ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:২৪

0
1419

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

২০.

সকাল ছয়টা।ফোনের তীক্ষ্ণ আর তীব্র শব্দে অন্তর ইচ্ছুক ঘুমের সুঁতো ছিড়ে গেল।বিরক্ত হয়ে বালিশের পাশে রাখা ফোন হাতে নিয়ে ভ্রু কুচকে দেখলো ‘নির্ভীক ভাইয়া’ কল দিয়েছে।অন্ত রেগে কল কেটে দিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুলো।নির্ভীক আবার কল দেওয়ায় বিরক্ত হয়ে ফোন অফ করে আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলো কিন্তু ঘুম আর আসছেনা তাই আবার ফোন অন করে সেই ছবিটা দেখতে লাগলো।কিছুক্ষণ ছবি দেখে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে উঠে ফ্রেশ হল।মাছের অ্যাকুরিয়ামে খাবার দিয়ে ভাবলো নিচে তো আরেকটা অ্যাকুয়ারিয়াম আছে যাই ওটাতেও খাবার দিয়ে আসি।অন্ত ছোট ছোট পা ফেলে হাই তুলতে তুলতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় সিঁড়ির মাঝ বরাবর এসে খেয়াল করলো একদম নিচের সিঁড়িটায় নির্ভীক হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।অন্ত ফোন তুলছিল না দেখে নির্ভীক রাগ করে এখানে চলে এসেছে।এসেই তার মনপরীকে দেখে সব রাগ হাওয়া হয়ে যায় কিন্তু নির্ভীককে দেখেই অন্ত ভয় পেয়ে উল্টো দিকে ঘুরে দ্রুত চলে যেতে লাগলো।নির্ভীককে ভয় পাওয়ার প্রথম কারন সে নির্ভীকের কল কেটে দিয়েছে আর দ্বিতীয় কারন নির্ভীক ওকে সামনে পেলেই ঠোঁট খেয়ে ফেলতে চেয়েছে। অন্তকে যেতে দেখে নির্ভীকও বসে নেই, অন্তর পেছনে ছুটে গেল।অন্ত ঘরে ঢুকে দরজা দিবে তখনই নির্ভীক এসে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে অন্তকে দরজার পাশে দেয়ালে সাথে চেপে ধরে মুচকি হেসে বলল,

‘গুড মর্নিং পিচ্চি।কোথায় পালাচ্ছ হুম?’

অন্ত ভীত চোখে নিজের দুই হাতের দিকে তাকালো।নির্ভীক ওর দুই হাত দেয়ালে চেপে ধরে আছে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে ভীত চোখে মাথা উপরে তুলে নির্ভীকের দিকে তাকাতেই নির্ভীক বলল,

‘ইশ!এভাবে তাকিয়ো না,আমি উন্মাদ হয়ে যাই।’

অন্ত আরও ভয় পেয়ে কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে।নির্ভীককে এত কাছে দেখে দম আটকে আসছে।কোথাও কিছু একটা হচ্ছে।অন্ত ভয় পেলেও রাগী হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

‘আপনি এখানে কেন এসেছেন?কি চাই?’

নির্ভীক অন্তর মুখের সামনে মুখ নিয়ে মাথা বামে সামান্য কাত করে বলল,

‘এভাবে বল না প্লিজ।তোমার ঘুম ঘুম ঘুম মুখে এত মিষ্টি কথা শুনে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিনা।আমার শুধু তোমাকে চাই,দিবা?’

অন্ত মাথা ডান দিকে ঘুরিয়ে ডান গাল দেয়ালে ঠেকিয়ে রাগী কন্ঠে বলল,

‘সরুন,দূরে যান।’

নির্ভীক অন্তর আরও কাছে দাঁড়িয়ে এক হাতে অন্তর দুই হাত আর অন্য হাতে অন্তর গাল ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বলল,

‘যেতে পারি বহুদূর কিন্তু কেন যাব?আমি তোমার থেকে দূরে যেতে চাইনা আর তোমাকেও আমার থেকে দূরে যেতে দিতে চাইনা।চলো বিয়ে করি,বেঁধে ফেলি তোমাকে সম্পর্কের জালে।’

অন্তর বার বার মনে হয় নির্ভীকের বলা প্রত্যেকটা কথা এর আগেও কেউ বলেছে ওকে। এই কথাগুলো তার চেনা।অন্ত কিছু একটা ভেবে ভ্রু কুচকে বলল,
‘কে আপনি?দেখি হাত দেখান আপনার।’

নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,
‘তুমি জানো আমি কে।’

অন্ত অন্যমনস্ক হয়ে বিরবির করে বলল,

‘হুম জানি,ছবিতে ওটা আপনিই না?’

নির্ভীক অন্তর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,
‘কি জানো?কিসের ছবি?’

অন্ত চিন্তিত হয়ে কিছু বলবে তখনই নির্ভীক অন্তর ঠোঁটের কোনায় বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলো।অন্ত একহাতে নির্ভীকের হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

‘আপনি নির্ভীক ভাইয়া নয়।’

নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর ঠোঁটের কোনায় চুমু দিয়ে বলল,
‘ওকে আমি নির্ভীক নই।’

অন্ত রেগে বলল,
‘সরুন।’

নির্ভীক আবার অন্তর ঠোঁটে আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে নেশা ধরা কন্ঠে বলল,

‘এখানে একটা কিস করি?প্লিজ একটা শুধু।’

সঙ্গে সঙ্গে ইচ্ছেমতি কেশে উঠে বলল,

‘এটেনশন,এটেনশন,এটেনশন প্লিজ।আমি এখানে আছি।’

ইচ্ছেমতি বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল।নির্ভীক আর অন্তর কথা শুনে ঘুম ভেঙ্গে যায়।এতক্ষণ চুপচাপ দুজনার প্রেম করা দেখলেও এখন আর চুপ থাকতে পারলো না।ইচ্ছেমতির কথা শুনে নির্ভীক বুলেট ট্রেনের গতিতে অন্তকে ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।কপালে আঙুল ডলতে ডলতে বিরবির করে বলল,

‘শান্তি মতো প্রেম করব তারও উপায় নেই!’

অন্ত আড় চোখে নির্ভীকের দিকে তাকাতে তাকাতে ইচ্ছেমতির পাশে বসলো।নির্ভীক অন্তর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

‘আমি আসছি ওকে?সি ইউ।’

বলেই দ্রুত রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।ইচ্ছেমতি অন্তকে খোঁচা দিয়ে বলল,

‘তোকে দিয়ে হবেনা।রাতে কি বলেছিলাম?নির্ভীক ভাইয়ার সাথে দেখা হলে সানভির কথা বলবি।বললিনা কেন?’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘কে নির্ভীক ভাইয়া?ওটা নির্ভীক ভাইয়া নয় আর সানভি কে?আজাইরা ঝামেলা দিসনা তো।’

শেষের কথাটা বিরক্ত হয়ে বলেই অন্ত ফোন নিয়ে বেলকুনিতে যেয়ে আরাফের কাছে কল করে সব বলে দিল।পুরোনো অভ্যাসেই আরাফকে জানালো।তাছাড়াও কয়েকবছরেরর পুরোনো সব কথায় তার এখন মনে পরে।

সারারাত ধরে ইলশেগুঁড়ি হওয়ার পর আকাশ পরিষ্কার হয়েছে।সব ধুলোবালি বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে চারপাশ ঝকঝক করছে।খট খটে নীল আকাশ রোদে ভরে গেছে।ইচ্ছেমতি আর অন্ত সবেমাত্র ভার্সিটিতে পা রেখেছে তখনই প্রান্ত এসে ইচ্ছেমতির সামনে দাঁড়ালো।
ইচ্ছেমতির হাত ধরে উৎফুল্ল ভঙ্গিতে বলল,

‘তুমি জানো আমি কত খুশি হয়েছি?বিনা পরিশ্রমে বাচ্চার বাবা হচ্ছি।আমি কতটা খুশি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা।’

শেষের কথাটা প্রান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলে রাগী চোখে ইচ্ছেমতির দিকে তাকিয়ে থাকলো।প্রান্তর কথা শুনে আশেপাশের সবাই কৌতূহলি চোখে ইচ্ছেমতির দিকে তাকাচ্ছে।লজ্জায় ইচ্ছেমতির মাথা কাঁটা যাচ্ছে আবার প্রান্তর রাগী মুখ দেখে ভয়ও করছে।ইচ্ছেমতি মুখ কাচুমাচু করে কিছু বলার আগেই অন্ত বিরক্ত হয়ে বলল,

‘এই চলতো ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।’

প্রান্ত মুচকি হেসে বলল,

‘অহ হো বোনু,তুমি এখানে কি করছো?ঐ তো নির্ভীক তোমার জন্য ওখানে ওয়েট করছে।যাও কথা বল ওর সাথে।’

প্রান্তর দৃষ্টি অনুসরণ করে অন্ত বাম পাশে তাকাতেই একটু দূরে নির্ভীককে দেখতে পেল।নির্ভীক বুকে হাত গুজে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল।অন্ত তাকাতেই চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ঠোঁট চোখা করে অন্তর জন্য একটা চুমু হাওয়ায় ভাসিয়ে দিল।অন্ত ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে যেতে লাগলো।নির্ভীক ভাবতেও পারেনি অন্ত এত সহজে তার কাছে যাবে।অন্তকে আসতে দেখেই নির্ভীক সোজা হয়ে দাঁড়ালো।ইচ্ছেমতিও প্রান্তর হাত থেকে বাঁচার জন্য অন্তর পেছনে আসতে চেয়েছিল কিন্তু প্রান্ত তাকে আটকে দিয়ে বলল,

‘কোথায় যাচ্ছো বউ?’

ইচ্ছেমতি মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,

‘আসলে প্রান্ত ভাইয়া আমি খুবই সরি।আমার তেমনটা করা একদমই ঠিক হয়নি।’

প্রান্ত একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে ইচ্ছেমতির কথা শুনছিল তখনই প্রান্তর ফোনে কল আসলো।সেই সুযোগেই ইচ্ছেমতি এক দৌঁড়,ভয়ে নয় লজ্জায়।প্রান্ত কল কেটে দিয়ে ফোনের দিকে তাকিয়েই বিরক্ত হয়ে বলল,

‘এই বালডা কল দেওয়ার আর টাইম পেলনা।’

তারপর ইচ্ছেমতির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চেঁচিয়ে বলল,

‘গুনে গুনে দশমাস দশদিন পর আমার ছেলেকে না পেলে তোমাকে কিন্তু ছাড়ছিনা।’

ইচ্ছেমতি শুনতে পেলেও আর পেছনে তাকায়নি।লজ্জায় সে আর প্রান্তর সামনে দাঁড়াতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে।প্রান্তর সাথে এমন করে ভুল করেছে।তার আগে ভাবা উচিত ছিল প্রান্ত জানতে পারলে তাকে ছেড়ে দিবেনা।এখন সে কপাল চাপড়াচ্ছে।ক্লাসে এসে ফ্যানের নিচে বসে মনে মনে বলল,

‘সেজন্যই জ্ঞানীরা বলে ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না।আমি তো কাজ করার আগে ভাবিনি তাহলে কি আমি বোকা?না না আমি বোকা নয় আমার জানু অস্থায়ী সময়ের জন্য বোকা।বাই দ্যা ওয়ে,আমার জানু কোথায়?’

অন্তর কথা মনে হতেই ইচ্ছেমতি আবার ক্লাস থেকে বেড়িয়ে আসলো।

অন্ত নির্ভীকের কাছে যেয়ে হুট করে নির্ভীকের দুই হাত ধরে কাটা দাগ খুঁজতে লাগলো।সত্যি সত্যি কাঁটা দাগ দেখে সেখানে হাত বুলিয়ে চিন্তিত হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘এটা আপনার হাত?’

নির্ভীক ভ্রু কুচকে অন্তকে বুঝার চেষ্টা করছে।তখন থেকে অন্ত তার হাত ধরে কি যেন খুঁজছে।নির্ভীক অন্তর থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পকেটে ঢুকিয়ে বলল,

‘কেন?কি হয়েছে হাতের?’

অন্ত চিন্তিত হয়ে বলল,

‘আমি আপনাকে আগের থেকে চিনি।কে আপনি? কিছুদিন আগে কোথায় ছিলেন?ভাইয়া কেন কিছু বলেনা আপনাকে?আরাফ ভাইয়া কেন এত রেগে গেল?আপনার ছবি আমার ফোনে কেন?ফেব্ররুয়ারীতে তোলা ছবি।তখন আমি কোথায় ছিলাম।আপনি আমাকে চিনলে বলুন না,আমি কিছু মনে করতে পারছিনা।’

নির্ভীক উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,

‘কিসের ছবি?ছবি কোথায় পেয়েছো?কে দিয়েছে?’

অন্ত মন খারাপ করে উল্টোদিকে ঘুরে চলে যেতে লাগলো।এই মুহূর্তে তার অনেক চিন্তা।ছবির হাতের সাথে নির্ভীকের হাত মিলে গিয়েছে।তারমানে নির্ভীক আর ছবির লোক এক।যদি তাই হয় অন্তর সাথে নির্ভীকের সম্পর্ক কি?এখানে এসেই অন্তর মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।অন্তকে যেতে দেখেই নির্ভীক অন্তর হাত ধরে বলল,

‘কোথায় যাচ্ছো?’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘ক্লাসে।’

‘চলো আমি রেখে আসছি।’

অন্ত কিছু না বলে নির্ভীকের সাথে যেতে লাগলো।নির্ভীক খুব ভাল করে বুঝতে পারছে অন্ত তার অতীত নিয়ে খুব চিন্তা করছে।নির্ভীক অন্তকে এটা ওটা বলে অন্তর মন থেকে চিন্তা দূর করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।নির্ভীক অন্তকে ইচ্ছেমতির কাছে দিয়ে প্রান্তকে নিয়ে রাযীনের সাথে দেখা করতে গেল।

সকাল এগারোটা।রাযীন চেম্বারে বসে রোগী দেখছে।প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত রোগী দেখে তারপর হসপিটালে রাউন্ড শেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বা নয়টা বেজে যায়।নির্ভীক অন্তর ব্যাপারে এখনই তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে চায় কিন্তু রাযীনের অ্যাসিস্ট্যান্ট তাকে কিছুতেই ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেনা।নির্ভীকের ইচ্ছে করছে রোগা -পটকা, সিপসিপে গড়নের মাঝ বয়সী লোকটাকে তুলে আছাড় দিতে কিন্তু ভাইয়ের কাজের জায়গায় কোনো ঝামেলা ক্রিয়েট করতে চায়না জন্য নিজের ইচ্ছে সাইডে রেখে নিয়ম অনুযায়ী ছয়শ টাকা ভিজিট দিয়ে হন্ত দন্ত হয়ে চেম্বারের মধ্যে ঢুকে বলল,

‘ভাইয়া প্লিজ দুমিনিট কথা বলবো,ইট’স আর্জেন্ট।’

রাযীন একটা পেশেন্ট দেখছিল।রাযীনের অ্যাসিস্ট্যান্ট দরজা ঠেলে ভেতরে নির্ভীককে উদ্দেশ্য করে কর্কশ কন্ঠে বলল,

‘একি আপনি এভাবে ভেতরে চলে আসলেন কেন? আপনাকে না বললাম একটু ওয়েট করতে?স্যার এখন অন্য পেশেন্ট দেখছেন…’

লোকটা আর কিছু বলার আগেই রাযীন উনাকে যেতে বলল।পেশেন্টকে প্রেসক্রিপশন বুঝিয়ে বিদায় দিয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,

‘হোয়াট হেপেন্ড?’

নির্ভীক চেয়ার টেনে বসলো আর প্রান্ত এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে লাগলো।নির্ভীক চিন্তিত হয়ে সবটা খুলে বলল।রাযীন হালকা রেগে বলল,

‘তোর জন্যই এসব হচ্ছে।কেন এমন করছিস ওর সাথে?দূরে থাকনা আর কয়েকটাদিন।’

নির্ভীক ভ্রু কুচকে বলল,

‘হুয়াই মি?সবাই ওর কাছে আছে আমি কেন দূরে থাকবো?সবার সাথে ও মানিয়ে নিয়েছে আমি এতদিন দূরে থেকেই ভুল করেছি।’

রাযীন ডেস্কের নিচে থেকে একটা ফাইল বের করতে করতে বলল,

‘প্রথমদিকে ওর মানসিক অবস্থা কেমন ছিল দেখেছিস তো।একটা আট দশ বছরের ছোট মেয়েকে যদি সবসময় ভালোবাসি,বিয়ে করবো,জড়িয়ে ধরবো,চুমু খাবো এসব বলিস তাহলে তার মনের অবস্থা কেমন হবে তুই বল?যেখানে সে জানেইনা এসব কি।’

নির্ভীক অনুনয়ের স্বরে বলল,
‘তখন জানতোনা তাই দূরে থেকেছি কিন্ত এখন তো জানে।তোমরা সবাই যদি ওকে একটু বুঝিয়ে বল নিশ্চয় শুনবে।’

রাযীন বিরক্ত হয়ে বলল,

‘তুই এক কাজ কর,ওর সাথে স্বাভাবিক বন্ধত্বের সম্পর্ক তৈরী কর।ওকে একটু ঘুরতে নিয়ে যা।হাসির গল্প বল,আগের মতো আচরন কর।কয়েকদিন ধরে নোটিস করছি তুই ওর সাথে অস্বাভাবিক আচরন করছিস।সবসময় ওকে আতংকের মধ্যে ফেলছিস।সেদিন রাতে কি দরকার ছিল জোর করে ছাদে নিয়ে বসে থাকার?তুই ওর কাছে অপরিচিত,হুটহাট শরীরে হাত দিবি আর তোকে ভাল মনে করবে?তুই বুঝতে পারছিসনা অন্ত তোকে নিয়ে যথেষ্ট ভাবছে।তুই ওর ভাবনাগুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছিস।শেষ সময় এসে কেন যে এত পাগলামি করছিস বুঝতে পারছিনা।’

নিভীক থমথমে মুখ করে বলল,

‘যদি উল্টাপাল্টা চিন্তা করে আমাকে দূরে সরিয়ে দেয়?’

রাযীন হাতের ঘড়িতে সময় দেখে বলল,

‘উল্টা পাল্টা চিন্তা করতে দিবি কেন?তোর চোখ দিয়ে ওকে না দেখিয়ে ওর চোখ দিয়ে তুই সবকিছু দেখার ট্রাই কর।পাঁচদিন পর আরেকটা ডোজ আছে কোথাও থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আয়।গুড রেজাল্ট পাবি।এখন যা রাতে আমি ওর সাথে কথা বলব।’

নির্ভীক ফুস করে নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘টাকা দাও।’

রাযীন ভ্রু কুচকে বলল,

‘কিসের টাকা?’

প্রান্ত এগিয়ে এসে বলল,

‘কিসের আবার,ভিজিট কেটে ঢুকতে হয়েছে আমাদের।যদি ভিজিটিং চার্জ দিয়েই তোমার কাছে আসতে হবে তাহলে তুমি আর কিসের বালের ভাই হলে বল?’

রাযীন রাগী চোখে প্রান্তর দিকে তাকালো।এখন কোনো ঝামেলা করতে চাইছেনা তাছাড়াও ঝামেলা করলেও এদের সাথে পারবেনা জন্য বিনাবাক্যে নির্ভীককে টাকা দিয়ে পাঠিয়ে দিল।

রাত তিনটে।ঘুমের মধ্যে থেকেই ধুরমুর করে উঠে বসলো অন্ত।পাশে থেকে ইচ্ছেমতিকেও টেনে তুলে বলল,

‘দেখ তো খাটের তলায় কেউ আছে কিনা?’

ইচ্ছেমতি বিরক্ত হয়ে ঘুমের মধ্যেই বলল,

‘বক্সের ড্রয়্যার গুলো সব লাগানো আছে,কেউ নেই।’

অন্ত টেবিল ল্যাম্প অন করে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পুরো রুমে চোখ বুলালো।গত দুদিন ধরে একই সময় একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে।রিংকুর কাছে ভূতের গল্প শোনার পর থেকে স্বপ্নে বিভিন্ন ধরনের ভূত আসছে আর তখনই ভয় পেয়ে ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থেকে ফোন নিয়ে নাড়াচাড়া করতে লাগলো।সকালে লুকিয়ে নির্ভীকের কিছু ছবি তুলেছিল সেগুলোই বের করলো।তারপর নির্ভীকের সব মেসেজ গুলো মন দিয়ে পড়ে বিরবির করে বলল,

‘উনি কি সত্যি আমাকে ভালোবাসেন?আর আমি?’

অন্ত শূন্যে দৃষ্টি রেখে আবার সব আকাশ পাতাল চিন্তা ভাবনা করতে করতে রাত পার করে দিল।

চলবে…………

(দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here