মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব:০৫
বাসায় এসে ইশা সোজা ওর রুমে চলে যায়।তারপর ওয়াশরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে ওর বাবা ওর রুমে বসে আছে।ইশা গিয়ে বাবার কাছে বসে,ইশার বাবা বলে,
“কি রে,আজকে আসতে এতো দেরি করলি কেনো?”
এটা শুনে ইশার ভার্সিটির কথা মনে পরে যায়,আর ও লজ্জায় লাল হয়ে যায় কিন্তু ওর বাবাকে বুঝতে দে না।ইশা বলে,
“এমনি,রাইমা কিছু কেনাকাটা করছে।তাই ওর সাথে গিয়েছি (আই এম সরি আব্বু, তোমাকে মিথ্যে বলার জন্য) আর তোমাকে তো রাইমার কথা বলছি আমার ফ্রেন্ড”
“হুম,সে তো বলছিলি।কিন্তু মা দেরি হলে তো ফোন করে জানাবি তুই জানোস না আমি কতো টেনশন এ থাকি”
“আরে আব্বু এতো টেনশন করো না তো শরীর খারাপ হবে,আচ্ছা সরি,এবার থেকে আর এরকম ভুল হবে না”
“হম,সেটা যেনো মনে থাকে।চল,বাবা মেয়ে একসাথে কফি খাই”
“হম..চলো চলো ”
ইশা আর ওর বাবা কফি খেতে ড্রয়িংরুমে যায়।
রাতে…
আরিয়ান ডিনার করে এসে বেডে উপর হয়ে শুয়ে ল্যাপটপে একটা মুভি দেখছিলো।হঠাৎ ওর ভার্সিটির কথা মনে পরে কিন্তু অবাক কারণ যে,ওর রাগ ওঠে না মুচকি হাসে।
তখনই ওর মোবাইল এ টুং করে মেসেজ এর আওয়াজ হয়,ও মোবাইল হাতে নিয়ে অবাক হয়ে যায়।মেসেজ এ রিহান আজকের তোলা ছবিগুলো দিয়েছে,আরিয়ান ইশাকে কোলে নিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে আর ইশা চোখ বন্ধ করে আছে।
আরিয়ান সঙ্গে সঙ্গে রিহানকে কল দে আর বলে,
“এই ছবি গুলো কখন তুললি?”
“যখন তুই ইশাতে ডুবে ছিলি” রিহানের ভাবলেশহীন জবাব।
“ওই ইশাতে ডুবে ছিলাম মানে কি?”
“যেভাবে ইশাকে দেখছিলি তাই বললাম আর কি।
আচ্ছা বল ছবি গুলো কেমন হয়েছে?আমি জানি অনেক সুন্দর হয়েছে,কে তুলেছে দেখতে হবে তো।”
রিহান একটু ভাব নিয়ে বলে।আরিয়ান রেগে বলে,
“এই ছবি গুলো আর কাকে কাকে দিয়েছিস?”
“এখনও কাউকে দেই নাই।আগে তোকে দিলাম।এবার সবাইকে দিবো”
“খবরদার আর কাউকে যদি ছবি গুলো দিয়েছিস তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন। তোর ভাগ্য ভালো যে এখন ও কাউকে দেস নাই”
রিহান অসহায় গলায় বলে,
“তার মানে তুই কি বলতে চাইছিস,ছবি গুলো কাউকে দিবো না?”
আরিয়ান গম্ভীর গলায় বলে, “না”
“ধুর কোথায় ভাবলাম ছবি গুলো সবাইকে দিয়ে তোর সাথে একটু মজা করবো,তোকে দেওয়াই ভুল হয়েছে”
“হয়েছে এবার রাখ আর ছবি গুলো কাউকে দিবি না,তুইও ডিলেট করে দে”
এই বলে আরিয়ান ফোন রেখে দে,তারপর ও শুয়ে পরে আবার কি যেনো ভেবে মোবাইল টা অন করে ছবি গুলো দেখতে থাকে আর মুচকি হাসে।
রিহান এর সাথে রাগারাগি করলেও ছবিগুলো দেখে মুচকি হাসে।
.
এদিকে ইশা আর ওর মা-বাবা ডিনার করতে বসে তখনই ইশার মা বলে,
“ইশা ভার্সিটি কেমন লাগছে?”
এটা শুনে ইশার একটু মন খারাপ হয়ে যায় তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“খুব ভালো আম্মু”
ইশার মা বলে, “তোদের ভার্সিটিতে নবীনবরণ অনুষ্ঠান হবে না?”
“হম,হবে তো।সব মেয়েদের নাকি লাল শাড়ি পড়তে হবে”
“তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই তোর তো লাল শাড়ি আছে”
“না,আম্মু আমি অনুষ্ঠান এ যাবো না”
ইশার বাবা অবাক হয়ে বলে,
“কেন মা,যাবি না কেনো?”
ইশার মাও বলে, “ঠিকই তো,তুই যাবি না কেন?”
ইশা মন খারাপ করে বলে,
“এমনি ভালো লাগে না তাই যাব না”
ইশার মা বলে, “যাবি না কেন? যাবি..”
“আচ্ছা আচ্ছা যাবো”
“ভার্সিটিতে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
ইশা তাড়াতাড়ি করে বলে,
“না না কোন সমস্যা না,আমি যাবো”
ইশার মা বলে,
“জানিস আমাদের ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রথম তোর বাবার সাথে আমার দেখা হয়েছিল”
ইশা খুশি হয়ে বলে, “সত্যি..!!!!”
ইশার বাবা বলে, “নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তোর মাকে দেখে আমি প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম তারপর অনেক সাধনার পর তোর মা রাজি হয়েছে”
এটা শুনে ইশার আম্মু মুচকি হাসে।ইশা বলে,
“আচ্ছা তোমাদের বিয়েতে তোমাদের বন্ধুরা ছাড়া আর কেউ ছিল না তাই না?”
এটা শুনে ইশার মা-বাবার মন খারাপ হয়ে যায়। ইশার মা অনাথ আর ইশা জানে যে ওর বাবার ও কেউ নেই কিন্তু এটা সত্যি না।
ইশা ওর বাবা-মার মন খারাপ দেখে কথা পাল্টে ভার্সিটির কথা বলতে থাকে। বলতে বলতে ও হঠাৎ আরিয়ানের কথা বলে ফেলে।ইশার মা বাবাকে ইশার দিকে অবাক হয়ে তাকায়।
ইশা তাড়াতাড়ি করে অন্য কথায় যেতে চায় কিন্তু ওর আম্মু বলে,
“ইশা আমাদের কাছ থেকে কি লুকাচ্ছিস?”
“না না আম্মু কিছু না”
“সত্যি কথা বল ”
ইশা ওর মা-বাবার কাছে কোনো কথা লুকায় না, তাই প্রথমদিনের রেগিং এর কথা, ওর চড় মারার কথা, আরিয়ান ওকে দিয়ে কাজ করার কথা সব বলে।
ইশার বাবা রেগে বলে,
“কি!ও তোকে দিয়ে কাজ করিয়েছে?”
ইশা বলে উঠে,
“উফফ আব্বু এইজন্যে তোমাকে কিছু জানাতে চাই না,এত হাইপার হচ্ছে কেন? সব মিটমাট হয়ে গেছে,সো রিলেক্স”
ইশার আম্মু কিছু বলতে যাবে কিন্তু ইশা বলে উঠে,
“আর কোন কথা নয় খাবার শেষ করো”
ইশার মা বাবাও মেয়ের কথা শুনে হেসে খাওয়ায় মন দে।
ইশা খাবার শেষ করে রুমে এসে শুয়ে পরে।হঠাৎ ওর আজকের কথা মনে পরে আর লজ্জায় বালিশে মুখ গুজে,তারপর আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়ে।
.
মধ্যে দিয়ে কেটে গেছে একদিন। আজকে ভার্সিটির নবীন বরণ অনুষ্ঠান। ইশা সকাল থেকে শাড়ি নিয়ে ওর মায়ের পিছন পিছন ঘুরছে।ইশার মা বলে,
“ইশা,আমার অনেক কাজ আছে।একটু পরে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছি মা”
তারপর আবার বলে,
“এতবড় মেয়ে হয়েছিস এখনো শাড়ি পরতে পারিস না?”
ইশা ওর বাবার কাছে গিয়ে বলে,
“বাবা, দেখো মা বকছে”
ইশার মা তাড়াতাড়ি রান্নাঘর থেকে এসে বলে,
“কি বললি তুই?”
“ঠিকই তো বলছি,শাড়ি পরতে পারি না বলে তুমি আমাকে বকা দাও কেনো?”
“আচ্ছা আর বকবো না,আয় তোকে শাড়িটা পরিয়ে দেই”
ইশা খুশি হয়ে শাড়ি নিয়ে রুমে চলে যায়।ইশার আম্মু ওকে খুব সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দে।তারপর ইশা হালকা একটু সাজে।
চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, চুল গুলো সাইড বেনি করা আর লাল শাড়ি। ওকে অনেক সুন্দর লাগছে।
এদিকে রাইমা আজকে প্রথম ইশাদের বাসায় আসে,কলিংবেল বাজাতে ইশার মা দরজা খুলে দে।রাইমা হাসি মুখে বলে,
“আন্টি আমি রাইমা”
ইশার আম্মু মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
“ও তুমিই রাইমা,ইশার ফ্রেন্ড।আসো আসো ভিতরে আসো।ইশা ওর রুমে আছে”
রাইমা ভিতরে এসে ইশার আম্মু কে বলে,
“আন্টি ইশার রুম কোনটা?”
তারপর ইশার আম্মু ইশার রুম দেখিয়ে দে আর রাইমা ওদিকে যায়।
ইশার রুমে এসে রাইমা ইশাকে বলে,
“ইশু তোকে আজকে কি সুন্দর লাগছে রে!”
ইশা হাসি মুখ নিয়ে বলে, “তোকেও খুব সুন্দর লাগছে”
“তোকে আমার থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে”
“হয়েছে হয়েছে এসব বাদ দে”
“আচ্ছা চল,বের হবি কখন?”
“এইতো আমি রেডি,চল”
দুজন একসাথে রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।ইশা ওর মা বাবার সাথে রাইমার পরিচয় করিয়ে দে।ইশার মা বলে,
“আয় দুজন খেতে বস”
রাইমা বলে,,
“আন্টি আমি খেয়ে এসেছি,এখন কিছু খাবো না”
“তা বললে কি হয়!আজকে প্রথম তুমি আমাদের বাসায় আসলে এভাবে তো আর না খেয়ে চলে যেতে দিতে পারি না!”
ইশার মায়ের জোরাজোরিতে রাইমাও হালকা নাস্তা করে তারপর দুজন একসাথে বেরিয়ে পরে।
চলবে..