ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২*পর্ব:৩

0
2580

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩.

চারদিকে অল্প অল্প কুয়াশা।বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুয়াশা কমে যাচ্ছে কিন্তু ঠান্ডা বাতাসে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে।চতুর্থ বিজ্ঞান ভবনের সামনে একটা ছোট সাঁকোর উপর বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি।আমি,ইচ্ছে,আইরিন,তামান্না সাঁকোর একপাশে বসেছি আমাদের বিপরীত দিকে রিপন,আদনান,সাফি আর কিয়াম বসে আছে।ঠান্ডায় হাত জমে যাচ্ছে তাই ইচ্ছের কাঁধে মাথা রেখে দুইহাত ওর জ্যাকেটের পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে রেখেছি।আমি আজ সরষে ফুল রঙের একটা গলাবন্ধ সোয়েটার পরে এসেছি আর সোয়েটারে পকেট নেই তাই অন্যের পকেট ধার নিতে হচ্ছে।ইচ্ছের কাঁধে মাথা হেলিয়ে চুপচাপ সবার কথা শুনছিলাম তখনই কয়েকটা ছেলে-মেয়ে দৌঁড়ে চারুকলা ইউনিটের দিকে যেতে লাগলো।ওদের দেখেই মনে হচ্ছে ওদিকে কোন দূর্ঘটনা ঘটেছে।রিপন বরাবরই সব ব্যাপারে একটু বেশি কৌতূহুলি তাই ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বলল,
—চল তো দেখে আসি কাহিনী কি ঘটেছে।

সাফি দায় সাড়া ভঙ্গিতে বলল,
—থাম তো, যা হয় হোক আমাদের তাতে কি।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর যখন দেখলাম অনেকেই সেদিকে যাচ্ছে তখন আমি আর ইচ্ছে বাদে সবাই উঠে দাঁড়ালো।ওদের দেখাদেখি আমরাও উঠে ওদের সাথে যেতে লাগলাম।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে চারুকলা ইউনিটের সামনে রাস্তায় মারামারি হচ্ছে।ওই রাগী ছেলেটা অন্য একটা ছেলেকে মারতে মারতে রাস্তায় শুয়ে দিয়েছে।রাগী ছেলেটা অন্য ছেলের বুকের উপর বসে ছেলেটির হাত রাস্তার পিচের উপর রেখে মুখে ক্রামাগত পান্চ মেরে যাচ্ছে আর চেঁচিয়ে বলছে,
—খুন করে ফেলবো তোকে।তোর হাত,এই হাত আমি শেষ করে দিব।আর কখনও ছবি আকাবি?বল?বল আকাবি আর?

রাগী ছেলটা অন্য ছেলেকে এত মেরেছে যে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পরছে।ছেলেটা মাইর খেয়ে খেয়ে আহত হয়ে গিয়েছে। রাগী ছেলেটা ওকে এমন ভাবে ধরেছে যে ছেলেটা একটাও মারতে পারছেনা।আশেপাশে অনেক ছেলে মেয়ে আছে কিন্তু কেউ মারামারি থামাচ্ছে না।আমরা একটু দূর থেকেই দেখছি।আমার এসব মারামারি খুব ভয় লাগে তাই ইচ্ছের পেছনে দাঁড়িয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ওই রাগী ছেলেটাকে দেখতে লাগলাম।

ছেলেটার সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছে।চোখ মুখ লাল করে শুধু মেরেই যাচ্ছে।হঠাৎ কোথায় থেকে একদল ছেলে মেয়ে দৌঁড়ে এসে রাগী ছেলেটাকে আটকাতে লাগলো।ওদের মধ্যে শৈবাল আর টোয়াকে আমি চিনি।বাকিদেরও চিনি কিন্তু কারও নাম জানিনা।রাগী ছেলেটাকে দুটো ছেলে চেপে ধরে একটু দূরে নিয়ে গিয়ে কি যেন বলছে। আমরা কিছুই শুনতে পাচ্ছি না।আহত ছেলেটাকে কয়েকজন ধরাধরি করে মেডিসিন সেন্টারের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। রাগী ছেলেটা এখনও অনেক রেগে আছে।নিজের চুল টানছে আর সামনে যা পাচ্ছে তাতেই কিক করছে।টোয়া এক বোতল পানি দিতেই রাগী ছেলেটা পানি না খেয়ে মাথা হেলিয়ে সব পানি নিজের মাথায় আর মুখে ঠেলে দিল।এই ঠান্ডায় ছেলেটা এভাবে মাথায় মুখে পানি দিয়ে রাগ কন্ট্রোল করছে,কি রাগীরে বাবা!!

আমি অবাক হয়ে এসব দেখছিলাম তখনই আদনান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
—এই অন্ত?চুপ নড়িস না।একদম নড়িস না।

আদনানের কথা শুনেই আমি ভীত চোখে আশেপাশে দেখতে দেখতে বললাম,
—-কেন?কি হয়েছে?

বলতে বলতেই আমি আমার ডান বাহুতে তিনটে বড় সাইজের শুঁয়োপোকার মতো সবুজ সবুজ পোকা দেখতে পেলাম।সঙ্গে সঙ্গে আমি ক্যাম্পাস কাঁপানো চিৎকার দিয়ে কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে লাগলাম।এদিকটায় একটু ঝোপঝাড় আর লতা পাতা আছে তাই হয়তো হলুদ রঙ দেখে পোকামাকড় আমাকে ঘিড়ে ধরেছে।ভয়ে আমি থরথর করে কাঁপছি।আদনান আমার হাতে লেগে থাকা পোকা গুলোকে হাত দিয়ে ধরে ফেলে দিচ্ছে।পোকা ফেলে দেওয়া হয়ে গেলে আমি সোয়েটার খুলে মাটিতে ফেলেদিলাম।খুটে খুটে দেখছিলাম আমার জামায় আর কোন পোকা আছে কিনা তখনই রাগী ছেলেটা আমার সামনে এসে উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
—হোয়াট হ্যাপেন্ড?কাঁদছো কেন?

উনাকে দেখেই আমি গিয়ে ইচ্ছে আর আইরিনের পেছনে দাঁড়ালাম।এই ছেলেটা একটা খারাপ ছেলে এর থেকে দূরে থাকতে হবে।টোয়া নামের আপুটা রাগী ছেলেটার এক হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
—-কি করছো এখানে?চলো তাড়াতাড়ি,আজকে আবার মারপিট করলা,বাবা জানতে পারলে রেগে যাবে।

ছেলেটা হাত ঝারা দিয়ে মেয়েটার থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মাটিতে পরে থাকা আমার সোয়েটারের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বললেন,

—কি আছে ওটাতে?

আদনান ভয়ে ভয়ে বলল,
—পোকা ছিল।

রাগী ছেলেটা নিচু হয়ে আমার সোয়েটার তুলে নিয়ে ঝেরে ঝুরে দেখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন,
—পোকা নেই পরো এটা নাহলে ঠান্ডা লাগবে।

আমি ইচ্ছের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই মিন মিন করে বললাম,—না আবার পোকা আসবে।

টোয়া এসে ছেলেটার হাত থেকে সোয়েটার কেড়ে নিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে বলল,
—কি করছোটা কি?এসব ফালতুদের সাথে কেন কথা বলছো।চলো এখান থেকে।

ছেলেটা আমার দিকে তাকাতে তাকাতে চলে গেল।আইরিন আমার সোয়েটার হাতে নিয়ে বলল,
—-এই ভাইয়াটা কে বলতো?অন্তর পিছে লেগেছে মনে হয়।

বন্ধুরা সবাই বলল কোনো সিনিয়র ভাইয়া,কেউ নাম ধাম বলতে পারছেনা।কি করে পারবে,ভার্সিটিতে আমাদের বয়স মাত্র চারদিন।আমরা তো ভার্সিটির কিছুই চিনিনা প্রায় সময় রাস্তা গুলিয়ে ফেলছি।

আইরিনের কাছে এক্সট্রা চাদর ছিল সেটা গায়ে দিয়ে আমি আর ইচ্ছে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি।রাস্তার অন্যপাশে ফুলের চারা বিক্রি হচ্ছে।আমি কয়েকটা গোলাপের চারা নিতে চাইছি কিন্তু রাস্তায় পার হতে পারছিনা।এত দ্রু গাড়ি যাচ্ছে!আমাদের এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কালো জ্যাকেট পরা মোটামুটি ফর্সা আর সিপ সিপে গড়নের একটা ছেলে এসে আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে বললেন,
—কি ব্যাপার আপুরা?কোন প্রবলেম?অনেকক্ষণ ধরে দেখছে আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি ভ্রু কুচকে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মনে মনে বললাম আমরা দাঁড়িয়ে আছি তাতে তোর কি হচ্ছে?খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তাই অনেকক্ষণ ধরে আমাদের ফলো করছে।ইচ্ছে হালকা হেসে বলল,
—ভাইয়া আমরা রাস্তা পার হতে পারছিনা তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি।

ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,—এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে সারাদিনেও রাস্তা পার হতে পারবেন না।চলুন আমি পার করে দিয়ে আসছি।

আমরা খুশি হয়ে ছেলেটার পেছন পেছন যেতে লাগলাম।আগে ছেলেটা তারপর ইচ্ছে,ইচ্ছের পেছনে আমি কিন্তু রাস্তায় নামতেই কেউ আমার ব্যাগ পেছন থেকে টেনে ধরলো।আমি রেগে ভ্রু কুচকে পেছনে তাকাতেই আমার সব হাওয়া ফুস।রাগী ছেলেটা চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে।আমি একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম,–আআআপনি!

ছেলেটা রাগী কন্ঠে বললেন,—এদিকে আসো?

আমি একবার পেছনে তাকিয়ে দেখি ইচ্ছে রাস্তা পার হয়ে চলে যাচ্ছে।হাদারামটা খেয়ালও করেনি আমি ওর পেছনে নেই।রাগী ছেলেটা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন,
—কি হল?শুনতে পাওনি কি বললাম?

আমি ভীত চোখে ছেলেটার দিকে তাকালাম।ছেলেটার আধ ভেজা চুলগুলো কপালে পরে আছে।নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে দেখে আমি পেছাতে লাগলাম।পেছাতে পেছাতে আমি ভার্সিটির দেয়ালের সাথে লেগে গেলাম।ছেলেটা আমার মাথার পাশে দেয়ালে একহাত রেখে রাগী কন্ঠে বললেন,
—-রাতে ফোন সুইচ অফ রেখেছিলে কেন?

আমি একবার উনার দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে মিন মিন করে একটা মিথ্যে কথা বলে দিলাম,
—-চার্জ ছিল না।

রাগী ছেলেটা আমার দিকে ঝুকে বললেন,
—কেন?তোমাদের বাসায় পাওয়ার সাপ্লাই নেই?

আমি কিছু না বলে এদিক ওদিক তাকাতে লাগলাম।ছেলেটা ভ্রু কুচকে বললেন,
—কি হলো বলো?

আমি ভীত কন্ঠে বললাম,
—আছে।
—আজকে যেন তোমাকে ফোনে পাই ওকে?

আমি কিছু বললাম না।ছেলেটা আমার পাশের দেয়াল থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন,
—তুমি কি আমাকে ভয় পাচ্ছো?

আমি মাথা ডানে বামে নাড়ালাম।উনি একহাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বললেন,
—তাহলে কাঁপছো কেন?শীত করছে?ওটা আর পরোনি কেন?পোকা দেখে ভয় পাও?

আমি মাথা উপর নিচ করলাম।তখনই ইচ্ছে রাস্তার ওপাশ থেকে আমাকে ডাকলো।আমি ওদিকে তাকালাম।ছেলেটা ঘাড় ঘুড়িয়ে ওদিকে দেখে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—ও কে?নাম কি ওর?সব সময় ওর সাথে থাকো কেন?
—বেস্টফ্রেন্ড।
—অহ এত তাড়াতাড়ি বেস্টফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছো?কেমিস্ট্রিতে না তুৃমি?

আমি অবাক হয়ে গেলাম।এই ছেলে তো দেখছি আমার ব্যাপারে সব জেনে নিয়েছে।হঠাৎ উনার ফোন বেজে উঠলো।উনি পকেট থেকে ফোন বের করে ভ্রু কুচকে কল কেটে দিলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—ওই মেয়ের কাছে যাবা?চলো তোমাকে দিয়ে আসি।
—না আমি একা যেতে পারবো।(মাথা নিচু করে)

উনি ফোন পকেটে রেখে পেছনে ঘুড়ে বললেন,
—কাম উইথ মি।

আমি আর কিছু না বলে উনার সাথে যেতে লাগলাম।উনি হাত দিয়ে গাড়ি থামাতে থামাতে আমাকে নিয়ে ইচ্ছের কাছে চলে আসলেন।আমি ইচ্ছের একবাহু ধরে ছেলেটার দিকে তাকালাম।আবার উনার ফোন আসায় উনি ফোন রিসিভ করে ভ্রু কুচকে বলছেন,
—হুম আমার কাছেই আছে,আসছি ওয়েট।

কল কেটে উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—বাসায় যাবা এখন?
—না।
–তাহলে?(ভ্রু কুচকে)

ইচ্ছে বলল,
—ফুলের চারা কিনবো।

উনি নার্সারির দিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
—ওখান থেকে কিনবা?কতক্ষণ থাকবা এখানে?আচ্ছা আমি এখনই আসছি ওকে?জাস্ট ফাইভ মিনিট।

বলেই উনি দ্রুত রাস্তা পার হয়ে ঐপাশে গেলেন।রাস্তার ধারে পার্ক করা একটা কালো বাইকে উঠে চলে গেলেন।আমি ফুলের চারা কিনা কিসের কি একটা রিক্সা ডেকে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।কিছুটা রাস্তা আসতেই আমার ফোন বেজে উঠলো।আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভ্রু কুচকে বললাম,

—নির্ভীক!!!নির্ভীক কে?এই ইচ্ছে নির্ভীক কেরে?দেখ নির্ভীক দিয়ে সেভ করা।

ইচ্ছে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলল,
–তোর ফোন তুই ভাল জানবি।

আমি ভ্রু কুচকে কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠ শুনতে পেলাম।এই কন্ঠ আমার পরিচিত।ওই রাগী ছেলেটা ফোন করে বলছে,

—কোথায় তুমি?চলে গেলা কেন?ওয়েট করতে বলেছিলাম তো।
–আপনি?আপনার নাম নির্ভীক!!(বিস্মিত হয়ে)
—ইয়াহ।

আমি ফোন কেটে দিলাম।বুকের মধ্যে কেমন যেন ধক ধক করছে।ওই সুন্দর রাগী ছেলেটার নাম নির্ভীক!!আমি ইচ্ছেকে বললাম,
—ওই ছেলেটার নাম নির্ভীক।
—অহ নির্ভীক?ভালই নাম।কত্ত কিউট!!নির…ভীক!!

আবার ফোন বেজে উঠলো।নির্ভীক ফোন দিয়েছেন।আমি কল রিসিভ করতেই উনি বললেন,
—কেটে দিলা কেন?কোথায় আছো বলো?
—বাসায় যাচ্ছি।
–অহ।

উনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেন।একটু পর নরম কন্ঠে বললেন,
—অন্ত?
–জ্বী?
—কিছুনা বাসায় যাও,বাই।

বলেই উনি কল কেঁটে দিলেন।আমি ফোন ব্যাগে রাখতে রাখতে বললাম,
–এই ছেলেটা এমন করে আমার পেছনে লাগছে কেন?

ইচ্ছে হাসতে বলল,
—আরে তুই বুঝতে পারছিস না?ভাল লেগেছে তোকে।এখন দেখ কবে জানি তোকে প্রপোজ করে বসবে।তুই কিন্তু হ্যা বলে দিবি।

—কেন??(রেগে)
—কেন আবার?প্রেম টেম কিছু করবিনা নাকি এমন নিরামিষই থেকে যাবি?
—ভাইয়া জানতে পারলে আমিষগিরি বের করে দিবে আর এইরকম বখাটে ছেলের সাথে প্রেম করবো?নেভার।আপুর মতো বিয়ের পর বরের সাথে প্রেম করবো।(মুচকি হেসে)

—জারিফ ভাইয়া তো তোকে বিয়েই দিবেনা চান্দু।ভাইয়া কখনও তার মনের মতো বরও পাবেনা তোর বিয়েও হবেনা।বিয়ের চিন্তা বাদ দিয়ে প্রেমের চিন্তা কর।(হাসতে হাসতে)

—আপু ঠিকই বলে তুই একটা মিচকা শয়তান।কেমন কুট কুট করে শয়তানি বুদ্ধি দিচ্ছিস আমাকে।শোন আমি কখনও এসব অবৈধ সম্পর্ক করব না,তুইও করবিনা।যদি করিস এক লাথি দিয়ে রিক্সা থেকে ফেলে দিব।(হালকা রেগে)

—আমি তো প্রেম করবোই।(হাসতে হাসতে)
—হুম করিস আমি ভাইয়াকে বলে দিব তখন ভাইয়া তোকে এমন আছাড় দিবে না,প্রেম কি ভুলে যাবি।(ভাব নিয়ে)
—তোর ভাই একটা দজ্জাল ভাই।আমার ভাই অনেক ভাল।(ভাব নিয়ে)
—কচু ভাল।তোর ভাই একটা এলিয়েন আর তুই একটা এলিয়েনের বোন।(রেগে)

–শোন একদম আমার ভাইকে এলিয়েন বলবিনা।এলিয়েন কি তুই জানিস?ভাইয়া এই গ্রহেই থাকে কিন্তু অন্যদেশে।যারা ভীনগ্রহে থাকে তাদের এলিয়েন বলে বুঝেছিস মূর্খ কোথাকার?

আমি রাগী চোখে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।মনে মনে বললাম তোর ভাই নট ওনলি এলিয়েন বাট অলছো জম্বি।বাসায় যেয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে কম্বলের মধ্যে ঢুকতেই আবার ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে নির্ভীকের নাম দেখেই রিসিভ করে রাগী কন্ঠে বললাম,
—কেন ফোন দিয়েছেন?
—অন্ত?রাগ করেছো?কি হয়েছে?আর ইউ ওকে?(উদ্বিগ্ন কন্ঠে)
—আর ফোন দিবেন না।(রেগে)

বলেই আমি কল কেটে দিলাম।ভেবেছিলাম উনি আবার ফোন দিলে ব্লক দিব কিন্তু আর দিলেন না।ফোন বালিশের নিচে রেখে মেজাজ খারাপ করে শুয়ে পরলাম।

সন্ধ্যায় ঘুম থেকে উঠে আমার খুব খারাপ লাগছে।ঢাকায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে।আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলতে বলতে আমি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছি।আমি এখানে কিছুতেই থাকতে পারবোনা।ইচ্ছে আমার অবস্থা দেখে মজা নিচ্ছে।অ্যান্টি বিছানায় আমার পাশে বসে বলছে,
—নতুন জায়গায় এসেছিস তো তাই এমন হচ্ছে।আমি যখন মেডিকেলের হোস্টেলে গিয়ে উঠেছিলাম তখন আমিও ছয়মাস মতো বাসার জন্য মন খারাপ করতাম।তারপর ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে গেল।তুইও কিছুদিন থেকে দেখ,রাজশাহী ঘুরেফিরে দেখ,বন্ধুদের সাথে কথা বল এমনি সব ঠিক হয়ে যাবে।

—আমি এখানে থাকতে পারবোনা।কালই ঢাকা চলে যাবো।(কাঁদতে কাঁদতে)

—আচ্ছা চল আজকে আমরা বাহিরে ডিনার করতে যাই।শপিং করবি তোরা?চল আমি তোদের শপিং করে দিব।(বসা থেকে দাঁড়িয়ে)

–না কোথাও যাবো না আমি।(নাক টেনে)
—চল ভাল লাগবে।দাঁড়া চাঁদকে ফোন করে আসতে বলি।ও সাথে থাকলে নিশ্চিন্তে ঘুরাফেরা করা যাবে।(ফোন টিপতে টিপতে)

অ্যান্টি চাঁদ ভাইয়াকে ফোন দিয়ে বললেন,
অ্যান্টি:কোথায় তুই?এখনই বাসায় আয়।(ভ্রু কুচকে)
ওপাশ:……….

অ্যান্টি:একটা সারপ্রাইজ আছে আয়।(মুচকি হেসে আমার দিকে তাকিয়ে)
ওপাশ:……..
অ্যান্টি:আচ্ছা আসতে হবেনা যা।আর কখনও এই বাসায় আসবিনা।আমিও দেখি কতদিন মামার বাসায় পরে থাকতে পারিস।(রেগে)
ওপাশ:……..
অ্যান্টি:একদম আমাকে আম্মু ডাকবিনা।আমি তোর কেউনা।থাক তুই প্রান্তর গলা ধরে।(রেগে)

অ্যান্টি কল কেটে দিয়ে আমাদের বললেন,
—তোরা রেডি হয়ে নে আমরা একা যাবো।

বলেই অ্যান্টি চলে গেল।আমি উপুর হয়ে শুয়ে চোখ বন্ধ করে থাকলাম।আর মনে মনে ভাবলাম কালকে বাসের টিকিট কেটে একা একা ঢাকায় চলে যাবো।

চলবে……..!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here