মনের কিনারে তুই
লেখিকা:Tarin Niti
পর্ব :০৭
ইশা অবাক হয়ে জয়ের দিকে তাকিয়ে আছে তারপর ফিক করে হেসে দে আর জয় অসহায় দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর ইশা রেগে বলে,
“এই আপনি আর মেয়ে পান না?আমার আম্মুকেই আপনার বিয়ে করার শখ হলো?জানেন,আমার আব্বু আম্মু দুজন দুজনকে কতো ভালোবাসে।আর আপনি আসছেন ওদের আলাদা করতে, সবগুলো একরকম”
শেষের কথাটা ইশা আরিয়ান এর দিকে তাকিয়ে বলে।আরিয়ান ইশাকে বলে,
“সব গুলো একরকম মানে?”
ইশা স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“মানে সবগুলো বজ্জাত”
আরিয়ান রেগে বলে, “মুখ সামলে কথা বলো”
তারপর ইশার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“আন্টি এইটা আপনার মেয়ে?”
ইশার আম্মু বলে, “হুম,কেনো?”
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না”
ইশা এবার রেগে বলে,
“এই আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না মানে কি?আপনার বিশ্বাস না হলে কি আমি আম্মুর মেয়ে হবো না নাকি?”
আরিয়ান ইশার কথা পাত্তা না দিয়ে ওর আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে,
” ইশা আপনার মেয়ে…!একে তো আপনাকে দেখলে বুঝাই যায় না যে আপনার এতো বড় মেয়ে আছে।যাই হোক এটা মানলাম কিন্তু আপনি কতো ভদ্র, কতো সুন্দর করে কথা বলেন আর ইশা?”
ইশা রেগে বলে,
“এই আপনি কি বলতে চাইছেন যে আমি অভদ্র?”
“তা নয়তো কি?”
ইশা রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই জয় বলে,
“আন্টি, মানে আপু,না মানে আন্টি আপনি বিবাহিত?”
সবাই ফেলফেল চোখে জয়কে দেখছে।বেচারা জয়ের দিল টুট গেয়া।ইশা রেগে বলে,
“বিবাহিত না হলে আমি কি আকাশ থেকে পড়েছি..!!”
তখন আরিয়ান বলে,
“ইশা সত্যি আপনার মেয়ে তো নাকি হাসপাতালে বদলে গেছে?”
ইশা এবার প্রচুর রেগে যায় কিছু বলতে যাবে তার আগে ইশার আম্মু হেসে বলে,
“হ্যা ও আমারই মেয়ে।আমিও কিন্তু রাগি প্রথম দেখা তো আজকে বুঝবা না”
তখন জয় বলে, “আপনাকে দেখে রাগি মনেই হয় না”
তিথি এতোসময় চুপচাপ সব দেখছে।জারা এখানে নেই।আজকে জারা আসছে না,ওর নিউ বয়ফ্রেন্ড এর সাথে ডেটিং এ গেছে!কিছুদিন পর পর জারা বফ পাল্টায়,ওর নাকি বেশিদিন কাউকে ভালো লাগে না কিন্তু এতোদিন ধরে আরিয়ানকে ছাড়ছে না।আরিয়ানের পেছনে পড়েই রয়েছে।এবার তিথি বলে,
“ওনি টিচার তো,রাগি হতেই পারে।আহারে বেচারা আমাদের জয়,থাক কান্না করিস না”
সবাই তিথির কথা শুনে হেসে দে আর জয় সবার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
ইশার আম্মু বলে,
“আচ্ছা এবার আমরা আসি,তোমরা ভালো থেকো।ইশা চল”
বলেই সামনের দিকে পা বাড়ায় ইশাও আরিয়ান এর দিকে রাগি দৃষ্টি দিয়ে ওর আম্মুর সাথে সাথে যায়।
ওরা যাওয়ার পর আরিয়ানরা জয়ের দিকে তাকিয়ে সবাই হেসে দেয়।আর জয় সবগুলোকে মারা শুরু করে!
.
ইশা আর ওর মা প্রয়োজনীয় সব কেনাকাটা করে বাসায় চলে আসে।বাসায় এসে ইশা আগে বাবার কাছে যায়।
“আব্বু কি করছ?”
“আরে তোরা এসে পড়েছিস?”
“হুম..জানো আব্বু কি আজকে কি হয়েছে?
“কি?”
“আম্মুকে বিয়ের প্রস্তাব দিছে আমাদের ভার্সিটির সিনিয়র একটা ভাইয়া” বলেই ইশা জোরে হেসে ওঠে।
ইশা আব্বু এটা শুনে অবাক হয় না শুধু হাসে। ইশা জিগ্যেস করে,
“আব্বু তুমি হাসছো?”
“তো কি করবো?তোর মা এখনো অনেক সুন্দরি প্রস্তাব আসতেই পারে
জানিস,আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হয় তোর মায়ের মতো একজনকে জীবনে পেয়েছি।
ও আমাকে খুব ভালোবাসে,আমার এক্সিডেন্ট হওয়ার পর ও কখনো আমাকে অবহেলা করেনি,আমাকে কখনো ছেড়ে যায়নি, সবসময় আমার পাশে থাকছে”
ইশার আম্মু দরজায় দাড়িয়ে এসব শুনছিল।এবার ভিতরে এসে বলে,
“ভালোবেসেছি কি ছেড়ে যাওয়ার জন্য?”
ইশার আব্বু বলে, “আমি তো এখন পঙ্গু, হাঁটতে পারি না,হুইল চেয়ার এ করে..”
আর কিছু বলার আগে ইশার আম্মু বলে,
“তুমি যেমনই হও,আমি তোমাকে কখনে ছেড়ে যাবো না”
তারপর ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, “ইশা যা,ফ্রেশ হয়ে আয়’
ইশা একবার ওর বাবা মার দিকে তাকিয়ে বলে,
“হুম যাচ্ছি’
ইশা চলে যেতে ইশার মা ইশার বাবার কাছে এসে ফ্লোরে হাটু মুড়ে বসে বলে,
“দাও”
ইশার বাবা একটা মুচকি হাসি দিয়ে ইশার মায়ের কপালে একটা চুমু খায়।ইশার মাও মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
.
কেটেগেছে অনেক দিন।আরিয়ান বুঝতে পারছে না যে ওর মনে কি ইশার জন্য ভালোবাসা আছে নাকি অন্য কিছু।প্রতিদিন ইশার সাথে দেখা হয়,আরিয়ান ভেবে রাখে যে ও আর ইশার সাথে ঝগরা করবে না কিন্তু ঠিকই ওদের ঝগরা হয়ে যায়।
তবে আরিয়ান এখনো ইশার চড় মারার কথাটা ভুলেনি,ভার্সিটির সবার সামনে ওকে চড় মেরেছে এটা কি ভুলা যায়!
ইশা তাড়াতাড়ি করে ক্লাসের দিকে যাচ্ছে,আজকে অনেক দেরি হয়ে গেছে।নিশ্চয় স্যার ক্লাস শুরু করে দিয়েছে।
তখন হঠাৎ হাতে টান পড়ায় ইশা ভয় পেয়ে যায়।
কেউ একজন ওকে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমে নিয়ে এসেছে।তার এক হাত ইশার কোমরে আর এক হাত ইশার ডান বাহুতে।
ইশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে।তাকিয়ে দেখে আরিয়ান ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশা অবাক হয়ে যায় ও বুঝতে পারছে না আরিয়ান কেনো তাকে এখানে আনলো আর এভাবে ধরে রেখেছে কেনো?
ওর হঠাৎ মনে পড়ে ও আরিয়ান এর খুব কাছে তাই ছুটার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে এটা দেখে আরিয়ান ওকে আরো শক্ত করে ধরে।
“কি সমস্যা? আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেনো?ছাড়ুন প্লিজ”
ইশা বকবক করে যাচ্ছে আর আরিয়ান এক দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।
“আরে আপনি কিছু বলছেন না কেন ছাড়ুন আমাকে আরে সমস্যাটা কি আপনি শুনতে পাচ্ছেন না কানে???”
ইশা কথা বলে যাচ্ছে আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে আছে চুপ করে।ইশা এবার আরিয়ানের দিকে তাকায়। দেখে আরিয়ান ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশার অস্বস্তি হতে থাকে,ও মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। আরিয়ান যে হাতে ইশাকে ধরে রেখেছে ইশা সে হাতের দিকে তাকায়।সেদিকে তাকিয়ে ইশা মনে মনে বলে,
“ব্যাটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি!এভাবে তাকিয়ে আছে কেন।কাহিনী সুবিধের টিকছে না..!!
ইশা আরিয়ানকে বলে,
“এই আপনার মতলবটা কি একটু বলুন তো প্লিজ..”
আরিয়ান এবার কথা বলে,
” মতলব মানে কি হ্যাঁ?”
“আরে সেটাই তো জানতে চাচ্ছি, আপনি আমাকে এভাবে ধরে রেখেছেন কেন?
আরিয়ান আবার চুপ হয়ে যায় আর ইশা বিরক্তি নিয়ে আরিয়ান এর দিকে তাকায়।
চলবে….