মনের কিনারে তুই পর্ব : ১৪

0
2881

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১৪

“রিহান ভাইয়া”

রিহান মাত্র ভার্সিটিতে এসেছে।বাইক পার্ক করে ভার্সিটি তে ঢুকতে যাবে তখন কারোর ডাকে পেছনে ফিরে। পেছনে ফিরে দেখে ইশা চিন্তিত মুখে দাড়িয়ে আছে।ইশা একটু এগিয়ে বলে,

“ওনার কোন খবর পেলেন?”

রিহান মন খারাপ করে বলে,,
“না,আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ওর ফোন অফ। আন্টিকে ফোন দিয়েছিলাম কিন্তু বললেন ও নাকি বাসায় যায়নি।আঙ্কেল-আন্টিও খুব চিন্তা করছে,, আচ্ছা তোমাদের মধ্যে ঐদিন কি হয়েছিল?সত্যি করে বলতো!”

ইশা মন খারাপ করে বলে,,
“নাহ কিছু না”

ইশা চলে যায়। রিহান নিজে নিজে বলে,,
কি জানি এদের কি হয়েছে!একজন মিসিং আর একজন মন খারাপ করে থাকে,,ধুর ভালো লাগেনা”
তারপর রিহান বন্ধুদের কাছে যায়।

এদিকে ইশা মন খারাপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটছে।আজ এক সপ্তাহ ধরে আরিয়ান ভার্সিটিতে আসছে না! ওর কথা কেউ জানে না, ফোনও অফ। রিহান আরিয়ানের বাসায় খুঁজে নিয়েছে কিন্তু আরিয়ান বাসায় যায়নি!
ইশার খুব কান্না পাচ্ছে, ইচ্ছে করছে চিৎকার করে কান্না করতে।ও জানেনা ওর কেনো এতো মন খারাপ হচ্ছে!

ওই ঘটনার পরদিন ইশা ভার্সিটিতে এসে অজান্তেই এদিকে ওদিকে আরিয়ানকে দেখার উদ্দ্যেশে কিন্তু আরিয়ানকে পায়না। ইশা ভাবে রাগ করে হয়তো আসেনি কিন্তু তার পরেরদিনও যখন আরিয়ান আসে না তখন ইশার মন খারাপ হয়ে যায়। তারপর অপেক্ষা করতে করতে আজকে এক সপ্তাহ! এখনও আরিয়ান আসেনি!কোথায় আরিয়ান..!
ইশা মন খারাপ করে গিয়ে ক্লাসে বসে।কিছুক্ষণ পর রাইমা এসে বলে,

“আরিয়ান ভাইয়ের কোন খোঁজ পেলি?”

রাইমার কোথায় ইস হুঁশ আসে। ইশা এতক্ষণ আনমনে আরিয়ানের কথা ভাবছিলো।
রাইমার প্রশ্নের উত্তরে ইশা ছোট করে জবাব দে,,
“না ”

রাইমা বেঞ্চে বসে ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“থাক মন খারাপ করিস না”

ইশা একটু হেসে বলে,
“আমি মন খারাপ করিনি তো”

“আমার কাছে কিছু লুকানোর চেষ্টা করবি না,,আমি তোকে বুঝতে পারি”

আচমকা ইশা রাইমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।রাইমা ইশার পিঠে হাত দিয়ে ওকে সান্তনা দে।কিছুক্ষণ পর রাইমা কাঁধে ভেজা অনুভব করলে,ওর কাঁধ থেকে ইশার মুখটা তুলে দেখে ইশা কান্না করছে। রাইমা ইশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,,

“কিরে কাঁদছিস কেনো? ঐদিন তো আরিয়ান ভাইকে অপমান করলি এখন উনার জন্য আবার কাঁদছিস!”

ইশা চোখের পানি মুছে বলে,,
“আমি বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে,আমার ঐভাবে কথাটা বলা ঠিক হয়নি কিন্তু তার জন্য ওনি আমাকে এত বড় শাস্তি দিবে আমি তো জানতাম না”

ইশা ফুঁপিয়ে কেঁদে দে।রাইমা ইশার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে,

“হয়েছে হয়েছে তা আমার কান্না করতে হবে না।চিন্তা করিস না আরিয়ান ভাইয়া চলে আসবে”

ইশা রাইমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসে,নিচু গলায় বলে,, “হম”

রিহান বন্ধুদের কাছে গেলে সবাই রিহানকে ধরে। তিথি রিহানকে জিজ্ঞেস করে,

“কিরে রিহান আরিয়ান কোথায়?ওকে আজকে এক সপ্তাহ ধরে দেখছি না।ফোন দিলাম, ফোন অফ”

“আমি জানি না”

জয় বলে,,, “তুই তো ওর বেস্টফ্রেন্ড,তুই জানোস না ও কোথায়?

রিহান অসহায় কণ্ঠে বলে,”আমি সত্যি জানিনা”

তিথি বলে,, “আচ্ছা আঙ্কেল আন্টি কে জিজ্ঞেস করেছিস?

“হম… জিজ্ঞেস করেছি,,ওরা জানেনা।আন্টিতো অনেক চিন্তায় আছে”

জারা ন্যাকামো করে বলে,
“আমার আরিয়ান বেবি কোথায়?”

জারার কথা শুনে রিহানরা সবাই বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ফেলে।তিথি বলে,

“তুই আরিয়ানকে দিয়ে কি করবি? তুই তোর বয়ফ্রেন্ডের কাছে যা না”

জারা রেগে বলে,
“এই মুখ সামলে কথা বলতে”

তিথি জারার সাথে তর্ক করার মন নেই তাই ও আর কোন কথা বলে না। ওরা সবাই চিন্তিত আরিয়ানকে নিয়ে।জারা চলে যায়।

জয় বলে,, “আচ্ছা আরিয়ান হঠাৎ এভাবে ফোন অফ করে উধাও হয়ে গেলে কেন? কিছু হয়েছে?রিহান সত্যি করে বল..”

রিহান বলে,, “আরে আমি নিজেই কিছু জানিনা তবে আমার মনে হয় ইশা আর আরিয়ানের মধ্যে কিছু একটা হয়েছে ”

তিথি অবাক হয়ে বলে,
“ইশা আর আরিয়ান এর মধ্যে!”

“হ্যাঁ,,আসলে আমার মনে হয় আরিয়ান ইশাকে পছন্দ করে। ইশাকে ভালবাসার কথা বলেছে,কিন্তু ইশা রিজেক্ট করে দিয়েছে অথবা কিছু বলেছে তাই আরিয়ান রাগ করে এখন ফোন অফ করে উধাও”

সবাই রিহানে দিকে তাকায়।রিহান বলে, “আমি শিউর জানিনা তবে আমার এইটাই মনে হয়”

জয় বলে,, “আমারও মনে হয়েছে আরিয়ান ইশাকে পছন্দ করে কিন্তু এদের মধ্যে কি হয়েছে কি জানি!”

ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকায় কেউ বুঝতে পারছে না কি হয়েছে। তবে সবাই চিন্তিত।

.
ক্লাসে শেষে ইশা বাসায় চলে আসে। আজকেও পুরো ভার্সিটি আরিয়ানকে খুঁজেছে কিন্তু আরিয়ান নেই।ইশা জানেনা কেন আরিয়ানকে খুঁজছে কিন্তু আরিয়ানের অনুপস্থিতি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।

সন্ধাবেলায় ইশার বাবা-মা একসাথে বসে কফি খাচ্ছে।ইশাও সেখানে ছিল।কফির মগ হাতে নিয়ে আনমনে কি যেন ভাবছে। তখনই ইশার মা বলে,,
“কিরে কি ভাবছিস তুই?”

মায়ের কথায় ইশার ধান ভাঙ্গে।
ইশা বলে,, “নাহ কিছু না”

ইশার বাবা বলে,
” আমি কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করেছি তুই কেমন মনমড়া হয় থাকিস। কি হয়েছে সত্যি করে বল”

ইশা জোরপূর্বক হেসে বলে,
“না আব্বু কিছু না এমনি।আমি রুমে যাচ্ছি ভালো লাগছে না”

বলেই ইশা উঠে ওর রুমে চলে যায়। ইশার বাবা-মা ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

রাত দশটায়,,
ইশা পড়ার টেবিলে বসে আছে, সামনে বই খোলা কিন্তু ওর পড়া কোন মনোযোগ নেই! ও আরিয়ানের কথা ভাবছে। ইশা নিজে নিজে বলে,

“ঐদিন আমি একটু বেশি করে ফেলেছি। উনাকে বেহায়া না বলাটা ঠিক হয়নি,, তাইতো এত রেগে গেল।এখন কোথায় আছে কে জানে!”

তারপর আবার নিজে নিজে বলে,,

“ধুর আমি এসব কি ভাবছি! বারবার কেন ওনার কথা ভাবছি..!”

ইশা মাথা ঝাড়া দিয়ে বইয়ের দিকে তাকায় কিন্তু ইশার পড়ায় কোন মনোযোগ নেই। তাই ও বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়। তারপর বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়।বারান্দার গ্রিলের সাথে মাথা লাগিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।

পরদিন ইশা ভার্সিটিতে এসে গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে আরিয়ান আর ওর বন্ধুরা যেখানে আড্ডা দেয় ওদিকে তাকায়। ইশা প্রতিদিনই ঐ ওখানে দেখে কিন্তু আরিয়ান থাকেনা।আজকে ইশার চোখগুলো বড় বড় হয়ে যায়, কারণ রিহানদের সাথে আরিয়ান বসে আছে। হাসতে হাসতে কথা বলছে।ইশা অবাক হয়ে বড় বড় চোখ করে আরিয়ান এর দিকে তাকায়।

এক সপ্তাহ!পুরো এক সপ্তাহ পর আরিয়ান কে দেখছে। কালো প্যান্টের সাথে কালো শার্ট। গলায় একটা চেইন, সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে আর মুখে এসে মনমুগ্ধকর করা হাসি।ইশার হার্টবিট বেড়ে যায়।
ইশা দৌড়ে আরিয়ানের কাছে যায়।আরিয়ান একবার ইশার দিকে তাকিয়ে আবার আড্ডায় মন দে,, এমন ভাব করে যেনো ইশা কে চিনেনা! ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
কিছুক্ষণ পর ইশা নিজ থেকে বলে,

“আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?”

আরিয়ান বিরক্তি নিয়ে বলে,
“সেটা জেনে তোমার কাজ কি?”

” আপনি জানেন আমি আপনাকে কত খুঁজেছি?আপনার ফোন অফ। রিহান ভাইয়াও আপনার কোন খোঁজ জানেনা! আপনি এতদিন কোথায় ছিলেন?”

আরিয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বললেন,,
“ওহ রেইলি! তুমি আমার খোঁজ করেছো?তা কারণটা কি জানতে পারি?

ইশা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ানের এমন কথা নিতে ও পারছে না। কেন জানি ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
ইশা নিজেকে সামলে নিচু স্বরে বলে,, “সরি ”

আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে,, ” কেনো?”

“ঐদিনের ব্যবহারের জন্য। আসলে ঐদিন আমি একটু বেশি রিয়েক্ট করে ফেলেছিলাম। প্লিজ মাফ করে দিন,,, সরি”

আরিয়ান ভাবলেশহীনভাবে বলে,,
“আমার তো ঐদিনের কোন কথাই মনে নেই, সব ভুলে গেছি,,তুমিও ভুলে যাও”

ইশা হয়ে বলে,, “সব ভুলে গেছেন?”

“হ্যাঁ”

ইশা আনমনে বলে,, ” আমাকেও?”

আরিয়ান অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকায়। ইশা তাড়াতাড়ি এদিক ওদিক তাকিয়ে নিজেকে সামলে নে। তারপর জোরপূর্বক হেসে বলে, “আআমি আসছি ”

ইশা তাড়াতাড়ি করে ওর ক্লাসের দিকে চলে যায়।কেনো জানি ওর কান্না পাচ্ছে। ইশা জোরপূর্বক হেসে জোরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নে।
আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here