ভুলের মাশুল পর্ব: ৪

0
1328

গল্প: ভুলের মাশুল
পর্ব: ৪
লেখক: হানিফ আহমেদ

আজ দুটি জীবন এক হলো। সাপ আর বেজি নাকি কখনো এক হয় না? কিন্তু এই মানুষ রুপি সাপ বেজি আজ এক হলো। কি হতে চলছে এদের সাথে?

বিয়ের সময় অর্ণব কবুল বলতে প্রায় ১০ মিনিট লাগিয়েছে, তাও মৌ এর দমক খেয়ে কবুল বলছে,আর অর্ণি তো সাথে সাথেই কবুল বলেছে, সে তার ভুল বুঝতে পারছে।
ওরা হোটেলে যাবার জন্য গাড়িতে বসলো।
গাড়ি তার আপন গতিতে চলছে।

রাতুল: বিয়ের মহর কতো দিলি?
মৌ: ১০ লক্ষ টায়া,
অর্ণব: এতো টাকা, এই জন্যেই বলছিস তুই তোমরা বাহিরে যাও আর বাকি টুকু আমি দেখছি।
মৌ: হুম ১০লক্ষই দিলাম। বিয়েটা তুই ওরে শাস্তি হিসেবেই করেছিস, কিন্তু বিয়ে তো আর পুতুল খেলা না। তাই এমন করলাম।
অর্ণব আর কিছু বললো না।
৩:৩০এ গাড়ি এসে হোটেল এর সামনে থামলো, অর্ণিকে এক রুমে নিয়ে যাওয়া হলো, সাথে মৌ আর মিরা গেলো, অর্ণি কান্না করছে,
মৌ অর্নির কাঁধে ওর হাত রাখলো, আর বলতে শুরু করলো।
মৌ: অর্ণি আমি তোমায় কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনো।
অর্ণি: হুম
মৌ: তুমি হয়তো অর্ণবকে ভালোই বাসো, কিন্তু ওর সাথে তুমি যা করছো সেটা অনেক বড় পাপ,হয়তো তুমি রাগের বসে ভুল কাজ করছো, তোমার এই ভুলের জন্য অর্ণব সুইসাইড করতে চাইছিলো, যদি আমরা ঠিক টাইমে না যেতাম, তাইলে হয়তো অর্ণব আর বেঁচে থাকতো না, তুমি যা করছো সেটা কখনো ঠিক করো নি। আর জানো অর্ণব তোমায় ধর্ষণ করতে চাইছিলো? শুধু ওরে আমিই বাধা দিছি। আর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি জানি এটা ভুল সিদ্ধান্ত তোমাদের দুজনের জন্য। আমি শুধু সাহস করেছি তোমার জন্য ,কারণ তুমি অর্ণবকে ভালোবাসো তাই ।
অর্ণি: জানি না তখন আমার কি হয়েছিলো। কেনোই ভিডিও করেছিলাম, আর ওর সাথে এমন বিহেভ করেছিলাম। আর ভিডিও আপলোড করেছিলাম সত্যিই আমি জানি না তখন আমার কি হয়েছিলো? হয়তো রাগের জন্যেই এমন ভুল কাজ করে ফেলছি, কিন্তু এটা সত্য আমি অর্ণবকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।
মৌ: ঠিক আছে ,তুমি আর চিন্তা করবে না, অর্ণব অনেক ভালো ছেলে,আর ওর রাগ একটু বেশিই। তুমি ওর রাগকে ভালোবাসা দিয়ে জয় করবা?
অর্ণি: আমি সব দিক দিয়ে চেষ্টা করবো।
মৌ: আজ তোমাদের বাসররাত। দুজনেরি এই রাত নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিলো? কিন্তু একটা ভুলেই সব শেষ ।
অর্ণি: আমায় কি অর্ণব ক্ষমা করবে?
মৌ: দেখতে পারো, বাট অর্ণব তোমায় এতো সহজে ক্ষমা করবে না। তোমায় অনেক টর্চার করবে, এই গুলো যদি সহ্য করতে পারো তাহলে কখনো সুখ আসতে পারে।
~জানো ত পূর্বের আকাশে যদিও মেঘলা থাকে, পশ্চিমের আকাশটা কিন্তু পরিষ্কার থাকে।
তোমার জীবনটাকে আকাশের সাথে মিলিয়ে নাও ,আর অর্ণবকে কালো মেঘ ভেবে নাও, বৃষ্টি হিসেবে না হয় তোমাদের দুজনের কষ্টের ফল সন্তানকে ভাবো?
আসবে ঠিকি সুখের ছায়া, অপেক্ষা করো অর্ণি অপেক্ষা করো।
অর্ণি: হুম, অপেক্ষা করবো, কৃষক যেমন এক পশলা বৃষ্টির জন্য দিনভর অপেক্ষা করে আমিও না হয় একটু সুখের জন্য আজীবন অপেক্ষা করবো।
মৌ: হুম’ আর আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমায় থাপ্পড় আর এমন বিহেভ করার জন্য?
অর্ণি: আমি তোমার উপর রেগে থাকলে তো ক্ষমা করবো? তোমার ওই থাপ্পড় গুলোই আমায় পালটে দিছে।
মৌ: তারপরেও ক্ষমা করে দিও? আমার ঠিক হয়নি থাপ্পড় দেওয়া।
অর্ণি: হুম
মৌ: যখন তোমার জীবনে সুখ নামক মিষ্টি পাখিটা আসবে ,ঠিক তখন প্রথম আমার নামটাই তোমার মনে হবে ।
অর্ণি: ইনশাআল্লাহ তোমার কথাই মনে হবে। অপেক্ষার গাড়ি থামলেই সুখের স্টেশন পাবো, সেখানে যেন মৌ নামক শব্দটাই থাকে।
মৌ: হিহিহি! আমার ঘুম পাচ্ছে আমি পাশের রোমে গেলাম ঘুমাতে, আর হ্যাঁ অর্ণব এখন আর আসবে না, ও বাসায় গেছে, তুমি আর মিরাও একটু ঘুমাও। আর মিরা চাইলে বাসায় যেতে পারো।
মিরা: না আমি থাকবো।
মৌ: আচ্ছা, অর্ণি তোমার মা বাবা কে ফোন দিয়ে বলো তুমি অর্ণবকে বিয়ে করেছো?
অর্ণি: ভয় হচ্ছে আম্মু আব্বু আর ভাইয়ায় যদি বকা দেন।
মৌ: তুমিই তো ভুল করছো, একটু সহ্য করতে তো হবে তাই না?
অর্ণি: হুম, আব্বু আর ভাইয়া যদি অর্ণব এর কোনো ক্ষতি করে ফেলে?
মৌ: তুমি ওর পাশে থেকে ওরেই সাপোর্ট করবা ,ইনশাআল্লাহ তোমার আব্বু আর ভাইয়া কিছুই করতে পারবে না।
অর্ণি: তাই যেন হয়।
মৌ: বিকাল ৫ টা হয়ে গেছে, আমি একটু ঘুমাই , তুমি তোমার আম্মু আব্বুর সঙ্গে কথা বলে, ওদের সব বুঝিয়ে বলবা, তারপর ঘুমিও, আর অর্ণব রাতে আসবে।
অর্ণি: হুম
মৌ যাবার আগে ওদের জন্য দু পেকেট বিরিয়ানি দিয়ে যায় আর ওর জন্য একটা নিয়ে যায়।

অর্ণি তার বাসায় ফোন দিলো
কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পর ওর মা ফোন ধরলো।
অর্ণি: হ্যালো আম্মু!
অর্ণির আম্মু: কোথায় তুই? সেই দুপুরবেলা গেলি আর আসার নামি নেই!
অর্ণি: আম্মু,
অর্ণির আম্মু: কি হইছে তোর, এমন শুনাচ্ছে কেন তোর গলা?
অর্ণি: আম্মু আমি বিয়ে করে ফেলছি।
অর্ণির আম্মু: কিইইইইই বললি? (অর্ণির মার চিৎকার শুনে পাশের রুম থেকে অর্ণির বাবা আর ভাইয়া আসে,)
অর্ণির ভাইয়া সাহেল হাসান সাহিল কলেজের ইংলিশ প্রফেসার।
সাহেল: কি হয়েছে আম্মু?
অর্ণির মা: অর্ণি নাকি বিয়ে করেছে?
অর্ণির ভাইয়া আর বাবা
~ কি বললে , কখন করছে এসব
অর্ণির আম্মু: দাঁড়াও জিজ্ঞেস করি?
অর্ণির আম্মু: কবে করেছিস
অর্ণি: কিছুক্ষণ আগে।
সাহিল: আমার কাছে ফোনটা দাও?
অর্ণির আম্মু: এই নে।
সাহিল: কাকে করছিস অর্ণবকে নাকি?
অর্ণি: হুম ভাইয়া, তুমি জানলা কেমনে?
সাহিল: সেটা বুঝেছি এমনিতেই, ও তোকে জোর করে বিয়ে করেছে তাই না?
অর্ণি: হুম
সাহিল: এটাই তোর সাথে হওয়ার ছিলো, অর্ণবকে আমি অনেক দিন ধরে চিনি, আমি চেয়েছিলাম অর্ণব এর বাবামার সাথে কথা বলে তোদের বিয়ে ঠিক করবো? কিন্তু তুই অর্ণব এর সাথে যা করেছিস সেটা আমি আজ সকালে দেখে নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছি না, আমার বোন হয়ে এতো বড় পাপ কিভাবে করলি?
অর্ণি: সরি ভাইয়া, আমার ভুল হয়ে গেছে, আমি অর্ণব এর কাছে ক্ষমা চাইবো?
সাহিল: অর্ণব কি তোকে ক্ষমা করবে?
অর্ণি: জানি না, এখন ভালো লাগছে না, ফোন রাখলাম, আম্মু আব্বুকে বইলো আমাদের জন্য দোয়া করতে? তুমিও কইরো।
সাহিল: হুম
অর্ণি ফোন কেটে দেয়, সে না জেনেই অনেক বড় ভুল করে ফেলছে , নিজেকেই নিজে থাপ্পড় দিতে মন চাচ্ছে।

অর্ণি ফোন রাখার পর, রাফি ওদের বাসায় আসে।
রাফি: ছোট আব্বু অর্ণি কোথায়?
অর্ণির বাবা: অর্ণি বাসায় নাই।
রাফি: ওও, যেটা বলতে আসছিলাম, অর্ণব আর ওর ফ্রেন্ড সকালে থানায় এসেছিলো।
সাহিল: কেন?
রাফি: অর্ণির নামে মানহানি এর মামলা করতে। আমি নেই নি মামলা।
সাহিল: নিলি না কেন?
রাফি: এমনিই, ওদেরকে আমি অপমান করে দিছি।
সাহিল: পুলিশ হয়ে মামলা নিচ্ছিস না খুব ভালো তো। জানিস অর্ণব অর্ণিকে বিয়ে করছে।
রাফি: কি বললে? ছোট আব্বু এসব কি বলছে সাহিল ভাইয়া?
অর্ণির আব্বু: হুম সত্যিই বলছে, আর আমাদের মত আছে এই বিয়েতে।
রাফি: এটা হতে পারে না! অর্ণি অন্য কারো বউ হতে পারে না। অর্ণি শুধু আমার বউ হবে আর কারো না।
সাহিল: কি বললি, যা বের হ আমাদের বাসা থেকে, আমি এখনি বড় আব্বুকে সব বলবো।
রাফি: বলো, আর যাচ্ছি আমি। অর্ণবের ব্যবস্থা তো আমি করবো।
সাহিল: আমার বোন বা ওর বরের কোনো ক্ষতি করছিস তো তোর অবস্থা ভালো হবে না।
রাফি চলে গেলো।
এই দিকে অর্ণব তার বাসায়

চলবে,,,,

(গল্পে যে কয়টা ভুল আছে, সব কয়টা ভুল ধরিয়ে দিবেন, খুশি হবো।ভুল বানান গুলোও ধরিয়ে দিবেন।
আশাকরি গল্পের সাথেই থাকবেন।)
ভালো থাকবেন
ঘরেই থাকবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here