মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :১৭
পরদিন ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দ্যেশে ইশা বাসার নিচে আসে।এখান থেকে রিকশায় করে ভার্সিটি যাবে।একটু দূরে তাকিয়ে ইশা অনেক অবাক হয় কারণ ওখানে আরিয়ানের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।ইশার ভাবনার মাঝেই ওর ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে, ইশা আরিয়ানের গাড়ির দিকে তাকিয়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরিয়ান কল করেছে। ইশা অবাক হয়ে কল রিসিভ করে।
তখন আরিয়ান বলে, “গাড়িতে এসো”
ইশা আনমনে আরিয়ানের গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। ইশা গাড়ির কাছে গেলে আরিয়ান গাড়ির দরজা খুলে দে।ইশা আরিয়ানের পাশে বসে পড়ে। আরিয়ান মিষ্টি হেসে বলে,,
“তুমি তোমার বাবা মাকে খুব ভয় পাও ওরা যদি দেখে ফেলে তাই একটু দূরে গাড়ি পার্ক করেছি”
তারপর আরিয়ান ইশার সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে, “কেমন আছো?”
ইশা মুচকি হেসে বলে, ” হুম ভালো আপনি?”
“ভালো না”
ইশা অবাক হয়ে বলে, ” কেন?”
আরিয়ান আফসোস করে বলে, ” কেনো আবার!আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে কিন্তু ওকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার টাইম নেই।ওর শুধু ক্লাস আর ক্লাস ”
ইশা এবার জোরে হেসে দেয় তারপর বলে, ”
“আমি ভার্সিটিতে যাই পড়াশোনা করার জন্যই তো,ক্লাস করবো না?”
আরিয়ান বলে, “ওকে ওকে আমার বলা ই ভুল হয়েছে। তুমি ক্লাস করো।যে দিন বন্ধ থাকবে সেদিন আমরা ঘুরতে যাব। ওকে?”
ইশা হেসে আরিয়ানের মাথার চুলগুলোতে হাত বুলিয়ে বলে, ” এইতো গুড বয়..এবার চলেন”
তারপর আরিয়ান গাড়ি স্টার্ট দেয় আর ইশা আরিয়ানের সাথে কথা বলতে থাকে।
ভার্সিটির গেটের সামনে এসে আরিয়ান বলে,
” তুমি ভেতরে যাও আমি গাড়ি পার্ক করে আসছি”
ইশা মাথা নেড়ে বেরিয়ে পড়ে।ইশা হাঁটছে, তখন সামনে কয়েকটা মেয়ে এসে দাঁড়ায়। ইশা মাথা তুলে দেখে জারা আর ওর সাথে আরো কয়েকটা মেয়ে।ইশা ওদের সাইড দিয়ে চলে যেতে নে কিন্তু জারা হাত দিয়ে ইশার পথ আটকায়। ইশা অবাক হয়ে বলে,
“কি হয়েছে পথ আটকাচ্ছেন কেন? ”
জারা বলে,, “তুমি কালকে আরিয়ানের সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলে?”
ইশা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলা, “হুম গিয়েছিলাম”
জারা রেগে বলে, “তোমার সাহস কি করে হয় আরিয়ানের সাথে ঘুরার, আরিয়ানের সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার!বড়লোক ছেলে দেখলেই গলায় ঝুলে পড়তে চাও?”
ইশার রেগে বলে, “মুখ সামলে কথা বলুন আপু, না জেনে না বুঝে উল্টাপাল্টা কথা বলবেন না”
জারা এবার আরো রেগে যায় তারপর বলে,,
“তুমি আমাকে ধমক দিচ্ছো? আমাকে?তোমাদের মতো মিডেল ক্লাস ফ্যামিলির মেয়েরা কেমন আমি জানি। যেই দেখেছো আরিয়ান একটু টাইম দে,তো গলায় ঝুলে পড়ার ধান্দা”
ইশা আর কিছু বলে না চুপ করে থাকে। ঠিকই তো ইশা কি বলবে!জারা তো ঠিকই বলেছে আরিয়ান কোথায় আর ও কোথায়! আরিয়ান কত বড়লোকের ছেলে আর ও!!
ইশা মনে মনে ভাবে “আমি কি আরিয়ানের যোগ্য?”
তখন জারা আবার বলে, “কত টাকা চাই তোমার? আমাকে বলো আমি দেবো, আরিয়ানে থেকে সরে যাও”
“মানে কি? আপনি আমাকে টাকা দিবেন কেনো? ”
“তোমাদের মত মেয়েরা তো টাকার জন্যই বড়লোকের ছেলেদের পেছনে পড়ে থাকো!”
ইশা রেগে বলে, “আমি টাকার জন্য ওনার পিছনে পড়ে নেই”
“তাহলে ওর সাথে কেন ঘুরাঘুরি করো? কেন ওর সাথে রেস্টুরেন্টে যাও?বলো..”
তখন রাইমা পেছন থেকে এসে জারার প্রশ্নের উত্তর দেয়।ও বলে,
“কারণ ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে”
জারা অবাক হয়ে রাইমার দিকে তাকায় তারপর তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
” কি..!আরিয়ান ইশাকে ভালোবাসে? এরোকম আনস্মার্ট মেয়েটাকে আরিয়ান ভালোবাসে?সো ফানি”
বলেই জারা সহ ওর সাথে সবাই হেসে দে। ইশার চোখে পানি ছলছল করছে তবু ও নিজেকে শক্ত রাখে। রাইমা এসে বলে,,
“কেনো? ভালবাসতে পারে না? ”
জারা কোনমতে হাসি থামিয়ে বলে, ” না পারে না! তোমরা আরিয়ান কে চেনো না। আরিয়ান ভালবাসবে ওকে?”
তারপর ইশার দিকে তাকিয়ে বলে, ” এই মেয়ে যদি নিজের ভাল চাও তাহলে আরিয়ানের থেকে দূরে থাকো”
বলে জারাসহ ওর সাথের মেয়েগুলো হেলতে-দুলতে চলে যায়। রাইমা ইশাকে বলে,
“তুই ওদেরকে কিছু বললি না কেন?”
“আমি কি বলবো?
রাইমা একটু রেগে বলে, ” কি বলবি মানে? আরিয়ান ভাইয়া আর তুই, দুজন দুজনকে ভালোবাসোস সেটা বলতে পারোস না?”
ইশা চোখ মুছে বলে, “জারা আপু তো উনার ফ্রেন্ড উনি যখন নিজের ফ্রেন্ডদের বলেনি তো আমি কি বলবো?”
রাইমা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলে, “জারা আপু!ওকে আপু বলার কি আছে?”
ইশা স্বাভাবিক ভাবে বলে, “ওনি তো আমার বড়”
রাইমার কিছু বলে না ইশার হাতে ধরে বলে, ” ক্লাসে চল”
তিনটা ক্লাস করার পর রাইমা আর ইশা ক্যান্টিনে বসে আছে। ইশার আজকে কোনো ক্লাসে মন বসে নি। রাইমা খাচ্ছে আর ইশা চুপচাপ বসে আছে। রাইমা ইশাকে বলে,
“কিরে খাচ্ছিস না কেন?”
“ভালো লাগছে না ”
তখন আরিয়ান এসে ইশার পাশে বসে। আরিয়ান আসাতেও ইশার কোনো পরিবর্তন হয়না।ও এক ধ্যানে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরিয়ান রাইমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে,
“ইশার কি হয়েছে! ”
রাইমা ভাবে এটাই সময় এখনই যা বলার বলতে হবে। তাই ও বলে,
“আজকে জারা আপু আর উনার ফ্রেন্ডরা ইশাকে অপমান করেছে”
এটা শুনে ইশা চমকে ওঠে রাইমার দিকে তাকায়।আর আরিয়ান অবাক হয়ে রাইমার দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা তাড়াতাড়ি করে রাইমাকে ধমকের সুরে বলে,
“রাইমা সব কথা তোকে বলতে হবে? চুপ কর ”
আরিয়ান বলে, “না না ও চুপ করবে কেন?রাইমা কি হয়েছে আমাকে বলো”
রাইমা সুযোগ পেয়ে আরিয়ানকে সব বলে দেয়। ইশা বার বার রাইমাকে থামাবার চেষ্টা করে কিন্তু রাইমা আরিয়ানকে সব বলে দেয়।
সব শুনে আরিয়ান খুব রেগে যায়। ইশাদের ক্লাসের সময় হলে ইশা ঘড়ি দেখে তাড়াতাড়ি করে ওঠে রাইমার হাত ধরে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমাদের ক্লাসের সময় হয়ে গেছে আমরা যাচ্ছি”
বলে রাইমাকে টেনে নিয়ে যায়। ক্লাসে এসে রাইমাকে বলে,
“তুই ওনাকে সব কথা বললি কেন?”
রাইমা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“বাহ রে! বলবো না? তোকে এত কিছু বলল আর আমি কিছু বলব না?”
ইশা বিরক্তি নিয়ে বলে, “একটা ঝামেলা না করলে তোর হয় না,না?”
রাইমা মিটিমিটি হাসছে।
.
ক্লাসে শেষে রাইমা আর ইশা ভার্সিটি থেকে বেরোবে এমন সময় আরিয়ানের ডাকে থেমে যায়। ইশা পেছন ফিরে দেখে আরিয়ান,ওর সাথে জারা আর সকালের মেয়েগুলোও আছে।
আরিয়ান ডাকলে রাইমা ইশার হাত ধরে বলে,
“চল চল,, আরিয়ান ভাইয়া ডাকছে”
রাইমা ইশাকে টেনে নিয়ে যায়।ইশা আর রাইমা আরিয়ানের কাছে গেলে আরিয়ান জারাকে বলে,
“সকালে তুই ওদের কি বলেছিস?”
জারা অবাক হয়ে বলে, ” কই কিছু বলেনিতো”
রাইমা জারার চেয়ে দ্বিগুণ অবাক হয়ে বলে,
“সকাল ইশাকে এত কিছু বলে এখন আরিয়ান ভাইয়ায় সামনে মিথ্যা কথা বলছেন?”
আরিয়ান বলে, ” তুই ইশাকে আমার সাথে চলাফেরা করতে বারণ করেছিস? তুই বারণ করার কে?”
জারা ন্যাকামো করে বলে, “আরিয়ান বেবি বিশ্বাস করো আমি কিছু বলিনি ওদের ”
আরিয়ান রাইমার দিকে তাকালে রাইমা বলে,
“জারা আপু মিথ্যে বলছে আরিয়ান ভাইয়া ওনি ইশাকে অনেক কিছু বলেছে”
তখন জারা আরিয়ানকে বলে, “আমি ইশাকে বলেছি কেনো ও তোমার সাথে রেস্টুরেন্টে যায়?”
আরিয়ান রেগে বলে, “আমার সাথে কে রেস্টুরেন্টে যাবে,কে যাবে না..সেটা তুই বলার কে!”
আরিয়ান রেগে যাওয়ায় জারা একটু ভয় পেয়ে যায়
কারণ আরিয়ানের রাগ সম্পর্কে ও জানে। রেগে গেলে আরিয়ান ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। তাই জারা আর কিছু বলেনা। আরিয়ান বলে,
“ইশাকে আর কখনো কিছু বলবি না”
জারা বলে, “কেনো বলবো না?ও কেনো তোমার সাথে রেস্টুরেন্ট এ যাবে?”
“কারণ আমিই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম।আমি যেনো আর না শুনি যে তুই ইশাকে অপমান করেছিস।মাইন্ড ইট”
জারা হাত মুঠো করে চোখ কটমট করে ইশার দিকে তাকায়। আরিয়ান ইশার হাত ধরে বলে, ” চলো”
তারপর আরিয়ান।ইশাকে নিয়ে ওর গাড়িতে বসায় আর আরিয়ান ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দে।জারার আর ওর বন্ধুরা রেগে গিয়ে ওখান থেকে চলে যায়।
রাইমা একবার জারাদের দিকে আরেকবার আরিয়ানের গাড়ির দিকে তাকায়। ওকে একা ফেলে সবাই চলে গেল। ওর ইচ্ছা করছে এখানে বসে হাত পা ছেড়ে কান্না করতে!
তখন পেছন থেকে রিহান বলে,
“এভাবে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
রাইমা আরিয়ানের দিকে ফিরে।তারপর বলে,
“কই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছি?আমি যাচ্ছি তো”
রিহান মাথা চুলকে বলে,
“তোমার যদি কোন অসুবিধা না হয় আমি তোমাকে ড্রপ করে দিতে পারি”
রাইমার কি যেন ভেবে রাজি হয়ে যায়। রিহানের বাইকে উঠল ওর অন্য রকম অনুভুতি হয় রাইমা বারবার সে অনুভুতির সাথে পরিচিত হতে চায়..!
রিহান মুচকি হাসে।
চলবে…