মনের কিনারে তুই পর্ব : ১৫

0
2750

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব : ১৫

ইশা মন খারাপ করে ক্লাসে বসে আছে।ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। আরিয়ান ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারল! ইশা চোখ বন্ধ করলে আরিয়ানের মুখটা ভেসে ওঠে ও তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলে।তখন রাহিমা হন্তদন্ত হয়ে এসে বলে,,

“এই ইশা আজকে আরিয়ান ভাইয়া ভার্সিটিতে আসছে,আমি দেখেছি ”

ইশা মন খারাপ করে বলে, “আমিও দেখেছি”

রাইমা অবাক হয়ে বলে, “কথা বলিস নি?”

ইশা রাইমাকে সবকিছু বলে,,আরিয়ানকে সরি বলার আরিয়ান ওকে অ্যাভয়েড করা সহ সব বলে।
সব শুনে রাইমা মন খারাপ করে বলে,

“আমি ভেবেছিলাম এরকম কিছু একটা হবে। আরিয়ান ভাইয়া তোকে ক্ষমা করতে পারেনি”

ইশা জোরপূর্বক এসে বলে,
“হুম,, আচ্ছা বাদ দে। আমার সরি বলার আমি বলেছি এবার উনি কী করবে সেটা ওনার ব্যাপার”

বলেই ইশা বই খুলে বইয়ের দিকে চোখ রাখে কিন্তু ওর মনে এখনো আরিয়ান এর কাছে আছে..!

.
ক্লাস শেষে ইশা আর রাইমা একসাথে হাঁটছে।ইশা আজকে কোন ক্লাসে মন দিতে পারেনি। বারবার আরিয়ানের সকালের করা ব্যবহারের কথা মনে পড়েছে। ইশা এদিক ওদিক তাকাচ্ছে হঠাৎ একদিকে তাকিয়ে চমকে যায়।একটা বাইকের উপর আরিয়ান আর জারা বসে আছে। আরিয়ান জারার কোমর ধরে বসে আছে আর জারা আরিয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে খুব কাছাকাছি বসে আছে।জারা কি যেন বলছে আর আরিয়ান মাথা নাড়াচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে ইশার খুব কষ্ট হয় ও চোখ মুখ খিচে অন্যদিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর আবার অজান্তেই আরিয়ান আর জারার দিকে চোখ যায়।
ইশার দৃষ্টি অনুসরণ করে রাইমা সে দিকে তাকায়। রাইমা একবার আরিয়ানের দিকে আরেকবার ইশার দিকে তাকায়। ইশার চোখ ছল ছল করছে। রাইমা ইশার কাঁধে হাত রাখে, ইশা রাইমার হাতটা সরিয়ে দৌড়ে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে যায়।
এদিকে আরিয়ান ইশার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

ইশা সোজা বাসায় চলে আসে। রুমে এসে দরজা বন্ধ করে খাটের সাথে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়ে। তারপর মুখে হাত দিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইশা অনেকক্ষণ কাঁদে!ও জানে না ও কেন কান্না করছে কিন্তু ওর খুব কান্না পাচ্ছে। তারপর ওঠে।গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায়। আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে। ইশা কখনো আয়নায় নিজেকে সেভাবে দেখেনি।
কান্নার কারণে চোখগুলো ফুলে হালকা লাল হয়ে গিয়েছে, চুলগুলো এলোমেলো,ওড়নাটা এক সাইডে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। ইশা নিজের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। তারপর নিজে নিজে বলে,,

“এটাই ওনার ভালোবাসা!এক সপ্তাহ নিখোঁজ ছিল এখন এসে ওই মেয়েটার সাথে মেলামেশা করছে। উনি তো আমাকে ভালোবাসে, এত তাড়াতাড়ি ভালোবাসা ভুলে গেল?ইশা তুই কার জন্য কাঁদছিস?”

“নাহ আমি আর কাঁদবো না”
বলেই ইশা চোখের পানি মুছে হাত মুঠো করে নিজেকে শক্ত করে নে। তারপর ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশ রুমে চলে যায়।

রাতে ডিনার করার কিছুক্ষণ পর ইশা শুয়ে পড়ে। কিন্তু ওর ঘুম আসছে না। পুরো খাটে এদিক থেকে ওদিক গড়াগড়ি করছে। এবার ইশা সোজা হয়ে শুয়ে ওপরে ছাদে দিকে তাকায়,দুহাত পেটের উপর ভাঁজ করে রাখে। ইশা চোখ বন্ধ করলে চোখের সামনে আরিয়ানের মুখটা ভেসে ওঠে, ঐদিন নদীর পাড়ে এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটা ভেসে ওঠে!চোখের ইশা চোখ খুলে শোয়া থেকে উঠে বসে। ইশার আরিয়ানের কথা মনে পড়ছে তাই ওর ঘুম আসছে না। ইশা নিজের উপর নিজেই বিরক্ত। তারপর বালিশের পাশে থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে কিচেনে যায়। ইশা ফ্রিজ থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খায় তারপর নিজেকে শান্ত করে রুমে এসে ব্যালকনিতে চলে যায়।।আজকে আর আকাশের দিকে তাকায় না, আজকে নিচে তাকিয়ে থাকে।
ইশাদের বাসাটায় রাস্তা থেকে একটু দূরে হওয়ায় এখানে বেশি গাড়ির চলাচল নেই। আশেপাশে আরও অনেক বড় বড় বিল্ডিং।সেখানে কিছু কিছু ফ্লেটের লাইট জ্বলছে কিছু কিছু ফ্লেটের লাইট অফ। রাত একটা বাজে অনেকেই এখন ঘুমিয়ে,,তাই পুরো এলাকাটা স্তব্ধ।
ইশা একদৃষ্টিতে নিচে মাঠের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঠের দিকে তাকাতে ইশার আরিয়ানের বাস্কেটবল খেলার কথাটা মনে পড়ে।আরিয়ানের কথা ভেবেই ইশা আনমনে হেসে দেয়। তারপর আবার নিজেই অবাক হয়,ও হাসছে কেন..!
ইশা নিজের মাথায় গাট্টা মেরে রুমে চলে যায়। তারপর কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।

পরদিন সকালে ইশা নাস্তা করে নিজের রুমে বসে
আছে। ইশার আম্মু স্কুলের জন্য রেডি হয়ে বের হওয়ার আগেই ইশার রুমে উঁকি দিয়ে দেখে ইশা একা একা বসে আনমনে কি যেন ভাবছে। ইশার আম্মু একটু অবাক হয় কারণ এখন ইশার ভার্সিটিতে যাওয়ার সময়। ইশার আম্মু ইশার কাঁধে হাত রেখে বলে,

“কি রে আজকে ভার্সিটি যাবিনা?”

হঠাৎ কাঁধে হাত রাখাতে ইশা একটু কেঁপে ওঠে। তারপর পেছন ফিরে ওর মাকে দেখে হাসি মুখে বলে,

“না আম্মু ভালো লাগছেনা”

ইশার আম্মু ইশার কপালে, গলায় হাত দিয়ে বলে,

“কি হয়েছে? শরীর খারাপ?”

“না না শরীর খারাপ না।এমনি ভালো লাগছে না”

ইশার আম্মু সন্দিহান চোখে ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

“এমনি এমনি ভার্সিটি মিস দেওয়ার মেয়ে তো তুই নস,কি হয়েছে বল??”

ইশা জানে ওর মা ওর মনের কথা বুঝতে পারে,তাই সব কিছু লুকানোর জন্য বলে,

“না না কিছু হয়নি,, আচ্ছা তুমি পাঁচ মিনিট দাড়াও আমি রেডি হয়ে আসছি। আজকে আমরা একসাথে যাব”

ইশা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ইশার আম্মু চিন্তিত মুখে ইশার দিকে তাকিয়ে থাকে।

রিক্সা থেকে নেমে ইশার আম্মু ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“সাবধানে যাবি”

ইশা কিছু বলে না একটু হেসে মাথা নাড়ে। বাসা থেকে ইশার আম্মুর স্কুল আর ইশার ভার্সিটি একই পথে কিন্তু ইশার আম্মুর স্কুল একটু কাছে আর ইশার ভার্সিটি আরো পরে।
ইশা রিক্সা থেকে নেমে ভার্সিটি ভেতর গিয়ে এদিক ওদিক তাকায় কিন্তু আরিয়ানকে দেখতে পায়না। ও ক্লাসের দিকে এগোয়।
ইশা করিডোর দিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ কিসে যেন হোঁচট খেয়ে পড়ে যায় তাকিয়ে দেখে আরিয়ান একটা পা বাড়িয়ে রেখেছে এবং ইশা আরিয়ানের পায়ে পা লেগে পড়েছে। ইশা হাঁটুতে খুব ব্যথা পায়। আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা ওঠে জামা ঝাড়তে ঝাড়তে বলে,

“কি সমস্যা এভাবে ফেলে দিলেন কেন?”

আরিয়ান কিছু বলে না।ইশা আরিয়ানের কাছে গিয়ে বলে,

“কি হল কথা বলছেন না কেন?”

আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

“আমি আমার পা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে রাখবো তুমি দেখে হাঁটতে পারো না?”

এটা শুনে ইশার রাগ উঠে যায়। ইশা রেগে বলে,

“আপনি ইচ্ছে করে আমার যাওয়ার পথে পা বাড়িয়েছেন যেন আমি পড়ে যাই”

“হুমম…তো??”

“আমাকে ফেলে দিলেন কেন?”

“ইচ্ছে করছে তাই”

ইশা এবার অনেক রেগে যায়।মানে কি?ইচ্ছে করেছে তাই ওকে ফেলে দিয়েছে।এটা কি মামার বাড়ির আবদার নাকি!ইশা বলে,

“কি সমস্যা আপনার? এইভাবে পেছনে পড়ে আছেন কেন? আমাকে কষ্ট না দিল আপনার ভালো লাগে না তাই না..?”

আরিয়ান অবাক হয়ে বলে,

“কষ্ট?? তোমাকে আমি কখন কষ্ট দিলাম?”

হঠাৎ ইশার আরিয়ান আর জারার কথা মনে পড়ে যায় ও নিজেকে সামলে বলেই,

“তো এখন ফেলে দিয়ে কষ্ট দিলেন না?”

আরিয়ান ন্যাকামো করে বলে, “ওমা তুমি কষ্ট পেয়েছো? সরি সরি”

ইশার আরিয়ানের সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না তাই ও চলে যেতে নে তখন আরিয়ান ইশার হাত ধরে। ইশা একবার হাতের দিকে আর।একবার আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,

“কি সমস্যা? হাত ধরেছেন কেন? ”

আরিয়ান কিছু না বলে একটা ফাঁকা নিয়ে ইশাকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে বলে,

“এই তোমার মনে কি কোন ফিলিংস নাই? কালকে আমি জারার এতো কাছে ছিলাম তুমি কোন রিয়্যাক্ট করলে না কেন? তুমি কি জেলাসী ফিল করো না?”

ইশা আমতা আমতা করে বলে,
“আ আমি কেনো জেলাসী ফিল করবো, ছাড়ুন আমাকে”

ইশা আরিয়ানের হাত সরিয়ে সে চলে যেতে নে তখন আরিয়ান বলে,

“তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো না?”

আরিয়ানের কথা ইশা থমকে দাঁড়ায়। আরিয়ান ইশার কাছে এসে ওর গালে হাত দিয়ে চোখে চোখ রেখে বলে,

“বলো তুমি আমায় ভালোবাসো না?”

ইশার চোখে পানি টলটল করছে। ইশা নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।আরিয়ান কাছে ও সবসময় নরম হয়ে যায়। আরিয়ান হঠাৎ ইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,

“ইশা আমাকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ কেন? আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবাসি. কালকে তো তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য জারার এত কাছে ছিলাম। প্লিজ আমায় বোঝো,,খুব ভালোবাসি তোমায়”

আরিয়ানের জড়িয়ে ধরায় ইশার সারা শরীর কেঁপে ওঠে।ইশা নিজেকে সামলাতে পারছেনা।কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইশাও আরিয়ানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। ইশা আরিয়ান কে জড়িয়ে ধরায় আরিয়ান একটু অবাক হয় কিন্তু পরে ও আবার ইশাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
ইশা কান্না করছে, আরিয়ান ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

“কাঁদছো কেনো?”

ইশা কিছু বলে না আরিয়ানের বুকে মুখ গুঁজে কান্না করতে থাকে। আরিয়ান একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে বলে,

“তুমি আমাকে ভালোবাসো না?”

ইশা আরিয়ানের বুক থেকে মুখ তুলে আরিয়ানের বুকে দুই তিনটা কিল দিয়ে বলে,

“না না আমি আপনাকে ভালোবাসি না।আপনি খুব খারাপ আমাকে শুধু কষ্ট দেন”

এবার আরিয়ান জোরে হেসে দে। তারপর ইশাকে আবার জড়িয়ে ধরে বলে,

“তুমি আমাকে ভালোবাসো ইশা স্বীকার করে নাও”

ইশা কিছু বলে না চুপ করে আরিয়ানের বুঁকে মুখ গুঁজে দাঁড়িয়ে থাকে..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here