মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব: ১০
ইশা ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হয়ে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে রিকশাতে উঠে যাবে তখনই ওর হাতে টান পড়ে।ও পিছনে ফিরে দেখে আরিয়ান ওর হাত ধরে আছে। ইশা রক্তিম চোখে আরিয়ানের দিকে তাকায়। তা দেখে আরিয়ান বলে,
“চলো তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসি”
ইশা বলে, “না।আমি একাই যেতে পারবো ”
আরিয়ান একটু রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“আমি কোন সিনক্রিয়েট চাইনা চলো ”
“আরে আজব তো!আপনি এরকম কেনো করছেন?বলছিনা আমি যেতে পারবো। আপনি কে যে আমি আপনার সাথে যাবো!”
আরিয়ান এবার রেগে যায়, ইশা বলছে ইশা ওর কে?ও জানে না!আরিয়ান হেঁচকা টানে ইশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ ইশার দিকে তাকিয়ে টানতে টানতে নিয়ে গাড়িতে বসায় তারপর দরজা লক করে দে।আর ইশা গাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করতে থাকে। আরিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে বলে,
“লাভ নেই লক করা ”
ইশা অসহায় দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়। ইশা বলে,
“আপনি এরকম কেন করছেন? ”
আরিয়ান বলে, “বলতে হবে?”
ইশা বলে, “আমি জানতে চাই ”
আরিয়ান বলে, “তোমাকে ভালোবাসি তাই ”
“প্লিজ মিথ্যা বলবেন না,সত্যিটা বলুন”
আরিয়ান রেগে বলে, “তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যা কথা বলছি? ”
ইশা একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বাইরের দিকে দৃষ্টি দেয়। আরিয়ানের সাথে এসব নিয়ে আর কথা বলতে চায় না। আরিয়ান একবার ইশার দিকে তাকিয়ে ড্রাইভিং এর মনোযোগ দে।আরিয়ান ড্রাইভ করছে আর একটু পর পরই ইশার দিকে তাকাচ্ছে। আর ইশা একদৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে।
অনেকক্ষণ পর আরিয়ান গাড়ি থামায়।ইশা চারদিকে তাকিয়ে দেখে ওর বাসার সামনে গাড়ি থেমেছে। ইশা অবাক হয় এটা ভেবে যে আরিয়ান ওর বাসার ঠিকানা জানে!একবার ভাবে আরিয়ান কে জিজ্ঞেস করবে,পরে আর কি যেন ভেবে জিজ্ঞেস করেনা।
আরিয়ান ইশার দিকে একটু ঝুঁকে আসে তা দেখে ইশা চোখ বড় বড় করে পেছনে চলে যায়। আরিয়ান ইশার আর একটু কাছে আসে ইশা বুঝতে পারছে না আরিয়ান কি করতে চাইছে। আরিয়ান ওর ডান হাতটা বাড়ায় ইশা দিকে।ইশা ওর হাত দিয়ে জামা মুঠো করে ধরে। আরিয়ান একটা বাঁকা হাসি দিয়ে দরজার লক খুলে দে।
ইশা এবার বুঝতে পারে আরিয়ান কেনো ওর দিকে এগিয়ে এসেছিল।আরিয়ান লক খুলে সোজা হয়ে বসে। ইশা তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়ে।নেমে আর পেছনে তাকায় না সোজা বাসায় ঢুকে পড়ে। আরিয়ান ইশা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জোরে হেসে দে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি নিয়ে চলে যায়।
ইশার মা বাসায় নেই তাই কিছু দেখেনি।আর ওর বাবা এই সময় ঘুমায়। ইশা একটু নিশ্চিন্ত যে কেউ দেখেনি।ইশা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে যাবে তখন ফাহিম ইশাকে বলে,
” ইশা আপু তুমি আজকে কার গাড়ি দিয়ে এসেছো?”
হঠাৎ কণ্ঠস্বর শুনে ইশা ভয় পেয়ে যায়,একটু কেঁপে উঠে। তাকিয়ে দেখে ফাহিম দাঁড়িয়ে আছে। ইশাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। সাত বছর বয়স ফাহিমের প্রশ্ন শুনে ইশা ভয় পেয়ে যায় ও বুঝতে পারে ফাহিম ইশা আর আরিয়ানকে দেখে ফেলেছে। এখন যদি ওর আব্বুকে বলে দে!
ইশা তাড়াতাড়ি করে বলে, ” কই নাতো”
ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলে,
“ইশা আপু আমি দেখেছি তুমি একটা ভাইয়ের সাথে এসেছো। ভাইয়াটা কে? তোমার বয়ফ্রেন্ড??”
ইশা চোখ বড় বড় করে ফাহিমের দিকে তাকায়। এইটুকু ছেলে কিনা বয়ফ্রেন্ড বুঝে! ইশা রাগী দৃষ্টিতে বলে,
“এই ছেলে এত পাকনা পাকনা কথা কোথায় শিখেছিস?ছোট ছোটোর মতো থাক”
ফাহিম একটু ভাব দেখিয়ে বলে,
“আমি ছোট না, আমি অনেক বড়।”
ইশা ওকে ভেঙ্গিয়ে বলে,
“আমি ছোট না আমি অনেক বড়,
সাত বছরের বাচ্চা আমার সাথে ভাব নিতে এসেছে”
ফাহিম ইশাকে বলে,
“আমি কিন্তু মামনি কে সব বলে দেবো”
ফাহিম ইশার আম্মুকে মামনি বলে ডাকে।ইশা ফাহিমকে বলে,
“না না সোনা না, বাবা না, তোকে আমি চকলেট দেবো। কাউকে কিছু বলিস না প্লীজ…”
“চকলেট?শুধু চকলেট এ তো হবে না”
“তোর আর কি চাই? ”
“আমার ক্রিকেট বল টা কালকে খেলতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে তুমি একটা আমাকে ক্রিকেট বল কিনে দেবে ”
ইশা উপায় না পেয়ে রাজি হয়ে যায়।তারপর বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি কালকে ভার্সিটি থেকে আসার সময় তোর জন্য কিনে আনবো কিন্তু তুই কাউকে বলবি না তো?”
ফাহিম বলে, “কাউকে বলবো না তুমি নিশ্চিন্তে থাকো”
বলেই লাফাতে লাফাতে নিচে নেমে যায়।ইশা সেদিকে তাকিয়ে বলে, “বিচ্ছু একটা”
তারপর উপরে ওদের ফ্ল্যাটে চলে যায়।
.
পরদিন ইশা ভার্সিটিতে গিয়ে মাঠের এক কোনায় ঘাসের উপর বসে আছে।রাইমা এখনো আসেনি
রাইমা বাদে ইশার আর কোন ফ্রেন্ড নেই, তাই চুপচাপ বসে আছে।বসে বসে ঘাস ছিঁড়ছে। তখনই অনুভব করে ওর পাশে কেউ বসেছে। ইশা মুখ তুলে দেখে আরিয়ান। আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে মনমুগ্ধকর করা হাসি দেয়।ইশা ভাবছে আরিয়ান দেখতে কত সুন্দর!যার হাসির দেখলে সব মেয়েরা ঘায়েল হয় সে কি সত্যি ওকে ভালবাসে..!!
ইশা এসব ভাবছে তখন আরিয়ান ইশার সামনে চুটকি বাজায় তারপর বলে,
“এইযে হেলো,, মিস ইশা,কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
ইশা স্বাভাবিক হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,
“কোথাও না,,,আপনি এখানে?”
আরিয়ান একটা হাসি দিয়ে বলে,
“তোমার সাথে গল্প করতে এলাম”
“কিন্তু আমি আপনার সাথে গল্প করতে চাই না”
“কেনো কেনো?”
ইশা ভাবতে থাকে, ঠিকই তো কেন ও আরিয়ান সাথে গল্প করতে চায়না? আরিয়ান তো এখন আরও সাথে বাজে ব্যবহার করেনা, তাহলে?
ওর ভাবনার মাঝে আরিয়ান আবার বলে,
” তুমি কি এত ভাবছো বলতো?”
ইশা বলে, “কিছু না”
তারপর দুজনেই চুপ। আরিয়ান হঠাৎই ইশার হাত ধরে।ইশা শরীর কেঁপে ওঠে!কেন যেন এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে, যে অনুভুতি নাম ওর জানা নেই।সেটা ভালো না খারাপ ও জানে না।অবাক নয়নে আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে আছে।
ইশা আর সহ্য করতে না পেরে আরিয়ান থেকে হাত নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে উঠে পড়ে এবং দৌড়ে ক্লাসে চলে যায়।আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দে।
ইশা ক্লাসে বসে হাঁপাতে থাকে। কেন জানি ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, বুঝতে পারছেনা এরকম কেন হচ্ছে? তারপর ওর হাতের দিকে তাকায়,যে হাতটা আরিয়ান ধরেছিল। হাতের দিকে তাকিয়ে ইশা মুচকি হাসে। রাইমা এসে বলে,
“কিরে হাসছিস কেন?”
ইশা রাইমাকে দেখে থতমত খেয়ে যায় তাড়াতাড়ি করে বলে,
” না না কিছু না,,,তুই কখন এলি?”
রাইমা ইশার পাশে বসতে বসতে বলে,
“এইতো একটু আগে, এসে দেখি তুই মুচকি হাসছিস
আরিয়ান ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিস নাকি?”
ইশা রেগে রাইমাকে বলে,
“কি সব ফালতু কথা বলছিস?”
“আরে রাগ করছিস কেন?আচ্ছা আর বলবো না”
এবার ইশা রাইমাকে দুষ্টুমি করে বলে,
“রিহান ভাইয়া,,কেমন আছে রে?”
রাইমা অবাক ইশার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“আমি ওনার কথা কিভাবে জানবো?”
ইশা রাইমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“জানোনা না? বুঝি বুঝি সব বুঝি….”
“কি বুঝোস?”
“তুই আর রিহান ভাইয়া…”
“আমরা কি?”
“তোরা……”
“আমরা????”
“তোরা………..”
এবার রাইমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। ইশার পিঠে একটা থাপ্পড় দিয়ে বলে,
“সরাসরি বল আমরা কি??”
ইশা জোরে হেসে দেয় তারপর বলে,
“না,,কিছু না”
রাইমা ইশার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকায় তারপর অন্য দিকে দৃষ্টি দে।
কিছুক্ষণ পরে ইশা আবার বলে,
“আমার মনে হয় রিহান ভাইয়া তোকে পছন্দ করে”
রাইমা চোখ ছোট ছোট করে ইশার দিকে তাকায়।ইশা হেসে বলে,
“আমি শিউর জানি না বাট মনে হয়!”
রাইমা বলে,
“তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?ওনি আমাকে পছন্দ করবে? আর করলেই বা কি আমি কি ওকে পছন্দ করি নাকি! সব সময় আমার সাথে ঝগড়া করে… ফালতু একটা”
ইশা কাঁধ নাড়িয়ে বলে,
“এবার কেমন লাগছে? আমিও তো আরিয়ান ভাইয়ের সাথে ঝগড়া করি কিন্তু তুই তো আমাদের কথা শুনে খুব খুশি হয়েছিলি, বলেছিলি আরিয়ান ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে,, এখন?আমি বললেই দোষ হুহ”
রাইমা ইশার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকায়।তারপর বলে,
“আমার ভুল হয়েছে বইন,আর তোকে কিছু বলবো না যাহ”
ইশা আদেশের শুরে বলে, “হুম মনে থাকে যেনো”
বলেই দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দে।রাইমা ইশার গলা জড়িয়ে ধরে আর ইশা রাইমার পিঠে হাত রাখে।
চলবে…..