ভালোবাসি_বলেই_তো❤পর্ব ২৩

0
1167

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২৩

আবরন পূর্ণতার দুই গালে হাত রেখে ওর দিকে তাকিয়ে আবেগ ভরা সুরে বলল ,

– তুমি কি একটুও বোঝো না ??

পূর্ণতা চুপ করে থেকে হালকা স্বরে উত্ত‍র দিল ,

– কি বুঝবো ?? কি বোঝার কথা বলছেন ??

আবরন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল ,

– দুটো মানুষ এত টা কাছাকাছি তবুও তারা বলে না ভালোবাসি !! কি আজব দুনিয়া !!

পূর্ণতা আবরনের হাত নিজের গাল থেকে ছাড়িয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো । ওর বুকের ভেতর আবার ও ধুকধুক করছে । ও জানে আবরন কাছাকাছি থাকলেই ওর এই রকম অনুভূতির সৃষ্টি হয় । হয়তো এখন কারনটা ও বুঝে কিন্তু মনের ভেতরে তা লুকিয়ে আছে ।

আবরন বাহিরে তাকিয়ে দেখল বৃষ্টি থেমে গিয়েছে । আকাশের অন্ধকার আর রোড লাইটের হলুদ আলোয় ভেজা রাস্তা চিক চিক করছে ।

আবরন মুচকি হেসে পায়ের জুতো খুলে পূর্ণতার কাছে গিয়ে ওর হাতটা বাড়িয়ে দিল ।

পূর্ণতা ওর হাতের দিকে তাকিয়ে ওর চোখের দিকে তাকালো ।

আবরন বলল ,

– ভরসা করো আমায় ??

পূর্ণতা একগাল হেসে মাথা নেড়ে “হা” সূচক জবাব দিল ।

আবরন মাথা নেড়ে চোখ দিয়ে ইশারা করলো ওর হাতটা ধরার জন্য ।

পূর্ণতা প্রথম একটু ইতস্তত বোধ করলেও পরে মনের ইচ্ছাতেই আবরনের হাতে হাত রাখলো ।

আবরন বলল ,

– পা থেকে জুতো টা খুলে ফেলো ।

পূর্ণতা আবরনের কথায় পায়ের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো আবরনের পা টাও খালি । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আবরনকে প্রশ্ন করতে যাবে তখন আবরন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– উহু , কোনো প্রশ্ন না । তুমি বলেছো যে তুমি আমায় ভরসা করো । তাহলে এখন যা করতে বলছি সেটা করো ।

পূর্ণতা আবরনের কথা মতো পা থেকে জুতো খুলে খালি পায়ে দাঁড়ালো ।

আবরন পূর্ণতার দুই হাত নিয়ে নিজের কাধে রাখলো হাত দুটো , তারপর নিজের হাত দুটো দিয়ে পূর্ণতার কোমড় পেঁচিয়ে ধরতেই পূর্ণতা চমকে আবরনের দিকে তাকালো ।

আবরন বলল ,

– ভয় পেয়ো না , এমন কিছু আমি করবো না যাতে তুমি আঘাত পাবে । জাষ্ট একটু ভরসা করো । আমি তোমাকে একটা অন্যরকম অনুভূতি উপহার দিতে চাই ।

পূর্ণতা চুপ করে র‌ইল ।

আবরন আলতো করে পূর্ণতার কোমড় পেচিয়ে ধরে পূর্ণতা কে বলল ,

– তোমার পা দুটো আমার পায়ের উপর রাখো ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি ব্যথা পাবেন তো !!

আবরন বলল ,

– পাবো না ব্যথা , তুমি রাখোই না ।

পূর্ণতা নিজের কাপা কাপা পা দুটো একটা একটা করে আবরনের দুপায়ের উপর রাখতেই আবরন পূর্ণতা কে আরো শক্ত করে পেঁচিয়ে ধরল ।

আবরন বলল ,

– তুমি তৈরি নতুন অনুভুতি মনে নেওয়ার জন্য ??

পূর্ণতা মাথা নেড়ে “হা” জানালো ।

আবরন এবার পূর্ণতাকে নিয়েই এক পা দু-পা করে এগিয়ে রাস্তায় নামলো ।

পূর্ণতা আবরনের কাধ শক্ত করে চেপে ধরল ।

আবরন পূর্ণতা কে নিজের পায়ের ওপর নিয়েই হাঁটতে হাঁটতে গাড়ির দিকে র‌ওনা হলো ।

ছোট ছোট পায়ে আবরন এগোচ্ছে । পূর্ণতা এক গাল হাসতেই আবরন‌ও হেসে বলল ,

– কেমন এনজয় করছো ??

– অনেক ভালো । ছোট বেলায় ভাইয়া ও আমাকে এভাবে পায়ের উপর নিয়ে হাঁটতো ।

আবরন বলল ,

-হুম , আজ তো অনেক এনজয় করলে , তুমি খেয়াল করেছো কিনা জানি না কিন্তু আমি দেখেছি তুমি কিন্তু তোমার ঘাড় আগের থেকে কিছুটা ব্যথাহীন ভাবেই মুভ করতে পারছো ।

পূর্ণতা অবাক হয়ে বলল ,

– সিরিয়াসলি !! আমি তো প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম আমি অসুস্থ !!

আবরন বলল ,

– অসুস্থতার সময় ভ্রমন করলে বা এনজয় করলে তাড়াতাড়ি শারীরিক এবং মানসিক উভয় ভাবে সুস্থ‍্য হয়ে ওঠা যায় ।

পূর্ণতা চুপ করে আবরনের দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে আবরনের কথা গুলো শুনছে ।

আবরন কথা শেষ করে চোখ নিচু করে পূর্ণতার দিকে তাকাতেই দেখল পূর্ণতা ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।

আবরন পূর্ণতার মাথার সাথে মাথা লাগিয়ে বলল ,

– তোমার মতো বলদ দুনিয়ায় সত্যি সত্যি আরেকটা নেই !!

পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– কেন আপনার মনে হয় যে আমি দুনিয়ার একমাত্র বলদ ??

– কারন তুমি একটা বলদ ।

এই বলে আবরন হেসে পূর্ণতার নাকের সাথে নিজের নাক ঘষা দিতেই পূর্ণতা খিল খিল করে হেসে উঠল ।

আবরন এই প্রথম পূর্ণতা কে শব্দ করে হাসতে দেখল । আবরন ওর দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে দেখছিল ওর হাসি আর ঠিক তখন কেউ চিল্লিয়ে বলে উঠল ,

– ওহ মাই গড !! হোয়াট আ রোমান্টিক সিন !!

পূর্ণতা হাসি বন্ধ করে এবং আবরন পূর্ণতার দিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখল জিব্রান আর নাদিরা চোখ বড় বড় করে হেসে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ।

পূর্ণতা ওদের দেখে আবরনের পা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে ওর থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো । আবরন বলল ,

– ভাবি , এটা কোনো ভাবেই রোমান্টিক সিন ছিল না । আমরা তো জাষ্ট বাচ্চামো করছিলাম । কারন , তোমরা দুজন হিমু রূপা তো এই অলি গলিতে হারিয়ে গিয়েছিলে । আমরা আর বসে থেকে কি করবো তাই ভাবলাম একটু পুরোনো স্মৃতির স্বাদ নিই ।

জিব্রান বলল ,

– তা বুঝলাম !! কিন্তু যাচ্ছিলি কোথায় ??

– কোথায় আবার গাড়ির দিকে !!

নাদিরা হেসে বলল ,

– এভাবে দুজনে খালি পায়ে বাসায় ফিরবে নাকি ??

আবরন আর পূর্ণতা নিজেদের পায়ের দিকে তাকিয়ে বোকা বনে গেল ।

জিব্রান বলল ,

– জুতা কোথায় ফেলে এসেছিস ??

পূর্ণতা বলল ,

– বৃষ্টির সময় যেই বিল্ডিংয়ের নিচে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই আছে ।

আবরন মনে মনে ভাবছে ,

– হায়রে , এরা না এলে তো আজ জুতো ফেলেই এভাবে ভালোবাসতে বাসতে সারা রাস্তা হেঁটে চলে যেতাম ।

আবরন বলল ,

– তোমরা গাড়ির দিকে এগোও , আমি জুতো নিয়ে আসছি ।

নাদিরা বলল ,

– যাও ভাই , দেখো গিয়ে জুতো আছে নাকি চোরে নিয়ে গিয়েছে !!

আবরন দৌড়ে গেল সেই বিল্ডিংয়ের কাছে ।

জিব্রান পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দেখলো পূর্ণতা চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে । নাদিরা পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– তোমরা তো ভিজেও গিয়েছো । বৃষ্টি তে ভিজেছো নাকি ??

পূর্ণতা বলল ,

– না , আসলে আমরা হেঁটে তোমাদের দিকেই যাচ্ছিলাম , হঠাৎ বৃষ্টি এলো আর আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম ছাউনির মতো কোনো জায়গা নেই । পরে দৌড়ে একটা জায়গায় যেতে যেতে ভিজে গিয়েছি আরকি ।

নাদিরা মুচকি হেসে জিব্রানের দিকে তাকাতেই দেখল জিব্রান‌ও হালকা হাসছে ।

পূর্ণতা জিব্রানের দিকে তাকাতেই জিব্রান হাসি লুকিয়ে চোখে মুখে রাগ নিয়ে বলল ,

– আবরন আর তোর মধ্যে কি কিছু চলছে পূর্ণ ??

পূর্ণতা মাথা নেড়ে “না” জানালো ।

জিব্রান এবার ধীর গলায় বলল ,

– তোর মনে ওর জন্য কোনো ফিলিংস থাকলে বল । তুই কিন্তু আমার কাছে কখনো মিথ্যা বলিস নি ।

পূর্ণতা চুপ করে থেকে বলল ,

– আমার কারো প্রতি কোনো ফিলিংস নেই । তোমরা যাকে আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে পছন্দ করবে আমি তাকেই মেনে নেব ।

জিব্রান কিছুটা রেগে বলল ,

– ধুর , তুই কিচ্ছু বুঝিস ই না ।

নাদিরা জিব্রান কে বলল ,

– আরে তুমি ওর সাথে এভাবে কেন কথা বলছো ! তুমি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো , আবরন এলে একসাথে এসো ।

তারপর পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– চলো আমরা সামনে যেতে যেতে কথা বলি ।

পূর্ণতা নাদিরার সাথে হাঁটতে লাগল । নাদিরা বলল ,

– তুমি জানো তোমার ভাইয়া আর আমার ভালোবাসা কিভাবে শুরু হয় ??

– উহু !

– তোমার ভাইয়া আর আমি এক‌ই অফিসে জব করি । আমি তোমার ভাইয়ার আন্ডারে প্রথম জব পাই । তখন থেকে তোমার ভাইয়ার সাথে কথা , দেখা , কাজ বিষয়ক কথা এভাবে চলতে চলতে কিভাবে যেন দুজনের মনেই ভালোবাসা জমেছে ! কিন্তু সাহস করে একদিন জিব্রান ই আমাকে সত্যিটা জানায় , তখন আমিও ওর সাথে এ বিষয়ে সহমত হ‌ই ।

এখন তুমিও যদি কাউকে ভালোবাসো তাহলে সময় নিয়ে ভেবে চিন্তে তাকে বিষয়টা জানিও । কারন পরে এমন না হয় যে সে অন্য কারো হয়ে গিয়েছে । তখন কিন্তু নিজেই কষ্ট পাবে ।

পূর্ণতা শুধু মাথা নাড়ল , মুখে কিছু ই বলল না ।

ওরা দুজন গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়েছে । অপেক্ষা করছে আবরন আর জিব্রানের আসার জন্য ।

রাত বাজে সাড়ে বারোটা ।

আবরন দুই জোড়া জুতো জায়গা মতো পেয়ে যেতেই নিজের পায়ে জুতো পড়ে পূর্ণতার জুতো হাতে নিয়ে কিছুটা দৌড়ে‌ই আগের জায়গায় ফিরছিল ।
ফেরার পথে দেখল জিব্রান একা দাঁড়িয়ে আছে ।

আবরনকে দেখে জিব্রান বলল ,

– কিরে , বলতে পেরেছিস পূর্ণতা কে সত্যি কথাটা ?

– উহু , পারি নি । কিন্তু ওর আচরনে বুঝলাম ওর মনেও আমার জন্য আলাদা অনুভূতি আছে ।

– তাই নাকি ?? কিন্তু ওকে তো আমি জিজ্ঞেস করলাম , ও বলল ওর মনে কারো জন্য কোনো ফিলিংস নেই ।

– তুমি বড় ভাই , তোমাকে আর যা ই বলুক , এই বিষয়ে সত্যি কথা বলবে না । কারন দুটো । প্রথমত , ওর উপর থেকে তোমার বিশ্বাস উঠে যাবে আর দ্বিতীয়ত , ও যাকে ভালোবাসে তাকে চিরকালের জন্য হারাতে হতে পারে ।

– কিন্তু আমরা তো ওর কোনো বিষয়ে বাঁধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই নি ।

– সেটা তো ও জানে না । আমরা জানি শুধু । তাই ও সত্যি বলতে ভয় পায় ।

– হু , বুঝলাম ।

………………………………………………..

গাড়িতে আবরনের পাশে পূর্ণতা ই বসেছে আর পেছনের সিটে জিব্রান আর নাদিরা ।

পূর্ণতা গাড়িতে ওঠার ৫ মিনিট পরেই ঘুমে ঢলে পড়ল । আবরন গাড়ি থামিয়ে জিব্রানকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– ভাইয়া , তুমি কি একটু সামনে এসে বসবে !

– কেন ??

– পূর্ণতা তো ঘুমুচ্ছে । গাড়ি ব্রেক করলেই তো ব্যথা পাবে ।

– আচ্ছা । আসছি ।

জিব্রান পূর্ণতা কে ডেকে বলল ,

– তুই পেছনের সিটে নাদিরার কোলে মাথা রেখে ঘুমা যা ।

পূর্ণতা ঘুমু ঘুমু চোখে সামনের সিট থেকে উঠে পেছনের সিটে গিয়ে বসল ।

জিব্রান সামনের সিটে বসতেই আবরন আবার ড্রায়ভিং করতে শুরু করলো ।

পূর্ণতা বাকিটা রাস্তা নাদিরার কোলে মাথা রেখে ঘুমুতে ঘুমুতেই গিয়েছে ।

………………………………………………..

সকাল বেলা ঘুম ভাংতেই পূর্ণতা নিজেকে নিজের রুমের বেডে আবিষ্কার ক‍রলো ।

মনে মনে ভাবলো ,

– কাল রাতে গাড়ির সিট বদলে ভাবির কোলে ঘুমিয়েছিলাম এই টুকুই মনে পড়ছে , তারপর বাসায় কি করে এলাম সেগুলো তো কিছুই খেয়াল নেই । যাই হোক , ফ্রেশ হয়ে নিই । আজকে পড়া গুলো রিভাইস না করলে তাকে তো বুঝাতে পারবো না ।

এই ভেবে পূর্ণতা বিছানা থেকে নেমে জলদি জলদি বিছানাটা গুছিয়ে তারপর গেল ফ্রেশ হতে ।

মিলি রহমান নাস্তা বানিয়ে টেবিলে এনে রাখতেই কলিং বেল বেজে উঠল । মিলি রহমান দরজা খুলতেই দেখল প্রেনা দাঁড়িয়ে আছে ।

– আন্টি আসসালামু আলাইকুম ।

– ওয়ালাইকুমুসসালাম । আয় ভেতরে আয় ।

প্রেনা ভেতরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল ,

– পূর্ণতা কি ঘুমাচ্ছে ??

– না একটু আগেই উঠেছে দেখলাম । তুই যা ভেতরে ।

– আচ্ছা ।

প্রেনা পূর্ণতার রুমে ঢুকে দেখলো পূর্ণতা রুমে নেই । তারপর ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসতেই বুঝলো ও ফ্রেশ হচ্ছে ।

জিব্রান প্রেনাকে পূর্ণতার রুমে দেখে জিজ্ঞেস ক‍রল ,

– কিরে !! সাত সকালে এসেছিস যে !!

প্রেনা বলল ,

– কেন ? তোমাদের বাসায় আসতে আবার সময় লাগে নাকি ?? যখন ইচ্ছা তখন আসবো ।

জিব্রান বলল ,

– তুই কোনো কারন ছাড়া তো আসিস নি !

– হা , পূর্ণতা কে নোটস দিতে এসেছি ।

এর‌ই মধ্যে পূর্ণতা ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে দেখল প্রেনা এসেছে । প্রেনা পূর্ণতা কে দেখে জিজ্ঞেস করল ,

– কিরে ! কি অবস্থা ??

– আগের চেয়ে ভালো ।

– এই যে নোটস রেখেছি তোর টেবিলে । এগুলো গত কালকের ক্লাসের নোটস ।

– থ্যাংকস রে । তুই আমার জন্য অনেক করছিস ।

– মাইর খাবি । থ্যাংকস এর কি আছে ?
আর আমরা সবাই চাই তুই জলদি সুস্থ্য হয়ে আমাদের সবার মতো মেডিক্যাল এ ক্লাস কর ।

– হুম , দোয়া করিস ।

জিব্রান বলল ,

– এখন চল নাস্তা খাবি । প্রেনা খেয়ে এসেছিস ?

– হ্যা , ভাইয়া । তোমরা খাও । আমার কাজ আছে । বাহিরে যেতে হবে ।

জিব্রান বলল ,

– শোন সন্ধ্যার পর বাসায় আসিস । প্ল‍্যান আছে একটা ।

– আচ্ছা ঠিক আছে ।

………………………………………………..

দুপুরে খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমিয়ে সন্ধ‍্যার আজানের আগে পূর্ণতা একটু ছাদে উঠেছে । বেবি পিংক কালারের একটা লং ফতুয়া আর অফ হোয়াইট কালারের একটা লং স্কার্ট পড়েছে ।বড় বড় চুল গুলো দুই বেনি করা ।

পূর্ণতা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখল সূর্য ডুবছে আর সেই লাল আভা আকাশকেও লাল করে দিয়েছে ।

পূর্ণতা চোখ বন্ধ করে দক্ষিণের মৃদু হাওয়া অনুভব করতে লাগল । হঠাৎ চোখের সামনে ভেসে উঠলো আবরনের সেই দুষ্টু হাসি । চোখের সামনে ভেসে উঠল একসাথে থাকা সেই মূহুর্ত গুলো । পূর্ণতার বুক ধুকধুক শুরু করতেই পূর্ণতা চোখ মেলে তাকালো । বুকে হাত দিয়ে মনে মনে বলল ,

– আমার এই অনূভুতি কেন বার বার বলে যে আপনার প্রতি আমার অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে ! তাহলে কি সত্যি আমার মন আপনার মনকে ভালোবাসে ?? তাহলে কেন আমার আপনার মন সত্যি কথা বলে না ?? কেন মনের মিল থাকা সত্ত্বেও দুজন দুজনের থেকে এতটা আলাদা ?? কাল আপনি কিছু একটা বলতে চাইছিলেন , কিন্তু কেন বললেন না !!

এসব ভেবে নিজেই ভাবল ,

– ধুর ! হঠাৎ করে এসব কি ভাবছি ??
আমার মাথাটা গিয়েছে পুরো !!

কিন্তু ,,,

এটাও তো সত্যি যে উনি আশেপাশে কাছাকাছি থাকলে আমার ভালো লাগে । উনার মান অভিমান আমাকে কষ্ট দেয় । উনার ছোট খাটো শাস্তি আর বকা গুলোও শুনতে ভালো লাগে । উনার অনুভূতি মিশ্রিত কথা গুলো শুনতেও ভালো লাগে ।

এসব কিছুই কি আমার মোহ নাকি আমি সত্যিই উনাকে …….

না ,না , এসব ভাবলে চলবে না । আমার স্বপ্নের সামনে বাঁধা থাকলে চলবে না । আমাকে ডাক্তার হতেই হবে । এসব কিছু থেকে দূরে থাকতেই হবে ।

এসব ভাবনার মাঝেই আজানের ধ্বনি ভেসে আসতে লাগল । মাথায় ঘোমটা টেনে পূর্ণতা ছাদ থেকে নেমে ঘরে ফিরে গেল ।

নিজের রুমে এসে অযু করে নামাজটা পড়ে নিল ।

নামাজ পড়ে টেবিলে বসে গতকালের পড়া গুলো আবার‌ও একটু দেখে নিল ।

৫ মিনিট পর‌ই কলিং বেল বেজে উঠল । পূর্ণতা গায়ের ওরনা ঠিক করে উঠে দাঁড়ালো । ও জানে এখন আবরন এসেছে ওকে পড়াতে ।

দরজা খোলার পর কিছুটা হৈ চৈ শুনে পূর্ণতা ডায়নিং রুমের দিকে এগিয়ে যেতেই দেখল ফাহিম , তাসিন , আয়মান , রুহি , নীরা , প্রেনা এসেছে । সর্বশেষ আবরনকেও দেখল ।

জিব্রান পূর্ণতার পেছনে এসে দাঁড়িয়ে বলল ,

– ওদের আমি আসতে বলেছি । আজ চিটাগাং যাওয়ার প্ল‍্যান করবো । কি করবো , কিভাবে করবো তা ঠিক করতেই ওদের ডেকেছি ।

পূর্ণতা বলল ,

– ওও আচ্ছা ।

সবাই পূর্ণতা কে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসাবাদ করে ভেতরে জিব্রানের রুমে চলে গেল । পূর্ণতা ওদের সাথে টুকটাক কথা বলে পাশে তাকাতেই দেখল আবরন দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রলিং করছে ।

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ফোনটা অফ করে পকেটে ঢুকিয়ে বলল ,

– হয়েছে আপনার কথা বলা ?? তাহলে চলুন , একটু পড়াশোনা ও করি ।

পূর্ণতা নিজের রুমে গিয়ে টেবিলে বসতেই আবরন‌ও ভেতরে ঢুকে ওর টেবিলের অপর পাশের চেয়ারে বসল ।

আবরন বলল ,

– কাল কি বলেছি মনে আছে তো ??

পূর্ণতা বলল ,

– আজ আমি আপনার টিচার আর আপনি আমার স্টুডেন্ট । আজ আমি আপনাকে পড়া বুঝিয়ে দেব ।

– গুড । তো কালকে যেই টপিক টা আমি বুঝিয়েছি সেটা এখন তুমি আমায় বুঝিয়ে দাও ।

পূর্ণতা খাতায় টপিকসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গুলো লিখে তারপর বলতে শুরু করল ।

আবরন প্রথম ৫ মিনিট মনোযোগ সহকারে শুনছিল হঠাৎ পূর্ণতার দিকে তাকাতেই দেখল ও এক নাগারে সব বলেই যাচ্ছে । আবরন বুঝলো ও পড়াটা ভালো ভাবেই কমপ্লিট করে রেখেছে । আবরন মুচকি হেসে বলল ,

– ম্যাডাম , থামেন । আমার মাথায় আপাদত পড়া ঢুকছে না ।

পূর্ণতা দুষ্টুমি করে আবরনের হাতে বারি মেরে বলল ,

– এই জন্য আপনার শাস্তি পেতে হবে । কারন আপনি অমনোযোগী ।

– ওও তাইইই ??

– হুম ।

– আচ্ছা ম্যাডাম বলেন আপনি কি শাস্তি দেবেন ?? আমি মাথা পেতে নেব !!

– আজ রাতে আমাকে হাতির ঝিলে নিয়ে গিয়ে গোলা খাওয়াতে হবে !!

– সবাই চায় ফুচকা , চটপটি বা আইসক্রিম খেতে । আপনি গোলা কেন খাবেন ?

– কারন আমি ইউনিক , আপনার বুঝতে হবে ।

– ওকে ডিল । খাওয়াবো ।

পূর্ণতার চোখ খুশিতে চকচক করে উঠল । ও খুশিতে এক্সাইটেড হয়ে বলল ,

– ইয়েএএএএএ !! থ‍্যাংস , থ্যাংকস, থ্যাংকস । লাভ ইউ , লাভ , লাভ ইউ !!!

আবরন হেসেই ওর হাতে কলম দিয়ে বারি মেরে বলল ,

– মুখে লাগাম লাগাও । আমার জায়গায় অন্য কোনো টিউটর থাকলে তোমার খবর ছিল এখন !!

পূর্ণতা নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে ভাবল ,

– আয় হায় , সবসময় প্রেনার সাথে যেমন করি তেমন বিহেইভ করে ফেলেছি ভুলে । এখন কি হবে ??

আবরন মনে মনে বলল ,

– নিজের ইচ্ছাতে হোক বা অনিচ্ছাতে !! ভালোবাসার কথাটা তুমিই আগে আমাকে বললে । এখন অপেক্ষা করো যতদিন না পর্যন্ত আমি এই প্রোপোজাল এর রিপ্লাই দেই তোমাকে !! এন্ড লাভ ইউ ঠু ।

#চলবে ♥️

বিঃদ্রঃ পূজার বন্ধে স্কুল কলেজ বন্ধ কিন্তু পড়াশোনার চাপ আছে কারন সামনে পরীক্ষা । এখন গল্প এক দিন পর পর‌ই একটু বড় করে দিতে চেষ্টা করবো । কিন্তু কোন সময়ে দিলে আপনাদের সুবিধা হয় দিনে নাকি রাতে ?? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না ।

আর গল্পের ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । ধন্যবাদ । ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here