ভুলবশত পর্ব-১০

0
1327

#ভুলবশত♥
#PART_10
#FABIYAH_MOMO🍁

কফির মগ ভেঙ্গে বেহালভাবে পড়ে আছে ফ্লোরে। আমি চোখ নিচু করে কফির ভাঙা মগে তাকিয়ে আছি। যার বাড়িতে এক কাপ চায়ের আদিখ্যেতায় এসেছি সে আমাকে নতুন ভঙ্গিতে চমকে দিয়েছে। সাগ্রত আপনমনে ওয়ারড্রবের সাথে ঠেস দিয়ে কফি খাচ্ছে। আমি ওর দিকে না তাকালেও বলতে পারি সাগ্রত আমার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। আমার শরীরের লোমস্তর উত্তপ্ত মস্তিষ্কের তালে বারবার জেগে উঠছে। আমার হাত কাপাকাপি করলেও ওড়নায় মুঠো চেপে শক্ত হয়ে দাড়িয়ে আছি। সাগ্রত বলে উঠলো-

–আমি জানি তুমি এটাই ভাবছো আমি তোমার ব্যাপারে সব খবর নিলাম কি করে। দেখো আমি কে বা কেন এসব করছি তা জেনে তোমার কোনো লাভ হবেনা। কাজেই জানাতেও চাচ্ছি না। তুমি আমাকে সন্দেহ করবে এটাই স্বাভাবিক। বাট আমি তোমায় বলতে চাই এটুকুই তোমার অতীত কে ছিলো কেন হয়েছিলো ওগুলো দ্বারা আমার কোনো যায় আসে না। জাস্ট লিসেন, আমি তোমাকে চাই। কোনো এক স্পেশাল কাজে আমি এখানে এসেছি। দ্যাটস ইট!

আমি ধাক্কা খেয়ে আর কিছু বলার সিচুয়েশনে নেই। ওড়নায় হাত মুচড়ে মাথা হেট করে রুম থেকে চলে যাচ্ছি। রহস্য রহস্য করতে যেয়ে আমি ভুলভুলাইয়ায় ফেসে গেছি। ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে সাগ্রতের পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিলাম। সাগ্রত অস্থিরচিত্তের মতো হাতের মগটা ওয়ারড্রবের উপর রেখে আমার হাতের কবজি টেনে ধরলো। বিরস কন্ঠে বলে উঠলো-

–তুমি চলে যাচ্ছো কেন? সরি! আমি ওভাবে বলতে চাই নি।। দেখো বিশ্বাস করো! আমি জুয়েলের মতো না!! প্লিজ স্নেহময়ী!

আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাতের কবজি ছোটানোর জন্য জোড়াজুড়ি করছি। সাগ্রত আরো জোরে শক্ত করে চেপে ধরে। আকুতি স্বরে বলে উঠে-

–প্লিজ প্লিজ যাওয়ার দরকার নেই! শোনো দেখো আমি জুয়েলের ব্যাপারে কথাগুলো বলতে চাইনি। প্লিজ স্নেহময়ী! আমায় বিশ্বাস করো! স্নেহময়ী আমি জানি কারোর ব্যক্তিগত তথ্য জানা অপরাধ! প্লিজ আমি ইচ্ছা করে জানার চেষ্টা করিনি! আমার ইনফরমেশন জানতে হয়েছে! বিলিভ মি!

আমি হাত ছাড়ানো থামিয়ে দিলাম। সাগ্রত বলল, ওর ইনফরমেশন জানতে হয়েছে। কেন জানতে হয়েছে? প্রশ্নের উত্তর জানা অতীব প্রয়োজন! আমি মাথা ওর দিকে উঠিয়ে চোখে চোখ রেখে বলিষ্ঠ গলায় বলে উঠলাম-

–কি জন্য জানতে হয়েছে! কেন জানতে হয়েছে! একটা এতিম মেয়ের ব্যাপারে জেনে কত টাকা বেতন পেলেন!! কেন! কেন! জানতে চাচ্ছেন! কি লাভ হলো জেনে? খুশী হলেন স্নেহা মেয়েটা ভার্জিন বলে? এটাই জানার জন্য ইনফরমেশন কালেক্ট করেছেন! কি হলো জবান বন্ধ কেন? বলুন! বলুন না কেন! জুয়েল যা করতে পারলো না, আপনি তা করবেন? বলুন! বলুন মিস্টার তাশরীফ সাগ্রত! বলুন!

ঠাস করে এক চড় গালে পড়লো আমার! গাল ধরে অন্যদিকে হেলে গেছি। মনে হলো বামপাশের দাত গুড়িয়ে ডানপাশে চলে এসেছে। প্রচণ্ডরূপে ব্যাথা পেয়েছি। সাগ্রতের দিকে কান্না চেপে তাকালাম। আগুনের স্ফুলিঙ্গের মতো অন্যগালে আরেক ঘা পড়লো! উল্টে পেছনে থাকা টি টেবিলের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়লাম। সাগ্রতের রাগ আকাশচুম্বির পদার্থের মতো টগবগ করছে। আমি উল্টে পড়ে ঘাড়ে ব্যথা পেলাম। ব্যথায় চিৎকার করে উঠলে সাগ্রত ছটফট কর‍তে লাগলো।। আমি ঘাড়ে হাত দিয়ে চোখ কুচকে আছি, ফ্লোরে কোনো রকমে বসে আছি। কানে শব্দ এলো। কেউ অস্থির হয়ে বলছে-

–স্নেহময়ী ব্যাথা পেয়েছো সরি! স্নেহময়ী তাকাও আমার দিকে! স্নেহময়ী লুক প্লিজ! স্নেহময়ী আমি ইচ্ছে করে থাপ্পড় দেইনি! তাকাও ! তাকাও আমার দিকে!

আমার গালে হাত রেখে কথাগুলো বলছে সাগ্রত। ও ফ্লোরে হাটুগুজে আমার দিকে ঝুকে আছে। আমার সেদিকে খেয়াল নেই। আমি ঘাড়ে হাত দিয়ে ঠোঁটে কামড়ে চোখ ভীষন কুচকে আছি। শরীরের ২০৬টা হাড্ডি ভাঙার মতো কষ্ট যন্ত্রণা হচ্ছে! মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখে অন্ধকার দেখছি। ঝাপসা দেখছি। ঘাড়ে অসার ব্যথা অনুভব করছি।। একটু পর কি হলো বুঝলাম না আমি আর কিছুর উপর কাবু করতে পারলাম না। শরীরের নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দিয়ে আমি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ি। অবচেতনের আগ মূহুর্তে কানে একবার আসলো, সাগ্রত চেচিয়ে “স্নেহময়ী!!” বলে উঠলো। আর কিছু মনে নেই, চেতনাশূন্য দেহ নিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি….

–স্নেহময়ী!! স্নেহময়ী! প্লিজ! তুমি সেন্সলেস হলে? স্নেহময়ী!!! আমার ভুল হয়ে গেছে!! আমি ইচ্ছে করে চড় দেইনি স্নেহময়ী!!

আমার চোখের সামনে আমার স্নেহময়ী সেন্সলেস হয়ে গেল। আমার বুকটায় মোচড় দিয়ে উঠলো! কেউ আমার কলিজাটায় ছিদ্র করে ফালিফালি করে দিয়েছে! কি কষ্ট হচ্ছে আমার! আমার সহ্য হচ্ছে না! আমার হাতদুটোয় আমি মানুষ শেষ করি, কিন্তু স্নেহময়ী? ওকে কেন মারলাম? ওর তো দোষ নেই!! সত্য কথাই তো বলছিলো! কেন ওর ব্যাপারে জানতে গিয়েছি!! ওকে তো এনাউন্স করে বলিও নি ‘ভালোবাসি স্নেহময়ী! আমার আদরশূন্য জীবনে আমি আকাশপূর্ন ভালোবাসি!আমি একটা বড্ড উন্মাদের মতো ভালোবাসি!’
একি কি করলাম???তাড়াহুড়ো করে স্নেহময়ীকে কোলে তুলে নিলাম। ওর ঘাড়ের পিছনে হাত দিতেই তরল কিছু আমার হাত লাগছিলো। আমি ঘাড়ের ওখান থেকে আমার হাত প্রসারিত করে দেখলাম! লাল রক্ত! স্নেহময়ীর ঘাড় থেকে রক্ত পড়ছে! মাথা আরো কয়েক ধাপ এলোমেলো হয়ে গেল। কোলে তুলে রুমের এদিক-ওদিক পাগলের মতো রাস্তা খুজতেছি!! কোনো উপায়ন্তর পাচ্ছিনা! আমি স্নেহময়ীকে বিছানায় শুয়িয়ে দিলাম। আমার বালিশ ওর মাথার নিচে দিতেই বলপ্রিন্টের সাদা বালিশের কভারটা রক্তে মেখে যাচ্ছে। স্বাধীনকে কল করলাম! কানে ফোন নিয়ে ওয়ারড্রবের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এড বক্স বের করছি। রিং হচ্ছে ফোন ধরছে না! মেজাজটা হাইপার লাগে কিনা! স্বাধীনকে কাজের সময় কল দিলে পাওয়া যায় না!! আজ স্বাধীনের একদিন কি দুইদিন!! চাকরি নট করে দিবো বেয়াদবের! একহাতে ফাস্ট এড বক্স খুলতে পারছিনা। ফোন কানে বাম কাধের সাথে ঠেসে নিলাম। দুহাতে বক্স খুলে তুলে ছিড়ে স্নেহময়ীর চুল সরিয়ে ঘাড়ে বুলিয়ে দিচ্ছি। সাদা তুলো লাল রক্তে ভিজে যাচ্ছে। একটা মুছে আরেকটা লাগাই একহাত দিয়ে ঘাড় উচু করে তুলেতে মেডিসিন নিয়ে জায়গা পরিস্কার করি। স্বাধীন এখনো ফোন ধরছেনা! রাগে আমার মাথা গরম হচ্ছে! স্বাধীনকে সামনে পেলে কুপিয়ে ছাড়তাম! স্নেহময়ীর ঘাড়ের ইনজুরি চেক করার জন্য কাত করে নিলাম। পিঠের পেছনের চুলগুলো সরিয়ে ঘাড়ের আঘাত এনালাইসিস করলাম! টি টেবিলের কোণার সাথে লেগে কেটে গিয়েছে। রক্ত পড়ছে সেখান থেকেই। কাধ সোজা করে হাতে ফোন নিয়ে আবার স্বাধীনকে ডায়াল করলাম! বক্স থেকে তুলার বড় খন্ড ছিড়ে স্নেহময়ীর ঘাড়ে চেপে স্বাধীনের কল রিসিভে আকুল হয়ে আছি! ওপাশ থেকে স্বাধীন কল ধরলো, শান্ত গলায় বলে উঠলো-

–সরি স্যার…বাজার করতে গিয়েছিলাম। ঘরে বাজার শেষ…
স্বাধীন কথাটুকু শেষ না করতেই আগুনের ঝলকার মতো সাগ্রত বলে উঠলো-

–সরি মাই হ্যাল ইডিয়েট! কোথায় ছিলে ! কল করছি কতক্ষণ ধরে ইডিয়েট! আজকের পর থেকে আমায় স্যার স্যার করবে না! ইউ আর রাস্টিগেটেড স্বাধীন! শুনেছো?রাস্টিগেটেড! কাল অফিসে এসে লেটার নিয়ে যাবে! গো টু হ্যাল!

-চলবে🍁

-Fabiyah_Momo🍁

#বিদ্র : গ্রামের বাড়িতে এসেছি। বন্যায় ফেসে গিয়েছি। কারেন্ট থাকেনা। গতকাল থেকে আজ সকাল বারোটা পযর্ন্ত কারেন্ট ছিলো না। আমি দুঃখিত ছোট পার্ট এবং দুদিন না দেওয়ার জন্য। 💔

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here