নূরের কাঁধ আলতো ঝাকিয়ে বলে উঠলো।
…..কি হলো কি ভাবছো?

আদিত্যের কথায় নূরের ঘোর কাটলো। নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো।
….ক কই কিছু না। এমনি।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ওকে তুমি বসো আমি তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি।

নূর জোরপূর্বক হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল।
——-

রাত ১১ টা
আদিত্য নূর একটু আগেই শুয়েছে। আদিত্য প্রতিদিনকার মতো ঘুমানোর ভান করে আছে, যাতে নূর ওর কাছে আসে আর ও নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমাতে পারে। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের কাছে এলো। আজ ওর কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে। বারবার শুধু আদিত্যের সেই চুমুর কথা মনে পড়ছে। নূর আদিত্যের একদম কাছে এসে আদিত্যের ঠোঁটের দিকে তাকালো। নূরের কেমন যেন নেশা ধরে আসছে। আবারও আদিত্যের ঠোঁটের ছোঁয়া পেতে ইচ্ছে করছে। নূর এক ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। ঘোরের মাঝেই নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের ঠোঁটের কাছে এগিয়ে যাচ্ছে। একসময় একদম কাছে চলে এলো। নূর চোখ বন্ধ করে আলতো করে আদিত্যের ঠোঁটে একটা চুমু খেল। সাথে সাথে আদিত্যের মাঝে যেন ঝড় শুরু হয়ে গেল। আদিত্য এক ঝটকায় চোখ খুলে নূরের দিকে তাকালো। নূর এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। এতদিন পর নূরকে এতো কাছে পেয়ে আদিত্যেও আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলো না। নূরের গালে হাত রেখে নূরের ঠোঁটে চুমু খেল। নূর কেঁপে উঠে আদিত্যের টিশার্ট খামচে ধরলো।এতদিনের তৃষ্ণার্ত আদিত্য সবকিছু ভুলে নূরের ঠোঁটের স্বাদ নিতে লাগলো। হারিয়ে যেতে লাগলো নূরের মাঝে।

ঠোঁটে চুমু খাওয়া শেষে ধীরে ধীরে গলায় নেমে এলো আদিত্য। নূরের গলায় ঘাড়ে চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলো। নূর আদিত্যের চুল খামচে ধরলো। হঠাৎ নূরের মাথায় কেমন যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। ওর চোখের সামনে আবারও আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। যেন এমন মুহূর্ত ওর জীবনে আগেও অনেক বার এসেছে। ধীরে ধীরে নূরের মাথার যন্ত্রণা আরও বেড়ে গেল। নূর সহ্য করতে না পেরে দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠলো।
…আহহহহ,,

সাথে সাথে আদিত্যের ঘোর কেটে গেল। আদিত্য মাথা তুলে নূরকে এভাবে দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….হেইই প্রানপাখী কি হয়েছে তোমার ? শরীর খারাপ লাগছে? মাথা ব্যাথা করছে? বলনা?

নূর আর সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। আদিত্য এবার আরও পাগল হয়ে গেল। পাগলের মতো নূরকে ডাকতে লাগলো।
….এ এই প্রানপাখী ওঠনা প্লিজ? কথা বলো। শিট আমি আবারও ভুল করে ফেললাম। আমার ভুলের জন্য নূরের এই অবস্থা হয়ে গেল। আমি কেন নিজের ওপর কন্ট্রোল রাখতে পারলাম না। কেন?

আদিত্য জোরে জোরে আবিরকে ডাকতে লাগলো। আদিত্যের চিল্লানিতে আবির সহ বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেল। নূরকে এভাবে দেখে সবাই চিন্তায় পড়ে গেল। আদিত্য বলে উঠলো।
….আবির জলদি গাড়ি বের কর। নূরকে এখুনি হসপিটালে নিতে হবে।

আবির মাথা ঝাকিয়ে দ্রুত গিয়ে গাড়ি বের করলো। আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে নিচে এসে গাড়িতে বসে হসপিটালে গেল।

হসপিটালে ডক্টর নূরকে চেক করে আদিত্যকে বললো।
…. দেখুন আপনাকে আগেও বলেছি। অতিরিক্ত মেন্টাল ট্রমা ওনার জন্য ঠিক হবে না। হয়তো কোনো বিষয় নিয়ে ওনার মাথায় অতিরিক্ত চাপ পরার কারনে উনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন।

আদিত্য চিন্তিত স্বরে বললো।
….ডক্টর নূর ঠিক আছে তো?ওর কিছু হবে নাতো?

….ডোন্ট ওয়ারি সি ইস ফাইন। একটু পরেই ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। তখন আপনারা উনাকে নিয়ে যেতে পারবেন।

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। একটু পরে নূরের জ্ঞান ফিরে আসলে আদিত্য নূরকে নিয়ে বাসায় চলে গেল।
_____________

দুই দিন পর রাত ২টা
তানির একটুও ঘুম আসছে না। তানি ঘুসমুস করে উঠে বসলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো,আবির হাতির মতো উপর হয়ে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। যেন দুনিয়া দারি বেচে দিয়ে ঘুমাচ্ছে। আর এখানে যে ওর প্রেগন্যান্ট বউ অস্থির হয়ে আছে সে চিন্তা একবারও নেই জনাবের। এসব ভেবে তানি আবিরকে জোরে জোরে ঠেলতে ঠেলতে বলতে লাগলো।
….আবির, এই আবিররর,

আবির ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে তাড়াহুড়ো করে বলতে লাগলো।
….হ্যাঁ, হ্যাঁ? কি হয়েছে? বাচ্চা এসে গেছে?

তানি দাঁত কিড়মিড় করে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বাচ্চা হয়েছে তো,এই নেও তোমার বাচ্চা।
কথাটা বলে তানি একটা বালিশ আবিরের হাতে ধরিয়ে দিল।

আবির বেচারা বেকুবের মতো তাকিয়ে বললো।
….তানি বেবি, কি বলছ এসব?

….হ্যাঁ তো কি বলবো? আমার এখানে ঘুম আসছে না অস্থির লাগছে আর তুমি কিনা আরামে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছ?

….কেন বেবি কি হয়েছে তোমার? শরীর খারাপ লাগছে? ডাক্তার ডাকবো?

….না ডাক্তার লাগবে না। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে, সেটা এনে দেও তাহলেই ঠিক হয়ে যাবে।

….রাত ২টায় তোমার খাবার খেতে ইচ্ছে করছে?

…হ্যাঁ তো প্রেগন্যান্ট লেডিদের এমনই। যখন খুশী তখনই এটা ওটা খাওয়ার ইচ্ছে জাগে। আর সেটা না খেতে পারা পর্যন্ত শান্তি লাগে না।

আবির ফোঁত করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো।
….আচ্ছা বলো কি খাবে? আমি কিচেন থেকে নিয়ে আসছি।

তানি হাসিমুখে বললো।
….আমি ফুসকা খাবো।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কিহহ এতরাতে ফুসকা কই পাবো?

….সে আমি জানি না। তোমার ছেলের এখন ফুসকা খাওয়ার শখ জেগেছে আমি কি করবো? ফুসকা না খাওয়া পর্যন্ত ও ঘুমাতে দিবে না আমাকে।

…আচ্ছা ঠিক আছে আমি মাকে বলছি তোমার জন্য ফুসকা বানিয়ে দিবে।

তানি দ্রুত বলে উঠলো।
……এই না না। আমি বাসার ফুসকা খাবোনা।

….তো?

….আমাদের বাসার সামনে যে মামা ফুসকা বিক্রি করে না,উনার ফুসকা অনেক মজা আমি ওই ফুসকা খাবো।

আবিরের মনে হচ্ছে ও বোধহয় ঘুমের ভেতর স্বপ্ন দেখছে। এটা বাস্তবে হতেই পারে না। আবির ঢোক গিলে বলে উঠলো।
….তা তানি বেবি কি বলছ এসব? তোমার মাথা ঠিক আছে তো? এতরাতে আমি ওই মামার ফুসকা কোত্থেকে আনবো? সে কি এখনো রাস্তায় তোমার জন্য ফুসকা নিয়ে বসে আছে?

….এতকিছু আমি জানি না।তোমার ছেলের এখন ওই ফুসকা খেতে ইচ্ছে করছে এতে আমি কি করবো?

….বাহ্ আমার ছেলে আমাকে চেনার আগে ফুসকা ওয়ালা মামাকে চিনে ফেললো? দেখ তানি বেবি আমার কিউটিপাই , তুমি এখন আমার ছেলেকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘুম পারিয়ে দাও। আই প্রমিজ সকাল বেলা ফুসকা ওয়ালা মামা আসতেই তোমাকে যত খুশি ইচ্ছে তত ফুসকা খাওয়াবো ঠিক আছে?

….না না আমার এখুনি ফুসকা চাই? তুমি তোমার ছেলের এইটুকু আবদারই পুরন করতে পারবে না? কেমন বাবা তুমি? দেখ তুমি যদি এখুনি আমাকে ফুসকা এনে না দিয়েছ। তাহলে আমি তোমার ছেলেকে বলবো যে তার এইটুকু আবদারই তুমি রাখোনি। সে যেন তোমাকে বাবা বলে না ডাকে,তোমাকে যেন আঙ্কেল বলে ডাকে।তখন দেখবে কেমন লাগে, যখন নিজের ছেলে নিজেকে আঙ্কেল বলে ডাকবে।

আবির করুন সুরে বললো।
….দিস ইস নট ফেয়ার তানি।তুমি এমন করতে পারোনা। এটাতো রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করছো তুমি?

…তুমি যা ভাবো তাই। আমার কথা না মানলে আমি এমনই করবো।

আবির আর উপায় না পেয়ে চাপা রাগ দেখিয়ে বললো।
….ওকে ফাইন। আনছি তোমার মামার ফুসকা।
কথাটা বলে আবির যেতে যেতে করুন চোখে উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,শেষমেশ এই ছিল কপালে?

আদিত্য নূরকে বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ ওর দরজায় ঠকঠক এর শব্দ এলো। নক করার শব্দে আদিত্যের ঘুম ভেঙে গেল। আদিত্য চোখ মুখ কুঁচকে ভাবলো এতো রাতে আবার কে এলো। আদিত্য আস্তে করে নূরকে ছেড়ে উঠে এলো। দরজা খুলে সামনে আবিরকে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো।
…কিরে তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস? তানির কিছু হয়েছে?

…..আরে কি হয়নি তাই বল? অনেক বড়ো মুসিবত হয়ে গেছে।

….মানে?

আবির আদিত্যকে সব খুলে বললো। সব শুনে আদিত্য হাসতে লাগলো। আবির বলে উঠলো।
….আমি এখানে মরছি আর তুই হাসছিস? এতরাতে ওই ফুচকাওয়ালা ব্যাটাকে কই খুঁজব? ভাই হেল্প মি প্লিজ। আমি আমার ছেলের কাছে আঙ্কেল ডাক শুনতে চাইনা। প্লিজ ভাই?

….ওকে ওকে ঠিক আছে চল কোনো ব্যাবস্থা করছি।
আদিত্য একবার নূরের দিকে তাকিয়ে দেখলো নূর ঘুমিয়েই আছে, তাই আদিত্য আস্তে করে দরজাটা চাপিয়ে আবিরের সাথে বেড়িয়ে গেল।

নিচে এসে আবির বলে উঠলো।
…ভাই এখন কি করবো? ওই ফুচকাওয়ালা ব্যাটাকে কোথায় খুঁজব?

…..দেখ ওই লোকটাকেই যে খুজতে হবে এমনতো কোনো কথা নেই? আমরা এক কাজ করি, অনলাইনে ফুচকা অর্ডার করি।তুই সেটা তানিকে দিয়ে বলবি যে এটা ওই লোকটারই। তানি কি আর এতো বুঝতে পারবে নাকি?

….আরে ভাই তুইতো দেখি কিছুই জানোস না। মেয়েরা একবার নিজেদের স্বামীকে চিনতে ভুল করতে পারে, কিন্তু কোন ফুচকাওয়ালার কোন টেস্ট এটা ভোলার নো চান্স। শেষমেশ তানি আমাকে ঘর থেকেই না বের করে দেয়? না না ভাই এমন কাজ একদমই করা যাবে না।

….তাহলে এখন কি করবো? ওই ফুচকাওয়ালা কোথায় থাকে আমরা কিভাবে জানবো?

….ভাই এক কাজ করি দারোয়ান চাচাকে জিজ্ঞেস করি। উনি হয়তো বলতে পারবেন।

…ঠিক আছে চল।

তারপর ওরা দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করল। দারোয়ান বললো সে জানে ওই ফুচকাওয়ালা কোথায় থাকে। দারোয়ান ওদের কে ঠিকানা দিয়ে দিল। ওরা ঠিকানা জেনে নিয়ে ওই ফুচকাওয়ালার বাসার উদ্দেশ্যে গেল।

অনেক খোজার পরে শেষমেশ ওই ফুচকাওয়ালার ওয়ালার বাসা পেয়ে গেল। আবির ফুচকাওয়ালার বাসার দরজায় নক করলো।

ফুচকাওয়ালা লোকটা মাত্রই তার বউয়ের সাথে একটু রোমান্টিক হচ্ছিল, তখনই হঠাৎ দরজায় শব্দ এলো। লোকটা বিরক্ত হয়ে ভাবলো, এতরাতে আবার কে এলো জালাতে? লোকটা উঠে যেয়ে দরজা খুলে আবির আর আদিত্যকে দেখে বললো।
….কেডা আফনেরা? এইহানে কি চাই?

আবির বলে উঠলো।
….ফুচকা চাই মামা।

লোকটা বিরক্তির সুরে বললো।
….আফনেরা কি পাগল নাকি? এতরাতে কেউ ফুচকা খাইতে আহে? তাও আবার বাসার ভিতরে আইসা। যান যান কালকে দিনেরবেলা পাইবেন ফুচকা।

…দেখুন আপনি বুঝতে পারছেন না ব্যাপার টা। আমাদের এখুনি ফুচকা নেওয়াটা অনেক জরুরি। নাহলে সমস্যা হয়ে যাবে।

…দেহেন আপনেগো কথা জানিনা।তয় আমি অহন জরুরি একটা কাজে ব্যাস্ত। তাই আমি এহন ফুচকা বানাইতে পারুম না।

….দেখুন এমন করে বলবেন না প্লিজ? আমদের সমস্যা টা বোঝার চেষ্টা করুন প্লিজ? আচ্ছা এককাজ করুন, আপনি ফুচকা বানান। আর আপনার যে কাজ সেটা আমাকে বলুন আমি করে দিচ্ছি।

আবিরের কথা শুনে লোকটার এবার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। কি কয় এই লোক আমার কাজ নাকি হেয় কইরা দিবো। অহন কি এই লোক আমার বউয়ের সাথে,,,

এবার আদিত্য বলে উঠলো।
…দেখুন ভাই আমরা অনেক বিপদে পড়ে এসেছি। আপনাকে সবটা বুঝিয়ে বলছি।
তারপর আদিত্য লোকটাকে সব খুলে বললো। সব শুনে লোকটা হাসি মুখে বললো।
…আরে এই কথা, আগে কইবেন না? আপনেরা একটু দাঁড়ান আমি অহনি ফুচকা আইন দিতাছি।
কথাটা বলে লোকটা ভেতরে যেয়ে একটু পরে একটা প্যাকেটে করে ফুচকা নিয়ে এসে ওদের হাতে দিল।
শেষমেশ ওদের ফুচকা মিশন শেষ হলো। ওরা ফুচকা নিয়ে বাসায় ফিরল।

আদিত্য রুমে ঢুকতেই হঠাৎ নূর দৌড়ে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী?

নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরেই ভীতু স্বরে বললো।
….,আপনি কোথায় চলে গিয়েছিলেন? জানেন আমি কতো ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম?

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ভয়ের কি আছে? এই দেখ আমি চলে এসেছি।

….আর কখনো আমাকে না বলে এভাবে একা রেখে যাবেন না। আমি অনেক ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

…আই এ্যাম সরি। আসলে আবিরের একটা দরকারে ওর সাথে একটু যেতে হয়েছিল। তুমি ঘুমিয়ে ছিলে তাই ডাকিনি। সরি আর কখনো এমন হবে না প্রমিজ।

কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।তারপর বেডে গিয়ে নূরকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

এভাবে দেখতে দেখতে আরও এক মাস কেটে গেল। নূর এখন আগের থেকে অনেক ভালো আছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু জিনিস ওর মনে পড়ে। তবে সেটা ও ভালো করে বুঝতে পারে না। তাই কাওকে বলে না। তানিরও পাঁচ মাস চলছে। একটু পেট উঁচু দেখা যায়।

সকাল ১১টা
আদিত্য অফিসে চলে গেছে। নূরের একা একা ভালো লাগছিল না তাই ও সানার রুমে এলো। সানার রুমে এসে দেখলো সানা বেডে উপর হয়ে শুয়ে থেকে ল্যাপটপে কি যেন দেখছে। নূর মুচকি হেসে সানার পাশে বসে বললো।
….কি দেখছ তুমি ?

সানা নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….আরে ভাবি তুমি? ভালো হয়েছে তুমি এসেছ। বসোনা, আমি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের ভিডিও দেখছিলাম। তুমিও দেখ আমার সাথে।

নূর মাথা ঝাকিয়ে সানার সাথে ওর বিয়ের ভিডিও দেখতে লাগলো। দশ মিনিট দেখার পর নূরের মাথায় আবারও যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। আবারও চোখের সামনে আবছা আবছা স্মৃতি ভাসতে লাগলো। এভাবে মাথার যন্ত্রণায় নূর একসময় আবারও জ্ঞান হারিয়ে ফেললো।
নূরকে জ্ঞান হারাতে দেখে সানা অনেক ভয় পেয়ে গেল। ও কাঁদতে কাঁদতে সবাইকে ডাকতে লাগলো।
____

রাত ৮টা

আদিত্য মাত্রই অফিস থেকে ফিরল। আজ অফিসে একটু বেশিই দেরি হয়ে গেছে। জানিনা আবিরের আজ কি হয়ে গিয়েছিল। বারবার নানান কাজের অজুহাতে আদিত্যকে আটকে রাখছিল। এসব ভাবতে ভাবতে আদিত্য নিজের রুমে আসলো। রুমে এসে দেখলো রুম পুরো অন্ধকার হয়ে আছে।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে নূরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে লাইট জালিয়ে বলতে লাগলো।
….নূর, নূর কোথায় তুমি? আর এভাবে রুমের লাইট কেন ব,,,,

আর বলতে পারলোনা আদিত্য। সামনে তাকাতেই ও পুরো থ হয়ে গেল।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here