ভুলের মাশুল পর্ব: ৫

0
1266

গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ৫
লেখক: হানিফ আহমেদ

অর্ণব তার বাসায় মা বাবাকে তার আর অর্ণির বিয়ের কথা বলে দিয়েছে।
অর্ণব এর বাবা রফিকুল ইসলাম রেগে গর্জে উঠে!
রফিকুল: তোমার সাহস হয় কিভাবে এই মনুষ্যত্বহীন মেয়েকে বিয়ে করার? খুব বড় হয়ে গেছো তুমি, তাই তো আমাদের কিছুই জানানোর কোনো ইচ্ছাই করলে না?
অর্ণব এর মা জাহানারা বেগম অর্ণবকে বললেন
জাহানারা: থামো তো তুমি, ছেলেটা মাত্র বাসায় আসলো। আর তুমি শুরু করে দিলা।
অর্ণব: আব্বু আম্মু তোমরা কি ভাবছো আমি অর্ণিকে এমনি এমনি বিয়ে করছি, অর্ণিকে ওর ভুলের মাশুল দিতে হবে যে, আজ থেকে ওর সুখের দিন শেষ।
জাহানারা: কি বলছিস বাবা এসব? এমন করিস না মেয়েটার সাথে? ও না হয় ভুল করেছে, তাই বলে তুইও এমন কোনো ভুল করিস না, যেটাতে শেষে পস্তাতে হয় তোকে?
রফিকুল: তুমি আর জ্ঞান দিও না তো ওরে, আমার ছেলে বড় হয়েছে, ও বুঝে ভালো কোনটা আর খারাফ কোনটা।
জাহানারা: থামো ত তুমি,
অর্ণব: আম্মু আব্বু তোমাদের কাছে একটা রিকুয়েস্ট আমার। রাখবা তো?
ওরা: বল কি?
অর্ণব: অর্ণিকে বিয়ে করেছি আমি শুধু কষ্ট দেওয়ার জন্য। শুধু আমিই কষ্ট দেবো, আম্মু তুমি আর আব্বু যেন অর্ণির সাথে ভালো ব্যবহার করবা?
জাহানারা: আমি তো ওকে এখনি নিজের ছেলের বউ বলে মেনে নিয়েছি।
রফিকুল: তুই যেদিন ওরে ভালোবেসে আপন করে নিবি সেদিন আমিও আমার ছেলের বউ হিসেবে মেনে নেবো?
অর্ণব: কখনো ভালোবাসব না ওরে আমি। আব্বু তুমি ওর সাথে কখনো খারাফ ব্যবহার করবে না?
রফিকুল: আচ্ছা।
নিদী টিভি দেখছিলো আর এতক্ষণ ওদের কথা শুনছিলো,
নিদী: ভাইয়া ভাইয়া ভাবি কে কবে আনবা, আমি ভাবিকে দেখবো।
অর্ণব: হুম দেখবি কাল সকালেই নিয়ে আসবো।
আম্মু আমি যাচ্ছি
কাল অর্ণিরে নিয়ে আসবো।
জাহানারা: হুম যা, অর্ণির সাথে ভুল কিছু করিস না।

অর্ণব হোটেলে চলে আসে রাত ৮ টা বাজতে ৮&১০ মিনিট আছে, অর্ণব হোটেলে এসেই মৌ এর কাছে যায়। মৌ এখন অর্ণবকে ফোন করতে যাচ্ছিলো
মৌ: তোকে এইমাত্র ফোন করতে চাইছিলাম?
অর্ণব: আব্বু অর্ণির উপর খুব রেগে আছেন, আব্বুকে বুঝাতেই এতক্ষণ লেগেছে।
মৌ: ও, তোরে কয়েকটা কথা বলি, মন দিয়ে শুনবি?
অর্ণব: বল কি বলবি? আর ওই চারটা কোথায়?
মৌ: ওদের বাসায় যেতে বলছি, ওরাও চলে গেছে,
অর্ণব: ও, আচ্ছা বল কি বলবি?
মৌ: আমি জানি তুই কেন অর্ণিকে ভালোবাসতে পারছিস না, আমাদের ৮ জনের ফ্রেন্ডস ক্লাব ৭ জনে পরিণত হওয়ার পর থেকেই তুই এমন হয়ে গেছিস, অর্ণিকে একটু গভীর ভাবে দেখ ওর চোখের দিকে মনের চোখ দিয়ে তাকাবি, তাহলেই বুঝতে পারবি অর্ণিও তোকে ভালোবাসে অনেক ভালোবাসে। হয়তো রাগের বসে এমন পাপকাজ করছে, তারপরেও তোর জন্য ওর চোখে আমি সাগর সমান ভালোবাসা খুঁজে পেয়েছি। জানি তুই ওরে ভুলতে পারছিস না, আমরা কি ভুলতে পারছি, ও তো হানিফের বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলো। কই সে তো নিজের মধ্যেই রেখে দিছে, তাহলে তুই কেন পারবি না?
অর্ণব: এসব মনে করতে চাইনা এখন আর।
আর অর্ণিকে তো ওর কাজের ফল ভোগ করতে হবে তাই না?
মৌ: তুই বস আমি ওদের জন্য খাবার এর অর্ডার দিয়ে আসি।
মৌ গিয়ে চার জনের জন্য ভাত আর মাছ এর অর্ডার দিয়ে আসে।
মৌ: আসতে পারি ভাবি?
অর্ণি: হুম আসো।
মৌ: ঘুম হয়েছে তোমাদের?
অর্ণি: হুম, অর্ণব এসেছে কি?
মৌ: হুম ও পাশের রুমেই আছে।
অর্ণি: হুম
মৌ: ভয় হচ্ছে বুঝি?
অর্ণি: ভয় কেন হবে! ভুল যে আমি করছি, এখন যা হয় সেটা তো মাথা পেতে নিতে হবে।
মৌ: হুম
অর্ণি মিরা মৌ তিনজন মিলে খাবার খেয়ে নিলো আর অনেক সময় আড্ডা দিলো। ওদের আড্ডাতে রাত ১২ টা হয়ে গেছে ওদের সে দিকে খেয়ালি নেই।
অর্ণব মৌ এর আসার অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে। মৌকে ফোন দেয়।
অর্ণব: হ্যালো (রেগেই বললো)
মৌ: কি, রেগে আছিস কেন?
অর্ণব: ঘড়ির টাইম দেখ?
মৌ ঘড়ির টাইম দেখে অবাক হয়ে
মৌ: সরি সরি আমি আসছি,
ফোন কেটে দেয়
মৌ: অর্ণি তোমার উপর অর্ণব যা অত্যাচার করে তা সহ্য করে নিও। দিনে তো তোমায় সব বুঝিয়ে বললাম?
অর্ণি: হুম, অর্ণব আসলেই প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিবো
মৌ: আচ্ছা, মিরা চলো আমরা ঘুমাতে যাই।
মিরা: হুম, অর্ণি চিন্তা করিস না, সব ঠিক হয়ে যাবে?
অর্ণি: হুম।
ওরা চলে যায়।

অর্ণব: এতক্ষণ কি করলি?(মৌ আসতেই প্রশ্ন করে)
মৌ: গল্প করছিলাম রে।
অর্ণব: ভালোই, আমি যাচ্ছি?
(বলে চলে যাচ্ছিলো)
মৌ ডাক দিলো
মৌ: অর্ণব! ভুল কিছু করবি না,
অর্ণব: হুম
এই বলে অর্ণব পাশের রুমে অর্ণির কাছে চলে যায়।

রাত ১২টা বেজে ২০ মিনিট, পৃথিবীটা গভীর ঘুমে মগ্ন, কেও জেগে আছে আবার কেও ঘুমে স্বপ্ন দেখতে মগ্ন।
অর্ণি দরজা খুলার শব্দে নড়েচড়ে উঠে বসে, দরজার গোঙানোর শব্দটা জানি কেমন বিশ্রী রকমের শব্দটা, অর্ণির মনে অনেক কিছু চলছে, কি করবে অর্ণব অর্ণির সাথে?
অর্ণব দরজা লাগিয়ে পিছন ফিরে থাকালো। অর্ণব এমন মায়াবী রুপ দেখে অর্ণি যেন নতুন করে আবার প্রেমে পড়লো।
অর্ণব এর পড়নে কালো পাঞ্জাবী, আর হাতে ব্যান্ডেজ করা, মাথায় ঘন কালো চুল জেল দিয়ে সুন্দর করে সাজানো মনে হয় হালকা বাতাসেই চুল গুলো নেড়ে উঠবে, আর চোখ গুলো ত অর্ণির প্রথম ক্রাশ। অর্ণি এমন ভাবে চেয়ে আছে যেন, অর্ণবকে নতুন করে দেখছে সে?

এভাবে কি দেখছিস? (অর্ণব এর কথায় অর্ণি নড়েচড়ে উঠে)
অর্ণি এমন তুই করে ডাকাতে ভয় পেয়ে যায়। কিছুই বললো না। অর্ণব আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে যায়।
৫ মিনিট পর অর্ণব আসে ওয়াশরুম থেকে।
পরনে একটা কালো পায়জামা আর ঘিঞ্জি ।
অর্ণব এসে পালঙের এক পাশে বসলো,

অর্ণি: আমি ভিডিও ডিলিট করে দেবো অর্ণব প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দাও,
অর্ণব: চুপ কর, বলছিলাম না তোর এই ভুলের মাশুল অনেক বড় কিছুই ভুগতে হবে তোকে? আর কি তুই ভিডিও ডিলিট করবি, আচ্ছা আমি তোর সাথে কি এমন করেছিলাম যে আমার সাথে এমন করলি? ভিডিও আপলোড দেওয়ার আগে তোর একবারো মনে হয় নি আমার মানসম্মান এর কথা? তুই না আমায় ভালোবাসতি, তাইলে কিভাবে পারলি এটা করতে?
অর্ণি: সত্যি জানি না রাগের বসে এমন ভুল করেছি। আর এটাও সত্যি আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি।
(অর্ণি এই ভালোবাসি কথাটা বলতেই অর্ণবের মাথায় রক্ত উঠে যায়, তাই অর্ণির গালে অনেক জোরেই থাপ্পড় বসিয়ে দেয় আর বলে)
অর্ণব: ভালোবাসিস তুই তাই না, নিজের ভালোসাকে অসম্মান করেছিস আবার বলছিস ভালোবাসিস, তুই ভালোবাসার মানে বুঝিস, তোকে তো এখন খুন করতে মন চাচ্ছে,
অর্ণি থাপ্পড় খেয়ে নিচের দিকে থাকিয়ে আছে
দুধের মতো ধবধবে সাদা গালটা মুহূর্তেই আলতার মতো লাল হয়ে যায়। চুপ করে বসে আছে।
অর্ণিকে চুপ করে থাকতে দেখে অর্ণব অর্ণির কাঁধে ধাক্কা দিয়ে
অর্ণব: আমার পুরুষত্ব নাই, তাই না, জানিস আমার ভুলটা কি তোকে তোর ফ্রেন্ডদের সামনেই আমার পুরুষত্ব এর প্রমাণ দেওয়াটাই ভালো ছিলো, তখন যদি আমি চুপ না থাকতাম তাইলে আজ আমার এইদিন দেখতে হতো না। জানিস চুপ ছিলাম কেন, কারণ আমি নারীজাতিকে সম্মান করি।
অর্ণি কি বলবে বুঝতে পারছে না, তার পরেও বললো,
অর্ণি: সত্যি অর্ণব আমার ভুল হয়ে গেছে, সত্যি অনেক বড় পাপ করছি, আর এটাও সত্যি আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তুমি আমায় যা শাস্তি দিবা আমি তা মাথা পেতে নেবো?
অর্ণব: যা শাস্তি দেবো তা সহ্য করতি পারবি?
অর্ণি: ভুল যেহেতু আমি করেছি তার ফলটাও আমায় ভোগ করতে হবে, সেটা তিতা হোক আমি মাথা পেতেই নেবো।
অর্ণব অর্ণির এমন কথা শুনে
অর্ণির শাড়িটা টান দিয়ে খুলে দেয়
অর্ণব: তোমার প্রশ্ন হলো আমার পুরুষত্ব নিয়ে তাই তো, সেটার প্রমাণ এখনি পাবে,
অর্ণি: প্লিজ অর্ণব ক্ষমা করে দাও আমায়, এমন কাজ আর কখনো করবোনা।
(শাড়ি ধরে কথা গুলো বললো অর্ণি)
অর্ণব: তোর ভুলের শাস্তি তোকে ভোগ করতে হবে, আমার উপরে দেওয়া তোর পাহাড় সমান মিথ্যে অপবাদের যে ভুলটা করেছিস, সেটার প্রমাণ এখনি পাবি।
(শাড়ি খুলতে খুলতেই কথা গুলো বললো)
অর্ণি: অর্ণব প্লিজ এমন করো না, আমি এসবের জন্য এখনো প্রস্তুত নয়? (কথাটা কেঁদেই বললো)
অর্ণব তার শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে অর্ণিকে থাপ্পড় মারে
অর্ণি তাল সামলাতে না পেরে মাটিতে পরে যায়,
অর্ণব অর্ণির চুলে ধরে টেনে তুলে নিয়ে বিছানাতে ফেলে দেয়।
অর্ণি অনেক কিছু বলে অর্ণবকে আটকাতে পারে নি,
অর্ণব আর অর্ণি এক ভালোবাসার সাগরে ঢেউ তুলছে, এটা একটা পবিত্র ভালোবাসা।
হয়তো দুজনেরি অনেক স্বপ্ন ছিলো এমন একটা রাতের জন্য? কিন্তু তাদের ভাগ্য তাদের সহায় নয়!
অর্ণিও অর্ণবকে নিয়ে রাতভর স্বপ্ন দেখেছে অর্ণবকে নিয়ে ভালোবাসার গভীর সমুদ্রে যেতে অর্ণিও চেয়েছে, কিন্তু সে এমন ভালোবাসা চায় নি। অর্ণব এর প্রতিটা ভালোবাসার চিহ্ন যেন কামড়ে রুপ নিচ্ছে, বিষাক্ত সাপের চোবল এর চেয়েও আজ অর্ণির কাছে অর্ণবের ভালোবাসা গুলো বেশি বিষাক্ত মনে হচ্ছে। অর্ণি সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পরে। অর্ণির কান্নাটা রুমের চার দেওয়াল শুনেও হয়তো কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু অর্ণির উপরে থাকা রক্তমাংসে ঘড়া মানুষটির কান পর্যন্তও অর্ণির করা আর্তনাদ টা পৌঁছেনি।
~গভীর সাগরে হালকা ঢেউয়ে, মাঝি যেমন মনের সুখে গলা ছেড়ে গান করে নৌকার পাল তুলে~ সেই মাঝি আবার ঢেউ এর গতি বাড়লে
নিজের প্রাণ এর মায়ায়া মধুর কণ্ঠ ত্যাগ করে শব্দ ছেড়ে কান্না করে সাগড়ের পাড়ে যেতে~
অর্ণি হলো আজ সেই নৌকার মাঝি। যে স্বপ্ন দেখেছিলো অর্ণবকে নিয়ে, অর্ণব এর ছোয়ায় নিজেকে রাঙাতে। হুম সে নিজেকে রাঙিয়েছে অর্ণব এর হিংস্র রুপে বিষাক্ত ছোয়ায়।
অর্ণি কান্না থামিয়ে নিয়েছে,
অর্ণব অর্ণিকে নিজের মতো করে ভোগ করেছে, অর্ণির শরীরের প্রতিটা অংশে অর্ণব এর দেওয়া কামড় নামক ভালোবাসার দাগ।

অর্ণব: নে কাপড় পরে নে?
অর্ণি কিছু বলছে না, শুধু ব্যথায় চিৎকার করতে মন চাচ্ছে তার।
অর্ণব: কাপড় পরে নে কানে যাচ্ছে না নাকি তোর, পেয়েছিস তুই তোর প্রশ্নের জবাব, দেখেছিস আমার পুরুষত্ব আছে কি নাই?
এবারো অর্ণি চুপ করে থাকলো।
অর্ণব: তোর আরো সুখ চাই তাই না, তাই তো কাপড় পরছিস না,
এ কথা বলে আবার অর্ণব অর্ণির দিকে আগাতে থাকে
এটা দেখে অর্ণি তড়িঘড়ি করে উঠে কাপড় পরে নেয়।
অর্ণব: যা তৈরি হয়ে আয়,এক জায়গাতে যাবি?
অর্ণি কথা বলতে পারছে না তারপরেও কষ্ট করে জিজ্ঞেস করলো
অর্ণি: এএএতো রাতে কোথায় যাবো?
অর্ণব: পতিতালয়ে যাবো তোকে নিয়ে।
অর্ণির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো কি বলছে এসব
অর্ণি: কি বললে?

চলবে,,,,,,

( গল্পের ভুল গুলো ক্ষমা করে দিবেন? আশাকরি সবাই পাশে থাকবেন?)

ভালো থাকবেন!
ঘরেই থাকবেন!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here