মনের কিনারে তুই পর্ব : ০৬

0
3767

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin niti
পর্ব :০৬

ভার্সিটি টা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। ইশা আর রাইমা রিকশা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ভার্সিটি তে ঢুকে।
চারদিকে মেয়েরা লাল শাড়ি আর ছেলেরা হলুদ পাঞ্জাবি পড়ে ঘুরছে।সবাইকে খুব সুন্দর লাগছে। ইশা আর রাইমা স্টেজের দিকে যায়।ওখান টাও খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।রাইমা তো ফোন বের করে সেলফি তুলতে ব্যস্ত আর ইশা চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।

রাইমা ছবি তুলছে তখন রিহান এসে রাইমাকে বলে,
“রাইমা তোমাকে কিন্তু আজকে খুব সুন্দর লাগছে”

রাইমা একবার রিহান এর দিকে তাকিয়ে বলে,
“ধন্যবাদ”
তারপর অন্যপাশে চলে যায় আর রিহানও মাথা চুলকে অন্যদিকে চলে যায়।

আরিয়ান ও আজকে হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে, ওকে দেখতে একদম হিরোর মত লাগছে, সব মেয়েরা তো ওকে যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।একেক টা মেয়ের মুখে ভারী ভারী মেকাপ।আরিয়ানের আশেপাশে ঘুরঘুর করছে কিন্তু আরিয়ান ওদেরকে পাত্তা দিচ্ছে না।
হঠাৎ আরিয়ানের চোখকে আটকে যায় একটা লাল পরীতে।
ইশা চারদিক ঘুরে ঘুরে দেখছে তখনই আরিয়ানের চোখ যায় সেদিকেই,ইশাকে আজকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে আরিয়ানের চোখে। ও আস্তে আস্তে ইশার দিকে এগিয়ে যায়,

“এই যে মিস ইশা”

ইশা যখন চারিদিক দেখতে ব্যস্ত তখনই ডাকে থেমে থাকে যায়, পেছন ফিরে দেখে আরিয়ান। ও একটু ভয় পেয়ে যায় আবার না এখন কোনো কাজ দে।
আরিয়ান ইশার কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“কেমন আছো?”

ইশা অবাক চোখে আরিয়ানের দিকে তাকায়,কেননা আরিয়ান আজকে ওর সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে,ওর ভাবনার মাঝেই আরিয়ান আবার বলে,

“হেই কেমন আছো?”

“জজ্বী ভালো।আপনি?”

“হুম ভালো।বাই দা ওয়ে তোমাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে”

ইশা তো মনে হচ্ছে এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবে। আরিয়ানের এতো ভাল কথা ও আর নিতে পারছে না।এর মাঝে সেখানে রাইমা উপস্থিত হয়।ও আরিয়ান কে বলে,

“ভাইয়া আপনাকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে,একটা সেলফি তুলতে পারি?”

আরিয়ান হাসি মুখে বলে, “সিউর ”

বলতেই রাইমা এগিয়ে গিয়ে আরিয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলে।ইশার এসব দেখে খুব বিরক্ত লাগে।ছবি তোলা শেষ হলে ও রাইমাকে বলে,

“চল, অনুষ্ঠান মনে হয় শুরু হয়ে গিয়েছে”

বলেই রাইমার হাত ধরে সেখান থেকে চলে যায়,আর আরিয়ান ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তখন জারা এসে আরিয়ান কে বলে,
“বেবি আমাকে কেমন লাগছে?”

আরিয়ান বিরক্ত মুখে বলে, “তোকে বললাম না আমাকে এসব বলবি না”

“আমাকে কেমন লাগছে বলো না?”

“ভালোই”

“শুধু ভালো?তুমি জানো আমি দুই ঘন্টা পার্লারে সেজেছি।সত্যি করে বলোনা কেমন লাগছে?”

এরমধ্যে আরিয়ানের সব বন্ধুরা ওখানে চলে আসে। আরিয়ান বলে,
“সত্যি বলব?”

জারা খুশি হলে বলে, “হুম”

“তোকে দেখতে একদম পেত্নীর মত লাগছে ”

এটা বলে আরিয়ান চলে যায় আর রিহান,তিথিরা সবাই হেসে দে।জারা ওদের দিকে একটা রাগি দৃষ্টি দিয়ে অন্য দিকে চলে যায়।

কিছুক্ষণ পর,
ইশা আর রাইমা চেয়ারে বসে আছে।আর আরিয়ান দুর থেকে ইশাকে দেখছে।আরিয়ান বুঝতে পারছে না যে।মেয়েটার মধ্যে কি আছে যেটা ওকে আকর্ষণ করে।ও অপলক ভাবে ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে।

তারপর টিচাররা কিছুক্ষণ কথা বলে।কিছুক্ষণ পর সিনিয়ররা সব নবীনদের ফুল দিয়ে বরণ করে। একটা মেয়ে এসে ইশা আর রাইমাকে গোলাপ ফুল দিয়ে।
তারপর আরিয়ান স্টেজে উঠে কিছুক্ষণ কথা বলে নবীনদের উদ্দেশ্যে।ইশা হা করে আরিয়ানের কথা শুনছিল ও ভাবছে আরিয়ান এতো সুন্দর করে কথা বলতে পারে..!শুধু ওর সাথে বাজে বিহেব করে।কিছুক্ষণ পর স্টেজ একটা মেয়েকে ডাকা হয় ও এসে কবিতা আবৃত্তি করে।
তারপর নাচ গানও হয়। ইশা আর রাইমার সবটা অনুষ্ঠান খুব ভালোভাবে উপভোগ করে।ইশার মুখে তো হাসি লেগেই আছে আর আরিয়ান দূর থেকে ইশাকে দেখছেই যাচ্ছে।

এভাবেই একসময় অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায় আর ইশা,রাইমা বাসায় আসার জন্য ভার্সিটি থেকে বের হয়,আর এদিকে আরিয়ান তো এখনো ইশাকে দেখেই।যাচ্ছে।

ইশা বাসায় আসলে ওর আব্বু জিগ্যেস করে,
“ইশা,অনুষ্ঠান কেমন লাগলো?”

“খুব ভালো আব্বু, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”

“হুম যা”

ইশা রুমে এসে,কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।তারপর ফ্রেশ হয়ে ওর বাবার কাছে যায়।

.
পরদিন সকাল,,
এলার্ম এর শব্দে ইশার ঘুম ভাঙ্গে।ও উঠে ফজরের নামাজ পরে কফি নিয়ে ছাদে চলে যায়।সকালে কফি খেতে খেতে সূর্য উদয় দেখার মজাই আলাদা।আকাশ ওর খুব পছন্দ।
কিছুক্ষণ পর কফি শেষ করে ও নিচে নেমে আসে।
তারপর নাস্তা করে ভার্সিটির জন্য রেডি হয়ে বেড়িয়ে পরে।

ইশা ভার্সিটিতে এসে ক্লাসে গিয়ে রাইমার পাশে বসে পরে,তারপর কিছুক্ষণ কথা বলার পর স্যার আসে আর ওরা ক্লাসে মনযোগী হয়।
প্রথম ক্লাস করার পর এবার দ্বিতীয় ক্লাস।হঠাৎ আরিয়ান ওদের ক্লাসে আসে,এটা দেখে তো মেয়েরা খুশিতে শেষ।আরিয়ান এসে বলে,

“আজকে তোমাদের এই ক্লাসটা আমি নিবো,স্যার একটা সমস্যার কারণে আসতে পারবে না”

এটা শুনে সবাই খুশি হয়।ইশাও একটু খুশি হয়,আরিয়ান কেমন পড়াতে পারে সেটা দেখা হবে।

তারপর আরিয়ান কিছুক্ষণ কথা বলে পড়া শুরু করে,মেয়েরা তো ওর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।ইশাও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আরিয়ান যে এতো ভালো পড়াতে পারে সেটা ও জানতো না।
আর এদিকে আরিয়ান পড়ার ফাঁকে ফাঁকে ইশাকে দেখছে। ইশাও একবার আরিয়ান এর দিকে তাকায়,সঙ্গে সঙ্গে ওদের চোখাচোখি হয়ে যায় আর ইশা তাড়াতাড়ি মাথা নিচের দিকে নামিয়ে ফেলে।আরিয়ান সেটা দেখে মুচকি হাসে।

.
ইশার মা আজকে ইশার ভার্সিটির সামনে আসছে, আজকে বৃহস্পতিবার তাই তাড়াতাড়ি স্কুল ছুটি হয়ে গিয়েছে। কিছু কেনাকাটা করার ছিল ইশাকে নিয়েই সব কিনে বাসায় যাবে,একটু পর ইশা ক্লাস শেষ হবে তাই গেটের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়েট করছে।
ইশার মাকে দেখতে এখনো যুবতীদের মত লাগে,বোঝাই যায় না যে উনার এতো বড়ো মেয়ে আছে।অনেকে তো ভাবে ইশার মা,ইশার বড় বোন।
ওনি একটা নীল রঙের শাড়ি পড়া,চুল গুলো বেনি করা আর কাধে একটা ব্যাগ। ইশার মা একটু চিকন তাই আরো কম বয়স লাগে।

আরিয়ান আর ওর বন্ধুরা ওখানে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।তখন ওর বন্ধুদের মধ্যে থেকে জয়ের চোখ যায় ইশার মায়ের দিকে।জয় বলে,

“আপু,কাউকে খুজছেন?”

এটা শুনে আরিয়ানরাও উনার দিকে তাকায়।ইশার মা একটু হেসে বলে,
“হুম,ফাস্ট ইয়ারের তো এখনো ক্লাস চলছে তাই না?”

“জী”

তারপর ইশার মা আর কিছু বলে না।চারদিক দেখতে থাকে।
কিছুক্ষণ পর জয় আবার বলে,
“আপু,আপনি চাইলে বসতে পারেন”

“না না তার দরকার নেই আমি ঠিক আছি, ধন্যবাদ ”

“আপু যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলতে পারি?”

“হুম বলো’

“আপু আপনি বিবাহিত?’

ইশার মা জয়ের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকায়।তারপর বলে,
“কেনো?”

জয় ফট করে বলে দে,
“আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে, আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই”

এটা শুনে আরিয়ানরা জয়ের দিকে অবাক চোখে তাকায়। আর ইশার আম্মু হেসে দে,কিছু বলতে যাবে তার আগে জয় বলে,

“আমি জানি আপনি হয়তো আমার দু-তিন বছরের সিনিয়র হবেন তবে আমার কোন সমস্যা নেই,আমার ছোটবেলা থেকেই সিনিয়র বউ বিয়ে করার ইচ্ছে। আচ্ছা আপনি কি করেন?”

“আমি টিচার’

“ও আচ্ছা।আমারো আর এক বছর পর স্টাডি কমপ্লিট হয়ে যাবে, সমস্যা নাই”

জয়ের কথা শুনে ইশার মা অবাক হয়।তারপর বলে, “তোমার নাম কি?’

“এই দেখেছেন এতোকিছু বলেছি নামটাই বলিনি, আমি জয়’

তখন আরিয়ান মজা করে বলে,
“জয় তোর কিন্তু পছন্দ আছে,তুই যদি ওনাকে বিয়ের প্রস্তাব না দিতি তাহলে প্রস্তাব আমিই দিয়ে দিতাম”
বলেই হেসে উঠে।

ইশার আম্মু এবার আরিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে, “তোমার নাম কি? ”

“আমি আরিয়ান”

“তুমি কি সেই আরিয়ান যাকে ইশা চড় মেরেছিল?”

তখন জয় বলে, “হ্যা ও সেই।বাই দা ওয়ে আপনি ইশার কি হন?”

ইশা আম্মু জয়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“ও তুমিই সেই আরিয়ান। তোমাকে দেখার অনেক ইচ্ছা ছিল,ভালোই হলো তোমার সাথে দেখা হয়ে”

আরিয়ান কিছু বলতে যাবে তখনই ইশা এসে বলে,
“আম্মু তুমি এখানে?’

আরিয়ান আর ওর বন্ধুরা প্রত্যেকে চমকে উঠে ইশা আর ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। জয় জোরে বলে,
“আম্মু….!!!!!”

ইশা বলে,
“হম আমার আম্মু আপনারা আমার আম্মুর সাথে কি কথা বলছেন আর আম্মু তুমি এই ওদের সাথে কি কথা বলছো?জানো ওরাই আমাকে শাস্তি দিয়েছে”

“হুম জানি তো আর আরিয়ান এর সাথে দেখাও হলো”

ইশা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে ওর আম্মু কে বলে,
“কিন্তু তুমি ওদের সাথে কি কথা বলছো?”

ইশার আম্মু জয়কে দেখিয়ে বলে, ” ও নাকি আমাকে বিয়ে করতে চায়!”

ইশা জোরে বলে,
“কি..!!!!”

চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here