ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৩৬

0
1118

বি.দ্র:- পাঠক-পাঠিকাদের বলছি।আমি একটা মানুষ গল্প লিখছি আপনারা সেটা ঠিকই পড়ছেন কিন্তু রেসপন্স করছেন না।অনেকে দেখি গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট কিছু করেন না ইনবক্সে যেয়ে হাই হ্যালো করেন আর বলেন খুব ভাল লিখ তুমি,তোমার জন্য শুভ কামনা।এটা কি ধরনের শুভকামনা বুঝিনা আমি।কমেন্ট না করলে লাইক দিয়ে বুঝাতে হবে যে আপনারা গল্পটা পড়ছেন।অথচ আপনারা সেরকম কিছুই করছেননা।তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি ধরে নিচ্ছি আমার গল্প আপনারা পড়ছেন না।না পড়লে গল্প দিয়ে কাজ নেই।আমার গল্প হয়তো আপনাদরে ভাল লাগছেনা,ছোট রাইটার বলে অবহেলা করছেন কিংবা আমার গল্প খুবই নিম্ন মানের।যাইহোক,আমার মনে হচ্ছে আপনারা গল্প চাননা।কুড়ি/ত্রিশটা লাইক আর পাঁচ/ছয়টা কমেন্ট পাবার মতো গল্প আমি লিখি না।কি আর বলবো,আপনারা এই দ্রষ্টব্য পড়বেন না জানি।গল্পের ইতি টেনে দেবার সময় হয়ে গিয়েছে।জানি কিছু পাবলিক ইনবক্সে বলবে আমি তোমার গল্পে প্রচুর লাইক কমেন্ট করি আর তুমি এভাবে বলতে পারলা?তাদের জন্য আমি সরি।

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩০.

সূর্য প্রায় ডুবে যাচ্ছে।চারদিকে তার অপরুপ সোনালি আলোর ছটা।নদীতে সূর্য অস্ত যাচ্ছে।নির্ভীক গাড়ির ফ্রন্ট পার্টে বসে সূর্যাস্ত দেখছে আর অন্ত নির্ভীকের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।ঝিরিঝিরি বাতাসে অন্তর কপালের ছোট ছোট চুল গুলো নির্ভীকের গলায় মুখে উড়ে এসে পরছে।নির্ভীক মুচকি হেসে অন্তর গালে হাত রেখে বলল,

‘তুমি যখন লজ্জা পাও তোমার গাল জোরা ওই অস্তমিত সূর্যের মতো লাল হয়।’

অন্ত হকচকিয়ে উঠে নির্ভীকের কাঁধ থেকে মাথা তুললো।ঘুম জড়নো কন্ঠে বলল,

‘কি হয়েছে?’

নির্ভীক অবাক হয়ে বলল,
‘আবার ঘুমিয়েছিলে!হোয়াটস্ রং উইথ ইউ?’

অন্ত আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো নদীর পাড়ে অনেক লোকজন ঘুরতে এসেছে।যদিও কেউ তাদের সেরকমভাবে খেয়াল করছেনা কিন্তু সবার সামনে এভাবে ঘুমিয়ে পরায় অন্তর বেশ লজ্জা করছে।নির্ভীক আবার কিছু বলবে তখনই পকেটে অন্তর ফোন বেজে উঠলো।নির্ভীক প্যান্টের পকেট থেকে অন্তর ফোন বের করে অন্তকে দিল।ইচ্ছেমতি কল করেছে।অন্ত রিসিভ করেই নির্ভীকের কাঁধে মাথা হেলিয়ে বলল,

‘হাই জানু।’

‘ওই মিয়া সারাদিন চলে গেল একবারও ফোন দিসনি কেন?’

ক্ষোভের সাথে বলল ইচ্ছমতি।অন্ত নাক ছিটকে বলল,

‘মিয়া?ছিঃ!কি অভদ্র ভাষা!ওটা মেয়ে হবে।’

‘বেলকুনিতে আয়রে মিয়া, দেখ ভাইয়া আমার জন্য কি নিয়ে এসেছে।’

অন্ত নির্ভীকের কাঁধ থেকে মাথা তুলে বলল,

‘কি নিয়ে এসেছে?আমার জন্য নেয়নি?আমি তো বাসায় নেই এখন।’

‘বাসায় নেই মানে?কোথায় গিয়েছিস?’

অন্ত নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়ার সাথে ঘুরতে এসেছি।’

নির্ভীক অন্তর মুখে ভাইয়া ডাক শুনেই চটে গেল।অন্তর হাত থেকে ফোন নিয়ে কল কেটে পকেটে পুরে বলল,

‘নির্ভীক ভাইয়া!!আমি ভাইয়া!!ওয়াও!! বউ আমাকে ভাই ডাকে তাহলে হাজবেন্ড নয় হাজবেন্ডের ডেকর আমি,ভেরি নাইস! ‘

নির্ভীক মাটিতে নেমে হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা সামনে চলে গেল।অন্ত হা করে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ভীক মি. এংরি বার্ড হয়ে পেছন ফিরে অন্তকে দেখে আবার সামনে তাকালো।অন্ত বুঝতে পারছে ভাইয়া বলায় নির্ভীক রাগ করেছে কিন্তু সে কি করবে?নির্ভীককে নাম ধরে ডাকতে লজ্জা করে।অন্ত মাটিতে নেমে ধীরে ধীরে হেঁটে গিয়ে নির্ভীকের পেছনে দাঁড়ালো।শাড়ির আঁচলের কোনা নখে পেচাতে পেচাতে বলল,

‘আর ভাইয়া বলবো না।সরি।’

নির্ভীক মুচকি হাসলো।অন্ত পেছনে থাকায় দেখতে পেল না।নির্ভীক মিথ্যে রাগ নিয়ে বলল,

‘সরিতে হবেনা,পানিশমেন্ট নিতে হবে।’

অন্ত ঠোঁট উল্টালো।নির্ভীক অন্তর দিকে ঘুরে বলল,

‘রাতে আমাকে একশোটা লিপ কিস দিবা।আই থিংক তারপর আমাকে আর ভাইয়া মনে হবেনা।’

অন্ত শুকনো ঢোক গিলল।মিন মিন করে বলল,

‘আপনি প্রমিস করেছিলেন লিপে আর নয়।’

নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,

‘তুমি তো প্রমিস কর নি আর আমি কখন প্রমিস করেছি?মনে নেই আমার।প্রমিস করে থাকলে সব ক্যান্সেল।’

অন্ত বিস্ফোরিত চোখে নির্ভীকের দিকে তাকালো।মনে মনে বলল কি পাল্টি বাজ ছেলেরে বাবা!!কাল রাতে প্রমিস করলো বিকেলে প্রমিস করলো তাও বলছে মনে নেই।এটা তো মহা মিথ্যুক ছেলে।অন্তর ভাবনার মাঝেই নির্ভীক অন্তর হাত ধরে গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,

‘অনেক হয়েছে ঘুরাঘুরি এবার হসপিটালে চলো।খাবা আর কিছু?আইসক্রিম বাদে।’

অন্ত অবাক হয়ে বলল,

‘হসপিটালে কেন?’

‘তোমার কিছু হয়েছে।ইন্জেকশন না নিলে তো এত ঘুমাওনা তাই একটু চেক আপ করতে হবে।কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে।’

অন্ত নির্ভীকের দিকে ভীত চোখে তাকিয়ে বলল,

‘প্লিজ হসপিটালে নিয়ে যাবেন না।বাসায় যাবো চলুন।আর ঘুমাবো না।’

নির্ভীক গাড়ির দরজা খুলে অন্তকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে দিয়ে অন্তর মুখের উপর ঝুকে বলল,

‘ডোন্ট ওরি আজকে ইন্জেকশন দিবে না।ডক্টর শুধু একটু দেখবে কথা বলবে।এটুকুই এর বেশি আর কিছু করবেনা।’

অন্তর ভাল লাগছেনা।এই কয়মাসে হসপিটাল,ডক্টর, ইন্জেকশন,স্যালাইন,মেডিসিনে অন্ত একদম হাঁপিয়ে উঠেছে।তাছাড়াও সূচ ফুটাতে অন্ত অনেক ভয় পায়।নির্ভীক অন্তর কপালে চুমু দিয়ে গাড়ির দরজা লাগিয়ে দিল।

রাত দশটা বেজে গিয়েছে নির্ভীক আর অন্ত বাসায় ফেরেনি।নির্ভীকের মা কল দিয়ে শুনেছেন ওরা হসপিটালে আছে।সন্ধ্যার পর হুট করে আকাশ খারাপ হয়েছে।বজ্রপাত সহ বৃষ্টি হচ্ছিল।হসপিটালে ডক্টর অন্তকে দেখে বলেছেন শরীর দূর্বল তাই স্যালাইন করলে ভাল হবে।নির্ভীক বাসায় এসে স্যালাইন করতো কিন্তু ঝড়-বৃষ্টির জন্য বাহিরে বের না হয়ে হসপিটালেই অন্তকে স্যালাইন লাগিয়েছে।এখন আকাশ পরিষ্কার হয়েছে,বৃষ্টি থেমেছে।টোয়া নির্ভীকদের ড্রইং রুমে বসে নির্ভীকের মাকে বলছে,

‘অ্যান্টি?আরেকবার ফোন দাও না,কোথায় ওরা?’

নির্ভীকের মা ডক্টরি বই পড়ছিলেন।টোয়ার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলল,

‘চলে আসবে,তুই গিয়ে খেয়ে নে।’

টোয়া উঠে ডাইনিং এর দিকে যেতে যেতে বলল,

‘হ্যা খুব ক্ষুধা পেয়েছে।ওদের আশায় বসে থাকলে নাড়ি ভূরি সব হজম হয়ে যাবে।আমি তাহলে খেয়ে নিলাম।ওরা আসলে ওদের সাথে আবার খাব।’

টোয়া একা একা খেয়ে নিল।নির্ভীকের গ্লাস প্লেট সব আলাদা তাই নির্ভীকের পানির গ্লাসে পানি ভরে তাতে মেডিসিন মিসিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখলো যাতে নির্ভিক টেবিলে বসেই ঢাকনা সরিয়ে পানি খায়।অন্ত কোন গ্লাসে পানি খাবে টোয়া বুঝতে পারলোনা তাই অন্তর জন্য বেডরুমের জগে মেডিসিন মিশিয়ে রাখলো।টোয়া শয়তানি কাজ শেষ করে ড্রইং রুমে আসতেই নির্ভীক আর অন্তকে দেখতে পেয়ে খুশি হয়ে বলল,

‘তোমরা চলে এসেছো?’

নির্ভীক অন্তর হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,

‘এখনও বাসায় যাসনি?শৈবালও আছে নাকি?’

টোয়া মুচকি হেসে বলল,

‘শুধু শৈবাল নয় তোমার প্রান্তও আছে।সবাই খেয়ে উপরের রুমে আড্ডা দিচ্ছে।আমি তো তোমাদের সাথে খাব বলে ওয়েট করছিলাম।তোমাদের আসতে দেরি হচ্ছে দেখে খেয়ে নিয়েছি।ঘুরতে যাবো আমরা, তোমরাও যাবে কিন্তু তার আগে ডিনার করে নাও।’

নির্ভীক সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,

‘খেয়ে এসেছি আমরা।পানি দে তো একটু।’

টোয়া খুশি হয়ে পানি নিতে দৌঁড়।নির্ভীকের মা বই রেখে অন্তর দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘কি ব্যাপার আমার বউ মা এমন শুকনো মুৃখ করে দাঁড়িয়ে আছে কেন?’

অন্ত ধীরে ধীরে গিয়ে নির্ভীকের মায়ের পাশে বসলো।নির্ভীক মুচকি হেসে বলল,

‘আজকে আবার সূচ ফুটিয়েছে সেজন্য।আমার সাথে কথায় বলছেনা।আমার কি দোষ বল তো?আমি কি ডক্টর?’

অন্ত রাগী চোখে নির্ভীকের দিকে তাকালো।মনে মনে বলল ডক্টর নয় জানি কিন্তু আমাকে জোর করে কে হসপিটালে নিয়ে গেল শুনি?লাগবেনা শোনা আর বলাও লাগবেনা।আপনার সাথে আর কথায় বলবো না।মনে মনে এসব বলেই অন্ত মুখ ফোলালো।টোয়া পানির গ্লাস এনে নির্ভীককে দিয়ে আগ্রহী হয়ে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে থাকলো কিন্তু নির্ভীক পানি খেল না।গ্লাস নিয়ে উঠে গিয়ে অন্তর পাশে বসলো।অন্তর দিকে গ্লাস এগিয়ে দিয়ে বলল,

‘কান্না করে মুখ একদম শুকিয়ে ফেলেছো।পানি খাও।’

অন্ত অন্যদিকে তাকালো।নির্ভীক মুচকি হাসলো। ওর মায়ের হাতে গ্লাস টা ধরিয়ে দিয়ে ইশারায় পানি খাওয়াতে বলল।টোয়ার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।পানিটা নির্ভীক খাবে জন্য একটু বেশি পাওয়ারের মেডিসিন দিয়েছে কিন্তু এখানে এসে দেখছে এরা এটা অন্তকে খাওয়াবে।পানি খেয়ে অন্তর যদি উল্টা-পাল্টা কিছু হয়ে যায়!!ভয়ে টোয়ার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে।এদিকে নির্ভীকের মা অন্তকে পানি দিতেই অন্ত আর না করলো না।ভাল মেয়ের মতো সব পানি খেয়ে ফুখ ফুলিয়ে ঘরে চলে গেল।নির্ভীকের বউকে ছাড়া এক মুহূর্তও চলছেনা তাই অন্তর পেছন পেছন সেও ঘরে গেল।

ঘরে এসে অন্ত নিজের মেডিসিন খেয়ে নিল।তারপর দরজার বাহিরে নির্ভীক আর প্রান্তর কথা শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো।মেডিসিন দেখলেই রাগ হচ্ছে তাই সবগুলো ট্যাবলেট খুলে হাতে নিয়ে ঝুরিতে ফোলে দিল।খালি ড্রয়্যারে ঢুকিয়ে মনে মনে বলল এখন শান্তি লাগছে।সকালের ওষুধটা খেতে হবেনা,কিনে আনতে আনতে দুপুর হয়ে যাবে তাও যদি উনি জানতে পারেন তবে।জানাবোই না উনাকে।ভেবেই অন্তত হাসলো।নির্ভীককে ঘরে ঢুকতে দেখেই থমথমে মুখ করে আলমিরা থেকে একটা ঢোলা সাদা ফতুয়া আর নীল প্লাজু বের করলো।শরীর ভাল লাগছেনা তাই ফ্রেশ হয়ে এখনই ঘুমোবে।নির্ভীক আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন খুলতে খুলতে অন্তকে দেখছে আর অন্তকে জ্বালানোর জন্য বলছে,

‘আর কিছুক্ষণ পরই একশোটা কিসি পাবো।ভাবতেই কেমন সুখ সুখ লাগছে।হোয়েন আওয়ার লিপ টাচেচ……..উফ্ আই ক্যান্ট ইমাজাইন।’

অন্ত শুনেও না শোনার ভান করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুমের দরজা খুলবে এমন সময় নির্ভীক দরজা ধাক্কিয়ে বলছে,

‘এই বউ বের হও।আর কতক্ষণ থাকবা।কিসি নিব না তো।একটা কিসিও দিবনা প্রমিস তাও ওয়াশরুমে ঢুকে বসে থেকো না।’

অন্ত শাওয়ার নিয়েছে তাই একটু বেশি সময় লেগেছে।সময় বেশি লাগায় নির্ভীক ভাবছে অন্ত চুমুর ভয়ে বের হচ্ছে না সেজন্য ধাক্কা-ধাক্কি শুরু করে দিয়েছে।অন্ত বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিল।নির্ভীক অন্তকে দেখেই তেজী কন্ঠে বলল,

‘এই তুমি এত রাতে শাওয়ার নিয়েছো কেন?এমনিই স্যালাইনের জন্য জ্বর আসতে পারে তারপর শাওয়ার নিয়েছো।চলো মাথা মুছিয়ে দিই।’

অন্ত থমথমে মুখ করে ভেজা কাপড় নিয়ে বেলকুনির দিকে গেল।নির্ভীক অন্তর হাত থেকে কাপড়গুলো কেড়ে নিল।অন্ত কিছু না বলে হাই তুলতে তুলতে ঘরে এসে ড্রেসিং টেবিলের টুলে বসে চিড়ুনি নিয়ে চুল আচড়াতে আচড়াতে টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে অলস ভঙ্গিতে বসে থাকলো।নির্ভীক কাপড় শুকোতে দিয়ে ঘরে এসে অন্তকে ঝিমুতে দেখেই অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,

‘মেডিসিন খেয়ে ঘুমাও।’

অন্ত মাথা তুলে নির্ভীকের দিকে তাকালো।ভ্রু কুচকে উঠে গিয়ে বিছানায় প্রস্থ বরাবর উপুর হয়ে শুয়ে দূর্বল কন্ঠে বলল,

‘খেয়েছি।’

নির্ভীক অন্তর কথা বিশ্বাস করলো না। যতদূর সত্যি অন্ত মেডিসিন খায়নি কারন অন্ত আজকে রেগে আছে।নির্ভীক বেড সাইট টেবিলের ড্রয়্যার খুলে দেখলো সবগুলো মেডিসিনের পাতা খালি।রাগী চোখে অন্তর দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তুমি কি একসাথে সবগুলো মেডিসিন খেয়েছো?’

অন্ত শুধু জোরে একটু শ্বাস নিল কিছু বলল না।নির্ভীক কনুইয়ে ভর দিয়ে অন্তর উপর ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

‘আচ্ছা সরি আর হসপিটালে নিয়ে যাব না।এবার বল তো অতগুলো মেডিসিন কি করেছো?জানালা দিয়ে ফেলে দিয়েছো?’

নির্ভীক ভাবছে অন্ত খুব অভিমান করেছে তাই কথা বলছেনা।নির্ভীক অন্তকে এক ঝটকায় চিৎ করে অন্তর গলায় মুখ ডুবিয়ে বলল,

‘আ’ম সরি।বলছি তো আর হসপিটালে নিয়ে যাব না।কথা বল প্লিজ।’

অন্ত কোন কথা বলছেনা দেখে নির্ভীক অন্তর দিকে তাকালো,অবাক হয়ে অন্তর গাল ঝাঁকিয়ে বলল,

‘কিরে?ঘুমিয়ে গেলা?ওই?স্ট্রেঞ্জ!!ওকে ঘুমাও।’

নির্ভীক অন্তর মাথার নিচে বালিশ দিয়ে উঠে বসলো।বিছানা থেকে নেমে সন্দেহী চোখে অন্তর দিকে তাকালো।ড্রয়্যার থেকে আবার মেডিসিন গুলো বের করে হাতে নিয়ে দেখলো।একটা ট্যাবলেটও অবশিষ্ট নেই।অন্তকি সত্যি সবগুলো মেডিসিন খেয়ে নিয়েছে?ভেবেই নির্ভীকের কুচকানো ভ্রু স্বাভাবিক হয়ে চোখে মুখে ভয়ের ছাপ স্পষ্ট হলো।দ্রুত অন্তর পাশে বসে অন্তকে ডাকতে লাগলো।ডেকে, গাল ঝাকিয়ে, মুখে পানি ছিটিয়েও অন্তকে জাগানো গেল না।অন্তর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে।নিঃশ্বাস নিচ্ছে কিনা তাও বুঝা যাচ্ছে না।নির্ভীক নিশ্চিত হল অন্ত রাগ করে সবগুলো মেডিসিন খেয়ে নিয়েছে।ভয়ে নির্ভীকের হাত-পা অসার হয়ে আসছে।দৌঁড়ে দরজার কাছে যেয়ে তার মাকে আর প্রান্তকে ডাকতে লাগলো।কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই নির্ভীকের ঘরে চলে আসলো।টোয়া শুকনো মুখ করে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে।মনে মনে ভাবছে মরে টরে যাবেনা তো?মরে গেলে আরাফ ভাইয়া সবাইকে জানিয়ে দিবে।আমার তখন জেল হয়ে যাবে।গড রক্ষা কর আমাকে।এবারের মতো এই মেয়েকে বাঁচিয়ে দাও এরপর আর এসব করব না।

নির্ভীক মাকে সব খুলে বলতেই উনি বললেন,

‘আচ্ছা ঠিক আছে আমার কাছে ইন্জেকশন আছে চিন্তা করিসনা।আমি এখনই ইন্জেকশন করব তাহলে সব ওষুধের একশন নষ্ট হয়ে যাবে।’

নির্ভীক ব্যস্ত হয়ে বলল,

‘যা করার তাড়াতাড়ি কর।দেরি করছো কেন?’

বাসাতে অন্তর ট্রিটমেন্ট করে কাজ হল না।রাতেই অন্তকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হল।টোয়া নির্ভীকের কাছে শুনেছে অন্ত রেগে নিজের মেডিসিন গুলো খেয়েছে তাই এখন সে চিন্তা মুক্ত কারন অন্ত যদি মরেও যায় তার উপর কোন এলিগেশন আসবেনা।সবাই ভাববে অন্ত সুইসাইড করেছে।টোয়া হসপিটালে বেশ ফূর্তি নিয়ে নির্ভীককে মিথ্যে সান্ত্বনা দিচ্ছে।টোয়ার মন আনন্দে পূর্ণ।একে তো অন্তকে ঘুমের মেডিসিন দিয়েছে অন্ত আবার নিজের সব মেডিসিন একসাথে খেয়েছে সেটাও ঘুমের মেডিসিন মেশানো পানি দিয়েই।টোয়ার ইচ্ছে করছে অন্তকে একটা ট্রিট দিতে কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না।ডক্টরদের চিন্তিত মুখ দেখেই টোয়া ধরে নিয়েছে অন্ত আজকে ফিনিশ।

নির্ভীক চোখমুখ লাল করে হসপিটালের করিডরে নীল চেয়ারে বসে আছে।এক পাশে টোয়া বকবক করছে অন্য পাশে প্রান্ত জারিফকে কল দিয়ে সবটা বলছে।অন্তর উপর নির্ভীকের রাগ কন্ট্রোলের বাহিরে চলে যাচ্ছে।এদিকে টোয়ার একটা কথাও সহ্য হচ্ছেনা।নির্ভীক চেয়ার থেকে উঠে ঠাস করে টোয়ার গালে থাপ্পড় দিয়ে রেগে বলল,

‘যা সর এখান থেকে।’

টোয়া গালে হাত দিয়ে উঠে দাঁড়ালো।নির্ভীকের রাগ সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকায় বিনা বাক্যে একটু দূরে চেয়ারে যেয়ে শৈবালের পাশে বসলো।শৈবাল তো টোয়ার এমন অবস্থা দেখে হাসি চেপে রাখতে পারছেনা কিন্তু এমন সিরিয়াস মোমেন্টে যদি হাসে নির্ভীক ওকেও মারবে তাই চুপ হয়ে থাকলো।প্রান্ত কল কেটে দাঁড়িয়ে বলল,

‘তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন?ঠিক হয়ে যাবে সব।’

নির্ভীক দেয়ালে ঘুশি মেরে একহাতে মাথার উপর চুল চেপে ধরে রেগে বলল,

‘কি করে পারলো দ্বিতীয় বার সুইসাইড এটেমপ্ট করতে?কি প্রবলেম টা কি ওর?’

প্রান্ত নির্ভীকের কাঁধে হাত রেখে বলল,

‘সব শুনবো ওর কাছে আগে ও সুস্থ হোক।কি প্রবলেম,কোথায় প্রবলেম সবটা জানতে হবে।’

নির্ভীক অস্থির হয়ে চেয়ারে বসে বলল,

‘আরাফ ভাইয়াকে জানিয়েছিস?নাকি সবটা ওরই কাজ?নিশ্চয় আগের মতো আবার কিছু বলেছে।’

প্রান্ত শৈবাল আর টোয়ার দিকে একনজর তাকিয়ে নির্ভীকের পাশে বসে বলল,

‘ওসব কথা পরে হবে।’

তখনই অন্তর কেবিন থেকে ডক্টর বেড়িয়ে আসলো।নির্ভীক ডক্টরের কাছে যেতেই ডক্টর বললেন,

‘চিন্তার কোন কারন নেই।ঘুমোচ্ছে এখন।আপনরা যেই মেডিসিন গুলোর কথা বলছেন আমাদের ধারণা পেশেন্ট ওগুলো খায়নি।বেশ কয়েকটা ঘুমের মেডিসিন খেয়েছে।ঠিক সময় না নিয়ে আসলে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেত।সকালের দিকে বাসায় নিয়ে যেতে পারবেন।’

ডক্টর চলে গেল।নির্ভীকও হন হন করে অন্তর কেবিনে ঢুকে গেল আর টোয়া চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে শুকনো ঢোক গিললো।ডক্টর ঘুমের মেডিসিনের কথা বলায় টোয়া ভয় পেয়ে গিয়েছে।আরও বেশি ভয় পাচ্ছে প্রান্তর তাকানো দেখে।বাসা থেকেই প্রান্ত টোয়াকে সন্দেহী চোখে দেখছে সেটা টোয়া বেশ বুঝতে পারছে।মনে মনে ভাবছে প্রান্ত যদি একবার নির্ভীককে বলে দেয় নির্ভীক আমাকে উল্টো করে ঝুলিয়ে মেরে পিটে হলেও আমার মুখ থেকে সত্যি কথা বের করেই ছাড়বে।না না আমাকে নরমাল থাকতে হবে।কিছুতেই অস্থির হওয়া যাবেনা।অন্ত মিষ্টি মেয়ে,আমি ওকে খুব ভালোবাসি।কোনদিন ওর ক্ষতি চাইনা।ব্যস এক কথায় থাকবো।এসব ভেবেই টোয়া অন্তর কেবিনের দিকে পা বাড়ালো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here