মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :২০
ভোর পাঁচটা,,
ইশা ছাদে দাঁড়িয়ে আছে।সকালে ঘুম থেকে উঠে ফজর নামাজ পড়ে ছাদে চলে আসে।ইশা একদৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। মাঝে মাঝে কিছু পাখি উড়ে যাচ্ছে। কিছু পাখি একলা কিছু আবার দল বেঁধে যাচ্ছে।
ছাদে এখন কেউ নেই। ইশা আকাশ থেকে চোখ সরিয়ে বেলিফুল গাছটার কাছে চায়। আজকে অনেকগুলো ফুল ফুটেছে। ইশার চোখ মুখ খুশিতে ঝলমল করে উঠে। ও হাত দিয়ে ফুলগুলো ছুঁয়ে দে।তারপর একটা ফুল নিয়ে কানে গুঁজে খিলখিল করে হেসে ওঠে।
ইশার হঠাৎ আরিয়ানের কথা মনে পড়ে।আচ্ছা আরিয়ান ওকে কানে ফুল গুঁজা অবস্থা দেখলে কি বলতো!ইশা মুচকি মুচকি হাসে,ওদের রিলেশনের এক মাস হয়ে গিয়েছে! আরিয়ান ওকে খুব ভালোবাসে,, অনেক কেয়ার করে। ইশাও আরিয়ানের প্রতি খুব দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ইশা ওর বাবা-মা কে সব কিছু শেয়ার করে কিন্তু এখনো এই কথাটা বলতে পারেনি।
ইশা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই দিনের কথা ভাবছে। ঐদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার পর, ইশা ক্লাসে গিয়ে দেখে রাইমা একা একা বসে আনমনে কি যেন ভাবছে!ইশা কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রাইমার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর রাইমার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে,
“ওই কি এতো ভাবছি তুই? ”
ইশার ধাকা রাইমার হুঁশ আসে।রাইমা ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
” কখন এলি? ”
ইশা কোমরে হাত দিয়ে বলে, ” অনেকক্ষণ..!তুই কি ভাবছিস?”
” না না কিছু না”
ইশা কিছুক্ষণ রাইমার দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছু তো একটা হয়েছে।ইশা বলে,
“কালকে ভার্সিটিতে আসলিনা কেন?”
রাইমা হাত কচলে বলে, ” আসলে…”
“কি?তাড়াতাড়ি বল”
“কালকে রিয়ান ভাইয়া আমাকে একটা পার্কে নিয়ে গিয়েছিল”
ইশা অবাক হয়ে বলে, “রিহান ভাইয়া?তুই ওনার সাথে ঘুরতে গিয়েছিলি??”
“না না ঘুরতে যাই নি,, উনি কি জানি বলবে বলছিল
তাই গিয়েছিলাম ওনার সাথে!”
ইশা চোখ ছোট ছোট করে বলে, ” কি বললো?”
রাইমা একটু এদিক-ওদিক তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ পর বলে, “উনি আমাকে প্রপোজ করেছে”
ইশা খুশি হয়ে বলে, “কিহ..! সত্যিই?”
রাইমা মাথা নীচু করে বলে, ” হ্যাঁ”
তারপর রিহানের সাথে পার্কে যাওয়া,রিহানের প্রপোজ করার সব বলে ইশাকে।
সব শুনে ইশা বলে, “তুই কি বললি?”
“আমি একটু সময় চেয়েছি”
” ডাফার,, এখানে সময়ের কি হলো!তুই আজকেই।বলবি তুই রাজি”
“না না প্লিজ এরকম করিস না ”
ইশা রাইমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে, “তুই রিহান ভাইয়াকে ভালোবাসিস?”
রাইমা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে, “জানিনা”
ইশা রাইমার থুতনিতে হাত দিয়ে বলে,
“আমার মুখের দিকে তাকা, আমার দিকে তাকিয়ে বল ওনাকে ভালোবাসিস না?”
রাইমা কিছু বলে না,ও ইশার থেকে মুখ ফিরিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
ইশা নিজের কাঁধ দিয়ে রাইমার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,
“বুঝতে পেরেছি”
তারপর জোরে হেসে উঠে।
আসলে রাইমার রিহানের প্রতি দুর্বলতা আছে। রিহান যখন ওকে ভালোবাসে বলেছে রাইমা মানা করতে পারে না কারণ রাইমাও তো রিহানকে ভালোবাসে!
কিছুদিন পর রাইমা রিলেশনের জন্য রাজি হয়ে যায়। রিহান প্রথমে খুব অবাক হয়,রাইমা এতো তাড়াতাড়ি রাজি হবে ও ভাবতে পারেনি।রাইমা রিহানকে ভালোবাসে শুনে রিহান রিহান ইশার সামনে রাইমাকে জড়িয়ে ধরে।পরে আবার নিজেই লজ্জায় পড়ে! ওদের কথা ভেবে ইশা হেসে দে..
একটু পর সূর্যোদয় হলে ইশা নিচে চলে আসে। এসে দেখে কিচেনে ওর মা নাস্তা বানাচ্ছে। ইশা কিচেনে গেলে ইশার মা ওর হাতে একটা চায়ের কাপ দিয়ে বলে,
“ইশা তোর বাবাকে এটা দিয়ে”
ইশা মিষ্টি হাসে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাবা মায়ের রুমে দিকে যায়।ওর বাবা হুইল চেয়ারে বসে বই পড়ছিলো। ইশা গিয়ে বলে,
“আব্বু তোমার চা”
ইশার বাবা একটু হেসে চায়ের কাপটা হাতে নে। তারপর ইশাকে বলে,
“আয় এখানে বস”
ইশা গিয়ে ওর বাবার পাশে বলে। তখন ইশার বাবা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“পড়াশোনা কেমন চলছে?”
“খুব ভালো আব্বু ”
“ভার্সিটিতে পরে আর কোন ঝামেলা হয়নি তো?”
এটা শুনে ইশা মুচকি হাসে,,যার সাথে ঝামেলা করার তার সাথে তো এখন প্রেম করছে! ইশা ওর বাবাকে বলে,
“না আর কোন ঝামেলা হয়নি। আচ্ছা আমি কিচেনে যাচ্ছি তুমি নাস্তা করবে এসো”
“হুম যা,আমি একটু পর আসছি”
তারপর ইশা উঠে ওর মায়ের কাছে রান্নাঘরে চলে যায়।
নাস্তা শেষে ইশা রেডি হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বের হয়। নিচে এসে দেখে আজকে আরিয়ান আসেনি। আরিয়ান মাঝে মাঝে আসে সব সময় না! তাই ইশা রিক্সা করে ভার্সিটি চলে যায়।
.
ভার্সিটিতে তিনটা ক্লাস করার পর ইশা রাইমাকে বলে,
“এই রাইমা আমার কিছু বই লাগবে চল লাইব্রেরী যাবো”
রাইমা মাথায় হাত দিয়ে বলে, “ইশা আমার না প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে, আমি যাবো না প্লিজ,তুই যা”
ইশা রাইমা আমার পাশে বসে রাইমার কাঁধে হাত দিয়ে রেখে বলে, ” খুব মাথা ব্যথা?তাহলে বাড়ি চলে যা”
রাইমা বলে, ” না না.. বাড়ি যেতে হবে না,একটু পর ঠিক হয়ে যাবে,, সরি আমি তোর সাথে যেতে পারবো না”
ইশা মিষ্টি হাসি বলে, ” আরে ধুর..সরি বলার কি আছে? আচ্ছা তুই এখানে থাক আমি যাচ্ছি”
তারপর ইশা লাইব্রেরীতে চলে যায়।
লাইব্রেরীতে ইশা বই খুঁজছে তখন কেউ ইশার কাঁধে হাত রাখে। হঠাৎ হাত রাখায় ইশা কেঁপে ওঠে। পেছন ফিরে দেখে আরিয়ান। ইশা বলে,
“উফ আপনি?আমিতো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম”
আরিয়ান পকেটে হাত রেখে বলে, “কেনো কাকে ভেবেছিলে?”
“না কাউকে না, এমনি হঠাৎ ধরলেন তো তাই..”
আরিয়ান ইশার হাতে ধরে লাইব্রারির দেয়ালের সাথে লাগিয়ে দুপাশে হাত দিয়ে রেখে বলে,
“কেমন আছো?”
ইশা শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। লাইব্রেরীর এ পাশটায় একটু নিরিবিলি।কেউ নেই বললেই চলে! তবু ইস আরিয়ানকে বলে,
“প্লিজ একটু দূরে যান কেউ দেখলে সমস্যা হবে”
আরিয়ান ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে, ” তো দেখলে কি হয়েছে? আমি কাউকে ভয় পাই না”
“আপনি পান না কিন্তু আমি পাই।প্লিজ… একটু দূরে যান”
আরিয়ান ইশার আরেকটু কাছে এসে বলে, ” যাবো না”
ইশা পড়েছে মহা মুশকিলে এই পাগলকে কে বুঝাবে!আরিয়ান ইশার সামনের চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিতে দিতে বলে, “রাগ করেছো?”
ইস অবাক হয়ে বলে, ” রাগ করবো কেন?”
“এই যে আজকে তোমাকে আনতে গেলাম না,তারপর ভার্সিটিতে আসার পরও দেখা করলাম না। তিনটা ক্লাস পর এতক্ষনে দেখা করলাম তাই”
ইশা হেসে আরিয়ানের চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বলে, ” না,, রাগ করবো কেনো? আপনি হয়তো বিজি ছিলেন”
আরিয়ান ইশার গালটা একটু টেনে বলে, “এই জন্যই তোমাকে এত ভালোবাসি,তুমি আমাকে বুঝতে পারো”
ইশা কিছু বলে না মুচকি হাসে। হঠাৎ আরিয়ান ইশার কোমর জড়িয়ে ধরে একদম নিজের সাথে সাথে মিশিয়ে নে। ইশা কেঁপে ওঠে আরিয়ানকে ধাক্কা দিতে দিতে বলে,
” কি করছেন ছাড়ুন!”
“না ছাড়বো না”
“প্লিজ ছাড়ো.. এরকম করো না প্লিজ। এই দেখো তোমাকে আমি তুমি করে বলছি,এবার ছাড়ো”
আরিয়ান ইশার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
“তোমার মুখে তুমি টা শুনে খুব ভালো লাগছে”
“হুম হুম আরো বলবো তুমি,,এবার একটু ছাড়ো প্লিজ। কেউ দেখলে সত্যিই প্রব্লেম হবে”
“আজকে তুমি আমাকে তুমি করে বললে তার জন্য একটা গিফট পাবে”
ইশা সন্দিহান চোখে বলে, “গিফট?কি গিফট??”
“সেটা তো দিলেই দেখবা”
ইশা চোখ ছোট ছোট করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।আরিয়ান ওকে কি গিফট দিবে!
হঠাৎ আরিয়ান কেমন যেন আরও নেশাতুর হয়ে যায়।ইশার কোমর ছেড়ে ইশাকে একদম দেয়ালের সাথে মিশিয়ে নিয়ে ইশার দু গালে হাত রেখে কিছুক্ষণ ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
ইশা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ানের চোখ ইশার ঠোঁটের দিকে।আরিয়ান আস্তে আস্তে নিজের মুখটা ইশার মুখের কাছে এগিয়ে নে।ইশা এতক্ষণ আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে ছিল কিন্তু আরিয়ান যখন প্রায় ওর ঠোঁটের কাছে চলে আসে তখনি ইশা আরিয়ানকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলে,
“কি করছেন!!!”
ইশার ধাক্কায় আরিয়ানের কোনো পরিবর্তন হয়না।আরিয়ান ওভাবেই দাঁড়িয়ে থেকে বলে,
“তোমাকে গিফট দিচ্ছি”
“না না আমার কোনো গিফট লাগবে না ”
ইশাকে থামিয়ে দিয়ে আরিয়ান বলে, “হুশশ..আর কোনো কথা না ”
আরিয়ান আবার ইশার দিকে এগিয়ে যায়।আরিয়ানের ঠোঁট যখন ইশার ঠোঁটের সাথে প্রায় ছুঁই ছুঁই তখনই ইশা আরিয়ানকে জোরে ধাক্কা দেয়। হঠাৎ এভাবে ধাক্কায় আরিয়ান তাল সামলাতে না পেরে একটু পিছনে চলে যায়।তারপর অবাক হয়ে ইশার দিকে তাকায়। ইশা আরিয়ানকে বলে,
” সরি সরি আমি এভাবে ধাক্কা দিতে চাইনি”
আরিয়ান রেগে বলে, “তো ধাক্কা দিলে কেনো?”
“আসলে এভাবে…!”
আরিয়ান ইশাকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ” কি এভাবে ভালো লাগছে না? তাহলে কিভাবে করবো?”
“না না আমি সেটা বলতে চাইনি, এত তাড়াতাড়ি এসব ঠিক না”
আরিয়ান রেগে বলে, “এসব বলতে তুমি কি বুঝাতে চাইছো?আমি কি তোমাকে বেডে যেতে বলেছি নাকি? জাস্ট একটা কিসই তো”
আরিয়ানের কথা শুনে ইশার কান গরম হয়ে যায়।ও চোখ বন্ধ করে ফেলে ওর খুব লজ্জা লাগছে,আবার ভয় করছে। আরিয়ান এভাবে বলতে পারলো!
ইশা আরিয়ানকে বলে, ” প্লীজ আমায় ভুল বুঝবেন না”
“না তোমায় কেনো ভুল বুঝবো? তুমিতো খুব ভালো মেয়ে. আমাদের প্রায় একমাস এর উপর রিলেশন হয়ে গিয়েছে এখনো একটা কিস পর্যন্ত করতে পারেনি। আর অনেকে তো দুই দিনের রিলেশনে বিছানায় চলে যায়।ওকে তোমাকে আমি কখনো টাচ করব না ”
তারপর আরিয়ান রেগে লাইব্রেরী থেকে বের হয়ে যায়। আর ইশা সেখানে থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে।আরিয়ান একটা কিস এর জন্য ওর সাথে এভাবে কথা বলতে পারল..!
চলবে….