ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৩৫

0
1221

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

২৯.

দরজার ঠক ঠক আওয়াজ শুনে নির্ভীকের ঘুম ভেঙ্গে গেল।নাকে-মুখে সুরসুরি লাগায় চোখ খুলেই একটা হাঁচি দিল।মুখের উপর হাত দিয়ে বুঝতে পারলো এগুলো অন্তর চুল।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর মাথায় চুমু খেল।অন্ত নির্ভীকের হাতের উপর মাথা আর গায়ের উপর পা দিয়ে নির্ভীককে জড়িয়ে ধরে ঘুমোচ্ছে।নির্ভীক অন্তর মুখে থাকা চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিতেই আবার দরজায় টোকা পরলো।নির্ভীক বিরক্ত কন্ঠে একটু জোরেই বলল,

‘হুজ দেয়ার?’

ওপাশ থেকে টোয়ার আওয়াজ পাওয়া গেল,

‘আমি টোয়া,সবাই তোমাদের ব্রেকফাস্ট করতে ডাকছে।’

‘আসছি যা।’

দেয়ালের শৌখিন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল নির্ভীক। ঘড়িতে সকাল সাড়ে নটা বাজে।অনেকটা বেলা হয়ে গিয়েছে।দশটায় তাকে ভার্সিটি যেতে হবে।অন্তকে বালিশে শুয়ে দিয়েই নির্ভীক উঠে ফ্রেশ হতে গেল।শাওয়ার নিয়ে টাওয়াল পরে তাড়াহুড়ো করে চুল মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকলো।অন্ত এখনও মরার মতো ঘুমোচ্ছে দেখে মুচকি হেসে অন্তর উপর ঝুকে নিজের ঠান্ডা গাল অন্তর গালে ছোঁয়ালো।নির্ভীকের ভেজা চুল অন্তর চোখে কপালে ঠেকতেই অন্ত একটু নড়ে উঠলো।নির্ভীক অন্তর নাকে নাক ঘষে বলল,

‘এই বউ উঠো।কত ঘুমাবা?’

অন্ত কিছু বলল না।নির্ভীক পাঁচমিনিট ধরে অন্তর পুরো মুখে চুমু দিয়েও অন্তকে ঘুম থেকে তুলতে পারলোনা।দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে নির্ভীক রেডি হতে গেল।সাদা শার্ট আর অ্যাশ কালার কোট প্যান্ট পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বেঁধে চুল ঠিক করে নিল।হাতে ঘড়ি পরতে পরতে চিন্তিত হয়ে অন্তর দিকে তাকালো।হঠাৎই কিছু একটা ভেবে ঘড়ি খুলে ফেললো।গলার টাই আর কোর্ট খুলে অন্তর মাথার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,

‘তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে?বউ?এই পিচ্চি?এত ডাকছি তাও উঠছোনা কেন?’

অন্ত একটু বিরক্ত হয়ে অন্যপাশ ফিরে শুলো।নির্ভীক ভ্রু কুচকে উঠে দাঁড়ালো চেন্জ করে একটা কালো প্যান্ট কালো টিশার্ট পরে ফোন আর ল্যাপটপ নিয়ে বেলকুনিতে চলে গেল।বেলকুনি থেকেই দেখলো গেস্টরা সবাই চলে যাচ্ছে।যাবারই কথা।নির্ভীকের বাবা-মা কাজে চলে গিয়েছেন,রাযীন-আফ্রারও সকালেই হানিমুনে কক্সবাজার যাবার কথা।রাযীনের যেহেতু ছুটি নেই তাই সময় নষ্ট করার কোন মানেই হয়না।গেস্টরা তিনদিন ধরে আছেন আর কত থাকবেন!সবাইকে চলে যেতে দেখে নির্ভীক খুশি হল।বিশেষ করে শৈবালের দাদি চলে যাওয়াতে।ওই মহিলা অন্তকে এতক্ষণ ধরে ঘুমোতে দেখে নিশ্চয় বাজে কথা বলে কানের পোকা মেরে দিতেন।

সারারাত বৃষ্টি হওয়ায় অন্তদের বাসার বাগান ভিজে স্যাঁতসেঁত করছে সাথে ইচ্ছেমতির মনও স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে।বয়সে ছোট হয়েও অন্তর আগে বিয়ে হয়ে গেল আর সে একা একা সিঙ্গেল জীবন-যাপন করছে।অন্তর দেখাদেখি ইচ্ছেমতিরও বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।এই মেয়ের কখন কি ইচ্ছে করে সে নিজেও জানেনা।এই যেমন এখন কাঁদার মধ্যে প্যাচ প্যাচ করে হাঁটতে ইচ্ছে করছে তাই ভাবলেশহীন ভাবে হেঁটেই চলেছে।হাতে থাকা ফোনে ইয়ারফোনের প্লাগ লাগিয়ে ‘আ’ম সো লোনলি’ গান দিয়ে আরও জোরে জোরে হাঁটতে লাগলো।মনে মনে ভাবছে প্রান্ত ভাইয়ার আশায় বসে থাকলে আমি বুড়ি হয়ে যাব তার থেকে ভাল ডক্টর মনিমকে হ্যাঁ বলে দেওয়া।ডক্টর আমাকে যেঁচে বিয়ে করতে চাইছেন করে নেওয়ায় ভাল হবে,ভবিষ্যতে আমার সব কথা শুনবেন আর প্রান্ত ভাইয়ার হাতে পায়ে ধরে বিয়ে করলে সারাজীবন সব ব্যাপারে উনার পা ধরে বসে থাকতে হবে।একটু ঝগড়া হলেই বলবে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনি তুমি জোর করেছো বলে করেছি।তখন কে শুনবে এসব খোঁটা?আমি তো সহ্যই করতে পারবোনা।তার থেকে বেস্ট হবে খুব আর্লি ডক্টরকে বিয়ে করা কিন্তু তার আগে প্রান্ত হিরোর একটা নাটক দেখতে হবে।আচ্ছা নাটকের নাম কি হবে?’আম্মু আমি কিছু জানিনা’ নাকি অন্য কিছু?ভেবেই ইচ্ছেমতি হাসলো।ফোনের স্যাড সং চেন্জ করে দিল ম্যা লাড়কি বিউটিফুল কার গ্যাই চুল।গান শুনতে শুনতে ইচ্ছেমতি কাঁদার পায়েই বাসার ভিতর চলে আসলো।এদিকে আরাফ শার্টের হাতা ফোল্ড করছে আর তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নামছে।ইচ্ছেমতি কান থেকে ইয়ারফোন নামিয়ে আরাফের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,

‘ভাইয়া এত সকালে কোথায় যাচ্ছো?’

আরাফ যেতে যেতে বলল,

‘বাহিরে।’

ইচ্ছেমতি ভ্রু কুচকে বলল,

‘কেন?’

আরাফ কিছু না বলে হন হন করে বেড়িয়ে গেল।ইচ্ছেমতি ভ্রু কুচকে উপরে তাকালো।নিপা রেলিং এ হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইচ্ছেমতি সিঁড়ি দিয়ে উঠে গিয়ে নিপার পাশে দাঁড়িয়ে চিন্তিত হয়ে বলল,

‘ভাইয়া কোথায় যাচ্ছে?’

নিপা মলিন হেসে বলল,

‘বলেনি আমাকে।’

ইচ্ছেমতি নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,

‘না বললে শুনে নিতে হবে।এভাবে নিরামিষ হয়ে থাকলে হবে?ভাইয়ার দজ্জাল বউ পছন্দ সেজন্যই তো তোমার মতো নরম মেয়ে পাত্তা পাচ্ছো না একটু দজ্জাল হয়ে দেখ লাইক আম্মু।আম্মুকে দেখে শিখো,আম্মু কিভাবে বাবার নাকে দরি দিয়ে ঘুরায় দেখেছো?’

নিপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মনে মনে বলল যেখানে ভালোবাসা নেই সেখানে অধিকারও নেই।চলে যাব এখান থেকে।

দুপুরের খাবার খেয়ে নির্ভীক নিজের ঘরের সোফায় বসে কোলের উপর ল্যাপটপ নিয়ে টিপটাপ করছে আর আড় চোখে অন্তর দিকে তাকাচ্ছে।অন্ত কিছুক্ষণ হল ঘুম থেকে উঠে মাথা ধরে বসে আছে।পায়জামা যে তার হাঁটুর উপর উঠে আছে সেদিকে কোন খেয়াল নেই।নির্ভীকের ধারণা অন্ত নির্ভীককেও খেয়াল করেনি।শুধু তাই নয় তার যে বিয়ে হয়ে গিয়েছে,সে এখন নির্ভীকের ঘরে আছে সেই খেয়ালও তার নেই।অন্ত মাথা ছেড়ে দিয়ে নিজের পায়জামা ঠিক করলো।আড়মোড়া ভেঙে বিরক্ত হয়ে বলল,

‘আমি কোথায়?’

নির্ভীক ল্যাপটপ রেখে মুচকি হেসে বলল,
‘তোমার রুমে।’

অন্ত চমকে নির্ভীকের দিকে তাকালো।অপ্রস্তুত হয়ে বিছানা থেকে নেমে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো।নির্ভীক অন্তর সামনে দাঁড়িয়ে অন্তর চুলে লেগে থাকা একটা গোলাপের পাপড়ি সরিয়ে বলল,

‘এত ঘুমালে!শরীর খারাপ লাগছে?’

অন্ত মাথা নাড়ালো।নির্ভীক আলমিরা থেকে লাল ড্রেস বের করে অন্তর হাতে দিয়ে বলল,

‘ফ্রেশ হয়ে আসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।’

অন্ত শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে নির্ভীক খাবার নিয়ে বসে আছে।অন্ত কি করবে বুঝতে পারছেনা।বিয়ের পর স্বাভাবিক কাজ কর্মও তার কাছে অস্বাভাবিক লাগছে।বিয়ের আগে গোসল সেরে আয়নার সামনে বসে চুল শুকাতো তাই সংকোচ নিয়ে মাথা নিচু করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে টুলে বসলো।পাতলা জর্জেট ওড়নাটা কিছুতেই গায়ে থাকছেনা তাই খুব বিরক্ত লাগছে।এদিকে হাতের ব্যান্ডেজ ভিজে সপসপে হয়ে চামড়ার সাথে লেপ্টে গিয়েছে।অন্ত মাথা নিচু করে ব্যান্ডেজ খুলতে লাগলো।
তখনই নির্ভীক এসে অন্তর ভেজা ভেজা স্নিগ্ধ ঘাড়ে চুমু দিল।অন্ত কেঁপে উঠে আয়নার দিকে তাকালো।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর মাথা থেকে টাওয়াল খুলে নিল।ভেজা চুলে মুখ ডুবিয়ে বলল,

‘হুয়াই সো সফট্!’

হাতের ব্যান্ডেজে টান লাগায় অন্ত মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।নির্ভীক অন্তকে ছেড়ে দিয়ে অন্তর হাত ধরে ধীরে ধীরে ব্যান্ডেজ খুলে দিল।চব্বিশটা সেলায় দেখেই নির্ভীক ঢোক গিললো।অন্যদিকে তাকিয়ে কপাল ডলে তাড়াতাড়ি ড্রয়ার থেকে গজ বের করে অন্তর হাতে বেঁধে দিল।সেদিনের কথা মনে হলে এখনও নির্ভীকের আত্মা কেঁপে উঠে।নির্ভীকক অন্তর মাথা মুছিয়ে দিয়ে বলল,

‘খাবে চলো,কাল রাতে লাস্ট খেয়েছো।’

অন্ত ভেবেছে তাকে এখন থেকে নির্ভীকের এটো খাবারই খেতে হবে তাই নাক ছিটকে বলল,

‘আবার ওসব খেতে হবে?’

নির্ভীক অন্তকে কোলে নিয়ে বলল,

‘কি সব?’

অন্ত নির্ভীকের কাঁধে হাত রাখলো।নির্ভীকের ফর্সা ঘাড়ে লালচে দাগ দেখে ভ্রু কুচকে সেখানে হাত বুলিয়ে বলল,

‘এখানে কি হয়েছে?’

নির্ভীক অন্তকে কোলে নিয়েই সোফায় বসে মুচকি হেসে বলল,

‘বউ খামচি দিয়েছে।’

অন্ত দোষ এড়াতে বলল,
‘আমি দিইনি।’

নির্ভীক অন্তর নাক টেনে বলল,

‘আমি কি বলেছি তুমি দিয়েছো?আমি বলেছি বউ দিয়েছে।’

অন্তই তো নির্ভীকের বউ।তাহলে নির্ভীক কেন বলছে অন্ত খামচি দেয়নি?কোন বউ এর কথা বলছে নির্ভীক? অন্ত ভ্রু কুচকে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘কোন বউ?’

নির্ভীক খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে চামচে খাবার তুলে অন্তর মুখে ধরে বলল,
‘কোন বউ মানে?জারিফ ভাইয়ার ছোটপাখি আমার বউ।আমার খামচিবিশারদ বউ।’

অন্ত মনে করতে পারছেনা খামচিটা সে কখন দিয়েছে।নির্ভীক যখন বলছে নিশ্চয় আমি খামচি দিয়েছি কিন্তু আমি কোনদিনও খামচিবিশারদ নয়।তাও ভুল করে উনাকে ব্যাথা দিয়েছি,সরি বলা উচিত।অন্ত মলিন মুখ করে বলল,

‘সরি।’

নির্ভীক হাতের প্লেট টেবিলে রেখে বলল,

‘সরি তখনই একসেপ্ট হবে যখন আমি ওখানে লিপ টাচ করতে পারবো।সব পেইনের মেডিসিন হল কিস।আমি ওখানে কিস করতে পারছিনা তাই পেইন হচ্ছে ওখানে।’

অন্ত মলিন মুখ করে বলল,
‘নিজের ঘাড়ে কিস করা সম্ভব নয়।ছাড়ুন আমাকে আমি মলম লাগিয়ে দিই তাহলে আর পেইন হবেনা।’

নির্ভীক অন্তর ঘাড়ের পেছনে হাত দিয়ে বলল,

‘সম্ভব,পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু আছে নাকি?আমার লিপ তোমার লিপ টাচ করবে আর তোমার লিপ আমার পেইন টাচ করবে।দ্যাট ওয়ান উইল বি মাই ইনডিরেক্ট লিপ টাচ।’

অন্ত চোখ বড় বড় করে মাথা পিছিয়ে নিল।অন্তকে এমন করতে দেখে নির্ভীক মন খারাপ করে বলল,

‘আচ্ছা এখন নয়,খাও আগে।’

অন্তর মনও খারাপ হয়ে গেল।নির্ভীক অন্তর মুখে খাবার তুলে দিল।অন্ত খাবার মুখে নিয়ে বলল,

‘আপনি খেয়েছেন?’

‘হুম।’

অন্তর বলতে ইচ্ছে করছে আমার সাথে আবার খান কিন্তু লজ্জার জন্য বলতে পারছেনা।নির্ভীক হঠাৎ কেমন চুপ হয়ে গেল দেখে অন্ত বলল,

‘কি হয়েছে?’

নির্ভীক প্লেটে চামচ নাড়তে নাড়তে বলল,

‘কিছুনা।’

অন্ত মন খারাপ করে বলল,
‘কথা বলছেন না কেন?’

‘বলছিতো।’

অন্ত রেগে গেল।বিয়ের আগেও নির্ভীক বলতো ‘কি বলবো’ ‘বলছি তো’ অন্ত তখন কিছু করতে পারতোনা কিন্তু এখন করবে।অন্ত কিছু না ভেবেই নির্ভীকের ঘাড়ের খামচি দেওয়া জায়গায় কামড় বসিয়ে দিল।

দুপুর দুটো।রোদের উত্তাপে জনজীবন সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।রাস্তা ঘাটে যান চলাচল নেই বললেই চলে।রাস্তার পাশে একটা রেস্টুরেন্টের ভেতরও পিনপতন নীরবতা।আরাফ টেবিলে হাত রেখে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে।এসি চলছে তাই জানালার কাচ ঘোলা হয়ে আছে।আরাফের সামনে টোয়া বিরক্ত মুখ করে বসে আছে।আরাফ তখন থেকে ঘোলা কাচের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছে টোয়া বুঝতে পারছেনা।আরাফকে উল্টা-পাল্টা কিছু ভাবতে দেওয়া যাবেনা।আরাফের সাথে এক হয়ে কাজ করতে হবে তাহলে খুব সহজেই অন্তকে নির্ভীকের কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া যাবে।টোয়া যদি বলে দেয় গত রাতে নির্ভীকের সাথে অন্তও পানি খেয়েছে সেজন্য নির্ভীক সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে আর অন্তর শরীর দূর্বল থাকায় দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়েছে আরাফ তাহলে ঘোর প্রতিবাদ করবে।আরাফ বার বার নিষেধ করেছে অন্তর পেটে যেন মেডিসিন না যায়।সত্যি বললে আরাফ টোয়ার সাথে কাজ নাও করতে পারে তাই টোয়া একটু নড়ে চড়ে বসে মিথ্যে বলতে শুরু করল,

‘নির্ভীকই পানি খেয়েছিল অন্ত খায়নি।আমি তো মাত্র আড়াই মিলি গ্রামের মেডিসিন দিয়েছিলাম যাতে অন্ত খেলেও কোন ক্ষতি না হয়।’

টোয়ার ধারণা নির্ভীকও মেডিসিন মেশানো পানি খেয়েছিল সেজন্য সকালে উঠতে পারেনি আর ভার্সিটিও যেতে পারেনি কিন্তু টোয়ার ধারণা ভুল।নির্ভীক সারারাত ঘুমায়নি তাই সকাল সকাল উঠতে পারেনি আর অন্তকে একা রেখে ভার্সিটিও যায়নি।আরাফ টোয়ার দিকে তাকালো।শান্ত কন্ঠে বলল,

‘তাহলে অন্ত এত বেশি ঘুমোচ্ছে কেন?’

টোয়া মুচকি হেসে বলল,

‘অন্ত সকালে উঠেছিল।ব্রেকফাস্ট করে অ্যান্টি কি যেন মেডিসিন দিল ওটা খেয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছে।নির্ভীক দশটায় উঠেছে আর অন্ত সাতটায়।তাহলে কি বুঝা যাচ্ছে?পানিটা নির্ভীকই খেয়েছে।’

আরাফ কিঞ্চিত ভ্রু কুচকে বলল,

‘এসব মেডিসিন আর দেওয়ার দরকার নেই।ওরা একসাথে থাকলে… হেয়াটইভার আমার কোন সমস্যা নেই।আমি সুযোগ পেলে অন্তকে নিয়ে চলে যাব।’

টোয়া মনে মনে বলল আমার সমস্যা আছে।নির্ভীকের পাশে আমি কাউকে আলাউ করব না।নির্ভীকের কুত্তাটাকেও আমার হিংসে হয় আর অন্ত তো অসহ্য একটা মেয়ে।বেশি রাগ লাগলে মেরে দিব ওকে।নির্ভীক আগের থেকেই আমাকে ভালোবাসতো,অন্ত এসে সব উল্টা-পাল্টা করে দিয়েছে।এসব ভেবে টোয়ার রাগ হচ্ছে।আরাফের সামনে রাগ নিয়ন্ত্রণে রেখে বলল,

‘সমস্যা নেই মানে?নির্ভীক যদি অন্তর সাথে কিছু করে ভাল লাগবে আপনার?আমারও ভাল লাগবেনা।আলাদা করার উপায় থাকতে কেন ওদের এক হতে দিব?কাল যেমন ঘুমিয়েছে আজও ঘুমোবে।আজ সন্ধ্যার থেকে ঘুমোবে।এবার নির্ভীককে আলাদা করে খাওয়াবো তাই অন্তর জন্য চিন্তা করতে হবেনা।’

আরাফের মন সায় দিচ্ছে না।নির্ভীক সারারাত মরার মতো ঘুমোবে অন্তর যদি হঠাৎ করে কোন সমস্যা হয় কে দেখবে ওকে?এই বাসায় থাকতে ইচ্ছেমতি অন্তর পাশে থাকতো,আরাফও মাঝরাতে উঠে গিয়ে দেখে আসতো।মাঝে মাঝে অন্ত খারাপ স্বপ্ন দেখে,ভূতের ভয় পেয়ে কান্না করে,আবার কখনও দম বন্ধ লাগে তখন ইচ্ছেমতিকে নিয়ে বেলকুনিতে যায় নাহলে ছাদে যায়।এখন নির্ভীক যদি ঘুমের জন্য বুঝতে না পারে অন্তর এসব প্রবলেম হচ্ছে তাহলে অন্তর কি হবে!!

আরাফ ওয়েটারকে বিল দিতে বলে টোয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘নির্ভীককে মেডিসিন খাওয়ানোর দরকার নেই।ওকে কাজের প্রেশারে ফেলতে হবে।’

টোয়া বিরক্ত হয়ে বলল,

‘ইম্পসিবল।নির্ভীক কাজকে কখনও প্রেশার মনে করেনা।সবকিছু আগের থেকে প্ল্যান করে রাখে।ছোট থেকে দেখে আসছি ওর কোন প্যারা নেই,সবসময় চিল মুডে থাকে।তাহলে কেমন করে প্রেশার দিব?’

আরাফ চিন্তিত হয়ে বলল,

‘অন্য কিছু ভাবতে হবে নাহলে এভাবে মেডিসিন দিয়ে কয়দিন?নির্ভীকেরও তো শরীর খারাপ হতে পারে।’

‘কয়দিন মানে?আপনি অন্তকে নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যেই চলে যাবেন।আর ছবি গুলো আমি অন্তকে দেখাবো,নির্ভীক শুধু বের হোক বাসা থেকে।’

বিল চলে এসেছে।আরাফ বিল মিটিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।বাকি কথা ফোনে হবে বলে চলে গেল।টোয়া শয়তানি হেসে মনে মনে বলল নির্ভীক একা কেন মেডিসিন খাবে?আজকে অন্তও খাবে।কাল দশ মিলি গ্রামের দুটো দিয়েছিলাম আজ আরও বেশি দিব।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here