ভালোবাসার চেয়েও বেশি 💞পর্ব-৭৭

0
5116

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৭

★ আদিত্য স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব বুঝতে পারছে না ও। ওর সামনে বেডের ওপর নূর বঁধু বেশে বসে আছে। একদম বিয়ের দিন যেমন সেজেছিল, আজও ঠিক ওভাবেই সেজে বসে আছে। আদিত্য পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। নড়াচড়াও যেন ভুলে গেছে। কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছে না।

আদিত্যর অবস্থা দেখে নূর মুচকি হেসে উঠে দাঁড়িয়ে ধীরে ধীরে আদিত্যের সামনে এসে দাঁড়াল। তারপর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কেমন লাগছে আমাকে বলো?

নূরের মুখে তুমি সম্বোধন শুনে আদিত্য আবারও শক খেল। আদিত্য কোনরকমে ঢোক গিলে বললো।
….এ এসব কি? তুমি এভাবে বউ সেজেছ কেন?

নূর আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠলো।
….বারে তুমিইতো বলেছিলে। এখন নিজেই ভুলে গেলে? তোমারও কি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে গেল নাকি?

….মা মানে? আমি কখন বললাম?

নূর আদিত্যের গলা জড়িয়ে ধরে বললো।
….কেন তুমি না আবির আর তানির বিয়ের দিন বলেছিলে, যে আমি যেন আমাদের প্রতি বিবাহ বার্ষিকীতে একদম বিয়ের দিনের মতো বঁধু সাজি। নিজেই বলে নিজেই ভুলে গেলে? নাকি আজ যে আমাদের ফাস্ট ম্যারেজ এনভারসারি তা ভুলে গেছ হুম?

আদিত্যর হাত পা প্রচুর কাঁপছে। ও যা ভাবছে তাকি সত্যি? সত্যিই কি ওর প্রাণপাখীর স্মৃতি ফিরে এসেছে? ওর সব মনে পড়ে গেছে? আজ যে ওদের বিবাহ বার্ষিকী সেটাতো ওর মনে আছে। কিন্তু নূরের কিছু মনে নেই দেখে ওকে কিছু বলেনি। যাতে ওর ব্রেইনে কোনো চাপ না পরে। কিন্তু আজকের দিনেই যে ওর জীবনে এতবড় খুশি আসবে সেটা ভাবতেই পারেনি ও। আদিত্য কাঁপা কাঁপা হাতে নূরের মুখটা ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো।
…..তা তারমানে তোমার সব মনে পড়ে গেছে? তু তুমি ঠিক হয়ে গেছ?

নূরও ছলছল চোখে মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যাঁ রাজকুমার আমার সব মনে পড়ে গেছে। আমার রাজকুমার কে আমার মনে পড়ে গেছে। সবকিছুই মনে পড়ে গেছে।

আদিত্যর যেন এখনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।মনে হচ্ছে ও স্বপ্ন দেখছে। নূরের মুখে এতদিন পর রাজকুমার শুনে আদিত্য খুশিতে কেঁদে উঠলো । কাঁদতে কাঁদতে নূরের কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বলতে লাগলো।
….আ আবার বলোনা রাজকুমার?

নূরও কেঁদে উঠে বললো।
….রাজকুমার।

……আবার বলো,বারবার বলো।

….রাজকুমার আমার রাজকুমার। অনেক ভালোবাসি তোমাকে রাজকুমার।

আদিত্য কাঁদতে কাঁদতে নূরকে ধরে নিচে বসে পড়লো। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….এ এটা কোনো স্বপ্ন নয়তো? আমার প্রাণপাখীটার সত্যিই সব মনে পড়ে গেছে?

নূর আদিত্যের কপালে আর দুই গালে চুমু দিয়ে বললো।
….এটা কোনো স্বপ্ন না রাজকুমার। দেখ আমি সত্যি সত্যিই তোমার সামনে।

আদিত্য আবারও নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আজকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড়ো খুশির দিন। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। আমার প্রাণপাখীটার সব মনে পড়ে গেছে। আমার আর কিচ্ছু চাইনা, কিচ্ছু না। ভালোবাসি প্রাণপাখী, ভালোবাসার চেয়েও বেশি ভালোবাসি।

কিছুক্ষণ পর আদিত্য একটু শান্ত হয়ে নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বেলকনির সোফায় এসে বসলো। নূরের গালে হাত বুলিয়ে বললো।
….এখন বলতো কিভাবে তোমার সব মনে পড়লো?

….আসলে আগে থেকেই মাঝে মধ্যে কিছু কিছু জিনিস আমার মনে পড়ছিল। কিন্তু আজকে যখন সানার সাথে আমাদের বিয়ের ভিডিও দেখছিলাম তখন হঠাৎ আমার আবারও যন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল। আর এক এক করে সবকিছুই আমার মনে পড়তে লাগলো। একসময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। আর যখন জ্ঞান ফিরলো তখন আমার সবকিছু মনে পড়ে গেছে।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….এক মিনিট, তোমার জ্ঞান হারিয়ে গিয়েছিল আর আমাকে কেউ কিছু জানালো না? তোমার যদি কিছু হয়ে যেত ত,,,

আদিত্যর কথা শেষ হওয়ার আগেই নূর আদিত্যের ঠোঁটের উপর তর্জনী আঙুল ঠেকিয়ে বলে উঠলো।
…..হুঁশশ, সবকিছুতেই এতো হাইপার হয়ে যাও কেন তুমি হুম? ওদের সবাইকে আমিই মানা করেছিলাম। কারণ আমি তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই সবাইকে তোমাকে কিছু বলতে মানা করেছিলাম। আর আবিরকে বলেছিলাম যে তোমাকে যেন অফিসে একটু বেশি সময় আটকে রাখে।যাতে আমি আমার সারপ্রাইজ রেডি করতে পারি।

আদিত্য নূরের আঙুলে চুমু খেয়ে, হাতটা ধরে হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….দিস ইস মাই বেস্ট সারপ্রাইজ এভার।

নূর মাথা নিচু করে লাজুক হাসলো। এতদিন পর নূরের এই লাজুক হাসি দেখে আদিত্য আবারও মুগ্ধ হয়ে গেল। আদিত্য নেশা লাগানো চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূরেরও কেমন ঘোর লেগে আসছে। দুজন দুজনের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দুজনের নিঃশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। আদিত্য আস্তে করে নূরের নাকের বড়ো নথটা খুলে ধীরে ধীরে নূরের ঠোঁটের ওপর দিয়ে নামিয়ে দিল। নূর শিহরণে চোখ বন্ধ করে মুখটা হালকা উঁচু করে নিল। নূরের অধর জোড়া কাঁপছে। যা দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। আদিত্য খুব করে চাইছে নূরকে আদর করতে। কিন্তু কোথাও একটা বাঁধা কাজ করছে। বারবার শুধু সেদিনের কথা মনে পড়ছে ওর। ওর ভয় লাগছে যদি আবারও নূর সেদিনের মতো অসুস্থ হয়ে যায়?

আদিত্যর সারা না পেয়ে নূর চোখ খুলে দেখলো আদিত্য কেমন দ্বিধা চোখে তাকিয়ে আছে। নূর হয়তো ব্যাপার টা বুঝতে পারলো। তাই ও নিজে থেকেই আদিত্যকে আদর করতে লাগলো। নূর ধীরে ধীরে আদিত্যের শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। সবগুলো বোতাম খোলা শেষে শার্টটা সামনে থেকে দুই দিকে সরিয়ে দিল। নূর মুখ নামিয়ে আদিত্যের পেটে চুমু খেল।পেট থেকে চুমু খেতে খেতে উপর দিকে উঠে বুকে আর গলায় চুমু খেল। আদিত্য সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে মুচকি হেসে, নূরের কোমড় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। নূর আদিত্যের কানে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বললো।
….ভালোবাসো আমাকে, অনেক ভালোবাসো।
কথাটা বলে নূর আদিত্যের ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিল।

নূরের এমন আহবানে আদিত্য আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। এক হাত দিয়ে কোমড় জড়িয়ে ধরে, আরেক হাত নূরের কানের নিচে দিয়ে নূরের ঠোঁটে ডুব দিয়ে অধরসুধাপান করতে লাগলো। নূরও আদিত্যর চুল খামচে ধরে আদিত্যের তালে তাল মেলাতে লাগলো। আদিত্যের এতদিনের সব কষ্ট চুষে নিতে লাগলো। চুমু খেতে খেতে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।

রুমে এসে আদিত্য নূরকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে নামিয়ে দিল। নূরকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে, প্রথমে নূরের মাথার ঘোমটাটা খুললো,তারপর ধীরে ধীরে নূরের সব গহনা খুলতে লাগলো। একটা করে গহনা খুলছে আর সেখানে চুমু দিচ্ছে। নূর মাথা নিচু করে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। গহনা খোলা শেষে আদিত্য নূরকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর আবারও নূরের অধর যুগলে ডুব দিল। চুমু খেতে খেতে নূর আদিত্যের শার্ট কাঁধ থেকে নিচে নামিয়ে খুলে ফেলে দিল। আদিত্য নূরকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে বিছানার দিকে এগুলো। এতদিনের তৃষ্ণার্ত দুটি হৃদয় দুজন দুজনকে ভালোবাসায় ভরিয়ে দিতে লাগলো। পুরনো সব দুঃখ কষ্ট ভুলে পারি দিল এক সুখের সাগরে।
_________

সকাল ৭টা
নূর আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের দিকে তাকিয়ে থেকে, আঙুলের উল্টো পাশ দিয়ে আলতো করে নূরের গালে স্লাইড করছে।

একটু পরে নূর ঘুম ভেঙে চোখ খুলে তাকালো। চোখ খুলে আদিত্যকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে নূর আদিত্যের গালে হাত রেখে মুচকি হেসে বললো।
…..গুড মর্নিং হাসব্যান্ড।

আদিত্য নূরের হাতের তালুতে চুমু খেয়ে বললো।
….গুড মর্নিং ওয়াইফি।

…..কখন উঠেছ?

…..ঘুমালে তো উঠবো।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….মানে?

….মানে আমি ঘুমাইনি। সারারাত জেগে ছিলাম।

…..কেন?

….কারণ আমার ভয় করছিল,যদি সবকিছু স্বপ্ন হয়ে যায়। যদি চোখ খুলতেই সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে যায়। সেই ভয়েই আমি চোখ বন্ধ করিনি। সারারাত তোমাকে দেখেই কাটিয়েছি।

আদিত্যর কথায় নূরের চোখে পানি চলে এলো। নূর আদিত্যের ঠোঁটে চুমু খেয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
…..আই এ্যাম সরি। আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি তাইনা? আমার বোকামির জন্য এতদিন ধরে আমার রাজকুমার এতো কষ্ট পাচ্ছিলো। আই এ্যাম সরি সোনা।

আদিত্য এবার একটু সিরিয়াস হয়ে বললো।
….আমি রাতে তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করিনি। কিন্তু এখন বলো,সেদিন আসলে কি হয়েছিল? তুমি কোথায় গিয়েছিলে? আর তোমার এই অবস্থা কি করে হলো? কেউ কি তোমার সাথে কিছু করেছিল, বলো আমাকে?

আদিত্যের কথা শুনে নূর মাথা নিচু করে ফেললো। আদিত্য আবার বলে উঠলো।
….কি হলো বলো? দেখ একদম ভয় পেয়ও না। যে এসব করেছে তাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না। আমার প্রাণপাখীকে এতো কষ্ট দেওয়ার ফল তাকে পেতেই হবে। বলো প্রাণপাখী?

নূর চোখের পানি মুছে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ বলবো আমি। আজ তোমাকে সব বলবো।
সেদিন তোমার সাথে কথা বলার পাঁচ মিনিট পর আমার ফোনে একটা ফোন এলো। ফোনটা রিপা আপুর ছিল।

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….রিপা মানে, তোমার ওই সৎ বোনটা?

….হ্যাঁ।

….তারপর?

…..রিপা আপু আমাকে বললো রবি নাকি স্কুলে কারো সাথে মারামারি করে হাত ভেঙে ফেলেছে। বাবাও এখন বাসায় নেই তাই আমি যেন একটু ওখানে যাই। ও নাকি একা একা কিছু বুঝতে পারছে না। রবির কথা শুনে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম। তাই আমি যেতে রাজি হয়ে গেলাম। রিপা আপু আমাকে আরও বললো, আমি যেন বাবাকে বা আমাদের পরিবারের কাওকে না বলি। শুধু শুধু সবাই টেনশনে পরে যাবে। একবার রবি ঠিক হয়ে গেলে, পরে সবাইকে বলা যাবে। আর বাসার গাড়িও নিয়ে যেতে মানা করলো।বললো, ওখানকার রাস্তা নাকি অনেক চিপা আর এব্রোখেব্রো। আমিও বেশিকিছু না ভেবে রিপার কথায় রাজি হয়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে রিপার বলা ঠিকানা অনুযায়ী বেড়িয়ে পরলাম আমি।

রিপার বলা ঠিকানায় যেয়ে দেখলাম রিপা একটা নিরিবিলি নির্জন গলির একসাইডে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ওর কাছে যেয়ে বললাম।
….এটা কেমন জায়গা? এখানে তো কোনো হসপিটাল দেখতে পাচ্ছি না?রবি কোথায়?

রিপা বলে উঠলো।
….,আরে আছে আছে , তুই আমার সাথে আয়। আমি তোকে নিয়ে যাচ্ছি।

আমি মাথা ঝাকিয়ে ওর সাথে সাথে গেলাম। এই ফাঁকে ও কখন আমার ফোনটা নিয়ে নিয়েছে আমি টেরই পাইনি। অনেকক্ষাণি হাঁটার পর ও আমাকে একটা পুরাণ গোডাউনের ভেতর নিয়ে গেল। সেটা দেখে আমি বললাম।
….এটা কোন জায়গায় নিয়ে এলে আমাকে? আর রবি কোথায়?

….রবিতো যেখানে থাকার কথা সেখানেই আছে। ওর স্কুলে।

….মানে? তুমি না বললে ও মারামারি করে হাত ভেঙে ফেলেছে? এসবের মানে কি?

রিপা হঠাৎ সয়তানের মতো হাসতে লাগলো। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না? আমার কেমন যেন ভয় লাগছিল। রিপা সয়তানি হেসে বললো।
….তুই না আসলে সেই বোকাই রয়ে গেলি। আমি বললাম আর তুই চলে এলি? একবারও সত্য মিথ্যা জানার চেষ্টা করলি না?

…..মা মানে? এসব কি বলছ তুমি? আর আমাকে এভাবে মিথ্যে বলে ডেকে আনার মানে কি?

….মানে হচ্ছে প্রতিশোধ, হ্যাঁ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ডেকেছি তোকে।

….প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশোধ? আমি তোমার কি ক্ষতি করেছি?

….কি ক্ষতি করেছিস তাইনা? ন্যাকা সাজা হচ্ছে? তুই জানিস না তুই কি করেছিস? তুই আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছিস? তোর স্বামীর সাথে মিলে আমার মাকে জেলে পাঠিয়ে তাকে ফাঁসি দিয়েছিস। আমাকে অনাথ বানিয়েছিস। আবার বলছিস কি করেছিস?

….দেখ আপু তোমার মা যে অন্যায় করেছে, সে তার শাস্তি পেয়েছে। সে আমার মা দাদিকে খুন করেছে। আর একজন খুনির শাস্তি ফাঁসিই হয়। এতে আমার কি দোষ?

রিপা হঠাৎ এসে আমার গালে থাপ্পড় মেরে দিল। আমি ফ্লোরে পরে গেলাম। রিপা আমার চুলের মুঠি ধরে বললো।
…. তোর কি দোষ তাইনা? তোরই সব দোষ। আমার মা যা করেছে একদম ঠিক করেছে তোদের সাথে এমনই হওয়া উচিৎ। তোকেও সেদিন মেরে ফেললে আজ এই দিন দেখতে হতো না। তোর জন্য আমি আমার মাকে হারিয়েছি। মা যাবার পর থেকে আমার জীবন নরক হয়ে গেছে। তোর বাবা তো বাচ আমাকে ভাত দিয়ে পালছে এটাই তার কাছে বেশি। মা থাকতে রাজরানীর মতো থাকতাম আমি। আর এখন কাজের বুয়ার মতো বাসার সব কাজ আমাকে করতে হয়। এক এক টাকার জন্য ফকিরের মতো বাবার সামনে ধন্না ধরতে হয়। এইসব কিছু তোর আর তোর বরের জন্য। আমার জীবন নরক বানিয়ে, তোরা স্বর্গের সুখ অনুভব করবি,সুখে শান্তিতে সংসার করবি তাতো আমি হতে দেবনা। এবার কষ্ট ভোগের পালা তোদের।ওই আদিত্য তোকে অনেক ভালোবাসে না? তোর জন্য এইসব করেছে। যদি তুইই ওর জীবনে না থাকিস তাহলে ওর কি হবে?

রিপার কথা শুনে ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠল। আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম।
….মা মানে কি ক করতে চাও তুমি?

….আমার জীবন থেকে যেমন আমার মাকে কেড়ে নিয়েছিস তোরা,তেমনি ওই আদিত্যের জীবন থেকেও তোকে কেড়ে নেব। আর সারাজীবনের মতো নরক যন্ত্রণা পাবে ও।

মরতে হবে তোকে। আমার মাকে যেমন মেরেছিস তেমন তোকেও মরতে হবে।

আমি কাকুতি মিনতি করে বললাম।
….প্লিজ আপু দয়া করে এমন করোনা। ছেড়ে দাও আমাকে। আমাকে ছাড়া আদিত্য বাঁচতে পারবে না মরে যাবে ও।

রিপা সয়তানি হাসি দিয়ে বললো।
….এটাই তো আমি চাই। তুই মরে যাবি, আর আদিত্য বেঁচে থেকেও মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করবে।তবেই আমার কলিজায় শান্তি হবে। আমিতো সেদিন থেকেই তোকে মারার প্ল্যান করছি। যেদিন আমার মায়ের ফাঁসি হয়েছিল। আমি মনে মনে পণ করেছিলাম যে, তোকেও আমি মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করাবো। কিন্তু আমি জানতাম আদিত্য থাকতে এটা কখনোই সম্ভব না। আদিত্য যেভাবেই হোক তোকে বাচিয়ে ফেলবে। তাই আমি শুধু একটা সুযোগের সন্ধানে ছিলাম। আর শেষমেশ সেই সুযোগটা পেয়েও গেলাম। যেদিন রবির মুখে শুনলাম যে ওর আদিত্য জিজু বিদেশে গেছে। সেদিন থেকেই আমি প্ল্যানিং শুরু করলাম। তোকে কখন কিভাবে মারা যায়। আর আজ সেই সুবর্ন সুযোগটা চলে এলো। তুই জানিস এই জায়গাটা একদম নিরিবিলি, কোনো লোকজন নেই। তুই সাহায্যের জন্য চিৎকার করলেও কেউ আসবে না। গোডাউনের পেছনেই আছে নদী। তোকে মেরে এই নদীতেই ফেলে দেব। কাক পক্ষিও টের পাবে না।

আমি অনেক কান্না করে কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম, কিন্তু ও আমার কথা শুনল না। একসময় আমি সুযোগ বুঝে রুপাকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে দৌড় দিলাম। দরজার কাছাকাছি আসতেই ও পেছন থেকে একটা রড দিয়ে আমার মাথায় বাড়ি মারলো। আমি মাথায় হাত দিয়ে ওখানেই লুটিয়ে পরলাম। তারপর আর কিছু মনে নেই আমার। হয়তো তারপর ও আমাকে ওই নদীতে ফেলে দিয়েছিল।

এতক্ষণ নূরের সবকথা শুনে আদিত্যর চোখে যেন রক্ত উঠে গেল। কপালের রগ ফুলে যেন ফেটে যেতে চাইছে। চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। নূর দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….জানো, জ্ঞান হারানোর শেষ মুহূর্তে শুধু তোমার চেহারাটাই চোখে ভাসছিল। মনে হচ্ছিল তোমাকে বুঝি আর কখনো দেখতে পাবোনা।

আদিত্য নূরকে নিজের বুকের ভেতর শক্ত করে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই সরি প্রাণপাখী। আমার জন্যই সব হয়েছে। আমি যদি তোমার কাছ থেকে দূরে না যেতাম তাহলে এসব কিছুই হতো না। আই এ্যাম সরি। আমি থাকতেও আমার কলিজাটাকে এতো কিছু ভোগ করতে হলো।

নূর আদিত্যের মুখটা ধরে বললো।
….তোমার কোনো দোষ নেই এতে। প্লিজ নিজেকে দোষ দিওনা। আমারই ভুল হয়েছিল রিপার কথা বিশ্বাস করে ওখানে যাওয়া।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….আমি ওকে ছাড়বোনা প্রাণপাখী। কিছুতেই না। ও আমার প্রানপাখীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। ওকে আমি এমন ভয়ানক শাস্তি দেব যে ও,যতবার জনম নেবে ততবারই এই ভয়ে ওর রুহ কেঁপে উঠবে। দুনিয়াতে আসার জন্য আপসোস করবে ও। দেখ তুমি কিন্তু কিছু বলতে পারবে না। আমি কিন্তু তোমার কথা শুন,,

আদিত্যের কথা শেষ হওয়ার আগেই নূর বলে উঠলো।
….কিছুই বলবো না আমি। তোমার যা খুশি তাই করো ওর সাথে। ও শুধু আমাকে কষ্ট দিলে হয়তো আমি ওকে ছেড়েও দিতাম। কিন্তু ও আমার রাজকুমার কে কষ্ট দিয়েছে। এতটা দিন তোমাকে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করিয়েছে। তাই আমিও চাই ও শাস্তি পাক ভয়ংকর শাস্তি।
________

দুপুর ১২টা
রবি বসে টিভি দেখছে। রিপা পাশে বসে আছে। নূর ফিরে আসার পর থেকে ও অনেক ভয়ে ভয়ে থাকে নাজানি কখন নূরের স্মৃতি ফিরে আসে আর ওর কথা সবাইকে বলে দেয়। ওর ভাবনার মাঝেই হঠাৎ দরজায় কলিং বেল বেজে উঠল। রবি যেয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখলো আদিত্য, নূর, আবির আর তাসির দাঁড়িয়ে আছে। রবি খুশি হয়ে বলে উঠলো।
….আরে আপু তোমরা কেমন আছো সবাই?

রুপা হঠাৎ ওদের দেখে ভয়ে কাঁপতে লাগলো। এরা এখানে কি করছে?

নূর রবিকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আমি ভালো আছি ভাই। তুই কেমন আছিস।

রবি অবাক হয়ে বললো।
….আপু তোমার সব মনে পড়ে গেছে?

…হ্যাঁ ভাই আমার সব মনে পড়ে গেছে।

নূরের কথা শুনে রিপার এবার ভয়ে অন্তর শুকিয়ে আসছে। নূরের সব মনে পড়ে গেছে? তাহলে কি নূর সবাইকে সবকিছু বলে দিয়েছে? এখন কি করবো আমি?

আদিত্যেরা সবাই ভেতরে এসে দাঁড়াল। আদিত্য রিপার দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
…কি ব্যাপার মিস রিপা? এতো ভয় পাচ্ছেন কেন? আপনার কোনো অপরাধ ধরা পড়ে গেছে নাকি?

রিপা জোরপূর্বক হেসে বললো।
….কি বলছেন এসব? আমি আবার কি অপরাধ করেছি?

নূর এসে ঠাসস করে রিপার গালে চড় মেরে বললো।
….কি করেছিস জানিস না তাইনা? আমাকে মেরে ফেলতে চেয়ে এখন বলছিস কি করেছিস তাইনা? তুইও তোর মায়ের মতোই নিকৃষ্ট হয়েছিস।

আদিত্য তাসিরকে চোখের ইশারায় রবিকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে বললো। তাসির মাথা ঝাকিয়ে রবিকে নিয়ে গেল।

আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে বললো।
….এটা মনে হয় তোকে সবকিছু ক্লিয়ার ভাবে মনে করিয়ে দেবে তাইনা?

তখনই নূরের বাবা ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো। আদিত্যকে এভাবে দেখে চমকে গিয়ে বললো।
…কি হয়েছে আদিত্য তুমি এভাবে ওর মাথায় গান ঠেকিয়েছ কেন?

….এখুনি বুঝতে পারবেন বাবা। মিস রিপা এখুনি সব বলবে। তাইনা?

রিপা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে সব বলে দিল। সব শুনে নূরের বাবা রিপাকে একটা থাপ্পড় মেরে বললো।
….আমার আগেই বোঝা উচিৎ ছিল যে সাপের পেট থেকে সাপই হয়। আমার আগেই তোকে এখান থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ ছিল। আদিত্য তোমার ওর সাথে যা করার করো। আমি কিছুই বলবো না।

আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে বললো।
….তো মিস রিপা চলুন যাওয়া যাক? আপনার সাথে অনেক হিসাব নিকাশ বাদ আছে।

রিপা হঠাৎ নূরের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি আর কখনো এমন করবো না প্লিজ।

নূর রিপার কাছ থেকে পা ছাড়িয়ে সরে এসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..নিয়ে যাও একে। আমি আর একমুহূর্তও ওকে সহ্য করতে পারছি না।

আদিত্য রিপার চুলের মুঠি ধরে বললো।
…শুনলিতো আমার প্রাণপাখী কি বললো? তোকে ওর একদম সহ্য হচ্ছে না। আর আমার প্রাণপাখী যাকে সহ্য করেনা তাকে আমি কিভাবে সহ্য করি বল? এখন চুপচাপ আমার সাথে চল। নাহলে আজকেই তোর জীবনের শেষ দিন হবে।

কথাটা বলে আদিত্য রিপার মাথায় গান ঠেকিয়ে রিপাকে ওর সাথে নিয়ে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here