গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ১২
লেখক: হানিফ আহমেদ
হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে অর্ণবকে ধাক্কা মারে।
অর্ণব দূরে গিয়ে ছিটকে পরে। মুহূর্তের মধ্যেই তার ক্লান্ত দেহটা ঠাণ্ডা হয়ে যায়। কিছু লোক অর্ণবকে হসপিটাল নিয়ে যায়।
গাড়িটাকে ওরা ধরতে পারে নি। কিন্তু পাশেই দুখানের এক লোক গাড়ির নাম্বারটা নোট করে রেখেছে।
অর্ণবের ফ্যামিলি এসবের কিছুই জানে না।
অর্ণি তার ভাইয়ার সাথে কথা বলতেছে।
অর্ণি: ভাইয়া তুমি আমায় ভুলেই গেছো?
সাহিল: আরে পাগলী ভুলিনি রে। খুব ভেস্ত থাকি, কলেজের চাপ, এখন আবার আব্বুর ব্যবসা দেখতে হবে। তাই কলেজের চাকরি ছেড়ে দেবো, এই জন্য একটু সমস্যা হচ্ছে।
আর আমি কি আমার প্রাণ পাখিটারে ভুলতে পারি?
অর্ণি: হইছে আর মিষ্টি কথা বলতে হবে না।
অর্ণি কথা বলার সময় অর্ণবের মা চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
অর্ণি চিৎকার শুনে
অর্ণি: ভাইয়া পরে কথা বলি, আম্মু কান্না করছেন। রাখি এখন।
এই বলে অর্ণি ফোন কেটে দেয়।সাহিল কি বললো তা আর সে শুনেনি।
অর্ণি তাড়াহুড়া করে নিচে যায়। বাসায় অর্ণি আর জাহানারা বেগম। নিধী তার খালামণির বাসায়।
অর্ণি: কি হয়েছে আম্মু? চিৎকার করছো কেন? আম্মু কান্না করছো কেন?
জাহানারা: মা’রে অর্ণব (আর কিছু না বলে কান্না করছেন)
অর্ণি: কি হয়েছে আম্মু অর্ণবের?
জাহানারা বেগম কান্না করছেন, কিছুই বলছেন না।
অর্ণি: আম্মু কি হয়েছে অর্ণবের?
জাহানারা: হসপিটাল থেকে ফোন আসছিলো, ওরা বললো অর্ণব নাকি এক্সিডেন্ট করেছে।
অর্ণি জাহানারা বেগমের কথা শুনে চিৎকার দিয়ে উঠে।
অর্ণি: এটা হতে পারে না, (কান্না করছে অর্ণি)
আম্মু তাড়াতাড়ি চলো, আমি অর্ণবের কাছে যাবো।
জাহানারা বেগম চুপ করে বসে আছেন, উনার কথা বলার শক্তিটাও যেন নাই।
অর্ণি নিজেকে শক্ত করে,
অর্ণি: এই দেখো আম্মু আমি চুপ হয়ে গেছি, আমার কান্না পাচ্ছে না। হচ্ছে না কষ্ট। আর অর্ণবের কিছুই হবে না, ওরা যা তা বলছে।
চলো আমারা অর্ণবের কাছে যাবো?
অর্ণি গাড়ি ড্রাইভ করছে।
আজ অর্ণব গাড়ি নিয়েও যায় নি। অর্ণির একটাই কথা অর্ণব কোথায় গিয়েছিলো?
অর্ণি মৌকে ফোন দিয়ে বলেছে অর্ণবের এক্সিডেন্ট এর কথা।
ওরাও আসতাছে হসপিটালে।
~নদী পার হতে গিয়েও আজো নদীর মধ্য জায়গায় নৌকা ডুবে যাচ্ছে।
ঢেউ এসেছে আকাশ ছুঁতে, মধ্যে যে অন্য কেউ পারি দেবার স্বপ্ন দেখছে,
ঢেউএর তা অজানা।~
গাড়ি এসে একটা হসপিটাল এর সামনে থামে, অর্ণি আর জাহানারা বেগম ভিতরে ডুকে সামনে এক সিস্টারকে পান,
অর্ণি: কিছুক্ষণ আগে রোড এক্সিডেন্ট এর একটা রোগি কে এখানে নিয়ে আসা হয়।
কোন কেবিনে আছেন?
সিস্টার: ৪থলায় ২২০ নাম্বার কেবিনে।
অর্ণি: থ্যাংকস,
আর পেছনে না থাকিয়েই জাহানারা বেগম এর হাত ধরে লিফটে ছড়ে ওরা চার তলায় যায়।
২২০ নাম্বার কেবিন এর সামনে পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, এক্সিডেন্ট কেইচ, তাই পুলিশ এসেছে।
অর্ণি কেবিনের সামনে গিয়ে দেখলো ,কেবিনের দরজা খুলাই আছে, অর্ণি আর জাহানারা বেগম অর্ণবের কাছে যান।
নার্স ছিলো অর্ণবের পাশে,
অর্ণি: কি অবস্থা এখন উনার?
নার্স: তেমন কিছুই না, পায়ে আর হাতে চুট লেগেছে, তবে অনেক রক্ত পরেছে উনার।
অর্ণি: ওও,
অর্ণি গিয়ে অর্ণবের পাশে গিয়ে বসে।
অর্ণবের মাথায় হাত বুলাচ্ছে।
জাহানারা বেগম কান্না করছেন, অর্ণি বুঝাচ্ছে কান্না না করতে,,
~স্বপ্ন আমার আকাশ ছুঁয়ার, মই বানাবো তোমায়। সন্ধের আকাশে ফুটন্ত চাঁদ তুমি, তোমার পাশে তারা হয়ে ঘুরি সারারাত্রি।~
অর্ণি অর্ণব এর মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে এসব ভাবছে।
সব না বলা কথা এখনি বলতে মন চাচ্ছে অর্ণির, অর মনে একটাই চিন্তা অর্ণব কি কখনো হারিয়ে যাবে?
ঘড়ির কাটায় ৩টা ছুঁই ছুঁই অর্ণবের কেবিন ভরা মানুষ, অর্ণবের বাবাও খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন, ওর ফ্রেন্ডসরাও কবেই এসেছে। পুলিশ এখনো বাহিরে বসে আছে, অর্ণবের সাথে নাকি ওদের কথা বলতে হবে।
৩:৩০ এ অর্ণবের জ্ঞান আসে।
সবাই তার পাশেই বসা, অর্ণি আর জাহানারা বেগম দু’পাশে দুজন বসে আছেন।
অর্ণবের জ্ঞান আসতেই জাহানারা বেগম হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন।
অর্ণব বুঝাতে চাচ্ছে ওর তেমন কিছু হয় নি।
কিন্তু মায়ের মন , সুই এর গুঁতো খেলে উপ শব্দটা মায়ের কানে গেলে, মা’টা ভেস্ত হয়ে পরে সন্তান কে নিয়ে।
আল্লাহ্ এর অশেষ নেয়ামত মা নামক সম্পদটা।
পুলিশ কেবিনে ডুকলো।
পুলিশের বড় অফিসার জিনি,
অফিসার: মিস্টার অর্ণব, তোমার কাছে পিস্তল (বন্ধুক) আসলো কোথায় থেকে?
অফিসারের কথা শুনে সবাই হা করে থাকিয়ে আছে, রফিকুল ইসলাম হুংকার দিয়ে উঠলেন।
রফিকুল: কি বলছো এসব, আমার ছেলে এক্সিডেন্ট করে এখানে বেডে শুয়ে আছে আর আপনারা যা তা ইচ্ছা প্রশ্ন করছেন?
অফিসার: এটা আমাদের ডিউটি। কিছু করার নাই,
অর্ণব: আব্বু একটু চুপ করো।
অফিসার কি জানতে চান বলুন?
অফিসার: আপনার শরীরের কাছে এইটা পেয়েছি (বন্ধুক দেখিয়ে বললো) আপনাকে যারা এখানে নিয়ে আসছে তারা এটা আমাদের কে দিয়েছে।
অর্ণব একবার সবার দিকে তাকিয়ে,
অর্ণব: হুম এটা আমার বন্ধুক, বাট এটার লাইসেন্স করা আছে।
অফিসার: হুম, আচ্ছা আপনি কি করেন? আর বন্ধুক সাথে নিয়ে ঘুরার মানে কি?
কেবিনে সবাই বসে আছে কেউ বা দাঁড়িয়ে আছে। সবাই অর্ণবের উত্তরের আশায় আছে, অর্ণি, জাহানারা, রফিকুল, সবাই অধির আগ্রহে বসে আছে অর্ণবের উত্তরের আশায়,
অর্ণব বলতে শুরু করলো।
অর্ণব: আমি একজন
সি-আই-ডি অফিসার। ২০১৪ থেকে ছিলাম সি-আই-ডি এর খুচর। কিন্তু আমার সাহসিকতা দেখে ২০১৭ তে আমায় সি-আই-ডিতে জয়েন্ট করতে বলে। আমার স্বপ্ন ছিলো সি- আই-ডি হওয়ার তা পূরণ হয়েছে। আমার শিক্ষা যূগ্যতা হলো আমি এখন মাস্টার্সে পড়ি, কিন্তু হানিফের দুলাভাই এর কারণেই আমি সি-আই-ডি এর সুখ পেয়েছি। (হানিফের দুলাভাই একজন সিনিয়র সি আই ডি অফিসার)
সবাই অর্ণবের মুখ থেকে এসব শুনে যেন অবাক হয়ে গেলো। এতোই অবাক যে কারো মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছে না। তারপরেও রফিকুল ইসলাম বললেন।
রফিকুল: এতো বড় সত্য কথা আমাদের কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিস কেন?
আমাদের তো গর্ব হচ্ছে এখন আমার ছেলে একজন সি আই ডি অফিসার।
অর্ণব: সরি আব্বু, কষ্ট পাবে তোমরা তাই বলিনি।
অফিসার আর কিছু জানতে চান?
অফিসার: না স্যার আর কিছু জানার নেই!
অর্ণব: আমার ফোন কোথায়?
অফিসার: ঘটনাক্রমেই আপনার ফোনটি ভেঙে গেছে।
অর্ণব: স্যারের কাছে ফোন দিতে হবে, ওরা হয়তো অপেক্ষায় আছে আমার।
অফিসার: আমরা আসি তাইলে স্যার?
অর্ণব: হুম,
ওরা চলে যায়।
অর্ণবের ফ্রেন্ডসরা অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে।
জাহানারা বেগম কেঁদেই বললেন।
জাহানারা: তোর আর এসব কাজ করতে হবে না? তোর বাবার যা সম্পত্তি আছে তা দিয়েই সারাজীবন খেয়ে পার করে দিতে পারবি?
অর্ণব: আব্বু তুমি আম্মুকে বোঝায় তো।
এই জন্য এতোদিন লুকিয়ে রাখছি কথা গুলো?
রফিকুল: তুমি এতো ভয় পেয়ো না তো।
আমার ছেলে দেশের জন্য কাজ করছে কোনো খারাপ কিছু করছে না।
অর্ণ: আম্মু কেঁদো না তো তুমি?
নিধী কোথায়?
জাহানারা: নিধী তোর খালামণির বাসায় তুই তো নিজেই দিয়ে আসলি।
অর্ণব: সেটা তো জানিই। খালামণিও আসলেন না, আর নিধীকে তোমরা বলেছো এসব।
জাহানারা: না ওদের বলিনি। নিধী তোর এসব অবস্থা শুনলে জানিস, কি করবে, কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পরবে ও।
অর্ণব: জানি আমার কলিজার কথা। আম্মু আব্বু তোমরা এখন বাসায় যাও আর যাবার সময় খালামণির বাসা থেকে নিধীকেও নিয়ে যাবে।
রফিকুল: আচ্ছা নিধীকে সাথে করেই নিবো।
কিন্তু তুই আসবি কখন।
অর্ণব: ডক্টরের কাছ থেকে সব কিছু ভালো ভাবে বুঝেই আসবো।
রফিকুল: অর্ণি মা থাকবা কি এখানে?
অর্ণি এতক্ষণ অর্ণবের পাশেই বসা।
অর্ণবের জন্য কেঁদে কেঁদে চোখ দুটু ফুলিয়ে ফেলছে। অথচ অর্ণব একবারো ওর দিকে তাকালো না। অর্ণির ভালোবাসাটা আস্তে আস্তে অভিমানে রুপ নিচ্ছে।
যে অভিমানে আছে শুধু কষ্ট আর অবহেলা।একটু ভালোবাসা চাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। যে অভিমানে আছো শুধু অন্য পাশের লোকটির কথা না বলার শাস্তি। অভিমানে আছে, ইত্যাদি ধরণের এক ডাইরি কষ্ট। যে অভিমানের নাই কোনো রং আছে শুধু বেয়ে যাওয়া ঝর্ণার স্রোত।
অর্ণিও ওর বাবামার সাথে বাসায় চলে যায়,এই প্রথম সে অর্ণব এর খালার বাসায় যায়।
খুব যত্ন নিয়েছে ওর।
সবাই ভালো শুধু ভালো না নিজের ভালোবাসার মানুষটি।
মৌ: তোরা থাকলে থাক আমি বাসায় যাচ্ছি। সন্ধে নামে আসলো। (অভিমান করেই কথাটা বললো)
অর্ণব: তোদের সবার কাছে হাত জোড় কিরে ক্ষমা চাচ্ছি। এতো বড় সত্যটা লুকিয়ে রাখার জন্য।
হানিফ: আমরা তোর কে? যে আমাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছিস।
অর্ণব: জানিস না তুই কেন লুকিয়েছি কথা গুলো। তোরা কষ্ট পাবি তাই।
মৌ: আমি নাকি তার নিজের বোন নিধীর মতো। হাহাহা বোন ভাবলে হয়তো আমায় অন্তত বলতি।
অর্ণব: প্লিজ তোরা রাগ করিস না। সজিব ওদের কিছু বল?
সজিব: কি বলবো। আমারো রাগ হচ্ছে, কিভাবে পারলি মন সত্য লুকাতে?
অর্ণব ওর কথার উত্তর না দিয়ে
অর্ণব: সবাই কি এভাবেই অভিমান করে থাকবি?
রাতুল: তো কি ডান্স করবো।
রণি: আয় ভাই আমি আর তুই ডান্স করি। ওই শালা তো আমাদের আপনি ভাবে না।
দিপু: অর্ণব শুন একটা কথা।
অর্ণব: বকা দিবি ত দে। তুই বাদ যাবি কেন?
দিপু: শালা আমি তো খুশি, যাজ্ঞে এসব বাদ। এখন তুই আমাদের সবাইকে খাওয়াবি, তুই যেহেতু লুকিয়েছিস সেহেতু আমাদের খাওয়াইয়ে অভিমান ভাঙবি।
সবাই কি রাজি।
মৌ: খাদুক পোলা একটা। শালা শুধু খাই খাই। ঠিক মতো অভিমান করতে দিলো না।
অর্ণব আজ যা বলবো তাই খাওয়াবি?
হানিফ: কে খাদুক এখন দেখতেই পারছি।
মৌ হানিফের দিকে রাগিণী দৃষ্টিতে তাকালো।
অর্ণব: যা আমি আজ খাওয়াবো তোদের।
ডক্টর আসলো
ডক্টর: মিস্টার অর্ণব দেখতে তো বিশাল দেহের অধিকারী, কিন্তু দেহে রক্ত এতো কম কেন?
অর্ণব: ইয়ে মানে, আমি জানি না।
ডক্টর: শুনলাম এখন আপনি একজন সি আই ডি অফিসার। তা নিজের যত্ন না নিলে চলবে কিভাবে?
অর্ণব:এখন থেকে নেবো ইনশাআল্লাহ।
অর্ণব হসপিটাল এর সব বিল মিটিয়ে সবাই মিলে একটা রেস্টুরেন্টে যায়।
রেস্টুরেন্টে থাকা অনেকেই তাকাচ্ছে ওর দিকে, হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ কপালেও কাটার দাগ।
এই অবস্থাতে রেস্টুরেন্টে।
সবাই মিলে রেস্টুরেন্ট এ মজা করছিলো।
হঠাৎ হানিফের ফোনে একটা টুন করে শব্দ হলো।
হানিফ ফোন বের করে দেখলো একটা মেসেজ এসেছে।
অর্ণব: কিরে এই মজার মধ্যে ফোন বার করেছিস কেন।
হানিফ: সিম কম্পানি গুলোও মজার খানির মধ্যে মে,,, ( থেমে যায় কথার মাঝখানে। হানিফের হাত কাঁপছে মেসেজ দেখে)
অর্ণব: কি হয়েছে রে। এভাবে হাত কাঁপছে কেন?
কিসের মেসেজ এইটা?
চলবে,,,,,
(গল্প পড়ে, আপনার গল্পে হওয়া ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন। নতুন হাত ভুল হবেই বেশি। আপনারা একটু সাহায্য করবেন!
আজকের পার্ট একটু ছোট করে দেওয়ার জন্য সরি।
আপনাদের উৎসাহতেই ভালো লেখার শক্তি পাবো।
ভুল গুলো ক্ষমা করবেন?
আশা করি গল্পের সাথেই থাকবেন?)
ভালো থাকবেন।
ঘরেই থাকবেন।