মনের কিনারে তুই পর্ব : ১৮

0
2535

মনের কিনারে তুই
লেখিকা : Tarin niti
পর্ব :১৮

ইশা সকাল থেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটার পর একটা ড্রেস চেঞ্জ করছে। ও বুঝতে পারছে না কোনটাতে ওকে বেশি সুন্দর লাগছে। কোনটা পড়লে বেশি ভালো লাগবে!কোন চুলের স্টাইল করলে বেশী ভালো লাগবে ইশা শুধু এগুলোই ভাবছে।আজকে ও নিজেকে স্পেশাল ভাবে তৈরি করবে কারণ আজকে ইশা আরিয়ানের সাথে ঘুরতে যাবে।
আজকে শনিবার তাই ভার্সিটি বন্ধ আর ওদের রিলেশনের পর কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়নি তাই আরিয়ানের জোরাজুরিতে ইশা একপ্রকার বাধ্য হয়ে রাজি হয় ঘুরতে যাওয়ার জন্য।
ইশা বাবা-মাকে মিথ্যে কথা বলে।ইশা বলে ও রাইমার সাথে ঘুরতে যাবে। ইশা কোথায় যায় না,ওদের খুব একটা আত্মীয়-স্বজন নেই তাই ইশার বাবা মা রাজি হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ঘুরতে গেলে মন ভালো থাকে। আর ফ্রেন্ডের সাথে গেলে তো কথাই নেই!কিন্তু ইশা যাবে বয়ফ্রেন্ডের সাথে!!
ইশা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একটা ড্রেস দেখছে তখন ইশার আম্মু এসে বলে,

“ইশা তুই এখনো এগুলো নিয়ে পড়ে আছিস? নাস্তা করবি না? ”

“হ্যাঁ করবো তো..আজকে কোনটা পরে যাব সেটা দেখছিলাম”

“সেটা তো তুই এক ঘন্টা ধরে দেখছিস! কখনো তো কোথাও যাওয়ার আগে এতবার ড্রেস দেখতি না,আজকে কি হয়েছে?”

ইশা তাড়াতাড়ি করে বলে, ” না না কিছু না।আমাকে রাইমার থেকে বেশি সুন্দর দেখতে হবে তো তাইনা?”

ইশার আম্মু মুচকি হেসে বলে, “বান্ধবীর সাথে কম্পিটিশন?”

ইশা মুচকি হেসে মাথা নাড়ে। ইশার আম্মু বলে,
“তাড়াতাড়ি নাস্তা করবি আয়”

তারপর ওনি চলে যায়।মা চলে যাওয়ার পর ইশা আরিয়ানকে কল করে।আরিয়ান তখনো ঘুমে! ইশার ফোনের আওয়াজে ঘুম ভাঙ্গে।চোখ বন্ধ করে বালিশের পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরে ঘুমো ঘুমো কন্ঠে বলে, ” হ্যালো!”

ইশার বুকটা ধক করে ওঠে। আরিয়ানের ঘুমো ঘুমো কণ্ঠস্বর এত মোহনীয়!ইশা শুনেছে মেয়েদের ঘুমো ঘুমো কন্ঠ নাকি সুন্দর হয়। ছেলেদের এত সুন্দর হয় সেটা জানা ছিলনা! ইশা বলে,

“এখনো ঘুমাচ্ছেন?”

আরিয়ান কান থেকে ফোনটা সামনে এনে দেখে ইশার নাম্বার তারপর মুচকি হেসে ফোন কানে ধরে বলে, “হুমম”

ইশা একটু রাগ দেখিয়ে বলে, “এখনও কিসের ঘুম?তাড়াতাড়ি ওঠেন”

আরিয়ান ঘড়ি দেখে বলে, ” মাত্র 10 টা বাজে!”

” দশটা আপনার কাছে মাত্র মনে হয়?”

আরিয়ান কিছু বলে না শুধু হাসে। ওর পাগলিটা আজকে রেগে গেছে তাই ইশাকে শান্ত করার জন্য বলে,
“আচ্ছা উঠছি উঠছি.. তা আমাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য ফোন দিয়েছো নাকি অন্য কোন কারণে?”

ইশা কিছুক্ষণ চুপ থাকে তারপর বলে, ” আপনার প্রিয় রং কি?”

আরিয়ান অবাক হয়ে গেলে, “কেন,হঠাৎ এই প্রশ্ন?”

ইশা বলে, ” আরে বলেন না”

আরিয়ান বলে, “কালো”

“আমি জানতাম এটাই হবে। যার কালো গোলাপ পছন্দ তার প্রিয় রং তো কালো হবেই”

আরিয়ান জোরে হেসে দে। ইসা বলে, “আচ্ছা রাখছি এগারোটা বাজে দেখা হবে বাই”
তারপর আরিয়ানকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কল কেটে দে।

নাস্তা করে রুমে এসে ইশা একটা কালো রঙের থ্রি পিস পরে,সাথে সাদা প্লাজো সাদা ওড়না।চুলগুলো সামনে দিয়ে একটু স্টাইল করে ছেড়ে দেওয়া।
মুখে একটু মেকআপ,লিপস্টিক, চোখে কাজল আর হাতে ঝুমকোওলা সাদা চুরি আরেক হাতে একটা ঘড়ি।পায়ে একটা পায়েল পড়ে একদম রেডি হয়ে যায়।ইশা বারবার আয়নায় নিজেকে দেখছে ওর কেন জানি মনে হচ্ছে ওকে সুন্দর লাগছে না!

ইশা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে।ড্রইংরুমে ইশার মা,বাবা বসে ছিল।ইশা ওর বাবা-মার কাছে গিয়ে বলে,

“আব্বু আমাকে কেমন লাগছে?”

ইশার বাবা অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে,

“মাশাল্লাহ খুব সুন্দর লাগছে আমার মা টাকে”

“সত্যিতো?নাকি আমাকে খুশি করার জন্যে বলছো?”

ইশার বাবা হেসে বলে, ” না না সত্যি তোকে খুব সুন্দর লাগছে। তাই না ইশার আম্মু?”

ইশার আম্মু একবার ইশার দিকে তাকিয়ে টিভি দেখায় মন দে। ইশা কে সত্যিই আজকে অনেক সুন্দর লাগছে। তাই উনি বেশিক্ষণ তাকায় না মায়েদের নজর নাকি লাগে বেশি!ইশার আম্মু টিভির দিকে তাকিয়ে বলে,

“হ্যাঁ সুন্দর লাগছে”

ইশা খুশি হয়ে বলে, ” আচ্ছা তাহলে আমি আসছি”

ইশার বাবা বলে, “সাবধানে যাবি”

ইশা নিচে আসে।এখন 11 টা 05 বাজে, আরিয়ানের এগারোটায় আসার কথা। ইশা দাঁড়িয়ে আছে তখন আরিয়ান গাড়ি নিয়ে এসে ইশার সামনে গাড়ি থামিয়ে,গাড়ি থেকে নেমে কানে হাত দিয়ে বলে,

“সরি সরি সরি লেট হয়ে গেল”

ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলে, “কয় মিনিট লেইট হয়েছে জানেন?”

আরিয়ান অসহায় মুখ করে বলে,
” হু..পাঁচ মিনিট। প্লিজ সরি”

আরিয়ান ইনোসেন্ট মুখ দেখে ইশা রাগ করে থাকতে পারে না।একটু হেসে বলে, ” চলুন”

ইশা গাড়িতে উঠে আরিয়ানের দিকে তাকায়।আজকে আরিয়ান সাদা টি-শার্টের উপরে কালো শার্ট পরেছে সাথে কালো প্যান্ট।
ইশা অবাক হয় নিজের দিকে তাকায়। ইশাও আজকে সাদা,কালো রঙের ড্রেস পড়েছে আর আরিয়ান ও!
ইসাকে তাকাতে দেকে আরিয়ান বলে,

“অবাক হচ্ছো কেন?”

“আমাদের দুজনের মিলে গেল কি করে?”

“আমি জানতাম তুমি আজকে কালো পরবে,, শুধু শুধু তো আর আমার প্রিয় রঙ জিজ্ঞেস করবে না।তাই আমিও কালো পারলাম”

ইশা আর কিছু না বলে মুচকি হেসে বাহিরের দিকে তাকায়।

আরিয়ার আর ইশা একটা পার্কে যায়।পার্কটা নতুন হয়েছে, অনেক সুন্দর!ইশা পার্কের ভেতরে ঢুকে একটু ভয় পেয়ে যায় কারণ চারদিকে অনেক বড় বড় ডাইনোসর!!এগুলো সত্যিকারে ডাইনোসর না,ডাইনোসরের মূর্তি তবে এগুলো যন্ত্রের সাহায্যে মাথা নাড়ছে লেজ নাড়াচ্ছে এসব দেখে ইশা একটু ভয় পেয়ে যায়।আরিয়ান বলে,

“আরে ভয় পেলে নাকি?”

ইশা আরিয়ানের হা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বলে, ” হু ”

আরিয়ান এবার জোরে হেসে।তারপর বলে, “বাচ্চার এগুলো দেখে মজা পায় আর তুমি এত বড় মেয়ে ভয় পাচ্ছো!”

ইশা ইনোসেন্ট মুখ করে বলে, ” আমি জানিতো এগুলো নকল কিন্তু এত বড় বড় গুলো তাই ভয় লাগছে”

আরিয়ান এসে ইশার হাত ধরে বলে, “চলো তোমার ভয় কাটিয়ে দি”

তারপর ইশাকে একটা ডাইনোসরের কাছে নিয়ে যায়।ইশা আরিয়ানের শার্ট খামচি দিয়ে ধরে রাখে। আরিয়ান ইশার হাত ধরে ডাইনোসরের কাছে নিয়ে গেলে ইশা চোখমুখ কুঁচকে ফেলে। আরিয়ান ইশা রিয়াকশন দেখে হাসছে। তারপর আরিয়ান বলে,

“তুমি ডাইনোসরের সাথে দাঁড়াও আমি কিছু ছবি তুলি”

ইশার ভয় কিছুটা চলে যায় তাই ও হাসিমুখ করে দাঁড়ায় আর আরিয়ান ডায়নাসরের সাথে ইশার ছবি তোলে। আরিয়ানও ইশার সাথে নিজের ছবি তুলে।

তারপর ওরা অনেক নাগরদোলায় ওঠে ইশা খুব ভয় পেয়ে যায়। কারণ এটা অনেক উঁচুতে! ইশা আরিয়ানের সাথে একদম লেগে বসে থাকে আরিয়ান ইশাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে। আরিয়ানের এভাবে জড়িয়ে ধরাতে ইশার খুব ভালো লাগে।আরিয়ান ওকে এতো কেয়ার করে!

পার্কে আরো অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ওরা দুপুরে খাওয়ার জন্য একটা রেস্টুরেন্টে যায়। সেখানে ইশার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার দেয় আরিয়ান ইশা কে বলে,

“খাইয়ে দাও না”

ইশা অবাক হয়ে চারদিকে তাকায়।আরিয়ান বিরক্তি সুরে বলে,
“কি হলো দাও”

ইশা অনেক অস্বস্তি নিয়ে আরিয়ানের মুখে খাবার তুলে দেয়। আরিয়ান ইশা দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আর খাচ্ছে। কিছুক্ষণ খাওয়ানোর পর আরিয়ান বলে,

“হয়েছে এভাবে খেলে আজকের খাবার শেষ হবে না! তুমি খাও, আমাকে আর খাওয়াতে হবেনা”

ইশা মুচকি হেসে খাওয়ায় মন দে।খাওয়া শেষে ওরা আরো ঘুরাঘুরি করে।

এখন বিকেল,,
আরিয়ান আর ইশা মেলার মতো একটা জায়গায় আছে। ওখানে বাচ্চাদের অনেক জিনিসপত্র মেয়েদের কসমেটিকের জিনিস।ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দের পোশাকও আছে।ইশা চোখ বড় বড় করে চারদিক দেখছে।
ইশার সেভাবে কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয়না! বাবা অসুস্থ আর মা সব সময় বিজি থাকে। নিজে নিজে ঘুরা ইশার ভালো লাগেনা তাই আরিয়ানের সাথে আসতে পেরে আজকে অনেক খুশি!
ইশা একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কানের দুল দেখছে। সাদার উপরে লাল পাথরের কানের দুল। অনেক সুন্দর! আরিয়ান বলে,

“পছন্দ হয়েছে?”

ইশা হেসে বলে, “হুমম… অনেক”

আরিয়ান দোকানদারকে বলে, “এটা প্যাক করে দিন”

দোকানদার প্যাক করে দিল ইশা টাকা দিতে নিলে আরিয়ান বলে,
“তুমি কেন টাকা দিচ্ছো?”

ইশা বলে, ” এটাতো আমার,আমি টাকা দিবো না?”

“তোমার হলে কি হয়েছে?আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড আমি টাকা দেবো”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু নয়, আজকে আমি তোমাকে ঘুরতে নিয়ে এসেছি যা খরচ হবে সব আমি দেবো”

ইশা আর কিছু বলে না,ও জানে আরিয়ানকে কিছু বলে লাভ নেই!

মেলাতে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরির পর হঠাৎ ইশার একটা দোকানে চোখ যায়।সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর ব্রেসলেট! চিকন ফিতা মধ্যে ইংরেজি অক্ষর লেখা।
ইশা আরিয়ানকে নিয়ে সেদিকে যায়। তারপর ইশার আর আরিয়ানের নামের অক্ষরের ব্রেসলেট খুঁজে।একসময় পেয়েও যায়,ইশার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ইশা “আই” লেখা বেশ ব্রেসলেটটা আরিয়ানের হাতে পরিয়ে দেয়। আর “এ” লেখা ব্রেসলেটটা নিজের হাতে পড়ে।
তারপর দুটো হাত একসাথে করে বলে, ” সুন্দর না?”

আরিয়ান মুচকি হেসে বলে, “হুম”
ওদের দুজনের হাতে দুইজনের নামের অক্ষর এর ব্রেসলেট!

আরো অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আরিয়ান সন্ধ্যার আগে ইশাকে বাসায় ড্রপ করে দে।ইশা খুশি মনে বাসায় আসে, আজকে ও অনেক অনেক অনেক খুশি।আজকের দিনটা ইশা কখনো ভুলবে না!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here