মনের কিনারে তুই পর্ব : ২১

0
2470

মনের কিনারে তুই
লেখিকা: Tarin Niti
পর্ব :২১

পরদিন ইশা ভার্সিটিতে গিয়ে আরিয়ানকে খুঁজছে,কালকে আরিয়ার রাগ করে বের হয়ে যাওয়ার পর আর ওর সাথে দেখা হয়নি। রাতে ইশা কল দিয়েছিল কিন্তু ফোন অফ!ইশা আরিয়ানদের আড্ডার জায়গায় গিয়ে দেখে তিথি,জয়,রিহান ওরা সবাই বসে আছে কিন্তু আরিয়ান নেই। ইশা দূর থেকে দেখে চলে আসে তাই রিহানরা ইশাকে দেখতে পায়নি।

ইশা মন খারাপ করে ক্লাসে বসে আছে।রাইমাকে এই ব্যাপারে ইশা কিছু বলেনি। রাইমাতো নিজে নিজে বকবক করেই যাচ্ছে।ও শুধু রিহানের কথা বলছে। ওর সবকথা শুধু রিহানকে নিয়ে!ইশা বসে বসে রাইমার বকবক শুনছে আর মাথা নাড়াচ্ছে। রাইমা ইশাকে ওর কানের দুল গুলো দেখিয়ে বলে,

” ইশা দেখ..এগুলো কেমন হয়েছে?”

ইশা একটু দেখে তারপর বলে, “হ্যাঁ সুন্দরই”

“কে দিয়েছে বলতো?”

“রিহান ভাইয়া?”

রাইমা অবাক হয়ে বলে, ” তুই কী করে বুঝলি?”

“তোর ব্লাশ করা দেখেই বুঝেছি”
রাইমা একটু লাজুক হাসে।

.
দুটো ক্লাস শেষে সবাই ব্যাগ নিয়ে বাহিরে যাচ্ছে। রাইমা ব্যাগ নিয়ে উঠতে উঠতে বলে,
” এই ইশা শোন না উনি ক্লাস শেষে লেকের পাড়ে দেখা করতে বলেছে”

“তো যা”

“তুইও আয়”

ইশা চোখ ছোট ছোট করে রাইমা দিকে তাকায় তারপরে ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
“তোরা প্রেম করবি আমি গিয়ে কি করবো?”

রাইমা অসহায় দৃষ্টিতে ইশার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, “তুই একা থাকবি?”

“আমি কি বাচ্চা নাকি? তুই যা তো… আমারও একটু কাজ আছে”

রাইমা মিষ্টি হাসে বলে, “ওকে,, তাহলে আমি যাচ্ছি”

তারপর ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে চলে যায়। ইশা ক্লাস থেকে বেরিয়ে আরিয়ানকে কল দে।কালকের পর থেকে আর আরিয়ানের সাথে কথা হয়নি,ফোন বন্ধ ছিলো!এবার ফোন রিং হচ্ছে তাই ইশার মুখে হাসি ফুটে উঠে। যাক এখন আর ফোন অফ না।
একবার রিং হয়ে কেটে যায়,ইশা দ্বিতীয়বার কল করলে আরিয়ান কল রিসিভ করে বলে,

“কি হয়েছে?কল দিচ্ছো কেন? ”

“আপনি কোথায়?”

” ভার্সিটিতে,, কেনো?”

” আপনার সাথে কথা আছে লাইব্রেরীতে আসেন”

” কি কথা? ”

“আসলেই তো দেখবেন,, আসেন”

ইশা আর কিছু না বলে কল কেটে। লাইব্রেরীতে গিয়ে দেখে আজকে লাইব্রেরী একদম ফাঁকা!কেউ নেই বললেই চলে..
ইশা একবার পুরো লাইব্রেরী দেখে তারপর একটু ফাঁকা স্থানে দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ পর আরিয়ান আসে।ইশার মুখে হাসি ফুটে উঠে।আরিয়ান ইশাস কাছে গিয়ে বলে,

“হ্যাঁ বলো কি বলবে?”

ইশা কিছুক্ষণ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
” রাগ করেছেন?”

“না,, রাগ করবো কেন?”

“তাহলে ফোন অফ কেনো?”

“আসলে ফোনে চার্জ ছিল না”

ইশা চোখ ছোট ছোট করে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“মিথ্যে বলছেন কেনো? আপনি মিথ্যে বললে আমি বুঝতে পারি ”

আরিয়ান ইশার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“হ্যাঁ মিথ্যে বলেছি! তো? ”

ইশা আরিয়ানের কাছে গিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলে, “আপনি অনেক রাগ করেছেন তাই না?”

আরিয়ান নিজের গাল থেকে ইশার হাত সরিয়ে
বলে, “না”

ইশা আবার এগিয়ে গিয়ে হঠাৎ আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে বলে, ” সরি!”

আরিয়ান ইশাকে জড়িয়ে ধরে না ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে বলে,
“সরি বললে কাজ হবে না। তুমি কালকে আমাকে কিস করতে দেওনি তারপর আজকে আবার আপনি করে বলা শুরু করেছো! কেন??”

ইশা আরিয়ানের বুক থেকে মাথা তুলে জিব কেটে বলে, ” ইশশ…মনে ছিল না।আসলে এতদিন আপনাকে আপনি করে বলছি তো তাই মুখ থেকে আপনি বের হয়ে যায়।আচ্ছা তুমি করে বলা অভ্যাস করবো”

” হ্যাঁ হয়েছে এবার ছাড়ো”

“কোথায় যাবা?”

“কোথাও না,,এখানে থেকে কি করবো আর আমি রাগ করিনি..হয়েছে?”

ইশা এবার আরিয়ানকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে, “আমি জানি তুমি রাগ করেছো”

“বুঝেছো যখন যেটার জন্য রাগ করেছি সেটা করতে দাও”

ইশা একদৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে।আরিয়ান বলে, “আচ্ছা বুঝতে পেরেছি, ছাড়ো আমাকে”

এবার ইশার রাগ উঠে যায়। একটা কিস এর জন্য আরিয়ান ওর সাথে এরকম করছে? একটা কিসই তো! দিয়ে দিলেই হয়।ইশা আরিয়ানের গাল ধরে ওর মুখটা এগিয়ে নে। আরিয়ান বাহিরের দিকে তাকিয়ে একটয় বাঁকা হাসি দে।
ইশা আরিয়ানের গালে হাত রেখে আরিয়ানের মুখের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, আরিয়ান ইশাকে জড়িয়ে ধরে না চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। ওদের দেখে মনে হচ্ছে আরিয়ানের অনিচ্ছায় ইশা আরিয়ানকে কিস করছে।
ইশা আরিয়ানকে কিস করতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে একটা স্যার এসে বলে,

“এখানে কি হচ্ছে? ”

হঠাৎ কারোর কথায় ইশা কেঁপে ওঠে তাড়াতাড়ি করে আরিয়ানকে ছেড়ে দে।পেছনে ফিরে দেখে ওদের ভার্সিটির একটা স্যার দাঁড়িয়ে আছে। ইশার বুকটা ধক করে উঠে। স্যার কি ওদের এই অবস্থা দেখে ফেলেছে!ইশার হাত-পা কাঁপছে আর আরিয়ান ভাবলেশহীনভাবে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে। ইশার কাঁপাকাঁপি দেখে ও মজা পাচ্ছে।
স্যার ইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভার্সিটিতে এসব করতে আসো?”

ইশা কাঁপাকাঁপা কন্ঠে বলে, “আসলে স্যার.. ”

“আসলে নকলে কিছু শুনতে চাই না আমি যা দেখার দেখেছি। চলো”

ইশা অবাক হয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে, “কোথায় স্যার?”

“প্রিন্সিপালের রুমের তোমরা দুজন চলো।তোমার গার্জিয়ান ডাকা হবে।ভার্সিটিতে পড়াশোনা না করে সব করো”

ইশা হঠাৎ ডুঁকরে কেঁদে ওঠে।গার্জিয়ান ডাকা হবে? ইশার প্রচুর কান্না আসছে। ও কোনো রকমে কান্নাটা থামিয়ে বলে, ” সরি স্যার আর এরকম হবে না”

স্যার বলে, ” আমি কিছু শুনতে চাই না চলো”

ইশা অসহায় দৃষ্টিতে আরিয়ানের দিকে তাকায়। ইশা এটা ভেবে অবাক হচ্ছে আরিয়ান কিছু বলছে না কেনো? আরিয়ান ভাবলেশহীন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে মনে হয় যেন কিছুই হয়নি আর তাছাড়া স্যার ও আরিয়ানকে কিছু বলেনি। ইশা আরিয়ানের দিকে তাকায় তারপর বলে,

“তুমি প্লিজ বলো না আমরা খারাপ কিছু করছিলাম না”

স্যার ইশাকে ধমক দিয়ে বলে, “আমি যা দেখার দেখেছি, তুমি চলো”
ইশা শুধু আরিয়ানের দিকে তাকায় আর আরিয়ানের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

.
রুমে পিনপিন নীরবতা!প্রিন্সিপাল রুমের প্রিন্সিপালের সামনের চেয়ারে ইশার আম্মু বসে আছে,,পাশে ইশা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ইশার আম্মুর পাশের চেয়ারটায় স্যার বসে আছে। আরিয়ান একটু দুরে টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত দিয়ে সবাইকে দেখছে। আরিয়ানের চোখেমুখে কোনো ভয় নেই! ইশা বারবার ডুকরে কেঁদে উঠছে।
ইশার মা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে । ভার্সিটিতে থেকে যখন ফোন আসে উনি ভাবে ইশার হয়তো কিছু হয়েছে তাই স্কুলের প্রিন্সিপাল থেকে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে আসে। এসে এরকম কিছু শুনবে উনি ভাবতে পারেনি। তখন স্যার ইশার মাকে বলে,

“আপনার মেয়েকে জিজ্ঞেস করুন ভার্সিটিতে কি এসব করতে আসে?”

ইশার মা একবার ইশার দিকে তাকায় তারপর স্যারকে বলে,
” ইশা কি একা ছিল? ওই ছেলেটা..”

ইশার মাকে থামিয়ে দিয়ে প্রিন্সিপাল বলে,
“আরিয়ানকে আমরা চিনি ও সেরকম ছেলে না, যা দোষ করার আপনার মেয়ে করেছে”

আসলে আরিয়ানের বাবা এই ভার্সিটিতে অনেক টাকা দে।তাই সব টিচাররা আরিয়ান কে খুব ভালোবাসে। এমনিতে আরিয়ান ভালো স্টুডেন্ট,, খেলাধুলা ভালো তাই সবার চোখের মনি।আর প্রিন্সিপালের সাথে আরিয়ানের বাবার খুব ভাল বন্ধুত্ব তাই সামান্য একটা কারণে আরিয়ানের গার্জিয়ান ডাকার প্রয়োজন বোধ করেনি,যা বলার ইশার মাকে ই বলবে।

ইশার মা ইশাকে ধমক দিয়ে বলে,
“এসব কি শুনছি ইশা?”

মায়ের ধমকের ইশা কেঁপে ওঠে। তারপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে, “আম্মু,,আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি”

ঈশার মা অবাক হয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ইশা কাউকে ভালোবাসে এতদিন উনি বুঝতে পারেনি! ইশার কথা শুনে প্রিন্সিপাল আর ওই স্যারটা অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।তখন ইশার আম্মু প্রিন্সিপালের দিকে তাকিয়ে বলে,

“দোষ কি শুধু আমার মেয়ের একার??”

প্রিন্সিপাল আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে, ” তুমি সত্যিটা বল,,তোমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসো?”

আরিয়ান এতক্ষণ চুপচাপ সব দেখছিল প্রিন্সিপালের কথায় ও সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর একবার ইশার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলতে থাকে,

“না..!আজকে আমি একটা কাজে লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। তখন ও বলল, ও নাকি একটা বই নাগাল পাচ্ছে না আমি ওকে সেটা দিতে ওর কাছে যাই। তখনো ও আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরে। ওকে তো আমি ভালো করে চিনিও না।
আর ও আমাকে কিস করতে চাই তখন স্যার এসে দেখে ফেলে..!!!”

আরিয়ানের এই কথাগুলো শুনে ইশার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। ইশা ঠিক শুনছে তো!ও এতক্ষণে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল।এখন অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়।অদ্ভুতভাবে ইশার কান্না থেমে গেছে! ও শুধু আরিয়ান কে দেখছে!!
আরিয়ান প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়েছে।আর ইশা আরিয়ানকে দেখছে..!!!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here