ভালোবাসি আমি যে তোমায় ২পর্ব:৩৭

0
1126

#ভালোবাসি_আমি_যে_তোমায়_২
#Sohani_Simu

৩১.

সকালের দিকে আকাশ রৌদ্রজ্জ্বল থাকলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে পুরো আকাশ মেঘে ঢেকে গেছে।সেই মেঘ ঘোলাটে পাতলা মেঘ নয়,আষাঢ়ের ঘন কালো মেঘ।যেকোন সময় বাদল নামবে।অন্তর কাজিনরা ব্যাগ প্যাক নিয়ে ড্রইং রুমে এসে জড় হয়েছে।সবাই আজই ঢাকা ফিরে যাবে।ইচ্ছেমতি ড্রইং রুমের জানালায় উঁকি দিয়ে আকাশের অবস্থা দেখে নিল।নাকের কাছে নেমে আসা চশমা চোখের দিকে ঠেলে দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে
ওগো,আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে।
কালিমাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে
ওগো,আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে। ‘
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

সবাই হাসলো।অন্তর খালাতো ভাই রিসাব ব্যাগ পিঠে ঝুলিয়ে নিয়ে বলল,

‘মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়
আড়ালে তার সূর্য হাসে।’
(সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)

‘ঠিক একদম ঠিক।তাড়াতাড়ি বের হও সবাই।দেরি কর না,আকাশের অবস্থা ভাল নয়।’

অন্তর বাবা সবাইকে তাড়া দিয়ে বললেন।মুহূর্তেই যে যার ব্যাগ হাতে নিয়ে বাহিরের দিকে যেতে লাগলো।কুহেলী অন্তর বাবার পাশে গিয়ে বলল,

‘বাবা আপনি নাহয় কটা দিন থেকে যান।আফ্রা ফিরে আসুক,অন্তর সাথেও তো দেখা হল না।’

উনি কুহেলীর মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,

‘অফিসের দিকটাও তো দেখতে হবে রে মা।ছোট মেয়েটার সাথে দেখা করলে আর যাওয়া হবেনা।সেও যেতে দিবেনা আমারও যেতে ইচ্ছে করবেনা।তার চেয়ে আমি বলি তোমাদের মা কিছুদিন থাক।’

পাশ থেকে অন্তর মা বললেন,

‘না না আমি তোমাকে একা পাঠাবো না।বুয়ার হাতের রান্না-বান্না খেতে পারোনা ওখানে যেয়ে খাবে কি?’

অন্তর বাবা ইচ্ছেমতির মায়ের দিকে তাকিয়ে বললেন,

‘কিছুদিন নাহয় আসমার ওখানে গিয়ে খেয়ে আসবো।’

অন্তর মা ভ্রু কুচকে বললেন,

‘না না আসমা অসুস্থ।ও তোমার জন্য রান্না করতে পারবেনা।’

ইচ্ছেমতির মা মুচকি হেসে বলল,

‘আহা ভাবি আমি তেমন অসুস্থ নই।ভাইকে রান্না করে খাওয়াবার মতো শক্তি এখনও আমার আছে।’

অন্তর মা শুনলেন না।সবাইকে দেখে শুনে থাকতে বলে পথে উঠলেন।আত্মীয়-স্বজন সবাইকে বিদায় জানিয়ে কুহেলী,নিপা আর ইচ্ছেমতি বাসার ভেতরে ঢুকলো। ইচ্ছেমতির একটু মন খারাপ লাগছে।দুদিন পর জন্মদিন কিন্তু বাবা-মা কাছে থাকবেনা।ইচ্ছেমতি ঠিক করেছে এবার কোন জন্মদিন সেলিব্রেট করবে না।এদিকে নিপারও খুব বেশি মন খারাপ লাগছে কারন আরাফের মা চলে গেলেন আরাফ এখন প্রথম যেই কাজটি করবে সেটা হল নিপাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বের করে দিবে।কথায় কথায় রাগা-রাগী করবে।কত করে বলল সেও ঢাকায় চলে যাবে কিন্তু কেউ তাকে যেতে দিল না।নিপা তাও জোর করে গাড়িতে বসেছিল কিন্তু শাশুড়ির এক কথায় চোখমুখ অন্ধকার করে গাড়ি থেকে নামতে হয়েছে।নিপা মলিন মুখ করে সোফায় গিয়ে বসলো।কুহেলী কিচেনের দিকে যেতে যেতে বলল,

‘বাসাটা একদম ফাঁকা হয়ে গেল।কেমন মরা মরা লাগছে।আর দুটোদিন থাকতে বললাম কেউ থাকলোনা।’

তখনই নিপা বলল,

‘জারিফ ভাইয়া কোথায় ভাবী?সকাল থেকে দেখছিনা।’

কুহেলী কিচেনে যেতে চেয়েও গেল না।ড্রইং রুমে ফিরে এসে সোফায় বসে বলল,

‘অফিসে আছে।কাল রাতে জরুরী কাজে যেতে হয়েছে।’

তখনই আরাফ নিচে আসলো।কুহেলীর কথা শুনতে পেলেও বুঝতে পারেনি তাই ডাইনিং টেবিলের দিকে যেতে যেতে বলল,

‘কিসের জরুরী কাজ?’

কুহেলী আরাফকে বাসায় দেখেই বলল,
‘তুমি চলে এসেছো?অন্তর এখন কি অবস্থা?’

অন্তর কথা শুনতেই আরাফ চমকে পেছনে তাকালো।কুহেলীর কথা বুঝতে না পেরে দ্রুত কুহেলীর দিকে আসতে আসতে বলল,

‘কি অবস্থা মানে!কি হয়েছে ওর?আমি তো বাসাতেই আছি।’

সবাই কুহেলীর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছে।কুহেলী বুঝতে পারলো জারিফ আরাফকে কিছু জানায়নি।আরাফকে জানানো হয়নি মানে ওকে জানানো যাবেনা।কুহেলী হাসার চেষ্টা করে বলল,

‘সবাই এভাবে তাকাচ্ছো কেন?আমি তো এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম।’

আরাফ ভ্রু কুচকে চিন্তিত মুখ করে দ্রুত উপরে চলে গেল।কুহেলী নিপার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তোমার বর সারারাত ঘরেই আছে?’

নিপা মলিন মুখ করে বলল,

‘হ্যাঁ ডিনার করে শুয়েছিলেন এতক্ষণে উঠলেন।জ্বর এসেছিল একটু।’

কুহেলী নিপার পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,

‘একটা কথা বলি তোমাকে।কাউকে বল না।অন্ত তো অসুস্থ।’

নিপা অবাক হয়ে বলল,

‘কি!’

‘হুম জারিফ কাল রাতেই হসপিটালে চলে গিয়েছে।আমি ভেবেছিলাম আরাফ ভাইয়াকেও নিয়ে গিয়েছে।রাত বারোটার দিকে ফোন করে বলল চিন্তার কোন কারন নেই।কাউকে যেন না জানাই তাই আমি কাউকে জানায়নি।আম্মু জিজ্ঞেস করছিল জারিফ কোথায় বলেছি অফিসে।’

ইচ্ছেমতি বসে ফোন টিপছিল দুজনকে ফিসফাস করতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল,

‘কি বলছো তোমরা?’

কুহেলী ঠিক হয়ে বসে বলল,

‘যা বলছি বলছি তোকে এসব শুনতে হবেনা।তুই ভার্সিটিতে যাবি না?’

ইচ্ছেমতি কুশন মাথার নিচে দিয়ে সোফায় শুয়ে পরলো।বুকের উপর ফোন নিয়ে অন্তকে কল দিতে দিতে বলল,

‘নাহ আজ যাব না।দেখছো না আকাশ কত মেঘলা?কাল থেকে রেগুলার ক্লাস করবো।’

নিপা ভ্রু কুচকে বলল,

‘কিসের কাল থেকে?আজই যাবি,উঠ।আসার পর থেকে দেখছি বই হাতে নিসনি।এমন পড়ার শ্রী হলে নির্ঘাত ডাব্বা মারবি।’

ইচ্ছেমতি ভ্রু কুচকে বলল,

‘অন্ত ফোন তুলছেনা কেন?ও কি আর পড়াশুনা করবেনা?’

কুহেলী বলল,

‘করবে তো।নির্ভীক যা ছেলে পড়াশুনা না করলে ওকে ছেড়ে দিবে নাকি?’

নিপা হেসে বলল,
‘অন্ত মনে হয় ভালই পড়া চোর।আমি ওকে ইংলিশ পড়াতাম একটু সুযোগ পেলেই ফাঁকিবাজি করতো।’

আরাফকে সিঁড়ি দিয়ে হন্তদন্ত হয়ে নামতে দেখে সবাই উঠে দাঁড়ালো।আরাফ প্যান্ট শার্ট পরে কোথাও যাচ্ছে।দেখে মনে হচ্ছে খুব চিন্তিত।নিপা বিচলিত হয়ে বলল,

‘কোথায় যাচ্ছেন।’

আরাফ কিছু বলল না।তাকায়ওনি কারো দিকে।বড় বড় ধাপ ফেলে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।

গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পরছে।বৃষ্টির ধরন দেখে নির্ভীক খুব বিরক্ত হচ্ছে।এমন টিপ টিপ বৃষ্টি তার পছন্দ নয়।পনেরো কুড়ি মিনিটের ভারী বর্ষণ কিংবা তীব্র গরমে হঠাৎ আকাশে কালো মেঘ জমবে,অল্প সময়ের মধ্যে আকাশ থেকে ঠান্ডা জলের ধারা নেমে উত্তপ্ত পৃথিবীকে শীতল করবে এমন বৃষ্টি নির্ভীকের পছন্দ।নির্ভীক অন্তর কেবিনের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফি খেতে খেতে অন্তর কথা ভাবছে।মেয়েটা এত ছোট একটা বিষয় নিয়ে এভাবে এতগুলো মেডিসিন খেয়ে নিতে পারলো কিভাবে?সেদিন আরাফের কথা শুনে হাত কাটলো।এসব কি নরমাল?ওর কি কোন প্রবলেম হচ্ছে?নির্ভীক নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করছে তখনই জারিফের ডাক শুনে ভেতরে আসলো।

অন্ত ঘুম থেকে উঠেছে। নিজেকে হসপিটালে আবিষ্কার করে বেশ অবাকও হয়েছে।যতদূর মনে পরছে সে নির্ভীকের ঘরে ছিল তাহলে এখানে আসলো কি করে!
অন্ত জারিফের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি এখানে কেন?’

নির্ভীক অন্তর দিকে একনজর তাকালো তারপর জারিফের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি গাড়িতে ওয়েট করছি।’

জারিফ সোফা থেকে ফোন তুলে নিয়ে বলল,
‘ঠিক আছে যা।আমরা আসছি।’

নির্ভীক এক মুহূর্তও দেরি না করে চলে গেল।জারিফ অন্তর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,
‘চল তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে,বাসায় যেয়ে ব্রেকফাস্ট করবি।’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,
‘আমার কি হয়েছে ভাইয়া?’

জারিফ অন্তর পাশে বসে বলল,
‘তোকে আগেই বলেছিলাম যখনই কোন সমস্যা হবে কাউকে না বললেও আমাকে বলবি তা না করে তুই একগাদা মেডিসিন খেয়ে মরতে বসলি।’

অন্ত কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বলল,
‘মানে?’

অন্ত কিছু বুঝতে পারছেনা।জারিফও কিছু না বলে অন্তকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলল।অন্ত তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে বের হতেই জারিফ অন্তকে নিয়ে বেড়িয়ে আসলো।কি হয়েছে,কেন এখানে এসেছে এসব জিজ্ঞেস করতে করতে গাড়িতে চলে আসলো।নির্ভীক ড্রাইভিং সিটে বসে অপেক্ষা করছে।জারিফ অন্তকে পেছনের সিটে ঢুকিয়ে দিয়ে নিজে গিয়ে ফ্রন্ট সিটে বসলো।নির্ভীক জারিফের হাতে খাবারের প্যাকেট ধরিয়ে দিয়ে অন্তকে দিতে বলল।জারিফ অন্তকে প্যাকেট দিয়ে বলল,

‘খেয়ে নে।’

অন্তর ক্ষুধা পেয়েছে।কাল রাতে নির্ভীকের উপর রেগে থাকার জন্য রেস্টুরেন্টে বসে অল্প একটু খেয়েছিল তারপর তো আর কিছু খাওয়া হয়নি।অন্ত লুকিং গ্লাসে নির্ভীকের দিকে তাকাতেই দুজনার চোখাচোখি হয়ে গেল।নির্ভীক চোখ সরিয়ে সামনে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল।অন্ত ভ্রু কুচকে ভাবলো উনি কথা বলছেন না কেন?আর নির্ভীক ভাবছে ওটা না খেলে সত্যি সত্যি ভাইয়ার সামনেই একটা থাপ্পড় দিব।অন্ত কিছুক্ষণ ঠোঁট উল্টে নির্ভীকের তীক্ষ্ণ চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে প্যাকেট খুলে স্যান্ডউইচ বের করে খেতে খেতে নির্ভীকের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি কিছু বুঝতে পারছিনা।কাল রাতে তো হসপিটাল থেকে বাসায় গেলাম তারপর আবার কখন আসলাম?’

নির্ভীক কিছু বলল না।জারিফ পেছন ফিরে খানিকটা রেগে বলল,

‘তুই কাল মেডিসিন কেন খেয়েছিস সেটা বল আগে।’

অন্ত গালের মধ্যে খাবার রেখেই বলল,

‘কাল রাতে?ডক্টরই তো খেতে বলেছে।কেন?মেডিসিন খেতে হবে না আর?’

নির্ভীক রাগী চোখে অন্তর দিকে তাকালো।জারিফ পেছনে ঘুরে রাগী কন্ঠে বলল,

‘খেতে হবে এখন থেকে আরও বেশি খেতে হবে।মেডিসিন ছাড়া তুই কোন খাবার পাবিনা।ওগুলো খেয়েই থাকবি।’

কথা শেষ করে জারিফ সামনের দিকে তাকালো।অন্ত বুঝতে পারছে এরা রেগে আছে কিন্তু কেন রেগে আছে সেটা বলছেনা।পুরো রাস্তা অন্ত একা একা কথা বলতে বলতে আসলো।নির্ভীকদের বাসার সামনে গাড়ি থামতেই
জারিফ গাড়ি থেকে নেমে নির্ভীকের সাথে কথা বলে নিজের বাসায় চলে গেল।নির্ভীকও অন্তকে কিছু না বলে বাসার ভেতরে ঢুকে গেল।অন্ত ঠোঁট উল্টে নির্ভীকের পেছন পেছন বাসায় ঢুকলো।

সকালেই নির্ভীকদের বাসায় নতুন একটা কাজের মেয়ে এসেছে।নাম শেফালি।বয়স খুব বেশি নাহলেও কুড়ির বেশি আবার কমও হতে পারে।খুবই চঞ্চল মেয়ে।কাজেও পটু।শুধু একটায় সমস্যা কথা বেশি বলে,পেটে কোন কথা থাকেনা।এসেই নিচতলার পুরো মেঝে মুছে দিয়েছে কিন্তু নোংরা পানি ভর্তি বালতি সিঁড়ির সামনে রেখে একটু বিশ্রাম নিতে ড্রইং রুমের মেঝেতে বসেছে। তখনই নির্ভীক এক লাথি মেরে বালতি উল্টে দিয়ে সামনে থেকে সরিয়ে দিল।অন্ত আর শেফালি হা করে সব দেখল।অন্ত চেঁচিয়ে বলল,

‘এটা কি করলেন?সব ভিজে গেল তো।’

নির্ভীক ততক্ষণে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গিয়েছে।অন্ত নতুন কাজের মেয়ের সাথে কথা বলে দ্রুত উপরে আসলো।ঘরে ঢুকে দেখলো নির্ভীক কোট-প্যান্ট পরে একদম ফিটফাট।ল্যাপটপ ব্যাগে ঢুকিয়ে ব্যাগ নিয়ে অন্তকে পাশ কাটিয়ে দরজার কাছে যেতেই অন্ত বলল,

‘কোথায় যাচ্ছেন?’

নির্ভীক একটু দাঁড়ালো।অন্তকে একটা চুমু দিয়ে বাহিরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু চুমু দিলে এই মেয়ের শাস্তি হবেনা।ভেবেই নির্ভীক কিছু না বলেই চলে গেল।অন্ত মন খারাপ করলো।বিছানায় বসতেই শেফালি ঘরে ঢুকে বলল,

‘আফা খালা কইলো এই ঘর পরিষ্কার করতে।’

অন্ত ভ্রু কুচকে বলল,

‘কোন খালা?অ্যান্টি বাসায় আছে?’

শেফালি মেঝে থেকে কার্পেট তুলতে তুলতে বলল,

‘কমলা খালা।তোমারে নিচে যাইতে কইলো।’

অন্ত উঠে দাঁড়ালো।বিছানার উপর থেকে নিজের ফোন নিয়ে নিচে চলে গেল।অন্ত যেতেই শেফালি বিরবির করে বলল,

‘আফাডা কি সুন্দর!কাজ কাম ফেইলা খালি তাকাই থাকতে মন চাইতেছে!দেখি তো কি কি কসমেটিক মাখে,এত সুন্দর হয় কেমনে!’

শেফালি ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে অন্তর কসমেটিক্স সব হাত দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলো।খুবই সামান্য পরিমান সানস্ক্রিন ক্রিম নখে নিয়ে নিজের মুখে মাখতে মাখতে বলল,

‘এই শেষ আর দিমুনা।শেফালি অন্যের জিনিসে হাত দেয় না।আফারে কমুনে পরে।’

সব দামী দামী জিনিসপত্র উপেক্ষা করে শেফালি আবার কাজ করতে লাগলো।নির্ভীকের পড়ার টেবিলের পাশে রাখা ঝুড়ি পরিষ্কার করতে গিয়ে এক গাদা মেডিসিন দেখে মাথায় হাত দিয়ে মেঝেতে বসে বলল,

‘হায় আল্লাহ!এত ওষুধ কার!নষ্ট মনে হয়।’

শেফালি সবগুলো মেডিসিন আর আবর্জনা আপাতত রুমের বাইরের ঝুড়িতে রেখে দিল।পুরো রুম সুন্দর করে গুছিয়ে নিচে চলে গেল।

আরাফ ভার্সিটির মিলনায়তনের সামনের রাস্তায় গাড়ির ভেতরে বসে স্মোক করছে আর টোয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তাই সে বাইরে না গিয়ে গাড়িতেই টোয়াকে ডেকেছে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই দেখলো টোয়া ছাতা মাথায় এদিকেই আসছে।আরাফ ভ্রু কুচকে টোয়াকে পর্যবেক্ষণ করছে।মনে মনে ভাবছে মেয়েটাকে দেখতে কেমন অন্যরকম লাগে।মেয়েদের চোখে মুখে উপচে পরা স্নিগ্ধতা থাকবে কিন্তু এই মেয়ের চোখে মুখে ধূর্ততা ছাড়া আর কিছু নজরে পরার মতো নেই।এই মেয়ের বিহেভিয়ার যতটা ভাল দেখা যায় ততটা ভাল নয়।

টোয়া গাড়ির কাছে এসে গাড়ির দরজা খুলে ছাতা গুটিয়ে ফ্রন্ট ছিটে বসলো।পার্লার থেকে স্ট্রেইট করে নেওয়া চুল গুলো কাঁধের একপাশে নিতে নিতে বলল,

‘বলুন,কেন ডেকেছেন?’

আরাফ সিগারেট ফেলে দিয়ে স্টিয়ারিং এর উপর এক হাত রেখে সামনের দিকে তাকালো।মনে মনে ভাবলো আ’ম সিউর এই মেয়ে স্মোক করে কিংবা সিগারেটের গন্ধ ভাল লাগে নাহলে গাড়িতে সিগারেটের গন্ধ পেয়েও মিনিমাম রিয়েকশনও করলো না।এর জায়গায় অন্ত থাকলে বমি টমি করে অসুস্থ হয়ে যেত।আমিও না,কার সাথে কি তুলনা করছি।অন্তর সাথে টোয়ার তুলনা কথা মাথায় আসতেই আরাফ নিজের উপর কিঞ্চৎ বিরক্ত হল।টোয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘আমি আগেও বলেছি এখনও বলছি,মেডিসিনের টপিক ক্লোজ করে দাও।নির্ভীককেও মেডিসিন দেওয়ার কোন দরকার নেই।’

টোয়া মুচকি হেসে বলল,

‘হুম দিবনা।কাল রাতে অবশ্য দিতে চেয়েছিলাম পরে অন্ত রাগ করে অতগুলো মেডিসিন খেল তাই দিইনি আর দিবও না।অন্যকিছু করতে হবে।’

আরাফ ভ্রু কুচকে টোয়ার দিকে তাকালো।টোয়ার কথা বিশ্বাস হচ্ছেনা।কাল রেস্টুরেন্টে বলেছিল আর মেডিসিন দিবেনা তাও রাতে আবার মেডিসিন দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছে।আবার যে এরকম কিছু ভাববেনা তার কি মানে।আরাফ ভ্রু কুচকে বলল,

‘শোনো তোমাকে একটা কথা বলি।এমন কিছু কর না যেটাতে অন্ত সাফার করবে।আমার মনে হচ্ছে কাল তুমি কিছু একটা করেছো সেজন্য ওদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে।যাই হয়ে থাকুক কষ্টটা কিন্তু অন্ত পেয়েছে।এমন টা যেন আর না হয়।আমি কিন্তু ভাল মানুষদের মধ্যে পরিনা।তুমি আমাকে ঠিক করে চিনো না তাই বুঝতে পারছোনা।অন্তর কিছু হলে তোমাকে ছাড়বোনা।বিকেলে ছবি গুলো আমাকে দিয়ে দিও।লাগবে ওদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করা।’

আরাফের ঠান্ডা ধমকানিমূলক কথা টোয়া গায়ে মাখলোনা।মনে মনে বলল যা ভেবেছিলাম তাই হল।এই ছেলে পাল্টি খেল।এর সাথে হাত মিলানোই ঠিক হয়নি।এখন সব সময় আমাকে সন্দেহ করবে।সন্দেহ করলে করবে আমি কিছুতেই অন্তকে ছাড়বোনা।স্বজ্ঞানে কিছু করতে ভয় পেলে ট্যাবলেট খেয়ে করব।কষ্ট পেলে অন্ত পাবে আমার নির্ভীক নয় আর ছবিগুলো তো আমি অন্তকে দেখিয়েই ছাড়বো,আপনিও ওগুলো পাবেন আজই পাবেন।আপনার সাথে কাজ করে আমার কোন লাভ হবেনা।যা করার আমাকে একা করতে হবে।এসব ভেবে টোয়া আরাফের দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে বলল,

‘ছবি গুলো আমার কাছেই আছে। বিকেলে নির্ভীকদের বাসায় যাওয়ার সময় আপনাকে দিয়ে দিব।আমি ঠিক করেছি আর কখনও ওদের আলাদা করার চেষ্টা করব না।বাবা আমার জন্য ছেলে দেখেছে সামনের মাসে আমার বিয়ে।বাবা-মার খুশিই আমার খুশি।আপনার যা ইচ্ছে করুন আমি আর এসবের মধ্যে নেই।’

টোয়ার একটা কথাও আরাফ বিশ্বাস করলোনা।টোয়া কিছুক্ষণ আগেই বলল ওদের আলাদা করতে অন্যকিছু করতে হবে এখন বলছে এসবের মধ্যে থাকবেনা।এই মেয়ে মহা ধূর্ত।একে বিশ্বাস করা না করা ভিত্তিহীন।তবে এই মেয়েকে খুব একটা সুবিধার মনে হচ্ছেনা।কাল কি হয়েছিল সেসব আমি অন্তর মুখ থেকেই শুনবো।ভেবেই আরাফ টোয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

‘ওকে।’

টোয়া মুচকি হাসলো।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘আসি তাহলে?ক্লাস আছে আমার।’

‘সিউর।’

টোয়া চলে গেল।আরাফ সিটে হেলান দিয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল হবে না,এভাবে কিছু হবেনা।কেন ওদের বিয়েটা হতে দিলাম!!কি করবো আমি এখন!ভালোবাসা এত অসহায় কেন!কেন ওর ভালোবাসা পাচ্ছি না!কেন!কেন!আরাফ রেগে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত দিয়ে বারি দিল।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here